#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৩,১৪
১৩
আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জয়ীতা। বিচারক তার শাশুড়ি সাজেদা চৌধুরী। জয়ীতার অপরাধের যেনো শেষ নেই। একের পর এক অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে তার নামে। অভিযোগের ভারে তার ঝুলি পরিপূর্ণ। তার অপরাধের মাঝে সবচেয়ে গুরুতর হলো পল্লবকে তার মায়াজালে জড়ানো, নাজায়েজ সন্তানের দায় পল্লবের ঘাড়ে চাপিয়ে মিডিয়া ডেকে এ বাড়িতে জোর করে বউ হয়ে আসা, পল্লবকে ছেড়ে চলে যাবার পরও আবার ফিরে আসা, ছলেবলে পল্লবকেও তার কাছে নিয়ে যাওয়া, আরো ছোটোখাটো অপরাধের লিস্টের যেনো শেষ নেই।
পল্লবের মা পল্লবকে সবার সামনে কিছুই বলল না। যা বলার জয়ীতাকেই বলছে। পল্লব প্রতিবাদ করতে পারে ভেবে কৌশলে বাসায় ঢুকেই তাকে একটা কাজে অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন সাজেদা চৌধুরী। সে পল্লবের সাথে এমন আচরণ করেছে যেনো কিছুই হয়নি। পল্লবও মায়ের এমন আচরণ দেখে খানিকটা অবাক হয়েছে। তবুও সবকিছু শান্ত আছে দেখে দেখে সে মনে মনে খুশি হয়ে অফিসে চলে যায়।
জয়ীকে সে না আসা পর্যন্ত রুম থেকে বের হতে নিষেধ করলেও সাজেদা চৌধুরী পল্লব বেরিয়ে যাবার সাথেই জয়ীকে ডেকে পাঠায়।
জয়ীতা মাথা নিচু করে তার শাশুড়ির একের পর এক নোংরা কথার বাণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। অবলার মতো শুধু শুনেই যাচ্ছে সে। অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু সেই সাহস হয় না। তাছাড়া পল্লবকে ভীষণ ভয় হয়৷ তার মাকে কিছু বললে সে যদি আবার আগের মতো বদলে যায়। যত যাই হোক পল্লবের মা তো সে! তাই মুখ বন্ধ করে শোনাটাকেই সে আপাতত শ্রেয় মনে করছে। চৈতীও শাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আগুনে ঘি ঢালছে।
জয়ীতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। সে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে সাজেদা চৌধুরীর চোখ রাঙানোকে সয়ে যাচ্ছে নীরবে।
সাজেদা চৌধুরী তাকে অপশন দিয়েছে কিন্তু অপশন সিলেক্ট করার স্বাধীনতা দেয়নি।
জয়ীতাকে হয় পল্লবের জীবন থেকে স্বেচ্ছায় সরে
যেতে হবে না হলে তাকে বাধ্য করা হবে। সে কি স্বেচ্ছায় চলে যাবে নাকি তাকে জোর করতে হবে এটা জিজ্ঞেস করল তার শাশুড়ি।
জয়ীতা তার ভেতরের ভয়টাকে গোপন রেখে বলল, আমি কি জানতে পারি পল্লবের স্ত্রী হিসেবে এ বাড়িতে আপনাদের সাথে এক ছাদের নিচে থাকলে কী অসুবিধা হবে আপনাদের?
সাজেদা চৌধুরীর রাঙা চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে আবার বলল, আমি আপনাদের স্টান্ডার্ডের না, আপনাদের মতো আমার বংশ মর্যাদা নেই। এটাই কি আমার অন্যায়?
সাজেদা চৌধুরী জয়ীতার এমন দুঃসাহস দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেলেন।
দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, সবই তো বুঝিস! তবে আর জিজ্ঞেস করছিস কেনো? তোর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানিস! জানতেই যখন চাইলি তবে বলি, তোর বংশ মর্যাদা চুলাতে যাক। সে তো আর নাই বলি! তোর প্রধান সমস্যা হলো তোর কারণে আমার আদরের ছেলেটা আমার থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গেছে। তোর কারণে সে আমার বাধ্য ছেলেটা অবাধ্য হচ্ছে দিনের পর দিন। তুই ওর জীবনে জবরদস্তি করে আসার পর থেকে আমার যোগ্য ছেলেটা সবচেয়ে বেশি অযোগ্য হয়েছে। জানিস, এই যে আমার ছেলেটা নিরুদ্দেশ হয়েছিল এ ক’দিন তাতে কোম্পানির কী কী ক্ষতি হয়েছে, কত টাকার ক্ষতি হয়েছে, কী কী ডিল ক্যান্সেল করতে হয়েছে? তোকে বলছি কেনো এসব? আমিও পাগল! তোর মতো একটা অফিস ক্লার্ক এসবের কী বুঝবি! তোর মতো একটা অযোগ্য আর অপয়া আমার ছেলেটার জীবনে যেদিন পা রেখেছে সেদিন থেকেই ও নিজের অমঙ্গল ডেকে এনেছে। আমার আফসোস আমি মা হয়েও কিছুই করতে পারছি না। তুই যদি সত্যিই ওকে ভালোবাসিস, ওর ভালো চাস তবে যা নেবার আমার থেকে নিয়ে ও ফেরার আগেই ওর লাইফ থেকে বিদেয় হ। আমাদেরকে মুক্তি দে। তোর মরা বাপের কসম লাগে। আমার ছেলের ঘাড় থেকে এবার নাম। ওর লাইফটাকে আর বিষ দিয়ে ভরাস না।
জয়ীতা ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড ভেঙে পড়ে। বাবা তুলে কথা বলায় আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কষ্টটাকে লুকিয়ে সে এবার কঠোরতার সাথে বলে, সত্যি বলেছেন। আমি অযোগ্য, আমি অপয়া। কিন্তু একবারও কি আসল সত্যিটা জানতে চেষ্টা করেছেন, যে আপনার ছেলে আসলেই কী কারণে এভাবে বদলে গেল? আমিই কি সেই কারণ নাকি আর কিছু আছে? আগে ছেলের মন পড়তে শিখুন তারপর না হয় আমি দোষী না নির্দোষ সেটা বলবেন! আপনার ছেলের জীবনটাকে আমি বিষিয়ে তুলছি না কি আপনি বা আপনার কোনো অতীত! সেদিকেও একটু নজর দিয়েন। আসলেই কি নিজে সন্তানের কাছে মা হিসেবে সম্মান পাবার যোগ্যতা রাখেন আপনি?
সাজেদা চৌধুরী এবার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালেন। ঠাস ঠাস করে দুই থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন জয়ীতার দুই গালে। এত জোরে থাপ্পড় মেরেছে যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চৈতী ভয়ে কেঁপে উঠল। সে শাশুড়ির এমন অগ্নিমূর্তি দেখে ভয়ে দ্রুত সেখান থেকে রুমে চলে গেল। আর সার্ভেন্টরা তো আগেই গায়েব। এ বাড়িতে কোনো মিটিং বসলে কোনো সার্ভেন্টদেরই আশেপাশে থাকার সাহস নেই। কোনো কথায় কান পাতলেই তার কঠোর শাস্তি। সেই ভয়ে সবাই নিয়মের মধ্যেই চলে।
জয়ীতা ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই সাজেদা চৌধুরী প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, তোদের মতো পয়জন সমাজে আছে বলেই এই সমাজ এত কলুষিত। শরীরের চামড়া দেখিয়ে ছেলেগুলোর মাথা নষ্ট করিস। এরপর ভুলিয়ে ভালিয়ে বিছানা অব্ধি নিতে পারলেই বাকী কাজটুকু ব্যস হয়ে গেল। আর কী চাই! কিন্তু ভুলে যাস কেনো তোদের ঠাঁই হলো বেশ্যালয়ে , কারো ফুলদানিতে সাজবার জন্য নয়। নিত্য নতুন খদ্দেরের জন্য তোদের মতো থার্ডক্লাশ মেয়েদের জন্ম। তোর মা তোকে এ বিদ্যা দিয়ে এই শহরে পাঠায়নি কেনো আমার বুঝে আসে না। নিজের নাজায়েজ সন্তানের দোহাই দিয়ে আমার ছেলের ঘাড় মটাকানোর পায়তারা করছিস! আমি কী কিছুই বুঝি না। আমি সাজেদা চৌধুরী বেঁচে থাকতে তোর পাপের দায় আমার ছেলের ঘাড়ে কিছুতেই চাপাতে দিব না। নেভার!
আসল কথা হলো সাজেদা বেগম এর অতীত নিয়ে কথা তোলায় সে এবার নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেছে না। সে ভীষণ অবাক হয়। এই মেয়ে এসব কী বলছে? সে যতটুকু জানে খালেক সাহেবের সাথে জয়ীর বেশ ভাব। কিন্তু খালেক সাহেবকেও সে চিনে। সে প্রাণ বেরিয়ে গেলেও কারো কাছে পল্লবের জন্মের সত্য প্রকাশ করবে না। তাহলে কীভাবে? গোলকধাঁধায় পড়ে গেল মুহূর্তেই।
জয়ীতা আঘাত পেয়ে এবার আরো প্রতিবাদী হয়ে উঠে। সে সিংহিনীর মতো গর্জে উঠে বলে, এই সমাজটাকে পয়জন করছি আমাদের মতো মেয়েরা না, করছেন আপনারা। আপনাদের মতো হাই ক্লাস মেইনটেইন করা মানুষেরা। নিজের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন মিসেস চৌধুরী। আপনি এত ভালো মানুষ তবে আপনার সংসার হয়নি কেনো? কেনো খালেক সাহেবের মতো নিরীহ মানুষের জীবন আজ পয়জনে ভরপুর? কেনো আপনার স্বামী আপনাকে ফেলে গিয়েছিল? আরো কিছু কি শুনতে চান?
আর হ্যা, আমার মা বাবা কী শিক্ষা দিয়েছে সেটা না হয় নাই জানলেন। তারা তো মুর্খ চাষাভুষা। কিন্তু আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, আপনারা তো হাই সোসাইটি মেইনটেইন করে চলে আসছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাহলে আপনার বাবা মা আপনাকে কি শিক্ষা দেয়নি যে চামড়ার বিজনেস শুধুমাত্র আমাদের মতো লো ক্লাস হাভাতে মেয়েদের জন্য, আপনাদের মতো হাই ক্লাসদের জন্য নয়? নিজের অতীত ভুলে যাবেন না মিসেস চৌধুরী! মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন। মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখুন। দেখবেন পৃথিবী সুন্দর হয়ে যাবে, সব সম্পর্ক সহজ হয়ে যাবে। তাতে নিজের সম্মান বজায় রাখতে পারবেন। অঢেল সম্মান পাবেন। আমাকে আর মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না। আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। প্রতিদিন একটা মানুষকে নানান বাহানায় খুঁচিয়েই যাবেন আর আমি সেটা সহ্য করব সেটা আর হচ্ছে না। আপনার কারণে আমি দুই দুইটা সন্তানকে হারিয়েছি। সন্তান হারানোর কষ্ট সেদিন বুঝবেন যেদিন নিজে হারাবেন। আল্লাহ যেনো এমন দিন কোনোদিন আপনাকে না দেয় সেই দোয়া করি। কারণ এই কষ্ট আপনি সইতে পারবেন না। সন্তান আপনার থেকে দূরে সরে গিয়েছে সেটাই মানতে পারছে না আর বাকীটা আর নাই বলি। আমি কোনো জারজ সন্তান পেটে ধরেছিলাম না। আমার পেটে আপনার ছেলেরই অংশ ছিল। বারবার আমাকে চরিত্রহীনা বলে অপদস্ত করেছেন। যারা পৃথিবীর বুকে আসেওনি আমার সেই সন্তানদেরকে নাজায়েজ বলেছেন। ওদেরকে দুনিয়ায় আসার আগেই মেরে ফেলেছেন। আপনি খুনী।
চোখের পানি মুছে জয়ীতা বলল, আমি সব সহ্য করেছি , কিন্তু আর না। আপনার জারিজুরির দিন শেষ। আমি যদি এবার দুনিয়ার সামনে মুখ খুলি না তাহলে এই ভণ্ড মুখোশ উন্মোচন হতে এক মুহূর্তও লাগবে না। নিজের মতো করে সবাইকে ভাববেন না দয়া করে। আমাকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দিন। তাতে আমারও ভালো আর আপনারও।
সাজেদা চৌধুরীর চোখ দু’টি যেন বিস্ফোরিত হয়ে বেরিয়ে আসবে। কী বলছে এসব এই দু’দিনের পুচকে মেয়ে। তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃন্য অধ্যায়কে এ কোথা থেকে টেনে নিয়ে এসেছে এত বছর পর? এত সাহস এই মেয়ের? সাজেদা চৌধুরী আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
মুহূর্তেই বিদ্যুৎ খেলে গেল তার মাথায়। এই মেয়েকে বাচিঁয়ে রাখা মানে তার অতীতের কলঙ্কিত অধ্যায় সামনে চলে আসা। এত বড় ভুল করার মতো মানুষ সে না। আগে তার জানতে হবে এই মেয়ে এসব কোত্থেকে জেনেছে? কে জানিয়েছে? আর কতোটাই বা কী জানে। শেকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে তার। তারপর এর ব্যবস্থা করা তার জন্য ওয়ান টুর ব্যাপার! নিজের আত্মমর্যাদার চেয়ে বড় তার কাছে আর কিছুই না এ মুহূর্তে।
চলবে…..
#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৪
অফিসে ঢুকেই গাদাগাদা কাজের চাপে বুঁদ হয়ে আছে পল্লব। এই সাত দিনে বেশ কয়েকটি ডিল ক্যান্সেল হয়েছে তাদের কোম্পানির। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কাজ ছিল তার হাতে। এগুলির প্রেজেন্টেশনও রেডি ছিল। ফাইনাল মিটিং এর সময়ই সে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে এসব জেনে-বুঝেও খালেক সাহেবের সাথে বাগেরহাটে গিয়েছে সেদিন। এখন অফিসে ফিরে সেই সব ডিলের এমন বেহাল দশা দেখে নিজের উপর খানিকটা রাগ হলো। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ ক’দিনে। অন্য কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করেছে তাদের চুজ করা প্রজেক্টগুলোতে। শেষমুহুর্তে এসে ভরাডুবি যাকে বলে। সবকিছু এতদিন ধরে গুছিয়ে এনেও এভাবে হারিয়ে ফেলা আসলেই খুব দুঃখজনক। তাছাড়া এই প্রজেক্টগুলির পেছনে প্রচুর শ্রম এবং অর্থ ঢালতে হয়েছিল। সে নিজেই ইনভলভ ছিল এসবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে একটা সরকারী প্রজেক্ট হাতছাড়া হওয়ায়। টেন্ডারের সব ডকুমেন্টস ছিল তার কাছেই। অথচ সময়মত সে ছিল না। ফোনটাও বন্ধ রেখেছে যাতে তাকে কেউ খুঁজে না পায়। নিজের এমন গাফিলতির ফল দেখে নিজেরই মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। পরক্ষণেই তার সামনে ভেসে উঠে জয়ীতার মুখখানা। অমনি তার সব রাগ নিমিষেই গায়েব। এই কোটি কোটি টাকার চেয়ে তার কাছে বেশি মূল্যবান জয়ীতা। সে সেদিন এসব ফেলে বাগেরহাটে ছুটে গিয়েছিল বলেই জয়ীতাকে ফিরে পেয়েছে। জয়ীতাকে আর কোনোদিন কাছে পাবার আশা সে তো ছেড়েই দিয়েছিল। তার ভাগ্য তাকে ওখানে টেনে নিয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ মনে হলো জয়ীতার সাথে অনেকক্ষণ হলো কোনো কথাবার্তা হয় নি। বাসা থেকে আসার পর থেকেই কাজে ডুবে আছে। জয়ীর সাথে কথা বলা দরকার। তাছাড়া বেচারিকে এমন একটা পরিস্থিতিতে রেখে এসেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বিকেল তখন পাঁচটা বাজছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পল্লব মাথায় হাত দিলো। এত সময় পার হয়ে গিয়েছে অথচ তার কোনো দিকেই খোঁজ নেই। আসলে কাজের এত বেশি ওভারলোড হওয়ার কারণে কোন দিকে তাকাবার ফুরসত পর্যন্ত তার ছিল না। তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়েই জয়ীতাকে কল করল। পরপর তিনবার রিং বেজে গেল অথচ জয়িতা ফোন রিসিভ করল না। পল্লবের খানিকটা দুশ্চিন্তা হলো। সে তাড়াতাড়ি হাতের কাজগুলো শেষ করে বাসার দিকে রওনা হয়।
রুমে ঢুকে কোথাও জয়ীতাকে চোখে পড়ল না তার। জয়ীতার ফোনটা খাটের উপরেই রাখা। বার কয়েক জয়ীতাকে এদিক ওদিক ওয়াশরুমে চেক করতে গেল। সেখানেও না পেয়ে সে রুম হতে বের হয়ে বাড়ির সার্ভেন্টদের কাছে জিজ্ঞেস করল জয়ীর কথা। কিন্তু সবার মধ্যেই একই কথা তারা জানে না। দুপুরের পর থেকে তারা তাকে দেখেওনি। মেজাজটা বিগড়ে গেল পল্লবের। দ্রুতপায়ে বাসার দারোয়ান, মালি সবার কাছে যেয়ে জয়ীর খবর জিজ্ঞেস করল কিন্তু সবার উত্তর একই। জয়ীতাকে কেউই দেখেনি। পল্লবের তো কিছুই মাথায় আসছে না হুট করে এমন জলজ্যান্ত একজন মানুষ উধাও হয়ে গেল কী করে? ফোনটা পর্যন্ত নিয়ে যায়নি। দুপুরবেলা না কি সে খাবারও খাইনি। গেল তো গেল কোথায়? জয়ীতার ব্যাপারে কোনো কথা সে তার আম্মিকে কখনো জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু আজকে বাধ্য হয়ে তার মায়ের রুমে যেয়ে নক করল।
এত বার বার দরজা নক করাতে সাজেদা চৌধুরী খুব বিরক্ত হয়েই রুমের দরজা খুললেন।
– তুমি? তোমার তো এখন অফিসে থাকার কথা! আজ রাত দশটায় একটা মিটিং আছে ভুলে গিয়েছ, নিশ্চয়ই? অবশ্য এ আর নতুন কি? আমার যে ছেলে কখনো কোনো রুটিন ওয়ার্ক করতে ভুল করেছে আমার মনে পড়ে না, সেই ছেলে আজকাল সব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অনায়াসে ভুলে যাচ্ছে।
– আম্মি, আমি মিটিং ক্যান্সেল করে এসেছি। সুযোগ হলে আগামীকাল করব। তারাও এগ্রি করেছে। এখন এসব কথা বলতে আসিনি, শুনতেও আসিনি, প্লিজ। আগে বল জয়ীতা কোথায়?
– হোয়াট? তোমার মাথা ঠিক আছে? তোমার জয়ীতা কোথায় মানে? ওই রাস্তার মেয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য কি বসে থাকি নাকি আমি?
– প্লিজ, আম্মি! তোমার কথার স্টাইলটা এবার একটু চেঞ্জ করো। জয়ীতা এ বাড়ির বউ, আমার স্ত্রী। একই কথা তোমাকে নিশ্চয়ই বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না।
– মাই গড! ফুল চেঞ্জ করে ফেলেছ নিজেকে? কিছুদিন আগেও তো বউকে দু’চোখে দেখতে পারতে না হঠাৎ করে বউয়ের জন্য দরদ উথলে উঠছে ব্যাপার কি?
– সে সব কথা থাক না। আগে বলো জয়ীতা কোথায়? ওকে সকালবেলা আমি যখন গিয়েছি বাসায় রেখে গিয়েছিলাম! এসে কোথাও পাচ্ছি না ওর ফোনটাও বেডের উপর রাখা। বাড়িতে প্রত্যেকটা প্রাণীকে জিজ্ঞেস করেছি। কেউ নাকি দেখেনি বলেছে। কিন্তু আমার মাথায় আসছে না একজন মানুষ এত বড় ঘরের মধ্যে ঘোরাফেরা করলে কারোর নজরে কি করে না পড়ে?
– সেটা তো আমি জানি না। আমার সাথে তো জয়ীতার দেখাই হয়নি। ওতো আমাকে দেখে লুকিয়ে থাকে। আমার সামনে কোন মুখ নিয়ে আসবে? আমি চৈতীর কাছে শুনেছি ও বাসায় ফিরেছে। তুমি নাকি সাথে করে নিয়ে এসেছো! দেখো, তুমি এত বড় অন্যায় করেছো আমি কিন্তু কিচ্ছু বলিনি। কোম্পানির কত বড় প্রজেক্ট তুমি হাতছাড়া করেছ তুমি হয়তো নিজেও বুঝতে পারছ। আমি সবকিছু সহ্য করেছি, সবকিছু মেনে নিয়েছি তুমি ফিরে এসেছ সেই খুশিতে। আমি একটি বারের জন্য তোমার কাছে কিন্তু এর জন্য জবাবদিহি করতে যাইনি। খুব বেশি কি ক্ষতি হতো যদি তুমি যাবার আগে সবকিছু হ্যান্ডেল করে দিয়ে যেতে কল্লোলকে অথবা আমাকে অথবা অন্য কাউকে? এমনকি তুমি তোমার ফোনটা পর্যন্ত সুইচ অফ করে রেখেছ। সাতটা দিন পাগলের মত হন্য হয়ে তোমাকে আমরা খুঁজেছি।
বললেই পারতে ওই মেয়ের কাছে তুমি গিয়েছ। নাটক মেয়েটা এত নাটক পারে! ইচ্ছে করে বাড়ি থেকে গায়েব হওয়ার নামে আমাদেরকে এতদিন পেরেশানীতে রেখেছে।
– আম্মি, প্লিজ! আমি এখন এসব কথা শুনতে আসিনি। এসব লাভ-ক্ষতির হিসাব পরে করা যাবে। তুমি আমার ব্যাপারটা বুঝতে পারছ না। জয়ী তার একটা জলজ্যান্ত মানুষ বাসা থেকে গায়েব। অথচ তার কোনো খোঁজখবর কেউ বলতে পারছে না। আগে বলো জয়ীতা কোথায়? আমি পুরো বাসা, ছাদ, গার্ডেন কোথাও খুঁজতে বাদ রাখিনি।
– আর ইউ ম্যাড? আমি কি তোমার বউয়ের খোঁজ খবর রাখার জন্য বাসায় থাকি নাকি? আজ শরীরটা ভাল না। তাই একটু আর্লি চলে এসেছি। এসেই শুয়ে পড়েছি।
ঘরে যেহেতু নাই তার মানে সে বাইরে বেরিয়েছে হয়ত। দারোয়ান দুলালকে জিজ্ঞেস করো ও জানবে।
যখন বেরিয়েছে ও নিশ্চয়ই দেখেছে।
– আমি জিজ্ঞেস করেছি। কেউ ওকে দেখেনি।
-কেউ দেখেনি তাহলে আমি কী করে দেখব, স্ট্রেঞ্জ?
– আম্মি, আমি সিরিয়াস! একজন মানুষ হুট করে ঘর থেকে গায়েব হয়ে গেছে আর কেউ দেখল না। এটা কেমন কথা! আমার কিছুই ভালো লাগছে না। তুমি দয়া করে ভাবীকে আর বাকী সবাইকে জিজ্ঞেস করো।
– তোমার বউয়ের জন্য আমি এখন সার্চ কমিটি বসাতে যাবো?
– আম্মি, সবসময় তোমার এত অ্যাটিটুড আর ভালো লাগে না।
– পল্লব! ক্রোধে ফেটে পড়ছেন যেনো সাজেদা চৌধুরী।
তোমার বউয়ের ক্যারেক্টার ভালো না আগেও বলেছি। আবারও বলছি। একবার কোথায় না কোথায় যেয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল আবার সেখানে গিয়েছে হয়তো। খোঁজখবর করে দেখো কোন আশিকের হাত ধরেছে আবার!
পল্লব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সে চিৎকার করে বলে উঠল, খবরদার! জয়ীতাকে নিয়ে এসব নোংরা কথা আর একটাও না! আমি আর সহ্য করব না। তুমি দয়া করে আমাকে বলো জয়ীতাকে কী করেছ!
– পল্লব, গলা নামিয়ে কথা বলো। তোমার বাজে ব্যবহার দিনদিন আমাকে স্তম্ভিত করছে। আমি তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না। তুমি এখন মানুষ নেই, জানোয়ারদের কাতারে যেয়ে দাঁড়িয়েছ।
বলেই মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল সাজেদা চৌধুরী।
পল্লবের মাথা গরম হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করা আর অরণ্যে রোদন একই কথা।
হঠাৎ মনে হলো সিসি ফুটেজ রেকর্ড চেক করা যেতে পারে৷ সে দ্রুত সেটা চেক করার জন্য নিচতলায় লাইব্রেরিতে গেল। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে সে তো অবাক! লাস্ট সাতদিনের কোনো ফুটেজই নেই ক্যামেরাতে। একদম গায়েব। সে এবার ভীষণ ঘাবড়ে গেল। দ্রুত পায়ে আবার মায়ের রুমে যেয়ে নক করল।
বিরক্তি নিয়েই আবার দরজা খুলল তার মা।
– আম্মি, সিসি ক্যামেরায় কী হয়েছে?
– কী হয়েছে? আমি তো জানি না।
– আম্মি, প্লিজ! আর নাটক করো না। এসব তোমার কারসাজি। এভাবে জয়ীতার গায়েব হওয়া, বাসার সিসি ফুটেজ গায়েব হওয়া এর পেছনে কারণ কী তুমিই বলো!
– সবকিছুতেই ইনটেনশনালি আমাকে ইনভলভ করতে চাচ্ছ নাকি তুমি? আমার মাথাটা নষ্ট করে দিবে দেখছি। এই মেয়ে যেদিন থেকে এ বাড়িতে এসেছে সেদিন থেকে আমার শান্তি গায়েব। উহ! দেখি চলো। কোথায় লুকিয়েছে? আমার রাতের ঘুম হারাম করেছে এই বদজাত মেয়েটা।
পল্লবের মা নিজেই এবার এর কাছে ওর কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগল জয়ীর ব্যাপারে।কিন্তু সবারই সেই আগের মতো একই কথা, “আমরা কোনো খবর জানি না। ”
কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে পল্লবের মা ভীষণ বিরক্ত হলো।
– আমি বলেছিলাম না! জয়ীতা পুরো বাড়িতে কোথাও নেই। বিশ্বাস হলো আমার কথা? আর সিসি ফুটেজের অবস্থা এমন বেহাল কেন সেটাও একটু দেখো।
– সিসি ফুটেজ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। টেকনিশিয়ানকে খবর দাও। সে এসে বলবে। এসব আমি বুঝি না। আর শোনো পল্লব, কেউ যদি ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তুমি ওই মেয়েকে বাড়িতে কেন নিয়ে এসেছো আগে আমাকে সে কথা বল। সেতো এ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাকে কেন তুমি আবার নিয়ে এসেছ? তুমি হয়তো জোর করে নিয়ে এসেছ তাই সুযোগ বুঝেই আবার চলে গিয়েছে। এসব মেয়েরা চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকতে চায় না। এরা পাখির মত ডানা ঝাপটে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে চায়। আমি অবশ্য আর কিছু বলতে চাই না। কারণ আমার সব কথাই রং মনে হয় তোমার কাছে।
– একই কথা তুমি আর কতবার বলবে? আর আমিও বা কতবার বলব যে জয়ী ওদের মত মেয়ে নয়। যদি তাই হতো তাহলে সে এতো সবকিছু সহ্য করে এ বাড়িতে পড়ে থাকত না।
– পড়ে থাকত না! বাহ, সে পড়ে থাকছে কোথায়? এই এক বছর ছিল এই অনেক। দেখেছে এখানে কোনো লাভ হবে না তাই এখন ঘুরে বেড়াবার শখ জেগেছে। তোমাকে ছেড়ে আবার দেখো নতুন কারো হাত ধরেছে।
– আম্মি, বারবার তুমি একই কথা বলছ। একটা মেয়েকে ভাবে অসম্মান করতে তোমার একটুও দ্বিধা হয় না। পরে বিড়বিড় করে সে বলল, অবশ্য কাকে কী বলছি।
– কোথায় যেতে পারে কিছু কি আন্দাজ করেছ? এই এতদিন কোথায় ছিল সেখানেই যাবে হয়ত। খোঁজ নিয়ে দেখো।
– জয়ী কোথাও যায়নি। জয়ীকে তুমি লুকিয়েছ। সত্যি করে বলো তুমি কি করেছ ওর সাথে ।
– এত বিশ্বাস তোমার জয়ীর উপর যে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিতে তোমার লজ্জা হচ্ছে না।
– না, হচ্ছে না। কারণ জয়ী আমাকে কথা দিয়েছে সে আর কখনো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না আমিও জয়ীকে কথা দিয়েছি কোনদিন আমি তার হাত ছাড়ব না। তাতে আমাদের জীবনের উপর দিয়ে যত ঝড় বয়ে যাক না কেন।
এর মধ্যে কল্লোলও অফিস থেকে চলে এসেছে। বাড়ীতে এসে এত হাঙ্গামা দেখে মেজাজটা খারাপ হলো। এমনিতেই পল্লবের উপর সে প্রচন্ড ক্ষেপে আছে। বাড়িতে ফিরে চৈতীর কাছে সে শুনেছে পল্লব এত বড় অন্যায় করার পরেও তার মা তাকে একটা টুঁ-শব্দও করেনি। এটা শুনে তো সে আরো ক্ষেপে বম্ব।
পল্লব এবং তার মায়ের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কল্লোলও সেখানে এসে হাজির হলো।
– কি শুরু করেছিস তুই? তোর যন্ত্রণায় তো এই বাসাতে দুইটা মিনিট শান্তিতে থাকার উপায় নেই। এত হাঙ্গামা করতে পারিস রে, ভাই।
– প্লিজ, ভাইয়া! তুমি এর মাঝে নাক গলাবে না একদম। আমার জায়গা তুমি থাকলে তুমি কী করতে দেখতাম।
-তোর জায়গায় আমি হতে যাবো কোন দুঃখে? তোর মত মতিভ্রম তো আমার হয়নি যে একটা রাস্তার মেয়েকে তুলে এনে ঘর পাতব! এখন দেখ অবস্থা তার! ঠেলা সামলা এবার।
-কথায় কথায় একটা শব্দ পেয়েছ- রাস্তার মেয়ে, রাস্তার মেয়ে! রাস্তার মেয়ে কী? জয়ী কি রাস্তায় ছিল? তোমার বউয়ের চরিত্র নিয়ে যদি কথা বলা শুরু করি না তাহলে তুমিও এখান থেকে দৌড়ে পালাবার কোনো জায়গা পাবে না? বিয়ের আগে ডজন খানেক প্রেম করেছে সে সব খবর রাখি না আমি ভেবেছ। ভার্সিটিতে বসে সাজিদ ভাইয়ের হাত ধরে পালিয়েছিল ভুলে গেলে? সেসব খবর আমি কেনো ভার্সিটির কেউই ভোলেনি। এখনো আড্ডায় বসলে এসব নিয়ে কানাঘুঁষা শুনতে হয়। তার পরেও তার বাপের টাকা পয়সা আছে দেখে সব ভুলে গেলে। বিয়ে করে ঘরে নিয়ে এলে। এখন একদম সতী-সাধ্বী সেজে বসে আছ। নেক্সটাইম তুমি যদি জয়ীতাকে একবারও রাস্তার মেয়ে বলে ইন্সাল্ট করো তাহলে তোমার হাই স্ট্যাটাস মেইনটেইন করা বউয়ের যে কারনামা আছে সেগুলো আমি ফলাও করে প্রচার করা শুরু করব।
– হাউ ডেয়ার ইউ! একটা রাস্তার মেয়ে বাসায় নিয়ে এসে প্রতিদিন একটার পর একটা নাটক চলতে থাকবে। তার উপর বড় ছোট কোনো সম্মান নেই এখানে। পুরো বাসা ডাস্টবিনে পরিণত করে ফেলেছ। আম্মি, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে এ বাসাতে এক মুহূর্ত থাকতে চাই না! আমার মেয়ে বড় হয়েছে। এখানে থেকে থেকে এসব নোংরা পলিটিক্স এর শিকার হতে চাই না।
চৈতী তো পল্লবের কথা শুনে রেগে ফুলে ফেঁপে ঢোল। ভার্সিটি লাইফে একটু আধটু প্রেম কে না করে? সেই নিয়ে এভাবে অপমান? সে কিছু বলতেও পারছেনা শাশুড়ির ভয়ে কারণ এ বাড়িতে বৌদের মুখ খোলার অধিকার নেই। না হলে এতক্ষণ বাড়িঘর মাথায় তুলে বসত সে। শাশুড়ির চোখে আদর্শ বউ সাজতে তাকে আর যে কত স্যাক্রিফাইস করতে হবে সে নিজেও জানে না।
ধমকের সুরে সাজেদা চৌধুরী বললেন, কল্লোল চুপ করো। সবাই একসাথে পাগল হলে কি করে চলবে? কোটি কোটি টাকার ডিল ক্যান্সেল হয়েছে তাতে আমার যে কষ্ট না হয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে পল্লব দূরে চলে গিয়েছিল তাতে। আমি আমার ছেলেকে ফেরত পেয়েছি আমার কাছে ওই টাকার কোন শোক নেই। তুমি নিজেও বাবা হয়েছ। তোমার মেয়েকে এক পাশে আর অন্যপাশে পৃথিবীর সবকিছু দিয়ে দেখো তখনি বুঝবে কেন আমি পল্লবকে কিছু বলিনি।
– এটাই তো তোমার সমস্যা। জীবন ধরে তুমি পল্লবকে কোন শাসন করনি। যত শাসন সব আমার উপরে, আমার বৌয়ের উপরে। তোমার আদরে আদরে বাঁদর হয়েছে পুরো। উহ!
কল্লোল এবং তার মায়ের কথোপকথনের ফাঁকে পল্লব পুলিশ স্টেশনের ফোন দিলো । কেনো যেনো পল্লবের মনে হচ্ছে এখানে কোন ঘাপলা আছে। জয়ীর হয়তো কোনো বিপদ হয়েছে। তার আম্মি যে কোনো ধরনের সাহায্য তাকে করবে না সেটা সে বুঝে গিয়েছে। যা করার তাকে নিজেকেই করতে হবে। জয়ীকে তার খুঁজে পেতেই হবে।
চলবে……