#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৭,১৮
১৭
জয়ীতা চোখ খুলে চারপাশে তাকিয়ে দেখল সে একটা অচেনা রুমে শুয়ে আছে। এটা কোনো হাসপাতালের বেড না এটা শিওর। খুব সাজানো গোছানো পরিপাটি রুম। ঠিক তার বেডরুমের মতোই। মাথায় নাড়াতেই টের পেল মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে। মাথা ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা। ডান হাতটাও ব্যান্ডেজ পেঁচানো। প্রচণ্ড রকমের ব্যাথা অনুভব হলো একটু ঘুরতে গিয়েই তার। শরীরটা টেনে ওঠাতে যেয়ে বুঝতে পারল এটা তার জন্য ভীষণ রকমের অসাধ্য প্রায়। পুরো শরীর বিষের মতো ব্যথা। ধীরেধীরে মনে করতে চেষ্টা করছে সে এখন কোথায়!
কিছুই বুঝতে না পারলেও রাবু খালার সাহায্য নিয়ে যে সে পালিয়েছিল এটা মনে পড়ল। সে নামতে যেয়ে হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল ব্যস এটুকুই মনে আছে। তাহলে এখানে কী করে এলো সে? তাকে কি তার শাশুড়ি আবার ধরে ফেলেছে? ভয়ে বুকের মাঝে ঢিপঢিপ বাড়তেই থাকে তার। পরক্ষণেই আবার মনে হয়, হয়ত সে তার শাশুড়ির হাতে ধরা পড়েনি। তার শাশুড়ি তাকে পেলে আস্ত কবরে পুতে ফেলত এতক্ষণে । এমন করে আদর করে চিকিৎসা করে শুইয়ে রাখত না। তাহলে কে তাকে চিকিৎসা করেছে? পল্লব? বুকের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠে তার। পল্লব ছাড়া আর আছেই বা কে !
কিন্তু পল্লব কোথায়? রুমটা যেহেতু তার অচেনা তার মানে পল্লব হয়ত তাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। আশেপাশে ঘুরে তাকাতেও পারছে না। যতটুকু সম্ভব এদিক ওদিক তাকাল পল্লবকে খুঁজতে।
কিছুতেই এ পাশ ওপাশ ঘুরতে পারছে না জয়ী। বুঝতে পারল দোতলা থেকে নামার সময় ওপর থেকে পড়ে যেয়ে যা অঘটন ঘটার ঘটেছে। হাত আর মাথায় হয়তো বেশি আঘাত পেয়েছে তাই পল্লব ডাক্তার ডেকে ব্যাণ্ডেজ় করেছে। মনে মনে পল্লবকে খুঁজেই যাচ্ছে সে।
হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ায় তুহিন। তুহিনকে দেখে তো জয়ীর চোখ ছানাবড়া।
এ কাকে দেখছে সে? তুহিন? এ তো সেই ছেলে যার ভাস্তিকে সে বিয়ের আগে পড়াত। সেই বেয়াদব ছাত্রী নেহার চাচ্চু। নেহাকে সে যখন পড়াত তখন কয়েকবার দেখা হয়েছিল তুহিনের সাথে তার। তুহিন তখন বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ত। তার থেকে দুই ব্যাচ জুনিয়র তুহিন।
প্রায় তিন বছর পর তুহিনকে দেখলেও জয়ীর তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না। সে প্রচণ্ড অবাক হয় তুহিনকে দেখে। এই মুহূর্তে কী বলবে সে বুঝতে পারছে না। তুহিনকে দেখে শরীরের ব্যথাকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে গেল সে।
– আহা! করছেন কী! ব্যস্ত হবেন না! আপনার এখন রেস্ট প্রয়োজন। প্লিজ, শুয়ে থাকুন।
কোনোমতে একটু আধাশোয়া অবস্থায় উঠে বসল জয়ী।
– আপনি… না মানে আমার ভুল না হয়ে থাকলে আপনি নেহার চাচ্চু, তাই না?
– জি, ঠিকই বলেছেন। আমি তুহিন, নেহার চাচ্চু।
– কিন্তু আমি এখানে কোথায়.. মানে… আসলে…
– আপনি শান্ত হোন, প্লিজ! আমি বলছি। এটা আমার বাসা। আপনি আমার রুমেই আছে।
জয়ী অবাক হয়ে বলল, মানে? এখানে আমি? পল্লব কোথায়?
– আপনাকে আমি নিয়ে এসেছি। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন আপনার বাড়ির পেছনে। সেখান থেকে আমার এক বিশ্বস্ত লোক আপনাকে নিয়ে এসেছে। সেখান থেকে এনে ডাক্তারও দেখিয়েছি আপনাকে। আপনি বেহুশ ছিলেন তাই কিছুই মনে নেই আপনার।
জয়ী আরো অবাক হয়। সে তুহিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মুখ দেখে তুহিন বুঝতে পারে ব্যাপারটা।
– আপনি বেশি প্রেসার নিবেন না, প্লিজ। আমি শুরু থেকে সবকিছু খুলে বলি। না হলে কিছুই বুঝতে পারবেন না।
আমি নেহার চাচ্চু এটা ঠিক। তবে আমার আরেকটা পরিচয়ও আছে। আমি আপনার হাজবেন্ড পল্লবের বড় খালার ছোট ছেলে। মানে আপনার নানা শ্বশুর আমার নানা ছিলেন। আমাদের সাথে আপনাদের পরিবারের বন্ডিং ভালো না বলেই হয়ত আপনার সাথে আমাদের পরিচয় নেই। আমি শাহীন তালুকদার এর ছোট ভাই তুহিন তালুকদার।
জয়ীতা এবার যেন সব আরো এলোমেলো করে ফেলল। একেই বলে পৃথিবী গোল। ঘুরেফিরে আবার সেই এক জায়গা।
জয়ীতার ফেইস দেখে তুহিন বুঝতে পারে যে ব্যাপারটা এখনো ক্লিয়ার না জয়ীতার কাছে। তাই সে সবকিছু খুলে বলার জন্য চেয়ারটা টেনে নিয়ে জয়ীর বিছানার পাশে বসল।
– দেখুন, আপনি যে পল্লব ভাইয়ের ওয়াইফ এটা আমি জেনেছি গত পরশু নিউজপেপারে আপনার নিখোঁজ সংবাদ দেখে। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। পরে নেহাকে দেখাই। ও দেখেই আপনাকে চিনে ফেলেছে। যাই হোক মূল কাহিনীতে আসি।
আপনি যে কিডন্যাপ হয়েছেন এটা আমার আর ভাইজানের কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি। ভাইয়া এবার আমাদের এলাকা থেকে নমিনেশন পাচ্ছে এমপি ইলেকশানে। ওদিকে অপজিশন থেকে পাচ্ছে ছোট খালামণি। ভাগ্যের কী পরিহাস দেখেন! রক্তের সাথে রক্তের লড়াই হচ্ছে। যাক, সেটা আমাদের নিয়তি! আমি জন্মের পর থেকেই এটা দেখে বড় হয়েছি। নানার সম্পত্তির অধিকার নিয়ে খালামণি আর ভাইজানের তুলকালাম লড়াই চলছে তো চলছেই। কেউ কাউকে এক চুল ছাড় দিতে রাজী নয়। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখতে দেখতে আমি ভীষণ ক্লান্ত!
জয়ী বুঝতে পারছে না এসব গল্প তাকে কেন শোনাচ্ছে? এসবের সাথে তার কী সম্পর্ক?
– ভাবছেন এসবের মাঝে আপনার কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, মিস। আপনি হলেন এদের দু’জনের মাঝে বলির পাঠা। আমি যতদূর জানি আপনার শাশুড়ি মানে আমার খালামণি আপনাকে এমনিতেই নাকি পছন্দ করেন না। করার কথাও না। সে যে হাই ক্লাস মেইনটেইন করে চলে সেখানে আপনাকে মেনে নেওয়া ওনার জন্য আসলেই খুব বেশি বেমানান। অর্থ প্রাচুর্যের অহংকার ছাড়া আর কিছুও চিনেন না। যদি ভালোই হতো তবে তার নিজের সংসারটা অনন্ত ঠিকঠাক করতে পারত!
আমার খালামণি নিজেই আপনাকে কিডন্যাপ করেছে যাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারে। একদিকে আপনাকে তার ছেলের লাইফ থেকে সরিয়ে দেয়া অন্যদিকে আমার ভাইজানকে আপনার কিডন্যাপের দায়ে ফাসিয়ে দেওয়া। সে অলরেডি এভাবে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেও।
আমার আর ভাইজানের বিশ্বাস ছিল আপনি ওই বাড়িতেই আছেন। ও বাসার সিসি ফুটেজ গায়েব হলেও আপনার নিখোঁজ হবার দিনের আগ হতে শুরু করে পরের দু’দিন পর্যন্ত আপনাদের বাসার সামনের পেছনের রাস্তার ফুটেজ আমরা তন্নতন্ন করে দেখেছি। কোথাও আপনার নাম নিশানা দেখিনি। তখনই শিওর হয়েছি আপনি ও বাড়িতেই আছেন। তাই ভাইজানের নির্দেশে আমাদের লোক ছদ্মবেশে ও বাড়ির চারপাশে কড়া পাহাড়ায় ছিল। আমাদের ধারণাই সত্যি হয়েছে। আপনাকে আমরা সময়মত উদ্ধার না করলে আপনার শাশুড়ি না জানি এতক্ষণে কী করে ফেলত! সবই আল্লাহর রহমত!
আপনি দোতলা থেকে নামার সময় পড়ে গিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন। মাথা আর হাতে অনেকটা থেতলে গেছে। তাই আমি ডাক্তার ডেকে আপনার চিকিৎসা শুরু করেছি। আপনি এই বিশ/ একুশ ঘণ্টা ধরে এখানেই আছেন।
জয়ীর তো মাথা ঘুরছে এসব শুনে! এতকিছু চলছে তাকে নিয়ে! কিন্তু এতকিছুর মাঝে পল্লব কোথায়?
-আমতা আমতা করে সে বলল, আচ্ছা, পল্লব কি জানে কিছু? সে কোথায় ?
– পল্লব ভাইয়ের কোনো খোঁজ সঠিক জানিনা তবে যতটুকু শুনেছি সে অসুস্থ। জ্বরের কারণে হসপিটালে এডমট করতে হয়েছে। মিডিয়ার লোকজনও তাকে খুঁজছে। কিন্তু সে নাকি হসপিটালে। ভয় নেই খালামণির তত্ত্বাবধানেই আছে।
– পল্লবের অসুস্থতার কথা শুনে খুব খারাপ লাগল জয়ীর! খারাপ লাগাটাকে চেপে রেখে সে আস্তে করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলল, কিন্তু আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?
– কোথায় নিয়ে যাব বলুন! আপনাকে চোরের মত করে চুরি করে নিয়ে এসেছি। বস্তায় ভরে নিয়ে আসতে হয়েছে। না হলে কেউ যদি কোনোভাবে টের পেত তাহলে সব শেষ!
জয়ী এবার বুঝল তার সারা শরীর এত ব্যথা হওয়ার কারণ! বস্তায় ভরে আলু পটলের মতো টানতে টানতে তাকে নিয়ে এসেছে। তাও যাই হোক, প্রাণে তো বেঁচেছে। তুহিনকে বিশ্বাস করা যায়। সে তেমনই ছেলে। এ বাড়িতে এই একজন মানুষকেই তার মানুষ মনে হতো। খুবই পরোপকারী আর নেক মনের মানুষ।
– জয়ীতা সাহস করে বলল, আমাকে এখন কী করবেন? মানে আমি আপনার ভাইয়ার জন্য কী কাজে আসব? কোনো স্বার্থ ছাড়া তো আর আমাকে আনেন নি!
– দেখুন, ভুল বুঝবেন না, প্লিজ! এটা ঠিক যে ভাইজান আপনাকে তার হাতিয়ার হিসেবে ইউজ করতে চাইছে। কিন্তু আমি তেমনটা নই! ভাইজানের রেগুলার চেকআপের জন্য ভাবী ভাইজান গত পরশু ইন্ডিয়াতে গেছে। সাথে নেহাও গেছে কীসব শপিং করার জন্য। তাই তারা কেউই আপনার ব্যাপারে কিছুই জানে না। আমি কিছুই জানাইনি। জানাতেও চাই না। আপনাকে এখানে যে নিয়ে এসেছে ও আমার খুব ক্লোজ লোক । ওকে নিষেধ করেছি কাউকে কিছু বলতে।
– কেনো নিষেধ করেছেন? জয়ী কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
– আমি চাই না আপনি কোনো নোংরা রাজনীতির শিকার হন। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এসব ভীষণ ঘৃণা করি। ভাইজান হয়ত দু’ একদিনে চলে আসবেন। সে ফেরার আগে এখান থেকে আপনাকে কোথাও নিরাপদে রেখে আসতে চাই। বাসার কোনো সার্ভেন্টও আপনার এখানে আসার খবর জানে না। তাই কেউ কিছু টের পাবার আগে এখান থেকে বের হতে হবে। ভাইজানের কানে গেলে আমার কিছু করার থাকবে না আর। ভাইজানের হাতে পড়লে উনি আপনার থেকে সব সত্যি বের করে ছাড়বেন। বুঝতেই তো পারছেন। আপনাকে ব্যবহার করে নিজের অপজিশনকে উইক করতে চাইবেন। ভাইজান আর ছোট খালামণি প্রায় কাছাকাছি বয়সের। এদের বুদ্ধির মাত্রাও কারো থেকে কারো খাটো নয়।
জয়ীর মাথা বনবন করছে এসব শুনে। এক বিপদের মুখ থেকে বেঁচে এ আবার নতুন কোন বিপদে জড়াতে যাচ্ছে সে। তুহিনকেই বা সে বিশ্বাস করবে কেনো? সেও তো ওদেরই রক্ত। অবশ্য তুহিনকে সে যতটুকু চিনে অবিশ্বাস করার মতো ছেলে সে না। তবুও বলা তো যায় না। সে কী করবে বুঝতে না পেরে বলল,
– আমি পল্লবের কাছে ফিরতে চাই, প্লিজ। আর কোথাও যেতে চাই না।
– আর ইউ ক্রেজি? এই মুহূর্তে পল্লবের কাছে ফেরা মানে আবার নিজেকে বিপদে ফেলা। তাছাড়া পল্লব কোথায় আছে সেটা আমি নিজেই জানি না। এই মুহূর্তে আপনি নিখোঁজ সবার কাছে। নিজেকে বাঁচাতে চাইলে আপনাকে নিখোঁজই থাকতে হবে। শুধু পল্লবই কেনো এ সময়ে আপনার কোনো আপনজনের কাছেও যাওয়া যাবে না।
– জয়ী কী করবে না করবে কনফিউজড। তাছাড়া পল্লবের জন্যও চিন্তা হচ্ছে খুব।
– জয়ীকে কনফিউজড দেখে তুহিন বলল, আর আপনার যদি আমাকে বিশ্বাস না হয় সেক্ষেত্রে পুলিশের কাছে হেল্প চাইতে পারেন। তবে আমার দৃষ্টিতে সেটা হবে চরম বোকামি। পুলিশ কাস্টডিতে গেলেই আপনাকে আবার আপনার শাশুড়ির হ্যান্ডওভার করা হবে। আর ঘুরে ফিরে আদতে ঘটনা সেই একই হবে। আমার সীমিত জ্ঞানে যতটুকু বুঝি আপনি নিশ্চয়ই আপনার শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারবেন না। কারণ দিনশেষে তার ঘরেই আপনাকে ফিরতে হবে। পারলে অনেক আগেই পারতেন। তাছাড়া পল্লব ভাইয়ের সন্ধান না জানা পর্যন্ত কিছুই করতে পারবেন না আপনি।
জয়ীতা অনেকক্ষণ ভেবে বুঝল সে আসলেই ঠিক বলেছে। এই মুহূর্তে তুহিনকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যে বিপদের হাত থেকে সে বেঁচে ফিরেছে এর থেকে বড় আর কিইবা হতে পারে?
– জয়ীতা অনেকক্ষণ ভেবে পরে বলল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন এখন?
– আপাতত মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় রেখে আসব। ওখানে নিরাপদে থাকবেন। ওর নাম মিতা। আমরা ভার্সিটিতে একসাথে পড়েছি। ওর হাজবেন্ড বাইরে থাকে। একটা বাচ্চা নিয়ে শাশুড়ির সাথে থাকে। খুব ভালো মেয়ে। আমার সাথে ওর খুব ভালো রিলেশন। ওকে আপনার বিপদের কথা জানাতেই ও রাজী হয়ে গেছে। আমি ঢাকাতেই কোথাও আপনাকে রাখতে পারতাম। কিন্তু নিরাপদ মনে করছি না।
মেয়েদের নাম শুনে জয়ী কিছুটা ভরসা পেল।
– আজ রাতেই আমরা বের হবো।
– কিন্তু পল্লব?
– আমি আপনাকে রেখে এসে পল্লব ভাইয়ের সন্ধান করব। এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন সে যেখানেই থাক ভালো আছে। কারণ নিজের ছেলের কোনো ক্ষতি করবে না খালামণি। এতটা বোকা সে না। আপাতত নিজে সেফ থাকবেন কীভাবে সেটা বেশি জরুরী।
জয়ী অনেক ভেবে রাজি হলো।
তুহিন কিচেন থেকে নিজে খাবার নাম করে এক প্লেট খাবার নিয়ে আসে।
খাবার দেখে জয়ীতার মুখে পানি চলে এলো যেনো। কতদিন সে পেটপুরে খায় না। তুহিন প্লেট এগিয়ে দিয়ে খেতে বলতেই খুশির চোটে হাত বাড়িয়ে খাবার খেতে যেতেই সে অনুভব করল তার ডান হাতে এতটাই ব্যথা যে কিছুতেই সে খাবার খেতে হাত বাড়াতে পারছে না। তুহিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেই খাবার তুলে জয়ীতার মুখে তুলে দিতে গেল।
জয়ীতা ইততস্তবোধ করছে দেখে সে বলল, এছাড়া উপায় নেই। প্লিজ, না করবেন না। আমি অন্য কারো সাহায্য নিতে পারছি না। তাছাড়া আপনার হাতের যে সিচুয়েশন তাতে নিজে খেতেও পারবেন না। খেয়ে নিন,প্লিজ।
জয়ীতা অগত্যা কোনো উপায়ান্তর না দেখে কোনোভাবে খাবারটা খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষ হলে তুহিন তাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলল, একটু রেস্ট নিন। আমরা ঘণ্টা দুয়েক বাদেই বের হব। রাত আরো গভীর হোক। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেই আমরা বের হবো। আমি এখানেই আছি। আমিও একটু রেস্ট নেই। কিছু লাগলে জানাবেন।
তুহিন ঘুমিয়ে গেলেও জয়ীর ঘুম আসে না। সে তাকিয়ে দেখছে তুহিনকে। নিশ্চিন্তে সোফাতে ঘুমাচ্ছে। তুহিনকে অবিশ্বাস করার কোনো অপশন এই মুহূর্তে নেই তার হাতে। নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলো সে। দেখা যাক তার নিয়তি আর সময় তাকে কোথায় নিয়ে যায়?
নিজের জন্য খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেও পল্লবের কথা ভেবেই বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠল। পল্লব ভালো আছে তো? কবে দেখা হবে পল্লবের সাথে তার? আর কি আদৌ দেখা হবে পল্লবের সাথে?
ঝাপসা চোখজোড়া থেকে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারায়। নিয়তিই তার এখন একমাত্র পুঁজি।
চলবে…..
#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৮
প্রায় বিশ দিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত জয়ীতার কোনো খোঁজ মেলেনি। জয়ীতাকে হারিয়ে পল্লবের পাগলপ্রায় অবস্থা। চতুর্দিকে খোঁজ লাগিয়েও জয়ীতার সন্ধান করতে পারলেন না সাজেদা চৌধুরী। সম্ভাব্য প্রতিটি জায়গাতেই তিনি লোক লাগিয়েছেন জয়িতার খোঁজে কিন্তু রেজাল্ট সেই একই। দিন দশেক পল্লবকে হসপিটালে চিকিৎসার নামে বন্দি করে রাখা গেলেও ক’দিনই বা আর রাখা যায়! পল্লবের চিৎকার-চেঁচামেচিতে বাধ্য হয়ে তার মা তাকে বাসাতে নিয়ে এসেছে। বাসায় ফিরেও সেই একই অবস্থা। পল্লব কিছুতেই জয়ীতার হঠাৎ এভাবে গুম হয়ে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছে না।
তার অভিযোগের তীর এখনো পর্যন্ত তার মায়ের দিকেই।
যদিও গত রাতে সাজেদা চৌধুরী কেঁদেকেটে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে কসম কেটেছে যে সে জয়ীর কোন খবর জানে না। যদি জানত তাহলে সে নিজেই জয়ীকে পল্লবের হাতে তুলে দিত। সে এমনভাবে অভিনয় করেছে যে পল্লবের বিশ্বাস না করেও কোনো উপায় ছিল না তখন। তাছাড়া এটা তো এখন সত্যি যে সে নিজেই এখন জয়ীর কোন খোঁজ জানেনা তাই পল্লবকেই বা কী করে খোঁজ দিবে?
পল্লব প্রতিদিন থানায় যাচ্ছে জয়ীতাকে খোঁজার জন্য, নানাভাবে তদবির করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ছে সে। এখন তো সে এই ভয়ে আছে জয়ীতা আদৌ কি বেঁচে আছে তো? তার বাবা খালেক সাহেব ফোন দিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছে। যেকোনো মূল্যে জয়ীতাকে খুঁজে বের করতে অনুরোধ করেছে। তাকে মিথ্যে আশ্বাস তো দিয়েছে কিন্তু কী করবে পল্লব নিজেও জানে না। এদিকে প্রতিদিনই জয়ীর মা ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে। তাকে কী করে সান্ত্বনা দেবে সেই ভাষাও পল্লবের জানা নেই।
তুহিন সপ্তাহে একবার মুন্সীগঞ্জে যায় জয়ীর সাথে দেখা করতে। সে জয়ীর ব্যাপারে কারো কাছেই মুখ খোলেনি। আসলেই তুহিন চায় না জয়ীকে নিয়ে তার ভাই কোনো ধরনের নোংরা পলিটিক্স করুক। তুহিনের সাথে জয়ীর সম্পর্ক এখন বন্ধুসুল। জয়ী এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। ঢাকার সব খোঁজ-খবর সে তুহিনের কাছ থেকে পায়। পল্লব বাসায় ফিরেছে একথা সে জানে এবং তাকে যে পাগলের মত খুঁজছে এটাও জানে।
তুহিন তার যে বন্ধুর পরিবারে তাকে রেখে গিয়েছিল এরা খুব ভালো মানুষ। তুহিনের বন্ধু মিতা তাকে বোনের মতোই ভালোবাসে। মিতার শাশুড়ি তাকে মেয়ের মত জানে। তবুও জয়ীতার এখানে মন টিকতে চায় না। তার মন ছটফট করছে শুধু পল্লবের কাছে ফেরার জন্য। তুহিন কিছুতেই তাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হতে দিতে চাচ্ছে না। সে চাচ্ছে নির্বাচন শেষ হবার পরেই তাকে এখান থেকে বের করতে। কারণ তার ভাইজান আর খালামণি কেউ যাতে আবার কোনো নতুন গেম খেলতে না পারে তাকে নিয়ে।
জয়ীতা আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল তখনই মিতার বাচ্চাটা ছুটে এসে তাকে বলল, তুহিন আংকেল এসেছে। জয়ীতা দ্রুত তুহিনের সাথে দেখা করতে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়াল।
তুহিন জয়ীতার সাথে কথাবার্তা শেষ করে যখন চলে যাবে তখন জয়ীতা বলল, আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন আপনার কাছে আমি যতই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব ঠিক ততটাই কম হবে! নিঃস্বার্থ এমন বন্ধু পৃথিবীতে এখন আর কোথায় মিলে বলুন! আমার জন্য আপনি যা করেছেন তা আপন কোনো মানুষও আজকাল করে কিনা আমার সন্দেহ!
আপনার কাছে আমি ছোট একটা আবদার করতে চাই।
– এসব বলে লজ্জা দিবেন না, প্লিজ। আমি একজন মানবিক মানুষের দায়িত্ব পালন করেছি। প্লিজ, আপনার জন্য কী করতে হবে বলুন।
– আমাকে শুধু একবারের জন্য পল্লবের সাথে দেখা করিয়ে দিন, প্লিজ।
তুহিন খানিকক্ষণ মৌন থেকে বলল, দেখুন! আমি আপনার ভালোর জন্যই বলেছিলাম। পল্লব ভাইয়ের সাথে এই মুহূর্তে দেখা করা মানেই পল্লব ভাই আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইবে। আর সব সত্য জানলে আপনার শাশুড়ির সাথে তুমুল ঝামেলা বাধাবে। আপনার কি মনে হয় না এটা আমাদের করা মনে হয় ঠিক হবে না?
জয়ীতা তুহিনের কোনো কথাই বুঝতে চাইছে না। তার কাছে এই মুহূর্তে পল্লবের সাথে দেখা করাটাই বেশি জরুরি। তার মনে হচ্ছে পল্লব তাকে না পেয়ে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাই পল্লবকে জানানো প্রয়োজন সে ভালো আছে।
জয়ীতার জিদের কাছে তুহিন হেরে গেল। সে তাকে কথা দিলো দু’একদিনের মাঝেই সে ব্যবস্থা করবে।
তুহিনের কথা শুনে জয়ীর বুকের উপর থেকে যেনো পাহাড় নেমে গেল।
হান্নান সাহেবের সাথে একটা কফিশপে বসে আছে পল্লব। পল্লবের মুড ঠিক করার জন্য তার বাবা হান্নান সাহেব তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। পল্লব প্রথমে আসতে চায়নি। কিন্তু পরে ফোনে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে দেখা করাতে রাজী করাতে পেরেছে। এমনিতেই হান্নান সাহেবের মানসিক অবস্থাও ভালো না। সেদিন তার একসময় এর প্রেমিকা পল্লবের মা সাজেদা চৌধুরী হুমকি দিয়ে গেছে। সাজেদা চৌধুরী মনে করছেন, জয়ীর কাছে তাদের পুরানো প্রেমের গল্প সেই জানিয়েছে। নয়ত সেদিনের পুচকে মেয়ে এসব জানল কী করে? পল্লবের জন্মের ইতিহাস একমাত্র সে আর হান্নানই জানে! আর জানে তার স্বামী খালেক সাহেব। তবে সাজেদা চৌধুরীর দৃঢ় বিশ্বাস এ কথা খালেক সাহেব কোনোদিনই কাউকে জানাবে না। পল্লবকে সে প্রাণাধিক ভালোবাসে। তাই পল্লবকে হারানোর ভয়ে কখনোই কারো কাছে সে জানাবে না যে পল্লব তার ছেলে নয়। তাহলে বাকী থাকে একজনই, হান্নান সাহেব।
আর হান্নান সাহেবকে অবিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তি আছে তার। সে জানে হান্নানের মতো একটা হারামীর পক্ষে সবই সম্ভব।
হান্নান সাহেব ছিল তার বাবার পিএস। চলনে বলনে দেখতে সবদিক থেকে স্মার্ট আর সুদর্শন। তার স্বামী খালেক সাহেব যার কাছে কিছুই না। সাজেদার বাবার পিএস হবার সুবাদে প্রায়ই আসা যাওয়া লেগে থাকত তাদের বাড়িতে। কল্লোলের জন্মের আগে থেকেই পরিচয় থাকলেও সখ্যতা বাড়ে আরো পরে। চেনা জানা থেকে একসময় তাদের সম্পর্ক বিছানায় গড়ায়। এভাবে চলছিল তার বাবা মারা যাবার পরেও। কিন্তু ধীরেধীরে নানা কারণে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয় দু’জনের মাঝে। সাজেদা চৌধুরীর ভালো লাগা ফুরাতে থাকে। তখন নিজেই তার জীবন থেকে বের করে দেন হান্নান সাহেবকে। হান্নান সাহেব আগে থেকেই বিবাহিত ছিল, বাচ্চাকাচ্চাও ছিল। সাজেদা চৌধুরী হান্নান সাহেবের থেকে দূরে সরে গেলেও পল্লবের কারণে চাইলেও দূরে সরতে পারলেন না। হান্নান সাহেব যখন বুঝলেন যে সাজেদা চৌধুরীর কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে তখন সে শুরু করল ব্লাকমেইলিং। পল্লবের সাথে তার বায়োলজিকাল রিলেশন সবার কাছে ফাঁস করে দিবে এমন হুমকি দিতে থাকে। তখন বাধ্য হয়ে তার ডিমান্ড পূরণ করতে তার বাবার একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তার নামে লিখে দেন। তবে তাদের চুক্তির শর্তনামায় সাজেদা চৌধুরী স্পষ্ট এটা উল্লেখ করেন, যদি কোনোভাবে তার মাধ্যমে পল্লবের সাথে তার সম্পর্কের কথা কারো কাছে ফাঁস হয় তবে এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বা তার সমপরিমাণ মূল্য ফেরত দিতে হান্নান সাহেব আইনত বাধ্য।
হান্নান সাহেব কখনো কারো কাছে কিছু ফাঁস না করলেও অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেন এই একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কী হবে যদি সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসটাকেই সে নিজের করে নিতে পারে! সেই মতোই সে সুযোগ বুঝে পল্লবকে নিজের পরিচয় দেয়। সেটাও কী কম কঠিন ছিল! কত কাঠখড় পুড়িয়ে পল্লবকে বিশ্বাস করিয়েছে। এখন পল্লবই তার একমাত্র ভরসা। অথচ সেই ছেলে তার সব বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে বেড়াচ্ছে। ও নিশ্চয়ই ওর বউয়ের কাছে সব বলেছে নইলে এই মেয়ে কী করে জেনেছে? ছেলেটার মাথাটা খেয়ে ফেলল ওই মেয়েটা। মনে মনে প্রচণ্ড বিরক্ত সে পল্লবের উপর। কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছে না
করবেই বা কী করে? মায়ের মতো তুমুল ঘাড়ত্যাড়া হয়েছে। আবার না কী করে বসে! তার চেয়ে বরং যা গেছে তো গেছে এখন মায়ের বিজনেসের হাল ধরাতে পারলেই তার জন্য ভীষণ রকমের লাভজনক।
পল্লব থমথমে মুখ করে বসে আছে। তার মুখে কোনো কথা নেই। হান্নান সাহেব তার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,
– জয়ীতার জন্য আর কত এভাবে নিজেকে সবকিছু থেকে ডিচাচড রাখবে? বিজনেসের হাল ধরো। তুমি তো অফিসে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছ একদম। যে স্বেচ্ছায় লুকিয়েছে তাকে কী আর খোঁজে পাওয়া যায়?
নিজেকে শান্ত করো। তোমার জন্য যার একফোঁটা মায়া নেই তার জন্য আর কত কষ্ট পাবে?
– পল্লব মাথা তুলে বলল, এসব বলতে আমাকে ডেকেছেন? আপনাকে কতবার বলব, জয়ী বিপদে আছে! সে আমাকে ছেড়ে যায়নি।
– কেনো বিশ্বাস করতে চাইছ না? সে তো আগেও তোমাকে ছেড়ে গিয়েছে! এবারও তাই করেছে। এসব মেয়েরা এমনই। সুযোগ বুঝে চিলে গিয়েছে। আগেরবার ভাগ্যচক্রে খালেক সাহেবের হাতে পড়েছে। এবার হয়ত প্লান করেই এগিয়েছে। ওকে আসলে তোমার আনাই উচিত হয়নি।
– আগেরবার সে স্বেচ্ছায় গিয়েছিল এটা ঠিক কিন্তু এবার সে যায়নি। এবার তার সাথে জোর করা হয়েছে। জানিনা কোথায় আছে? উফ!
– আচ্ছা, মেনে নিলাম তোমার কথা! এতদিন হয়ে গেল। কোনো খোঁজখবর তো মিলল না। আমার মনে হয় তোমার এবার স্বাভাবিক জীবনে ব্যাক করা উচিত। তোমার এভাবে সবকিছু থেকে একদম গুটিয়ে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না।
– আমি নিজেকে যখন বিজনেসের জন্য ফিট মিনে করব তখনই ব্যাক করব। তার আগে নয়। আপনি পারলে জয়ীকে কী করে খুঁজে পাওয়া যায় সেই উপায় বলুন। ক্ষেপে যেয়ে বলল, পল্লব।
– জয়ী, জয়ী! এই মেয়ের কারণেই তোমার লাইফটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কবে ব্যাক করবে? সব হাতছাড়া হবার পরে? টেবিল চাপড়ে বললেন, হান্নান সাহেব।
– হা হা! আমার লাইফ? আমার লাইফটাকে তো একটা কমেডি করে রেখেছেন আপনি আর আমার আম্মি। জয়ীকে মিথ্যে ব্লেম করছেন কেনো? ওই বরং আমাকে একটা গণ্ডির মাঝে গুছিয়ে এনেছিল।
আর প্লিজ, আপনি এসব বিজনেস ফিজনেস নিয়ে কথা বলবেন না তো! এসব আর ভালো লাগে না। আমি উঠব। আমার সাথে একদমই কন্টাক্ট করবেন না আর। আমি একটু এসব থেকে দূরে থাকতে চাই।
– আমার কথা তো ভালো লাগবেই না। এটা কেনো বোঝো না আমি যা বলি তোমার ভালোর জন্য বলি। এভাবে মায়ের অবাধ্য হয়ে সব হারিও না। একসময় চোখে সরষের তেল দিয়ে কাঁদতে হবে নইলে।
– সেটা আমি বুঝব! ভয় নেই আপনার দুয়ারে যেয়ে হাত পাতব না। আপনার ছেলেমেয়েদের ভাগে কম পড়বে না। এমন দুর্দিন আসার আগে যেনো উপরওয়ালা তুলে নেন।
আর কোনো কথা না বলেই রাগে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেল পল্লব।
ছেলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গজগজ করছেন হান্নান সাহেব। এই গর্দভ ছেলে তার ঔড়সের কি করে হয় এটা ভাবতেই এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে। বিশাল সাজানো গোছানো প্লান তার। পল্লবকে কথা শোনাতে পারলেই সাজেদা চৌধুরীর রাজত্ব তার আর তার ছেলে পল্লবের হাতে। অথচ গাধার বাচ্চা গাধার কারণে সব শেষ হয়ে যাবে এটা সে কী করে সহ্য করবে! এসব কিছুর জন্য দায়ী ওই জয়ীতা। মেয়েটাকে যেই কিডন্যাপ করুক না মেরে ফেলুক একফম পার্ফেক্ট হয়েছে। এটাই ওর প্রাপ্য ছিল। রাগে অর্ডার করা কফি না খেয়েই বিল পরিশোধ করে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল হান্নান সাহেব।
চলবে…..