সুগন্ধি ফুল #পর্ব ৪ #জান্নাত সুলতানা

0
4

#সুগন্ধি ফুল
#পর্ব ৪
#জান্নাত সুলতানা

-“অসভ্য? বাট তোমার সাথে তো এখনো কিছু করি নি।”

আবরাজ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো। ফিজার দৃষ্টিতে তখনও রাগ জ্বলজ্বল করছে।
ঘাড়ে তীব্র থেকে তীব্র ব্যাথার চিনচিন করতেই মেয়ে টার ছটফটানি শুরু হলো।
ফিজার ছটফটানি আবরাজ নামক পুরুষ টার একটু নিজের কাজে হেরফের হলো না।
নিজের জিহ্বায় লবনাক্ত তরল পদার্থের আভাস বুঝতে পেরে ফিজা কে ছাড়ল। ফিজা ব্যাথায় চোখ টলমল করে। দূরে সরে ঘাড়ে হাত ছোঁয়াতে হাতে তরল কিছুর স্পর্শ পেলো। হাত টা চোখের সামনে ধরতে ই লাল রক্ত চোখে পড়লো। আবরাজ তাকিয়ে তখন মেয়ে টার দিকে।
পরপরই বলে,

-“এবার ঠিক আছে।”

ফিজা রাগে দুঃখে শুধু রাগী চোখে তাকিয়ে হনহনিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলো।
পেছন থেকে আবরাজ ফের আদেশ করল,

-“মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে যাও।”

ফিজার পা থামে। গলায় ঝুলানো ওড়না মাথায় দিয়ে নেয়। নয়তো ঘাড়ে দাগ টা যে কারোর নজরে আসবে। তখন দেখা যাবে আরো অস্বস্তিতে পড়তে হবে।

আবরাজ আলমারির উপর থেকে ফাস্টএইড বক্স নামায়। আঘাত টা ফিজা বাঁ হাতের কবজিতে করেছে। ডান হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে আবরাজ ওয়াশ রুম গেলো। ফ্রেশ হয়ে গায়ে অফিসের পোশাক জড়ালো। গায়ে পারফিউম দিয়ে তৈরী হওয়া শেষ হাতে ঘড়ির ফিতা বাঁধতে বাঁধতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। হাঁটে পুরুষ টা করিডরে। এরমধ্যে নিচে নাশতার টেবিলের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,

-“আ’ম কামিং বেবি। আম নট্ লিভিং ইউ নাউ।”

——-

আবরাজ নাশতার টেবিলে বসার পর থেকে সাব্বির বারবার আঁড়চোখে আবরাজ এর হাতে শুভ্র ব্যান্ডেজ এর দিকে তাকাচ্ছে। আবরাজ ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ও সেটা বুঝতে পারছে। সাব্বির গলা পরিষ্কার করলো। স্যার এর হাত কিভাবে কাটলো? গতকাল তো ভালো ছিলো। চিন্তার বিষয়। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

-“স্যার আপনার হাতে কি কিছু হয়েছে?”

সাব্বির এর প্রশ্নে দৃষ্টি সবার আবরাজ এর হাতের দিকে গেলো। আবরাজ ফোন রাখে টেবিলে। আঁড়চোখে একবার ফিজার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। ফিজা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে অল্প? হতে পারে। নয়তো চোখ মুখ এমন শুঁকনো কেনো লাগছে? আবরাজ এর মেয়ে টার এই রূপ টাও ভীষণ ভালো লাগলো। এভাবে কোনো মেয়ে তাকে টানে নি। যেভাবে এই রমণী আজ তিন বছর ধরে টানছে। আবরাজ এর ভাবনার মাঝে ই ইলা বেগম অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,

-“কি হলো আব্বা? কিভাবে হলো এটা?”

আবরাজ মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে সাব্বির এর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

-“তো তোমার কি মনে হয় আমি শখ করে হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়েছি?”

সাব্বির দুই দিকে ফটাফট মাথা নাড়ে। বলে,

-“না না স্যার তা কেনো হবে! আমি বলতে চাইছি এটা কিভাবে হলো স্যার?”

আবরাজ হাতের দিকে তাকিয়ে কোনো জবাব দিলো না। শুধু বিড়বিড় করল,

-“সুগন্ধি ফুল। তুমি ভেবো না আমি তোমায় ছেড়ে দেবো। ফর দ্যাট ইউ উইল সুরেলী রিসিভ আ গ্রেটার পানিশমেন্ট।”

এদিকে ফিজা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

———-

ফিজা অফিস এসে জানতে পারল আজ থেকে মিলন খান আর অফিস আসবেন না। দুই ছেলের কাঁধে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। তবে আব্রাহাম যেহেতু ছোট তাই সে আপাতত ম্যানেজার এবং আবরাজ তার থেকে উপরের পদ পাচ্ছে।

যদিও ফিজার এতো কিছু আসে যায় না। সে সাধারণ একজন এমপ্লয়ি। কিন্তু তবুও অন্যান্য মেয়ে স্টাফদের আবরাজকে নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি তার মন আবরাজ এর প্রতি আরো রাগ বাড়ছে বৈ কমছে না।
দুপুরে খাবার টাও সে এই বিষয় গুলো ভেবে আর খেতে গেলো না। নিজের ডেস্কে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। তখন এসে কেউ একটা চেয়ার টেনে ফিজার পাশে বসলো। সাব্বির নামের ছেলে টার সাথে আজ সকালে পরিচয় হয়েছে ফিজার। আবরাজ এর এসিস্ট্যান্ট। এবং খুব কাছের মানুষ। এতোদিন সে-ও আবরাজ এর সাথে বিদেশ ছিলো। ফিজার ইচ্ছে করে সাব্বির কে জিজ্ঞেস করতে, তার স্যার সেদিন বিয়ে করে কেনো তাকে ফেলে চলে গিয়েছিল? এবং কেনো গিয়েছিল? কিন্তু পরক্ষণেই এই ভাবনা চিন্তা দূর করে। সে নিজেই আবরাজ কে জিজ্ঞেস করবো।
সাব্বির নামের ছেলে টা চমৎকার হাসে। গাল ভর্তি হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-“ম্যাডাম খাবেন না?”

-“না। খেতে ইচ্ছে করছে না।”

ফিজা অল্প হাসার চেষ্টা করে জানাল। সাব্বির কিছু সময় চুপ থেকে বলল,

-“স্যার আপনাকে কেবিনে ডেকেছে।”

ফিজা একটু চমকাল। সর্বপ্রথম মনে প্রশ্ন এলো কেনো ডেকেছে আবরাজ? তার সাথে তো আবরাজ এর কোনো কাজ নেই। তাহলে? ফিজা মনের কথা মনে চেপে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বলে,

-“আচ্ছা।”

সাব্বির ব্যাস্ততার সাথে উঠে আবরাজ এর কেবিনের দিকে চলে গেলো। ফিজা আবার ফোনে স্ক্রল করতে লাগল। সে যাবে না। অফিসে এমনিতেই তাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখে। প্রথম প্রথম তো কটুক্তিও করতো। যদিও ফিজা আবরাজ এর স্ত্রী এটা জানার পর একটু-আধটু সম্মান করে। তবে সেটা মন থেকে নয়। মুখে মুখে। আড়ালে ঠিকই মেয়ে টাকে খারাপ কথা বলে। আবরাজ তাকে ফেলে গিয়েছে এরজন্য ও তাকে সবাই কম কথা শোনায় নি। অনেক কিছু সহ্য করে আজ সে এখানে।

এদিকে আবরাজ একটু পরপরই সাব্বির এর দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছে। বেচারা ভয়ে এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা অসহায় দেখাচ্ছে। মেয়ে টাকে বলা আসার পরে-ও কেনো এলো না সাব্বির বুঝতে পারছে না। এখন তার স্যার তো তার খবর করে ছাড়বে। সাব্বির আমতা আমতা করে বলে,

-“স্যার আমি আরেকবার ডাকি!”

-“শাট আপ। একটা কাজ তুমি ঠিকঠাক করতে পারো না।”

সাব্বির এর মুখ টা অসহায়। বড্ড গুরুত্বহীন মনে নিজে কে। বউ থেকে শুরু করে বসের কাছে ও সে একটা অকর্মা ঢেঁকি। কোনো কাজের না।

———-

সন্ধ্যায় বেশ হয়েছে। ফিজা ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে গেইট থেকে বেরিয়ে এলো। তার এতো দেরি কখনো হয় না। সব সময় পাঁচ টার মধ্যে বেরিয়ে পরে। আজ কখন যে কাজ করতে করতে সময় এ-তো টা হলো বুঝতে পারে নি। রাস্তায় একটার পর একটা গাড়ি সিএনজি শাঁই শাঁই করে চলে যাচ্ছে। ফিজা অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও কোনো গাড়ি পেলো না। সামনে স্টেশন সেখানে গেলে অটোরিকশা রিকশা ও পাওয়া যেতে পারে। ফিজা হাঁটা ধরলো। কিন্তু কয়েক কদম সামনে এগিয়ে আচমকাই পা জোড়া থেমে গেলো। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে উজ্জ্বল রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবরাজ খান কে দেখে।
ল্যাম্পপোস্ট এর হলুদ রঙের আবছা আলোয়ে কালো রঙের শার্ট গায়ে পুরুষ টাকে মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে। লম্বা চুল গুলো এলোমেলো কপাল ঢেকে আছে। মুখে কোনো দাড়ি নেই। যার ফলে মুখ টাও চকচক করছে। ফিজা দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো। সে বারবার কেনো পুরুষ টার সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে মরিয়া হয়? এতো কেনো টানে পুরুষ টার দিকে তাকে?
ফিজা পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আবরাজ সামনে এসে দাঁড়াল। প্যান্ট এর পকেটে বা হাত টা গুঁজে রেখেছে। ডান হাত টা দিয়ে গাড়ির দিকে ইশারা করে ঘাড় টা কাত করে বলে উঠলো,

-“গাড়িতে চলো।”

-“আমি রোজ একাই ফিরি।”

-“সিনক্রিয়েট করো না।”

-“যাব। শর্ত আছে আমার।”

-“বলো!”

-“আমাকে সব সত্যি বলতে হবে।”

আবরাজ বুঝি এতো ভালো? বউয়ের এমন চালাকি মেনে নেওয়ার পুরুষ? একদম না। ঝটফট বউ কে কোলে তুলে গাড়িতে বসায়। গাড়ি লক করে বউ কে এক টানে নিজের উরুর উপর বসাল। ফিজার এলোমেলো চুল গুলো আঙুল দিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দেয়। ফিজা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবরাজ মেয়ে টার চোখে ভয় দেখতে চায়। যা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। সে খুব ধীরে নিজের মুখ টা ফিজার দিকে এগিয়ে নিলো। অধর ছুঁয়ে ছুঁই করে দুইজনের। ফিজা মুখ তখন আচমকাই ঘুরিয়ে নিলো। আবরাজ বা হাতে ফিজার চুল গুলো শক্ত করে ঘাড় সহ চেপে ধরল। কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

-“আবরাজ খান। আবরাজ খান কে ভয় করে না তোমার?”

ফিজা আবরাজ এর থেকে দিগুণ ঘনিষ্ঠ হলো। আবরাজ চমকাল। মেয়ে টা করতে কি চাইছে? আবরাজ কে কয়েক ধাপ চমকে দিয়ে ফিজা বলে উঠলো,

-“মাফিয়ার স্ত্রী হয়ে ভয় পেলে, একজন মাফিয়ার সাথে সংসার কিভাবে করবো?”

#চলবে……

[চমক আপনাদের কেমন লাগল? অবশ্যই জানাবেন।🙂 ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
—যেকোনো গল্প সম্পর্কে আলোচনা সমালোচনা করুন আমাদেন গ্রুপে।

Group link: —https://m.facebook.com/groups/1106510644518306/?ref=share&mibextid=NSMWBT

—প্রতিদিন জনপ্রিয় এবং মন ছুয়ে যাওয়ার মতো গল্প পড়ুন আমাদের পেইজে।

page link: —https://www.facebook.com/profile.php?id=61571421772435&mibextid=ZbWKwL

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here