সুগন্ধি ফুল #পর্ব ৭ #জান্নাত সুলতানা

0
12

#সুগন্ধি ফুল
#পর্ব ৭
#জান্নাত সুলতানা

-“হু আর ইউ?”

আব্রাহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। সামনে ভীতু মেয়ে টা আড়ষ্ট হয়ে নিজের ওড়নার কোণা খামচে ধরলো। এতো রাতে এভাবে কারোর সামনে পড়বে মেহরিন হয়তো কল্পনা ও করে নি। তাই অস্বস্তি টা একটু বেশি তবে মানুষ টা কে? আবরাজ খান এর নিকটতম কেউ? অবশ্যই হতে পারে। খান বাড়িতে তো আর এতো রাতে অজানা কোনো ব্যাক্তি নিশ্চয়ই ঢোকার পারমিশন নেই। যেখানে বাড়ির গেইট থেকে শুরু করে প্রতি টা সদস্য গার্ড নিয়ে চলে।

-“কি হলো? কথা বলুন! কে আপনি?”

মেহরিন এর ভাবনার মাঝে ই আব্রাহাম ফের জিজ্ঞেস করলো। মেহরিন এর গলা কাপে। মেয়ে টা ভীতু। এরজন্য কম কথা শুনতে হয় না নিজের মায়ের কাছে। আজকাল এমন ভীতু হলে চলে? যেখানে বড়ো বোন আগুন সেখানে এই ছোট বোন জল। মোহিতা বেগম এর নিজের বড়ো মেয়ে কে নিয়ে টেনশন না হলেও ছোট মেয়ে কে নিয়ে প্রচুর টেনশন হয়। মেহরিন কোনো রকম নিজের নাম টা উচ্চারণ করলো,

-“মেহরিন।”

-“পুষ্পর ছোট বোন?”

আব্রাহাম কৌতূহল সহিত জিজ্ঞেস করলো। মেহরিন মাথা নাড়ে। এরপর গুটিগুটি পায়ে মিষ্টির রুমে ঢুকে গেলো। লম্বা পাঁচ ফিট হবে টেনেটুনে। দেখতে বেশ নাদুসনুদুস। চেহারার টা কিছু টা ফিজার মতোই। হয়তো লম্বা আর একটু হলে দু’জন কে টুইন বলতো যে-কেউ। তবে ফিজা লম্বা আরো। ফিজার শরীর এর গঠন চিকনা তবে বেশ নজরকাঁড়া। চোখের চাহনি মারাত্মক। চুল থেকে শুরু করে নাক মুখ চোখ সব কিছু ই অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে টার। আব্রাহাম ফোঁস করে দম ছাড়ে। এসব কি ভাবছে সে? নিজেই নিজের ভাবনায় বিরক্ত। সে সন্ধ্যায় একটা পার্টিতে গিয়েছিল। যদিও মিলন খান একবার তাকে বলেছিলো আজ ফিজার মা আসবে সে যেন উপস্থিত থাকে। তবে পার্টি অ্যাটেন্ড করা জরুরি ছিলো বিধায় সে থাকতে পারে নি। আব্রাহাম ক্লান্ত প্রচুর। নিজের সাথে যুদ্ধে সে জয় হতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে মনে। ক্লান্ত দেহমন দুই টাই কে টেনে নিয়ে কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো।

———

সিগারেটের তীব্র গন্ধে নাসারন্ধ্রে পৌঁছাতে গভীর তন্দ্রা ছুটে গেলো ফিজার। চোখ পিটপিট করে তাকাতে মস্তিষ্ক সচেতন হলো। স্মৃতিতে এলো রাতে ডিনারের পর আবরাজ আর কক্ষে ফিরে নি। সামনে সাদা রঙের দেয়ালে টানানো বড়ো সোনালী রঙের ঘড়ি টা দেখলো ফিজা। রাত একটা বেয়াল্লিশ মিনিট। কক্ষে লাইট জ্বলছে তখনও। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বিধায় লাইট অন রয়ে গেছে। ফিজা গায়ের এলোমেলো রাতের পোশাক ঠিক করে। বিছানা ছেড়ে পায়ে স্যান্ডেল পড়ে নিলো। বড়সড় কক্ষ টার বিশাল একটা ব্যালকনি আছে। কাচের দেয়ালের ওপাশে ব্যালকনিতে নীল রঙের লাইট জ্বলছে। ব্যালকনি থেকে কক্ষের ভেতর দেখা না গেলো কক্ষের ভেতর থেকে ব্যালকনি স্পষ্ট। সেখানে দোলনা টায় বসে আছে সুঠাম দেহর অধিকারী আবরাজ খান।
ফিজা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে ও যেন সামনে এগুনোর মতো মনস্থির করতে পারছে না। অভিমানে রাগে পুরুষ টার সম্মুখে দাঁড়াতে তার অন্তরে দহন হয়। কিন্তু তাতে কি? যার জন্য এই যাতনা সে কি তা টের পায়? কিভাবে পাবে! যার একটা বিয়ে করা বউ আছে এটা সে তিন বছরে একবার খোঁজ নেওয়ার সময় ছিলো না সে কি করে বউয়ের অন্তরের যাতনা অনুভব করবে? ফিজা তাচ্ছিল্য হাসে। ব্যালকনির দিক থেকে পা ঘুরিয়ে লাইট অফ করলো। তারপর শুয়ে পড়লো গিয়ে আগের স্থানে।
আবরাজ যেদিন ফিরলো ফিজা আবরাজ এর সব সত্যি জেনে ছিলো সেদিন। তখন তো সে স্বামী এতো বছর পর ফিরবে শুনে খুশিই হয়েছিলো। অনুভূতি অভিমানের হলেও ভালো লাগার ছিলো মনের কোথাও। এতো বছর পর নিজের স্বামী নামক পুরুষ টাকে দেখবে। ছুঁবে। কথা বলবে। অভিমান করবে। তবে পরবর্তীতে এসব জানতে পেরে সব আনন্দ মাটি হলো। মিইয়ে গেলো মেয়ে টা। মাথাচাড়া দিলো বিয়ে করা বউয়ের চেয়েও বেশি মূল্যবান সম্পদ আবরাজ খান এর নিকট তার কর্ম। গ্যাংস্টারগিরি। আবরাজ খান মানুষ টার গম্ভীর মুখ টার আড়ালে একটা ভয়ংকর রূপ রয়েছে।
হয়তো এটা কেউ জানে না। ফিজা চায় নি এটা তার সামনে আসুক। আগেই তো ভালো ছিলো। যখন এসব না জেনে মানুষ টার জন্য দিনের পর দিন। মাসের পর মাস এবং দেখতে দেখতে তিন বছর অপেক্ষা করে ছিলো। এখন যেন সব বিষাক্ত লাগে। সব ছেড়ে ছুঁড়ে দূরে কোথাও গিয়ে নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। যেখানে তাকে আবরাজ খান নামক পুরুষ টার এসব কিছু ছুঁতে পারবে না।

-“আমি তোমাকে বারবার ছুঁয়ে দেব। হাজার বার ছুঁয়ে দেব। পাগল করবো আমার মাতাল করা স্পর্শে। তুমি আমার স্পর্শ থেকে পালাতে পারবে না। আমি তোমার পিছু ছাড়বো না।”

হঠাৎ নিজের উপর আবরাজ এর উপস্থিত টের পেলো। মাদকাসক্ত কণ্ঠস্বর। আবরাজ বউয়ের একদম নিকটে। মুখ থেকে সিগারেটের তীব্র গন্ধ ফিজার গা গোলাচ্ছে। সহ্য হয় না গন্ধ টা। অথচ আবরাজ এর কোনো হেলদোল নেই বউয়ের রিয়াকশন দেখে। ফিজার রাগে দুঃখে কাঁদতে মন চাচ্ছে। একটু দয়া কেনো নেই এই পুরুষ টার মনে? কেনো এতো পাষাণ? তবে ফিজা বা কম কিসে? ঝট করে নিজে শোয়া থেকে উঠে বসলো। পিছিয়ে গিয়ে গায়ে কম্ফর্টার জড়িয়ে বসে। মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে,

-“কথা দিয়ে ভুলাতে আসেন বারবার।”

-“তো অন্য কিছু করতে তো দিচ্ছ না।”

আবরাজ বাঁকা হেঁসে বললো। ফিজা অন্ধকারে আবছা আলোয়ে ঠিক বুঝতে পারে আবরাজ তারই দিকে তাকিয়ে আছে। ফিজার দৃষ্টি ও তীক্ষ্ণ। তাচ্ছিল্য হাসে মেয়ে টা। বলে উঠলো,

-“বিদেশি নারীর শরীর কি পানসে লাগে এখন? না-কি রুচি উঠে গেলো?”

-“বিদেশি তে রুচি থাকলে তোমার কাছে আসতাম না-কি?”

থমথমে পরিবেশ। ফিজা সামনে বসা আবরাজ কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হেয়ালি স্বরে বলে,

-“সেটাই। একটা দুই টা দিয়ে তো আপনাদের হয় না। প্রতিদিন নিত্যনতুন লাগে।”

আবরাজ কোনো জবাব দেয় না৷ সত্যি সে ভালো মানুষ নয়। বিয়ের পরে সে কোনো নারীর সাথে বেড শেয়ার না করলে-ও বিয়ের আগে তো শখানেক নারীর শরীর অনায়াসে ছুঁয়েছে।
তাই এখানে নিজে কে সে সাধু প্রমাণ করতে চাইলো না। কিংবা মিথ্যা বা সত্যি কোনো টাই বলতে চাইছে না। ফিজা কখনো ই আবরাজ এর থেকে পজিটিভ কোনো উত্তর আশা করে না। মূলত সে পজিটিভ নেগেটিভ কোনো টার আশাই করে না। তাই উত্তর এর অপেক্ষা করে না। পরপরই জিজ্ঞেস করে,

-“আমার মা’কে কেনো ডেকেছেন এখানে?”

-“মেয়ে কে কত দিন দেখবেন না তার তো শিওরটি দিতে পারছি না আমি। সেইজন্য দেখিয়ে নিলাম।”

আবরাজ শান্ত স্বরে জানালো। ফিজা বুঝে না কথার অর্থ। সে সময় নিয়ে কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে। তবুও আবার পালটা প্রশ্ন করলো,

-“মানে?”

-“তুমি সকালে আমার সাথে যাচ্ছ।”

-“কখনো না।”

সাথে সাথে জবাব দিলো ফিজা। আবরাজ এর গম্ভীর মুখখানা এবার স্পষ্ট। অন্ধকারে বেশিক্ষণ থাকার ফলে ভালোই দেখতে পাচ্ছে একে-অপরকে। যেহেতু ব্যালকনিতে তখনও লাইট জ্বলছে। ফিজার জবাব মোটেও যে পছন্দ হয় নি আবরাজ এর ফিজা সেটা আবরাজ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে সক্ষম হলো। তবে আবরাজ যে রেগে গিয়েছে মেয়ে টা বিন্দু পরিমাণ আঁচ করতে পারে না। আবরাজ এর ফরসা মুখের লম্বা নাকের ডগা টা অল্প কাপে। সাথে চোখ ও লাল হয়েছে। আবরাজ নিজের কপালে পড়ে থাকা চুলের আড়ালে কপালে তর্জনী আঙুল ঘষে। দাঁতে দাঁত চেপে পুরুষ টা আওড়াল,

-“আই ডোন্ট লাইক পিপল টকিং টু মি লাউডলি। আমার সাথে উঁচু স্বরে কথা বললে আমার অসহ্য লাগে। সেখানে তুমি আজ এক সপ্তাহ নাগাদ আমার উপর খবরদারী করে যাচ্ছ।”

-“তাহলে দূরে থাকুন আমার থেকে।”

রাগাচ্ছে কেনো মেয়ে টা তাকে? সে কি বুঝতে পারছে না এটার জন্য তার ভয়ংকর শাস্তি বরাদ্দ হতে পারে? আবরাজ রাগ নিয়ন্ত্রণ এর প্রয়াস চালায়। নিজের সিগারেটে পোড়া কালচে অধর কামড়ে ধরে রাখে দাঁত দ্বারা। রাগ কমাতে অক্ষম নয় সে। তবে এটার জন্য নিজে ই নিজে কে ক্ষত-বিক্ষত করতে হয়। ফিজা দাঁতের ঘর্ষণের শব্দে অনুমান করলো আবরাজ দাঁত কিড়মিড় করছে। পরপরই পুরুষ টার রাশভারী কণ্ঠ স্বরে ভাসে,

-“নট পসিবল।”

-“যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজে কে আগলে রাখতে হয়। শক্ত রাখতে হয়। অক্ষত রাখতে হয় নিজে কে। আর যে পরিস্থিতি সামলাতে নিজে কে ক্ষত-বিক্ষত করে তার মতো বোকা পৃথিবীতে দ্বিতীয় টা নেই।”

ফিজার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবরাজ মেয়ে টাকে এক টানে নিজের বক্ষদেশে নিয়ে এলো। শুধু ই মুখ আর শরীর এর অর্ধেক অংশ এসছে। চুল এলোমেলো হয়ে মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে গিয়েছে। আবরাজ ফিজার এলোমেলো চুল হাতের সাহায্যে মুখ থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর ঠোঁটের কোণায় আঙুল চেপে ধরে ফিজার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“তাহলে তোমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেই!”

থুঁতনিতে চিনচিন ব্যাথার প্রকোপ বাড়লো। ছটফট করে ফিজা। আবরাজ দাঁত চেপে আছে সেখানে। এমন স্থানে আঘাত এরচেয়ে ব্যাথা টা গভীর হয়ে কলিজায় লাগে।
ফিজা আবরাজ এর কাঁধে নখ দিয়ে আঁচড় কাটতেই আবরাজ ফিজা কে ছাড়লো। মেয়ে টার নখ বড়ো। কাঁধ জ্বলে। এমন নয় সে আঘাত সহ্য করতে পারে না। শরীরে এমন অনেক অঙ্গ যেখানে বেশ বড়ো বড়ো আঘাতপ্রাপ্ত। সেই তুলনায় এটা নিতান্তই তুচ্ছ। তবুও এটার গভীরতা অনেক মনে হচ্ছে আবরাজ এর নিকট। ফিজা থুঁতনিতে হাত দিয়ে চেক করলো। রক্ত আসে নি। তবে ব্যাথা হচ্ছে। আবরাজ নিজের কাঁধে তরল পদার্থ অনুভব করে। আঙুল চিটচিটে লাগে। রক্ত এসছে। ফিজা সেদিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে উঠে,

-“আমাকে আঘাত করার আগে নিজে কে প্রস্তুত করে তবেই আসবেন। নয়তো দিগুণ আঘাতে নিজেও জর্জরিত হবেন মিস্টার মাফিয়া আবরাজ খান।”

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর রাগ করিয়েন না। নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি আমি।🥹]

নিয়মিত জনপ্রিয় গল্প পড়ুন আমাদের গ্রুপে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here