সূচনা_পর্ব #মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম) #প্রণয়_কোন্দল

0
2580

বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করেই সবার দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে নববধূ শতাব্দী। সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে গেছে,তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে শতাব্দীর সদ্য বিবাহিত স্বামী। শতাব্দী বন্দুক ধরেই চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

– আপনারা ঠকিয়ে এই গুন্ডা ছেলেটার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছেন! আপনাদের সবাইকে আমি মে’রে ফেলবো।

শতাব্দীর শ্বশুর ইসতিয়াক আহমেদ শুকনো ঢুক গিলে বললেন,
– এসব বলে না বউমা, এটা বাচ্চাদের খেলার জিনিস নয় বন্দুকটা তুমি আমার হাতে দাও।

বলেই ইসতিয়াক আহমেদ বন্দুক নেওয়ার জন্য এগুচ্ছিলেন শতাব্দী রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
– যেখানে আছেন সেখানেই থেমে যান নইলে গু’লি করে দিব।

– তুমি এমন করছো কেন বউমা তোমার বাবা তো সবটা জানতেন উনার ইচ্ছেতেই বিয়েটা হয়েছে।

– আপনারা আমার বাবার ব্রেন ওয়াশ করে এমন একটা জঘন্য কাজ করেছেন আমি আগে জানলে কখনও এই বিয়ে করতাম না।

– এই জন্যই তো জানাইনি।

– কাউকে ছাড়বো না সবার নামে মামলা ঠুকে দিব জেলের ভাত খাওয়াবো।

ইসতিয়াক আহমেদ অসহায় দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকালেন। উৎস বাবার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর এক হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো স্লাইড করতে করতে বলল,

– তোমরা সবাই নিজেদের কাজে যাও এই ধানি লঙ্কাকে আমি সামলাচ্ছি।

কথাটা শেষ করেই উৎস শতাব্দীর হাত মুচড়ে ধরে বন্দুক নিয়ে গেল তারপর শতাব্দীকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে যাওয়া ধরলো। শতাব্দী দুই হাত দিয়ে উৎসের চুল টানতে টানতে বলল,

– আমাকে স্পর্শ করার সাহস হয় কিভাবে? ভালো করে বলছি আমাকে ছেড়ে দিন নইলে সত্যি সত্যি আপনার নামে মামলা ঠুকে দিব।

ব্যথায় দাঁতে দাঁত চেপে উৎস বলল,
– মামলা দেওয়ার বাকি রেখেছ কোথায়? আগে থেকেই তো একটা মামলা দিয়ে রেখেছ যার কারণে তোমার মতো ধানি লঙ্কাকে বিয়ে করতে হয়েছে।

শতাব্দী রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসের দিকে এখনও উৎসের চুল শক্ত করে ধরে আছে। ঘরে আসতেই উৎস শতাব্দীকে খাটের উপর ফেলে দিল। খাটের উপর তুলতুলে জাজিম থাকায় শতাব্দী ব্যথা পায়নি, উৎস দরজা লাগিয়ে পেছনে ফিরতে যাবে তখনি শতাব্দী উৎসের হাত থেকে বন্দুক নিয়ে নিলো। উৎস তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো, শতাব্দী বন্দুক উৎসের কপালে ছুঁইয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

– আমাকে বিয়ে করে নিজের জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনলেন মি.শাহরিয়ার আহমেদ উৎস।

উৎস এক হাত দিয়ে বন্দুক নিজের কপাল থেকে সরিয়ে অন্য হাত দিয়ে শতাব্দীকে নিজের কাছে টেনে এনে ফিসফিস করে বলল,

– তোমাকে বিয়ে করে নিজের বিপদ কমালাম উকিল সাহেবা,তোমার এই তেজও আমি কমিয়ে দিব একটু অপেক্ষা করো ডার্লিং।

উৎস ফিচেল হেসে বাথরুমে ঢুকে গেল, রাগে শতাব্দীর শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
.
.
.
শতাব্দী পেশায় একজন উকিল চারিদিকে অনেক নাম ডাক আছে। নিজের বুদ্ধি এবং সাহস দিয়ে কয়েকটা বড় বড় কেস জিতেই খ্যাতিমান উকিলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আজ শতাব্দীর বিয়ে ছিল আপাতত বিয়ের ইচ্ছে না থাকলেও বাবার কারণে বিয়েতে রাজি হয়েছে। বিয়ে ভালোভাবে শেষ হতেই শতাব্দী জানতে পারে যার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা ছিল সে নয় বরং নিজের শত্রুর সঙ্গেই বিয়েটা হয়েছে কিন্তু বাবার কারণে তখন কোনরকম সিনক্রিয়েট না করলেও শশুর বাড়িতে পা রেখেই সবাইকে একদফা হুমকি ধামকি দিয়ে নিয়েছে।

উৎস সাদা রঙের টাউজার এবং হলদে রঙের পাতলা একটা শার্ট পরে বাথরুম থেকে বের হলো। শতাব্দীর গাঁ ঘেঁষে বসে বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বলল,

– গতকাল কি বলেছিলে মনে আছে উকিল সাহেবা?

শতাব্দী আড়চোখে উৎসের দিকে তাকালো। উৎস ফিচেল হেসে বলল,

– আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি, তুমি বলেছিলে আমায় নাকি সারা জীবন জেলে পঁচিয়ে মারবে আমার মান সম্মান সব ধূলোয় মিশিয়ে দিবে আচ্ছা এখন কি হবে? আমি তো তোমার হাজব্যান্ড হয়ে গেলাম নিজের হাজব্যান্ডকে জেলে পাঠাবে তুমি? সবাই কি বলবে তোমার সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

– আমি এই বিয়ে মানি না সবাই প্রতারক ঠকিয়েছেন আমায়।আর আপনি, আপনি একটা খু’নি।

উৎসের মুখটা মলিন হয়ে গেল রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– আগে প্রমাণ করে দেখাও তারপর বড় বড় বুলি ছেড়ো।

শতাব্দী বাঁকা হেসে বলল,
– আহিরী শতাব্দী প্রমাণ ছাড়া কথা বলে না, প্রমাণ আমার কাছে আছে বলেই তো উৎসের মতো পাওয়ারফুল ছেলে ছল করে আমাকে বিয়ে করে নিলো।

– সব প্রমাণ সবসময় সত্য হয় না নিজের চোখের দেখাও অনেক সময় ভুল হয় সেখানে অন্যের দেখা এবং বলা কথায় বিশ্বাস করাটা বোকামি।

– আমি একজন উকিল তাই কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক আমি ভালো করেই জানি।

উৎস অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে। শতাব্দী তাচ্ছিল্য করে আবারো বলল,
– আপনার মতো খু’নিকে দেখে আমার বমি পাচ্ছে এই কয়েকটা দিন কিভাবে যে থাকব তাই ভাবছি।

– শতাব্দী!

– গলা উঁচু করে কথা বলবেন না অপরাধ করে এই মুখ সবার সামনে দেখান কিভাবে?

উৎসের রাগ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।উৎস নিজের রাগ সহজে কন্ট্রোল করতে পারে না শতাব্দীর সঙ্গেও এই মুহূর্তে খারাপ ব্যবহার করার ইচ্ছে নেই তাই ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের ওয়ালেট নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শতাব্দী বসা থেকে উঠে দ্রুত গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখে বাঁকা হেসে বলল,

– আহিরী শতাব্দীর সঙ্গে পাঙ্গা নিতে এসেছ শাহরিয়ার আহমেদ উৎস? ঠিক আছে এবার তুমি আমার আসল রূপ দেখবে তোমাকে নিজ হাতে শেষ করে দিব।
_______________

সারারাত উৎস বাড়িতে ফেরেনি ভোরের দিকে বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবাই বাঁকা চাহনিতে তার দিকে তাকালো।উৎস সবাইকে দেখেও না দেখার ভান ধরে ঘরে চলে গেল।উৎস যেতেই উৎসের ফুফু উৎসের মা মিসেস উপমাকে ফিসফিস করে বললেন,

– এমন একটা রাত তোমার ছেলে বাইরে কাটিয়েছে!

– সবটা জানোতো তারপরেও কেন প্রশ্ন করছো?

– তাই বলে..

– ওদের ব্যাপার ওরাই বুঝবে উৎসের উপর আমার ভরসা আছে ছেলেটা বদমেজাজি হলেও সবকিছু বুদ্ধি দিয়ে সামলে নিবে।

উৎসের ফুফু আর কিছু বললেন না শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বাড়িতে বাইরের কোনো লোকজন নেই বিয়ে শেষে যে যার যার মতো চলে গেছে, শতাব্দী বাড়িতে ঝামেলা করতে পারে আগে থেকেই আন্দাজ করে উৎস এমনটা করেছে সে চায় না বাইরের লোকদের সামনে নিজেদের সম্মান নষ্ট করতে।

উৎস দরজায় কয়েকবার নক করতেই বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিল শতাব্দী।উৎস শতাব্দীর দিকে না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। শতাব্দী কিছুক্ষণ উৎসের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর শাড়িটা কোমড়ে গুজে বাথরুমে গিয়ে পানি ভর্তি একটা বালতি নিয়ে খাটের কাছে এসে দাঁড়ালো।বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে জোরে বলল,

– বিসমিল্লাহ।

তারপর বালতির সব পানি উৎসের উপর ঢেলে দিয়ে বিজয়ের হাসি দিল। উৎস পুরোপুরি ভিজে গেছে সাথে বিছানাও ভিজে গেছে, উৎস হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে রাগী দৃষ্টিতে শতাব্দীর দিকে তাকালো। কিন্তু শতাব্দীর হাস্যজ্জল মুখ দেখে রাগটা নিমিষেই উধাও হয়ে গেল ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

– এটা কি হলো?

– বর্ষন হয়েছে।

– সবেমাত্র চোখে ঘুম এসেছিল নষ্ট করে দিলে আমার ঘুম।

– এটা ঘুমানোর সময় নয়।

এবার উৎস বাঁকা হাসলো এক পা এক পা করে শতাব্দীর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
– ওহ আচ্ছা তাহলে কিসের সময় এখন? প্রেম করার!

দেওয়ালে শতাব্দীর পিঠ ঠেকে গেছে,বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, উৎস শতাব্দীর খুব নিকটে এসে বলল,

– গতকাল রাতের বাসরটা এখন সেরে ফেললে কেমন হয় উকিল সাহেবা?

শতাব্দী রাগে ফুঁসছে, উৎস এতক্ষণ এই রূপটাই দেখতে চাইছিল, শতাব্দীকে আরও রাগানোর জন্য বলল,
– তুমি রাগলে লাল টমেটোর মতো লাগে মন চায় সস বানিয়ে খেয়ে নেই।

– উৎস!!!

– উফ এভাবে ডেকো না বুকে লাগে।

– এসব অসভ্যতামি আমার সঙ্গে করার চেষ্টা করবেন না মামলা ঠুকে দিব গু’লি করে দিব।

– কি বলো এসব! আমাকে গু’লি করলে তুমি বিধবা হয়ে যাবে।

– রেগে যাচ্ছি আমি।

– জানি তো।

– তাহলে সরছেন না কেন?

উৎস সরে গেল শতাব্দী উৎসের পাশ দিয়ে যাবে সেই মুহূর্তেই উৎস শতাব্দীর গালে একটা চুমু দিয়ে বিজয়ী হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শতাব্দী হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে।

উৎস ঘর থেকে বের হতেই ইসতিয়াক আহমেদ ছেলেকে ডেকে বললেন,
– আমার ঘরে আয়।

উৎস বাবার পেছনে পেছনে তার ঘরে গেল। ইসতিয়াক আহমেদ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
– এমন একটা কাজ করা কি ঠিক হয়েছে?

– কোন কাজ?

– এই যে শতাব্দীকে বিয়ে।

– তোমরাই তো চেয়েছিলে আমি যেন বিয়ে করে সংসারী হই তাহলে এখন সমস্যা হচ্ছে কোথায়?

– সমস্যা শতাব্দীকে নিয়ে, শতাব্দী তোর বিরুদ্ধে মামলা লড়বে আজ পর্যন্ত কোনো মামলায় হারেনি সে। এখন আবার যেই একটা কাজ করেছিস পারলে তো তোকে খু’ন করে ফেলবে আমি আমার ছেলেকে হারাতে চাই না।

– এই জন্য ভয় পাচ্ছো বাবা? ওর মতো একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কিছুই করতে পারবে না আর ঠিক সময় সবার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দিব আমি।

– তোর উপর আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে। কিন্তু বিয়েটা কেন করলি এখন তো বল।

– শত্রুকে কখনও চোখের আড়ালে রাখা ঠিক নয় এই মামলা জিতার জন্য শতাব্দীকে চোখে চোখে রাখা দরকার তাই এত কাঠ খড় পুড়িয়ে শতাব্দীকে বিয়ে করে নিজের চোখের সামনে নিয়ে আসলাম।

ড্রয়িং রুমে হঠাৎ করে চিৎকার চেঁচামেচি আর ভাঙচুরের আওয়াজ আসছে। উৎসের ব্রু জোড়া কুঁচকে গেল, ইসতিয়াক আহমেদ বললেন,

– নিচে আবার কি হলো?

উৎস আর তার বাবা নিচে যেতে লাগলেন। শতাব্দীর নাস্তা করার আগে কফি খাওয়ার অভ্যাস, রান্নাঘরে গিয়ে সার্ভেন্টের কাছে কফি চাইতেই উৎসের চাচাতো ভাইয়ের বউ খোঁচা মেরে বলল,

– এটা তোমার বাবার বাড়ি নয় যে সকাল সকাল কফি চাইবে নিজের কাজ নিজে করে নিবে।

– আপনি কে?

– উৎসের চাচাতো ভাইয়ের বউ সম্পর্কে উৎসের ভাবী।

শতাব্দী কোনো প্রতিক্রিয়া না করে নিজেই কফি বানাতে উদ্যত হলো তখনি উৎসের ভাবী পুনরায় মুখ বাঁকিয়ে বলল,

– গতকাল রাতে উৎস বাড়ির বাইরে রাত কাটিয়েছে কেন? সত্যি করে বলো তো তোমার কি কারো সঙ্গে কোনো এফ্যায়ার আছে নাকি! থাকতেও পারে এখনকার কিছু কিছু মেয়ে আছে যাদের স্বভাব চরিত্র খারাপ থাকে।

কথাটা যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো হয়ে গেল শতাব্দীর রাগ বেড়ে গেছে। রান্নাঘর থেকে বের হয়েই তান্ডব শুরু করে দিল।

চলবে…….

#সূচনা_পর্ব
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
#প্রণয়_কোন্দল

( কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here