সূর্যোদয় #পর্ব_৩১(ক) #কারিমা_দিলশাদ

0
651

#সূর্যোদয়
#পর্ব_৩১(ক)
#কারিমা_দিলশাদ

আজ ঐশীকে ডিসচার্জ দিয়ে দেওয়া হবে। জয় যদিও বিকেলে যেতে বলেছিল তবে ঐশী এখনই যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। হাসপাতালে থাকা তার জন্য খুবই কষ্টকর। হাসপাতাল জায়গাটা তার একদম পছন্দ না। যদিও এটা প্রাইভেট হাসপাতাল। প্রাইভেট হাসপাতাল সরকারি হাসপাতালের মতো নোংরা হয় না। তবুও সাধারণ মানুষের জন্য হাসপাতাল কোনো ভালো লাগার স্থান হতে পারে না। কেবল কিছু বিশেষ সময় বাদে।

আশা আর প্রীতি সব গুছিয়ে নিচ্ছে। ঐশীর মা ছিল কিন্তু ঐশীই তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলেছে তারা মেনেজ করে নিবে। সে যেন বাসায় চলে যায়। সবকিছু গোছগাছ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে তারা। রিসিপশনের কাছে যেতেই দেখে জয় আর সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো ঐশীর কাছেই যাচ্ছিল। এই কয়দিন লোকটা খুব জ্বালিয়েছে। বউ বউ করে কানের মাথা নিজে তো খেয়েছেই, সাথে সাথে আশেপাশের মানুষের কাছে সার্বজনীন ভাবি হিসেবে পরিচিতি করিয়েছে।

আশা ঐশীকে চেয়ারে বসিয়ে বিল পে করতে যাবে। তখনই জয় ঐশীকে বলে,

“ ঐশী বিলটা আমি পে করে দিই?”

“ কেন? আপনি পে করতে যাবেন কেন?”

“ বিকজ আই এম ইউর উড বি। তোমার সবকিছুই আমার। তেমনি তোমার প্রতি আমার অনেক দায়িত্ব কর্তব্যও আছে। তাই সেই হিসেবে…. ”

“ থামুন। আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। এখনও হয় নি। এতো আগেই গাছে কাঁঠাল গুফে তেল দিয়ে লাভ নেই। এমনেতেই আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তার জন্য আমি আপনার কাছে চিরঋণী। আশা যা বিল পে করে আয়।”

আশা যেতেই জয় ঐশীর দিকে ঝুঁকে ধিমি আওয়াজে বলে,

“ যতই তুমি আমাকে কথার মাধ্যমে দূরের বোঝাতে চাও, আমি তোমার কেউ না বুঝাতে চাও কোনো লাভ নেই। এই তোমাকেই একদিন আমার হতে হবে জান্স। একদিন আমিই হবো তোমার সবচেয়ে আপনজন। আপনের চেয়েও অনেক বেশি আপন। মিলিয়ে নিও কথাটা।” – বলেই চোখ মে’রে দেয় জয়। ঐশী এমন ভাব করে যেন সে কিছু শুনেই নি।

আশা বিল পে করে আসতেই ঐশীকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় আবার জয়ের ডাকে থেমে যায়। জয় ঐশীর কাছে এসে বলে,

“ শোনো নিজের খেয়াল রাখবে। আর ওষুধগুলো নিয়ম মেনে ঠিকমতো খাবে। এখন আপাতত অন্যকিছু নিয়ে টেনশন করার কোনো দরকার নেই। কয়েকদিন রেস্ট নাও, তারপর আমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে যাব। বিয়ে কিভাবে ভাঙবে এই চিন্তা না করে আমাকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর চিন্তা করবে। বিয়ের পর হানিমুনে কোথায় যাবে, আমাকে কিভাবে আদর সোহাগ করবে, ভালোবাসবে এসব নিয়ে চিন্তা করবে। আর বেশি বেশি করে রোমান্টিক মুভি দেখবে। তুমি একদম আনরোমান্টিক একজন পারসন। তোমাকে রোমান্টিক হতে হবে নাহলে আমার রোমান্সের ঝড় তুমি সহ্য করতে পারবে না। আর আমার ফোন আর মেসেজের উত্তর দিবে। এবার যাও বউ।”

জয়ের কথায় যেন ঐশীর শরীরে আগুন ধরে গেছে। এতগুলো মানুষের সামনে এই লোকটা কি বলবে তা তার জানা নেই। জয়কে নিয়ে তার ধারণা ছিল খুবই লাজুক, নম্র, ভদ্র, বেকুব, নিরামিষ, সাত চ’ড়েও রা করে না এমন একজন মানুষ। তবে তার ধারণা একদম ভুল। লোকটা একটা অসভ্য। সে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো হজম করে নিয়ে চলে গেল।

আর জয় হাসিমুখে তার যাওয়া দেখলো। ঐশী যেতেই সিয়াম তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“ এতো কিছু বললি ও কিছু বললো না কেন? যতদূর শুনেছি এ এতো চুপচাপ থাকার মতো মেয়ে তো না। ডালমে কুচ কালা হে দোস্ত। ”

“ খালি কুচ কালা নেহি। পুরোটাই কালা। ঝড় আসার পূর্বমুহূর্ত এটা। আল্লাহ জানে মনে মনে কি ঘোল পাকাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ রহম কইরো।”

“ আমিন।”

দুই বন্ধু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠে।

——————————–

কে’টে গেছে একটা সপ্তাহ। ঐশী এখন শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। তবে মানসিকভাবে অসুস্থ। আপাতদৃষ্টিতে জয়ের পরিবারকে বেশ ভালো পরিবারই মনে হচ্ছে। বেশ সাপোর্টিভ তাদের ব্যবহার। এই কদিনের এমন একটা দিন নেই যেদিন ইলোরা ইয়াসমিন ফোন করে তার খুঁজ নেন নি। আর স্মৃতি সে তো ঐশী বলতে পাগল। আর জয়, এই লোকের নাম শুনলেই তার শরীর চিড়বিড় করে উঠে। দিনে রাতে তার কল আর মেসেজে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তার বুঝে আসে না ডাক্তার মানুষ হয়ে এতো ফালতু সময় পায় কি করে এই লোক!

বিয়ের আগে আগে তো সব পরিবার সব পুরুষই স্বপ্নের মতো মনে হয়। একদম পার্ফেক্ট। কিন্তু বিয়ের পরই শুরু হয় সব সমস্যার। শশুড়-শাশুড়ী ভালো না, ননদ-দেবর ভালো না, স্বামী সময় দেয় না। বউও ভালো না। বউয়ের হাজারটা দোষ। একেকজনের একেকরকম অভিযোগ। যার পরিণাম তিক্ততা আর ভাঙন।

জয়ের পরিবার দুইদিন পরে আসবে ডেট ফিক্সড করতে। তারমানে হাতে মোটে দুইদিন সময় আছে। এরমধ্যে যা করার করতে হবে। ফোন নিয়ে জয়কে কল করে কালকে তার সাথে দেখা করতে বলে। কালকের সারাটাদিন যেন সে ঐশীকে দেয়। কালকে সে জয়ের সাথে সামনাসামনি কথা বলবে।

———————————

জয় আর ঐশী এখন ঠিক সেই জায়গাটাতেই বসে আছে যেই জায়গায় জয় আর ঐশী প্রথমদিন বসে ছিল। জয় নিজের অতীতের কথা বলেছিল। সেই জায়গা, সেই মানুষ। সেদিনও মনে মনে দুজন বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এখানে বসেছিল, আজও দুজন বসে আছে। পার্থক্য সেদিন দুজনেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে ছিল আর আজ কেবল একজন। অন্য জনের অনুভূতি সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে। ঐশী যদিও এখনও কিছু বলে নি তবে জয় জানে ঐশী বিয়েটা যাতে কোনোভাবে না হয় এটা বলতেই তাকে ডেকেছে। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে ঐশী আজ অন্যকিছুও বলবে। জয় তা শুনতে চায়, খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে চায়।

জয়কে নিয়ে আসলেও এখন কি বলে কথা শুরু করবে তা বুঝতে পারছে না ঐশী। সে সময় নেয়। বেশ অনেকক্ষণ সময় নেয় সে। এতটা সময় জয় ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করে। ঐশীকে কোনো তাড়া দেয় না। বরং তার ভালোই লাগছে। তার প্রেয়সী তার পাশে বসে আছে খারাপ লাগার প্রশ্নই আসে না।

“ ডাক্তারসাহেব আপনাকে আমার কিছু বলার আছে?”

“ বিয়ে করতে পারবে না, বিয়ে করতে চাও না অর্থাৎ বিয়ে না করা রিলেটেড কোনোকিছু ছাড়া যা ইচ্ছে বলতে পারো।”

“ আমার মনে হয় আপনি নিজেও আন্দাজ করতে পেরেছিলেন আমি আপনাকে এগুলোই বলবো। এগুলো ছাড়া অন্য প্রেমকাহিনী বলার জন্য আমি নিশ্চয়ই আপনাকে এখানে নিয়ে আসি নি।”

“ You should… বরং প্রেম কাহিনি বলতে না প্রেম কাহিনি গড়ার জন্য তোমার আমাকে ডাকা উচিত। এখন আমাদের সারাক্ষণ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা উচিত। আমরা…… ”

“ ডাক্তারসাহেব বি সিরিয়াস……” ঐশী চিল্লিয়ে বলে উঠে।

“ আপনার কাছে সবকিছু মজা মনে হয় তাই না? কিন্তু সবাই আপনার মতো না। বিয়ে টা সবার কাছে মজা না। যে আজ একজনের জন্য পাগল হলাম কাল অন্যজনের জন্য পাগল হয়ে তাকে বিয়ে করে নিলাম। বিয়ের পর নতুন একজনকে ধরলাম। বিয়ে একটা পবিত্র জিনিস। আপনার মতো মানুষেরা এই জিনিসটাকে নোং’রা করে ফেলেছেন।”

জয় খপ করে ঐশীর দুই বাহু ধরে তাকে কাছে টেনে নেয়। ঐশী ভড়কে জয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে জয়ের চোখ লাল হয়ে গেছে, চোয়াল শক্ত। ঐশী মনে মনে কিছুটা ভড়কে যায়। জয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ কি এমন নোং’রামি করেছি আমি? একটা মেয়েকে ভালোবাসাই কি নোং’রামি? নাকি অন্য একজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়াটা নোং’রামি? কোনটা? নোং’রামি তখন হতো যখন তোমাকে আমি বিয়ের প্রস্তাব না দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দিনের পর দিন অ’বৈধভাবে অবাধ মেলামেশা করতাম। ঐশী যা কিছু বলো আমি সব শুনে নিব সব মেনে নিব। কিন্তু প্লিজ আমার ভালোবাসাটাকে কখনো নোং’রা বলো না। আমার ভালোবাসাটা পবিত্র, স্বচ্ছ হৃদয় দিয়ে তোমাকে আমি ভালোবেসেছি আর এখানে কোনো পাপ নেই।”

জয় ঐশীর বাহু ছেড়ে দিতেই ঐশী ধপ করে ঘাসের উপর বসে পড়ে। আর হু হু করে কেঁদে উঠে। শান্ত পরিবেশ আশেপাশে মানুষজনও নেই। যার কারনে তাদের এসব বিষয় লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাবে। ঐশীর কান্না দেখে জয়ের খারাপ লাগে। সে ঐশীর সামনে বসে ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর ঐশী জয়ের সামনে হাতজোর করে বলে,

“ প্লিজ ডাক্তারসাহেব আপনি বিয়েটা করবেন না। আমি বিয়ে করতে চাই না। প্লিজ আপনি বিয়েটা করবেন না। আমি পারব না বিয়ে করতে। বিয়ের কথা ভাবলেই আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ আপনি না করে দিন প্লিজ।”

জয়ের চোখেও পানি আসতে চাইছে। তারই প্রেয়সী তার সামনে এভাবে অসহায় হয়ে কাঁদছে। যেই মেয়েটার হাসি তাকে স্বস্তি দেয় সেই মেয়েটার কান্না সে কিভাবে সহ্য করবে? জয় ঐশীর হাতদুটো তার দুহাতে নিয়ে, নিজের হাতের উপরই ঠোঁট ছোঁয়ায়। এরপর ঐশীর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে,

“ ঐশী আমাকে প্লিজ বলো সমস্যাটা কোথায়। সমস্যা না বললে যে কোনোকিছু সমাধান হবে না জান। আমি একজনকে ভালোবাসতাম কেবল এটাই কি তোমার সমস্যা?”

“এটাও একটা। তবে আরও আছে। তা আমি আপনাকে বলতে পারব না।”

“ না বললে কিভাবে হবে সোনা? আর যদি এটার কথা বলো তাহলে আমি কিছু কথা বলছি শুনো।
আজ তুমি আমার অতিতটা জানো বলে তুমি বিষয়টা নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না। যদি তুমি বিষয়টা না জানতে? যদি বিষয়টা তোমার কাছে গোপন থাকতো? কিংবা ভবিষ্যতে তুমি যাকে বিয়ে করবে তারও যদি এমন কোনো পাস্ট থাকে আর তা সে লুকিয়ে যায় তখন? তবে একটা কথা কি জানো আমি কখনো আমার পাস্টটা আমার লাইফ পার্টনার থেকে লুকাতাম না। কারণ আমি মানি আমার বেটারহাফ আমার লাইফের সবকিছু জানার অধিকার রাখে। তাকে অন্ধকারে রাখার কোনো মানে হয় না। এটাই কি আমার দোষ জান? বলো। পুতুলকে নিয়ে আমার ভালোবাসা পাগলামো যেমন সত্য ছিল তেমন তোমার জন্য আমার ভালোবাসাটাও সত্য। চরম সত্য। জাস্ট একটাবার সুযোগ দাও, ট্রাস্ট মি তোমাকে কখনো অভিযোগ করার সুযোগ দিব না।”

ঐশী কোনো কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছে। জয় বেশ কিছুক্ষণ তাকে কান্না থামাতে বলে। তাতেও যখন ঐশীর কান্না থামছে না তখন সে আর কান্না বন্ধ করতে বলে নি। কেবল ভরসার একটা কাঁধ দিয়েছে। ঐশী জয়ের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে কেঁদেই যাচ্ছে।

———————————

যতক্ষনে ঐশী নিজের কান্নাকে সংযত করে ততক্ষণে ঐশীর হিচকি উঠে গেছে। জয় নিজের রুমাল বের করে ঐশীকে দেয়। তবে ঐশী তা না নিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে বের করে সেটা দিয়ে মুখ মুছে। জয় পানি খাবে কি না জিজ্ঞেস করলে সে নিজের ব্যাগ থেকে পানি বের করে খেয়ে নেয়।

জয় তাকিয়ে ঐশীকে দেখছে। কান্না করে চোখে ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে, পাতলা হালকা লাল আভাযুক্ত ঠোঁটটা আরও বেশি লাল হয়ে গেছে, নাকটাও লাল হয়ে গেছে। এই যে ঐশীর রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে, পানি খাচ্ছে এসবও তাকে টানছে। খুব করে টানছে। আর সেই সাথে এমন সময়ে নিজের এমন বেহায়া চিন্তা ভাবনার জন্য নিজেকে ধিক্কারও দিচ্ছে।

জয়কে নিজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশী জয়ের দিকে তাকায়। এতেও জয়ের কোনো হেলদোল হয় না। তা দেখে ঐশী একটা তাচ্ছিল্য হাসে।

“ এই যে এখন এভাবে প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে তাকিয়ে দেখছেন, এই প্রেম প্রেম ভাবটা কয়দিনের বলুন তো?”

“ সারাজীবনের।”

“ তাই! তাহলে এই যে এতো কড়া কড়া প্রেম। একজন আরেকজনের জন্য ম’রতে যায় তাদের প্রেম ভালোবা
সাটাও বিয়ের পর ফ্যাকাসে হয়ে যায় কেন বলেন তো? এখন যারা ফোনের এপাশ ওপাশে থেকেও একজন আরেকজনের শ্বাস প্রশ্বাসের মানে টাও বুঝে যায় বিয়ের পর মুখ দিয়ে বলার পরও কেন দুজনের মাঝে আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই বলে বিচ্ছেদ ঘটে? জীবনের সবকাজ স্বাভাবিকভাবে করেও রাতের পর রাত জেগে জেগে ফোনে কথা বলার মতো সময় থাকলেও বিয়ের পর একই ছাদের নিচে থেকেও কেন একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে না?”

জয়ের মুখে কোনো কথা নেই। সে নির্বাক। ঐশীই আবার বলে,

“ এর কারণ কি জানেন কারণ তখন মানুষটা তাদের জন্য সহজলভ্য হয়ে যায়। দিনের পর দিন একজনের কাছে আরেকজনের কদর কমতে থাকে। এই যেমন এখন আমার সবকিছুই আপনার ভালো লাগে, আমি যদি এখন আপনাকে গা’লিও দেই আমার মনে হয় সেটাও আপনার ভালো লাগবে। বিয়ের পর কিন্তু তা হবে না, তখন আমি ভালো কথা বললেও আপনার কাছে তা খারাপ লাগবে। এটাই হয়ে আসছে আর এগুলোই হবে। বেকার বেকার নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট হবে, ঝামেলা বাড়বে। মানুষের লাইফে কি ঝামেলা কম আছে যে আরও একটা ঝামেলার গোডাউন নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে?”

“ তো তুমি বলছ বিয়ে করার কোনো দরকার নেই? ”

“ আমি সেরকম কিছুই বলছি না। আমি আমার কথা বলছি। আমার প্রায়োরিটির কথা বলছি। বিয়ে করাটা আমার প্রায়োরিটি না। এটা ছাড়াও আমি জীবনে চলতে পারব, আমি এটা বলতে চাইছি। আমি চাই না আমার লাইফের ছিটেফোঁটা হাসিখুশি টুকু নষ্ট করতে।”

“ কতদিন? তুমি কি সারাজীবন একা থাকতে পারবে? এটা কি আদোও সম্ভব? ঐশী পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর শাস্তি হলো একাকিত্ব। একা একা বেশিদিন বাঁচা যায় না।”

“ আমি সারাজীবন একা থাকব এটা বলি নি তো। এখন যেভাবে চলছে চলুক না। আমি এরপর একটা ভালো চাকরি বাকরি পেলে একটা বাচ্চা এডপ্ট করবো। এরপর ওকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিব।”

জয় এবার জোরে জোরে হেসে উঠে। ঐশী অবাক চোখে জয়ের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ পর জয় হাসি থামিয়ে বলে,

“ আমি এতদিন তোমাকে খুব ম্যাচিউর মনে করেছিলাম ঐশী। বাট আজ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে কোনো টিনএইজ মেয়ের কথা শুনছি। জীবন কি এতো সহজ? তুমি চাইলেই কি একটা বাচ্চা এডপ্ট করে ফেলতে পারবে? তারজন্য অনেক রুলস এন্ড রেগুলেশন আছে। বাচ্চা এডপ্ট করতে গেলেও তোমাকে বিবাহিত হতে হবে। আর একা একটা মেয়ের একা বাচ্চা পালা মুখের কথা নয়। হ্যা অনেক নারীই একা একা বাচ্চা মানুষ করে। তবে তাদের জন্যও একটা মানুষের হাত জরুরি হয়। আর তোমার ফ্যামিলিকে আমি যতদূর চিনি তারা তোমার এসব ডিসিশন কোনদিনই মেনে নিবে না। জীবনের একটা সময় এসে সব মানুষেরই নিজের বলে একটা মানুষ প্রয়োজন ঐশী। যার কাঁধে মাথা রেখে দুটো মনের কথা বলা যাবে। পাশাপাশি বসে চা পান করা যাবে, একে অপরের চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন দেখা যাবে। পৃথিবীর কোনো মানুষ একা বাঁচতে পারে না ঐশী।

এর থেকে আমার কাছে একটা বেটার আইডিয়া আছে। আমরা বিয়ে করে নিই, এরপর তোমার কমফোর্টেবল টাইমে আমরা ছোট্ট একটা ঐশীর জন্ম দিব নি কি বলো?”

ঐশী জয়ের দিকে তাকায়, জয়ের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে। ঐশীর মাঝের রাগগুলো খলবলিয়ে উঠলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

“ হ্যা। যেন পরে আমি সারাটাজীবন একবুক কষ্ট নিয়ে বেঁচে থেকেও ম’রা মানুষের মতো জীবন কাটাই। তাই তো? আপনারা পুরুষরা কথায় এতো পটু হন কি করে বলেন তো। একটা মেয়েকে সারাজীবনের সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে মাঝপথে হাত ছেড়ে দেন কি করে? আমি একটা পশুকেও বিশ্বাস করতে রাজি আছি তবে কোনো পুরুষ মানুষকে আমি জীবনেও বিশ্বাস করতে পারব না। সব পুরুষ এক। একেকটা জা’নোয়ার… আজ এই মেয়ে তো কাল আরেক মেয়ে। এরা বিশ্বসুন্দরীকে বউ হিসেবে পেলেও অন্য মেয়ের প্রতি ছুকছুক করবে। শা** ***** দল। ”

জয়ের মনটা এবার সত্যি খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা কোন কথা থেকে কোন কথায় লাফ দিয়ে যাচ্ছে নিজেও জানে না। তবে জয় এইটুকু বুঝতে পারছে মেয়েটা ভিতরে ভিতরে কিছু একটা নিয়ে গুমরে ম’রছে। ঐশীর এই বিয়ে না করার পিছনে আর ছেলেদের অবিশ্বাস করার পিছনে কিছু তো একটা কারণ আছে।

“ লিসেন ঐশী, আমি মানছি অনেক পুরুষ আছে খারাপ। কিন্তু তাই বলে সব পুরুষ মানুষ তো আর এক না বলো? তোমার বাবাকে দেখ……..”

“ হ্যা সব পুরুষই এক। সবকটা খারাপ। আর আমার বাবাকে কি দেখব? আমার বাপও ওই একই ঘাটের মাঝি……” – বলেই চুপ হয়ে যায় ঐশী। কথাটা তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আর জয় চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি ঐশীর বাবাও?!

ঐশী আবারও হু হু করে কেঁদে উঠে। জয় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

#চলবে

( কেউ কপি করবেন না। কপি করা নিষেধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here