সেই তুমি?
পর্ব -১৪
Samira Afrin Samia(nipa)
ইশিতা খাবার না খেয়ে ই রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।
–সে কি তুমি শুয়ে গেলে যে খাবে না?
— না খুদা নেই।
— খুদা নেই মানে। তুমি তো রাতে কিছুই খাও নি। তোমার এখন না খেয়ে থাকা চলবে না। উঠে খেয়ে তারপর ঘুমাও।
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনলো না এখন ও এভাবেই শুয়ে আছে।
— কি হলো উঠছো না কেন?
তুমি নিজের জন্য না খাও কিন্তু তোমার ভেতর যে আছে তার জন্য তো খেতে হবে। তুমি এই বাচ্চা টা কে কোনো ভাবে অবহেলা করছো না তো?
আমি জানি ইফান এই বাচ্চার বাবা। কিন্ত ইফান ওর দায়িত্ব দিতে অস্বীকার করেছে।
তুমিও ওকে দুনিয়াতে আনতে ভয় পাচ্ছিলে আর তাই ওকে মেরে ফেলতে চাইছিলে।
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনে শুয়া থেকে উঠে বসে।
— আমি এই বাচ্চা টার জন্য ই তোমাকে বিয়ে করেছি। ও যাতে বাবার পরিচয় নিয়ে পৃথিবীতে আসতে পারে, মাথা তুলে বাঁচতে পারে। যেভাবেই হোক আর যে কারনেই হোক আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন তুমি আমার বউ। আর এই বাচ্চা টা ও আমার। ও আমার পরিচয়ে বড় হবে। আমি চাই না আমার বাচ্চার কোনো অবহেলা হোক বা অযত্ন হোক। তুমি নিজের খেয়াল না রাখলে ও আমার সন্তানের খেলায় রাখতে হবে। এখন ও তোমার মাঝে আছে তুমি না খেলে ওর ও খাওয়া হবে না।
ইশিতা ফ্যালফ্যাল চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বাচ্চার প্রতি ইফানের একটু ও মায়া নেই অথচ ইফান ওর বাবা। ইয়াশের সাথে তো বাচ্চা টার কোন সম্পর্ক নেই তার পর ও ইয়াশের ওর প্রতি কতো টান কতো ভালোবাসা।
ইশিতা উঠে গিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার সময় ইশিতার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
সকালে ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে জগিং করতে চলে গেল। নাজমা চৌধুরী কিচেনে রান্না করছে। ইশিতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে কিচেনে নাজমা চৌধুরীর কাছে গেল।
— ইশিতা তুমি। ঘুম হয়েছে?
— হুম।
— আচ্ছা তাহলে তুমি রুমে যাও। রান্না প্রায় শেষ। আমি তোমাকে খাবার জন্য ডেকে নিবো।
— মা আমি আপনার সাথে কিছু কাজ করি।
— তুমি কি কাজ করবে?
তোমার কাজ করতে হবে না। আর এমনিতেও আমার কাজ শেষ।
— আপনি আমাকে মেয়ের জায়গা দিছেন। মেয়ের সামনে মা কাজ করবে এটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে কি ঠিক হবে?
আর মা আমি তো আপনার মেয়ে তাই না?
তাহলে মেয়েকে তুমি করে না বলে তুই করে বলেন।
নাজমা চৌধুরী একটু হাসলো কিন্তু হাসির শব্দ হলো না
— আচ্ছা তাহলে এখন থেকে তুই করেই বলবো।
আমার তো রান্না শেষ তাহলে তুই গিয়ে একটু টেবিল টা সাজিয়ে দে।
— আচ্ছা।
ইশিতা ডাইনিং টেবিলে প্লেট ঠিক করে রাখছে।নাজমা চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখলেন।
— ইশিতা ইয়াশ কোথায়?
— মা আমি জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে উনাকে দেখিনি।
— কোথায় গেছে তোকে বলে যায়নি?
— নাহ।
নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা কথা বলতে বলতে ইয়াশ বাসায় ঢুকলো। ইয়াশ নিজের রুমে যাবার আগে আড়চোখে ইশিতার দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখে উপরে যেতে লাগলো।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ কে ডেকে
— ইয়াশ সকাল সকাল কোথায় গেছিলি?
— আমি প্রতি দিন সকালে জগিং করতে যাই এটা কি তুমি জানো না?
— ওহ! ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি কখন থেকে খাবার সাজিয়ে রাখছি।
ইয়াশ ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে চলে গেল।
খাবার টেবিলে ইয়াশ খাচ্ছে নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা ও পাশেই বসে খাচ্ছে। নাজমা চৌধুরী খেতে খেতে
— ইয়াশ ইফান এখনও নিচে আসলো না। তুই ওকে একটু ডেকে নিয়ে আয় না। আমার ডাকে তো কখনও ওর ঘুম ভাঙ্গবে না।
ইশিতা ইফানের কথা শুনে ভয় পেতে লাগলো। ইফান ইশিতা কে ওর বাড়িতে দেখলে কি করবে?
ইশিতার গলায় খাবার বেঁজে উঠলে ইশিতা কাশতে লাগলো?
ইয়াশ ইশিতা কে কাশতে দেখে ব্যস্ত হয়ে পানির গ্লাস ইশিতার দিকে এগিয়ে দিলো।
নাজমা চৌধুরী চেয়ার থেকে উঠে ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
— আস্তে খাবি তো।
ইয়াশ বুঝতে পারলো ইশিতা ইফানের কথা শুনে ভয় পেয়েছে। আর তাই গলায় খাবার বেঁজে উঠেছে।
নাজমা চৌধুরী আবার বললেন
— ইফান তো ইশিতা কে দেখে ই নি। ও তো মনে হয় এটাই জানে না ওর ভাই যে বিয়ে করে বউ বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
ইশিতা তুই তো ইফান কে চিনিস না। ওর সাথে তোর কথা ও হয়নি।
ইফান আমার ছোট ছেলে। তোর দেবর হয়। ও যদি জানতে পারে ওর ভাই বিয়ে করে ফেলছে তাহলে ও খুব খুশি হবে। অনেক ভালোবাসে ইয়াশ কে।
ইয়াশ নাজমা চৌধুরী কে থামিয়ে দিয়ে
— মা এখন খেয়ে নেও পরে এসব কথা হবে।
আর ইশিতা তুমি কি ভার্সিটিতে যাবে?
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে
— হুম।
— আচ্ছা তাহলে রেডি হও আমি তোমাকে ভার্সিটি ড্রব করে দিব।
ইয়াশ খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে গেল।
ইশিতার মনে এখনও সেই ভয় ই কাজ করছে। ইফানের সামনাসামনি হলে তখন ও কি করবে?
ইফান ওকে এ বাড়িতে দেখে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবে না তো?
আর ওর শাশুড়ি ও তো এসব সম্পর্কে কিছুই জানে না। উনি এসব ব্যাপারে জানতে পারলে তখন ইশিতা কে মেনে নিবে তো?
উনি যদি জানতে পারে ইশিতা প্রেগন্যান্ট আর এই বাচ্চা টা ইফানের তাহলে হয়ত কোনো দিন ও ওকে মেনে নিবে না।
ইশিতা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে ইয়াশের জন্য অপেক্ষা করছে।ইফান ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে। ইশিতা ইফান কে দেখতে পায়নি।
আজ শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যেতে হবে। শাড়ি পড়ে ভালো করে দু’পা হাঁটতে পারে না। পায়ে বেঁজে পড়ে যেতে নেয়। আর এখন ভার্সিটিতে সারা দিন কিভাবে শাড়ি পড়ে থাকবে এটাই ভাবছে ইশিতা।
ইশিতা নিচু হয়ে শাড়ির কুঁচি ভাঁজ করছে। ইফান নিচে নামার সময় ইশিতা কে দেখে ভাবলো ও হয়ত ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছে। ইশিতা এ বাসায় কোথায় থেকে আসবে?
ওর তো এখানে আসার কথা না।
ইফান দুই হাত দিয়ে ভালো করে চোখ কচলিয়ে আবার ইশিতার দিকে তাকায়। ইফান এবার ও ইশিতা কে দেখতে পেল।
— কি হলো আমার?
আমি ওই ক্যারেক্টারলেস মেয়েটা কে বার বার কেন দেখছি?
আমি কি ভুল দেখছি নাকি ওই মেয়েটা সত্যি ই আমার সামনে?
এতো বার করে তো ভুল দেখার কথা না।
ইফান ইশিতার কাছে আসলে ইশিতা ইফানকে দেখে ওভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
— তুই এখানে?
তুই আমার বাসায় কি করছিস? তোর সাহস হয় কি করে আমার বাসায় আসার। বের হ তুই এখুনি আমার বাসা থেকে বের হ। চলে যা তুই আমার চোখের সামনে থেকে।
ইফান ইশিতার হাত ধরে ইশিতা কে টেনে নিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে যাচ্ছিল। পেছন থেকে ইয়াশ ইফাবের হাত ধরে এক ঝটকায় ইশিতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে।
— হাও ডেয়ার ইউ! তোর সাহস হয় কি করে আমার ওয়াইফের হাত ধরার?
— ওয়াইফ?
— হুম ইশিতা আমার ওয়াইফ। আমি সমস্ত নিয়ম রীতি মেনে ইশিতা কে বিয়ে করেছি।
ইয়াশের কথা শুনে ইফান শব্দ করে জোরে জোরে হাসতে লাগলো
— ইশিতা তোর ওয়াইফ? তুই ইশিতা কে বিয়ে করেছিস?
রিয়েলি ভাই?
হাসালি তুই। তুই নাকি ওই ক্যারেক্টারলেস মেয়েটা কে বিয়ে করেছিস এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে সো ফানি।
— তুই বিশ্বাস কর আর না কর তাতে আমার কিছু আসে যায় না। ইশিতা আমার ওয়াইফ এই বাড়ির বউ আর তোর ভাবী।
— আমি এই দুশ্চরিত্রা মেয়েকে কখন এই বাড়িতে থাকতে দিব না। এই তোর লজ্জা করে না। তুই আমাকে ঠকিয়ে এখন আবার আমার ভাই কে ঠকানোর চেষ্টা করছিস।
— সেটআপ। ইশিতা তোর ভাবী। ভাবীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখে নিবি। তুই যদি এভাবেই ইশিতার সাথে কথা বলিস তাহলে কিন্তু তোর জন্য মোটেও ভালো হবে না।
আর ইশিতা কে এ বাড়িতে থাকতে না দেওয়ার তুই কে?
এটা তো তোর একার বাড়ি না। ইশিতা তোকে ঠকিয়েছে নাকি তুই ইশিতা কে ঠকিয়েছিস তা আমি খুব ভালো করে জানি।
ইফান ভ্যাঙ্গ করে
— ওহ আচ্ছা এতো ভালোবাসিস ভাবী কে?
তা ওর সাথে তোর কবে থেকে রিলেশন?
আমার আগে থেকে নাকি আমি ওকে ইউজ করার পর থেকে?
ইয়াশ রেগে গিয়ে ইফান কে মারতে আসলে। নাজমা চৌধুরী উপর থেকে দাঁড়িয়ে
— কি হচ্ছে এসব?
ইয়াশ নাজমা চৌধুরীর কন্ঠ শুনতে পেতে স্বাভাবিক হয়ে গেল
— কিছু না মা।
ইফান কে ওর ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম। ইফানের তো ইশিতার সাথে কথা হয়নি তাই একটু
— ইয়াশ আজ কি তুই অফিসে যাবি না। এখনও বের হলি না যে?
— এই তো আমি এখন অফিসের জন্য বের হবো।
ইয়াশ ইফানের কাছে এসে কানে কানে
— মা এসব ব্যাপারে কিছু জানে না। তোর জন্য এটাই বেটার হবে তুই মা কে কিছু জানতে দিস না। আর হ্যা মনে রাখিস আজকের পর থেকে এ বাড়িতে থাকতে হলে ইশিতা কে সন্মান করে থাকতে হবে। আমি কি বুঝাতে চাইছি আশা করছি তুই বুঝে গেছিস।
এটা বলে ইয়াশ ইশিতা কে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
ইফান রাগে ফুঁসতে লাগলো। ওর রাগ হচ্ছে ইশিতার উপর। ইফান মনে করছে এসব কিছুর জন্য ইশিতা দায়ী।
কারে বসে ইশিতা চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে। ইশিতার মনে হচ্ছে ওর জন্য আজ দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলো। ইয়াশ সামনের দিকে তাকিয়ে কার চালিয়ে
— কি হলো কাঁদছো কেন?
ইশিতা ইয়াশের কথা শুনে চোখ মুছে নিয়ে
— কাঁদছি না তো।
— আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয় বলো তো?
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি আমার সামনে বসে কাঁদছো। এখন জিঙ্গেস করার পর বলছো। কই তুমি তো কাঁদছো না।
— আমার জন্য আজ আপনাদের দু ভাইয়ের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হলো। আমার জন্য আজ আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে ওভাবে কথা বলেছেন।
— যা হচ্ছে সব কিছু ইফানের জন্য হচ্ছে এতে তোমার কিছু করার নেই। ইফান কে ওর পাপের শাস্তি পেতে হবে।
চলবে…..