সেই তুমি?
পর্ব -১৫
Samira Afrin Samia(Nipa)
ইয়াশ ইশিতা কে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দেয়। ইশিতা কার থেকে নেমে গেট দিয়ে ঢুকতে নিলে ইয়াশ ইশিতা কে পেছন থেকে ডাক দিলে ইশিতা ইয়াশের দিকে ফিরে তাকায়
— ইশিতা এখানে যদি ইফান এসে কোনো ধরনের ঝামেলা করে তাহলে সাথে সাথে আমাকে জানাবে।
— হুম।
— তুমি একা বাসায় যেতে পারবে তো?
নাকি আমার আসতে হবে?
— আমি একাই যেতে পারবো।
— আচ্ছা তাহলে নিজের খেয়াল রেখো। বাই।
ইয়াশ অফিসের জন্য চলে গেল। ইশিতা ধীর পায়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকছে মনে অনেক ভয় কাজ করছে। না জানি এখন কে কোন কথা শুনিয়ে দেয়।
ইফান রাগে কটমট করতে করতে রিহা কে ফোন করলো।
কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিহা কল রিসিভ করলো।
— হ্যালো জান।
এতো দিন পর আমার কথা মনে হলো? তুমি আমার ফোন ধরো না কেন?
তোমাকে কতবার ফোন করেছি একবার দেখো তো।
ইফান বিরক্তি নিয়ে
— ওহ রিহা এখন ওসব কথা বাদ দিয়ে আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো। আর আমি যেমন বলছি তেমন টা ই করো।
— আচ্ছা বলো কি করতে হবে। তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
— তুমি রাফি কে নিয়ে এখুনি ভার্সিটিতে যাও। আর গিয়ে দেখো ইশিতা ভার্সিটিতে গেছে।
— ও ভার্সিটিতে গেছে? ওর কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই?
এতো কিছু হওয়ার পরও ও বাড়ি থেকে বের হয় কিভাবে?
— হুম। রিহা আরও অনেক কিছু হয়েছে। ওসবের তুমি কিছুই জানো না।
— কি হয়েছে?
ওই মেয়েটা কিছু করেছে নাকি?
— এখন ফোনে এতো কিছু বলা যাবে না। আমি ভার্সিটিতে এসে সব কিছু বলছি। ততক্ষণে আমি যা বলেছি তা করো।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো তুমি।
— হুম আমি ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
ইফান কল কেটে দিয়ে রুমে চলে যায়। রিহা রাফি কে ফোন করে জলদি করে ভার্সিটিতে যেতে বলে।
ইশিতা চারপাশে না তাকিয়ে কে কি বলছে তা কানে না নিয়ে ক্লাস রুমে এসে চুপচাপ একা বসে থাকে। ইভা ইশিতার কাছে এসে ইশিতার পাশে বসে
— ইশিতা কি শুনছি এসব?
সত্যি ই কি ইফানের ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে?
ইশিতা ইভার থেকে কখনও কিছু লুকায় না আজ ও কিছু লুকালো না।
— হুম।
— কিভাবে কি হলো?
উনি ই বা তোকে বিয়ে করলো কেন? আর তুই এ বিয়েতে রাজি হলি কেন?
ইশিতা চুপ করে আছে
— কি হলো বল।
— উনি আমার আর ইফানের ব্যাপারে সব কিছু জেনে ই আমাকে বিয়ে করেছে। আমি বিয়েতে রাজি না হয়ে কি করতাম তুই ই বল তো?
ইফান আমাকে মেনে নেয় নি। ওর বাচ্চার দায়িত্ব নিতে ও মানা করে দিছে। এই বাচ্চা টা কে দুনিয়াতে আনতে গেলে তো ওর বাবার পরিচয় লাগবে।
— তাই বলে যাকে ভালোবাসিস তার বড় ভাইকে বিয়ে করে নিলি?
— এছাড়া আর আমার কাছে কোনো অপশন ছিল না।
— এক ভাই মাঝ রাস্তায় এসে ছেড়ে চলে যাবে আর আরেক ভাই মাঝ রাস্তা থেকে হাত ধরবে। বাহ!
— উনি সত্যি ই অনেক ভালো রে। উনি ইফানের থেকে একদম আলাদা। ইফান যতটা খারাপ ওর ভাই ততটাই ভালো।
— আচ্ছা তা তো বুঝলাম। কিন্তু তুই এখন এটা বল। তুই ইফান কে ভুলে ইফানের ভাই কে ভালোবাসতে পারবি?
— ইফান আমার সাথে যা করেছে এর পরে ওকে ভালোবাসা তো দূর আমি ওকে মনেও রাখতে চাই না।
আর আমি জানি না আমি কখনও উনাকে ভালোবাসতে পারবো কি না।
ভালোবাসার উপর থেকে আমার বিশ্বাস টাই চলে গেছে। এখন মনে হয় না আমি আবার কাউকে ভালোবাসতে পারবো, আবার কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো।
— তুই এভাবে এডজাস্ট করে কতদিন উনার সাথে থাকতে পারবি?
ভালোবাসা ছাড়া কি কোনো সম্পর্ক টিকে থাকে?
পিছন থেকে রিহা বলে উঠলো
— হ্যালো গাইস।
ইভা আস্তে করে ইশিতার কানে বললো
— শয়তান এসে গেছে।
ইভা, ইশিতা রিহার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায়। রিহা ভাব নিয়ে হেঁটে ইশিতার সামনে এসে দাঁড়ায়
— ইশিতার লেজ। ওহ স্যরি। তোমার নাম টা যেন কি?
হ্যা মনে পড়ছে। ইভা তাই না?
তো ইভা কি যেন বলছিলে তুমি।
ভালোবাসা ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে?
তোমার ফ্রেন্ড তো কাউকে ভালোবেসে তার সাথে সম্পর্কে জড়ায় না। তোমার ফ্রেন্ড টাকা দেখে সম্পর্কে জড়ায়।
— রিহা চুপ করো তো।এখানে তো তোমার কথা বলার কিছু নেই। তুমি কেন আমাদের মাঝে নাক গলাচ্ছো?
রিহা ইভার কথা শুনে রেগে গিয়ে
— জাস্ট সেটআপ। যত বড় মুখ নয় ততো বড় কথা।ছোট লোকের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার। আমি তোকে
রিহা হাত তুলে ইভা কে চড় মারতে গেলে। ইভা রিহার হাতে ধরে হাত মুচড়ে পিছনে নিয়ে ধরে।
— তুই কোথাকার জমিদারের মেয়ে যে আমাকে ছোট লোকের বাচ্চা বলছিস। কিছু বলি না বলে এই নয় যে কিছু বলতে পারি না। আমার সাথে মুখ সামলে কথা বলবি আমি ইশিতা না যে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিবো। নেক্সট টাইম থেকে আমার সাথে বুঝে শুনে কথা বলতে আসিস।
ইভা রিহা কে ছেড়ে দিলে রিহা হাত ডলতে ডলতে
— তোর সাহস বড্ড বেড়ে গেছে তাই না? তোকে আমি কি করবো তা তুই ভাবতেও পারছিস না।
ইশিতা ইভা কে ধমক দিয়ে
— ইভা কি হচ্ছে এসব?
চল এখান থেকে।
ইশিতা ইভার হাত ধরে টেনে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হতে নিলে একটুর জন্য ইফানের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল।
ইফান ইশিতার দিকে মাথা নামিয়ে চোখ থেকে কালো সানগ্লাস টা খুলে
— ইশিতা,,, উফফ স্যরি ভাবী নাকি?
ভাবী কোথায় যাচ্ছেন?
রিহার ইফানের কাছে এসে
— ইফান তুমি পাগল হয়ে গেলা নাকি?
ইশিতা কে ভাবী ডাকছো কেন?
— তোমাকে তো বলাই হয়নি রিহা। ইশিতা তো আমার ভাবী হয়। আরে গতকাল রাতেই তো ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে হয়।
— রিয়েলি ইফান?
— হুম।
ইশিতা এখন ইফানের সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না।
তাই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ইফান ইশিতার হাত ধরে নেয়। ইফান ইশিতা কে এক প্রকার হেঁচকা টান দিয়ে ক্লাসের মধ্যে নিয়ে দাঁড়ায়।
ইফান সবার উদেশ্য করে
— গাইস,,,গাইস,,গাইস এটেনশন প্লিজ। তোমাদের সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে। কথা না, তোমাদের সবাইকে একটা গুডনিউজ দেওয়ার আছে।
তোমরা সবাই তো ইশিতা কে চিনো তাই না?
যে দুই দিন আগ পর্যন্ত আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল।
ইফানের কথা শুনে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে ইফান কি বলছে তা শুনতে মনোযোগ দিলো।
— তো গুড নিউজ টা হলো। ইশিতা আর আমার ভাইয়ের গতকাল রাতে বিয়ে হয়েছে। এখন ইশিতা আমার ভাই ইয়াশের ওয়াইফ মানে আমার ভাবী।
ইফানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। কয়েকজন শিটি বাজাতে শুরু করলো। ছেলেদের মধ্যে থেকে একজন দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
— কি ভাবী ছোট ভাইকে ভালো লাগে না বলে কি বড় ভাইকে ধরেছো?
নাকি বড় ভাইয়ের কাছে টাকা বেশি বলে?
সবাই আবারও জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
সবার এসব কথা শুনে ইশিতার দু’চোখ বেয়ে সমানে পানি পড়ছে। সবাই ইশিতা কে নিয়ে কত বাজে বাজে মন্তব্য করছে। কত খারাপ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে। ইফান সবার সামনে ইশিতা কে এভাবে অপমান না করলেও পারতো।
ইফান হাতে ইশারা দিয়ে সবাই কে থামতে বলে। আবার বলা শুরু করলো।
— ফ্রেন্ডস রা মজার ব্যাপার কি জানো?
ইশিতা প্রেগন্যান্ট আর ওর বাচ্চার বাবা নাকি আমি।
ইফান এমন পরিস্থিতি তৈরি করে তুলেছে। যাতে করে সবাই ইশিতা কে নানা ভাবে কথা শুনাতে পারে আর অপমান করতে পারে।
একজন বলে উঠলো
— বাচ্চার বাবা কে রেখে বাচ্চার চাচা কে বিয়ে করতে গেলে কেন? আমার ও তো কম টাকা নেই আমি বললে কি তুমি আমাকেও বিয়ে করবে?
ইশিতা শুধু সবার কথা শুনেই যাচ্ছে। কাউকে কিছু বলছে না। কত জন কে ও কিছু বলতে পারবে? এখানে সবাই ই তো তাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে ইশিতা একা কত জন কে চুপ করাতে পারবে? একা একা কতটাই বা প্রতিবাদ করবে ইশিতা?
ইফান ইশিতার দিকে আঙ্গুল তুলে
— এই মেয়েটা কে দেখে রাখো সবাই। আর হ্যা সবাই এর মত ক্যারেক্টারলেস মেয়ের থেকে কম করে হলেও দশ হাত দূরে থাকবে। এরা টাকার জন্য সব করতে পারে।
রিহা ইশিতার কাছে এসে ইশিতা চোখের পানি মুছে দিয়ে
— ন্যাকা কান্না তো ভালোই পারিস। এভাবে চোখের পানি ফেলে ই তো ছেলের মন জয় করিস। ছোট ভাইয়ের সাথে নষ্টামি করে বড় ভাইকে বিয়ে করলি লজ্জা করে না তোর?
তোর মত মেয়ের লজ্জা!
তোর মত মেয়ের তো মরে যাওয়া উচিত।
ইশিতা সবার এসব কথা সহ্য করতে না পেরে দৌঁড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে আসলো।বাড়ি এসে ইশিতা দৌঁড়ে সোজা রুমে চলে আসলো। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছে।
— আমার সাথে এসব কেন হচ্ছে? কি দোষ করেছি আমি?
আল্লাহ আমাকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো। আমি না পারছি শান্তিতে বাঁচতে না পারছি মরে যেতে।
আমি তো কখনও কারো হ্মতি করিনি তাহলে আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে?
এ কোন অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি আমি?
আমি ইফান কে ভালোবেসেছি বিশ্বাস করেছি এটাই কি আমার ভুল?
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে নিচে ফ্লোরে বসে গেল। ইশিতা চোখের পানির মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো প্রকাশ করছে। বিনা অপরাধে এতটা শাস্তি ইশিতার প্রাপ্য ছিল না।
প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা পর ইশিতা সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে। অনেকক্ষণ পানিতে ভেজার কারনে ও কান্না করায় মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে। চোখের সামনে সব অন্ধকার মনে হচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে ও কষ্ট হচ্ছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেড পর্যন্ত যাবে এই শক্তি টা ও পাচ্ছে না ইশিতা। সকাল থেকে কিছু খাওয়া ও হয়নি এই জন্য মাথা টা ও বার বার ঘুরে উঠছে। ইশিতা আর নিজের সাথে যুদ্ধ করে পেরে না উঠে মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেল।
ইয়াশের অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে ইয়াশ ইশিতা কে ভার্সিটি থেকে নিতে আসে। ভার্সিটিতে আসলে ইভার সাথে দেখা হলে ইভা ইয়াশ কে চিনতে পারলে আজ ভার্সিটিতে যা যা হয়েছে সব কিছু বলে দেয়। ইয়াশ সব কিছু শুনে মাথায় হাত দিয়ে থমকে গেল।
— শিট! এতো কিছু হয়ে গেল আর ইশিতা আমাকে কিছু জানালো না। আল্লাহ ই জানে এখন ইশিতা কোন অবস্থায় আছে। এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে ইশিতা যদি উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে বসে। ইশিতা ঠিক আছে তো?
ইয়াশ এক সেকেন্ড ও দেরি না করে কার নিয়ে বেড়িয়ে গেল। ইয়াশ পাগলের মত কার ড্রাইভ করছে। যত দ্রুত সম্ভব ইশিতার কাছে যেতে হবে।
আজ তো ইয়াশ ইফান কে মেরেই ফেলবে ইফানের এতো টা সাহস হলো কি করে একটা মেয়ের সাথে এতো বাজে ব্যবহার করার। ইয়াশ অনেক বার করে ইফান কে বলার পর ও ইফান ইশিতা কে অপমান করেছে। আজ ইফানের কপালে অনেক দুঃখ আছে। ইয়াশ আজ ইফান কে কি করবে তা ও নিজেও জানে না। ইফান সব সময় ইয়াশের ভালোবাসা দেখছে কখনও ওর রাগ দেখেনি।তবে আজ দেখতে পাবে। ইয়াশ কখনও অন্যায় সহ্য করে না আজও করবে না। ইফান কে উপযুক্ত শাস্তি দিবে।
ইয়াশ কোন ভাবে বাসায় এসে দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা। ইয়াশের ভয় হতে লাগলো ইশিতা দরজা লক করে রাখছে কেন?
চলবে….