সেই তুমি? পর্ব -৩০

0
2464

সেই তুমি?
পর্ব -৩০
Samira Afrin Samia(nipa)

ইশিতা ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। ইফান ইশিতার কাছে গিয়ে
— ইশিতা তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
ইফানের মুখে তুমি কথা টা শুনে ইশিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইফান তো এই কদিন ইশিতা কে একদম সহ্য করতে পারতো না। তাহলে আজ হঠাৎ করে এতো ভালো করে ইশিতার সাথে কথা বলছে।
ইফান আচমকাই ইশিতা হাত ধরে নিয়ে
— আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ইশিতা। তুমি আমাকে হ্মমা করে দেও। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন আমি আমার ভুল শুধরে নিতে চাই।
ইফানের কোন কথাই ইশিতা বুঝতে পারছে না।
— তুমি এসব কি বলছো ইফান?
— আমি সব জেনে গেছি তোমার কোন ভুল ছিল না। ওই রিহা আমাকে ভুল বুঝিয়েছে এতদিন। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তুমি আমাকে মাফ করে দেও ইশিতা।
ইশিতা ইফানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে
— এখন এসব বলে কোন লাভ নেই ইফান। এসব কথা বলার জন্য এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
— না ইশিতা তুমি চাইলে এখনও সব কিছু ঠিক করতে পারো। আমি তোমাকে আমার বাচ্চা কে ফিরে পেতে চাই।
নাজমা চৌধুরী ইফানের কথা শুনে
— তোর মাথা ঠিক আছে তো ইফান কি বলছিস তুই এসব?
— আমি ঠিকই বলছি মা। আমি আবার সব কিছু ফিরে পেতে চাই। আমি আমার বাচ্চা কে নিজের পরিচয় দিতে চাই।
— তুমি চাইলে ই এখন কিছু হবে না।
— কেন হবে না ইশিতা?
— কারণ আমি চাই না। আমি চাই না তোমার মত একটা অমানুষের পরিচয় নিয়ে আমার বাচ্চা এই দুনিয়াতে আসুক। আর তাছাড়া আমি বিবাহিত। আমার স্বামী মি.ইয়াশ চৌধুরী। উনি ই আমার বাচ্চার বাবা।
— তুমি তো ভাইকে ভালোবাসো না। তুমি আমাকে ভালোবাসো।
ইশিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
— ভালোবাসা?
তোমার মুখের ভালোবাসার কথা শোভা পায় না ইফান। ভালোবাসা পবিত্র শব্দ টা তোমার অপবিত্র মুখে মানায় না।ভালোবাসার তুমি কি বুঝো?
— আমি সত্যি ই আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দেও ইশিতা।
— কিসের ভুল বুঝতে পেরেছো তুমি?
তোমার এই একটা ভুলের জন্য আমার জীবন টা শেষ হতে হতেও বেঁচে গেল। আমি তো নিজের হাতে আমার বাচ্চা কে মেরে ফেলতে গেছিলাম। যদি না ইয়াশ এসে আমার পাশে দাঁড়াতো তাহলে তো আমার এতো
ইশিতা কথা শেষ করতে পারলো না চোখ ভরে পানি পড়তে লাগলো। কথা গুলো গলায় বেঁজে উঠছিল।
— প্লিজ ইশিতা প্লিজ।দরকার পড়লে আমি তোমার পায়ে ধরে হ্মমা চাইবো। তার পরও তুমি আমাকে হ্মমা করে দাও। ফিরে আসো আমার জীবনে। আমি আমার সন্তান কে চাই তোমাকে চাই।
— প্লিজ ইফান আমি তোমার আর একটা কথাও শুনতে চাই না। এখন তোমার সন্তানের কথা মনে হচ্ছে। কই আগে তো সন্তানের প্রতি এতো দরদ ছিল না। তোমার মনে আছে তুমি নিজে আমাকে বলেছিলে এ্যাবরেশন করিয়ে নিতে।
— তখন রিহার কথা শুনে আমি তোমাকে অবিশ্বাস করেছি।
— আসলে কি জানো ইফান। তুমি কোন দিনও আমাকে সত্যি কারে ভালোবাসো নি। যদি সত্যি কারে ভালোবাসতে তাহলে অন্য কারো কথায় নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অবিশ্বাস করতে পারতে না।
তুমি কোন দিনও আমাকে বিশ্বাস করো নি। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা ও নেই।
আমি আমার নিজের লাইফে আমার স্বামীর হাত ধরে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছি। এখন আমি পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না।
— আমি জানি তুমি এসব কথা অভিমান করে বলছো।এগুলো তোমার মনের কথা না। তুমি ভাইকে ভালোবাসো না।
নাজমা চৌধুরী ইফানের এসব পাগলামি দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইফান ইশিতার কাছে এসে জোর করে ইশিতার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে।
— তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো আমি তা খুব ভালো করেই জানি।
ইশিতা ইফানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ইফান খুব শক্ত করে ইশিতার হাত ধরে আছে।
— ইফান আমার হাত ছাড়ো।
ইফান আরও শক্ত করে ইশিতার হাত ধরে
— না ইশিতা। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এখন আমি তোমাকে আর আমার বাচ্চা কে চাই। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
— ইফান আমার হাত ছাড়ো বলছি।
ইশিতার বার বার বলাতে ও ইফান কিছুতেই ইশিতার হাত ছাড়ছে না। উল্টে ইশিতা যতই হাত ছাড়ার কথা বলছে ইফান ততই শক্ত করে হাত ধরে রাখছে।
এক পর্যায়ে ইশিতা জোর জবরদস্তি করে ও হাত ছাড়াতে না পেরে নাজমা চৌধুরী কে ডাকতে লাগলো।
— ইফান আমার হাতে লাগছে। আমার হাত ছাড়ো বলছি।
মা মা আপনি ইফান কে বলেন এসব পাগলামি বন্ধ করতে।
ইশিতা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথা গুলো বললো। ইশিতার চোখের কোণা বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। নাজমা চৌধুরী পাশেই ছিল। নাজমা চৌধুরী এই পরিস্থিতি দেখে ইফান হাত থেকে ইশিতার হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
— ইফান পাগলামি বন্ধ করে ইশিতার হাত ছাড়। ইশিতার লাগছে। ও ব্যথা পাচ্ছে।

ইফান রুম থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার পর রিহা একটু ও ঘুমাই নি। সারা রাত প্রায় জেগেই ছিল। ভোর হওয়ার একটু আগে আগে রিহার চোখ লেগে গেলে রিহা ফ্লোরে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে এতো চেচাঁমেচি শুনে রিহার ঘুম ভেঙে যায়। রিহা চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে। সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে ইফান ইশিতার হাত ধরে আছে এটা দেখে রিহা ইফান বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
— ইফান।
তুমি ওই মেয়েটার হাত ধরে আছো কেন। ছাড়ো বলছি।
রিহা এক প্রকার দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে।
রিহা ও ইফানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
— ইফান তুমি এই নষ্টা মেয়েটার হাত ধরে আছো কেন?
রিহার মুখে ইশিতার জন্য নষ্টা কথা টা শুনে ইফান ইশিতার সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে রিহা কে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা চড় মারে। রিহা টাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে নিচে পড়ে যায়। ইফানের এমন ব্যবহার দেখে ইশিতা ভয়ে আঁতকে উঠে।
নাজমা চৌধুরী রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে।
— ইফান কি শুরু করেছিস তুই?
তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি?
ইফান নাজমা চৌধুরীর কথা কানেও নিলো না। ইফান রিহার দিকে তাকিয়ে
— আর কোন দিন ইশিতা কে নষ্টা বলার দুঃসাহস দেখাতে আমি তোকে জানে মেরে ফেলবো।
— ইফান রিহা তোর বউ। তুই ওর গায়ে হাত তুললি। আর কত নিচে নামবি তুই?
— ও আমার বউ না মা। আমি ওকে ডিভোর্স দিবো। ওর জন্য আমি এতো দিন ইশিতা কে কষ্ট দিয়েছি। নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছি। সব কিছুর পিছনে রিহা ছিল। এখন ওর সাহস করে কি করে হয় আমার সামনে আসার। আমি ওকে এখনও জীবিত রেখেছি এটা ওর ভাগ্য।
রিহা নিচে থেকে উঠে কাঁদো কাঁদো হয়ে।
— ইফান আমি তোমাকে ভালোবেসে এসব করেছি। আমি যা করেছি সব কিছুই তো তোমাকে নিজের করে পাবার জন্য করেছি।
— চুপ আর একটা কথা বলবি না তুই। তুই এখনই আমার বাড়ি থেকে বের হ।
ইফান রিহার হাত ধরে টেনে মেইন ডোর পর্যন্ত নিয়ে গেল।
— আমি কোথাও যাবো না। আমি তোমার বিয়ে করা বউ। তুমি চাইলেই আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারো না।
রিহার কথা শুনে ইফান রেগে গিয়ে রিহার গলা চেপে ধরে।
— আচ্ছা তোর এ বাড়ি থেকে যেতে হবে না। আমি তোকে একে বারে দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিব।
নাজমা চৌধুরী ইশিতা দুজন এসে ইফান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না।
এমন সময় ইয়াশ জগিং করে বাইরে থেকে ফিরে আসে। বাসায় এসে ইয়াশ দেখতে পেলো ইফান রিহার গলা চেপে ধরে আছে ইশিতা আর নাজমা চৌধুরী ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইয়াশ এসে ইফান কে ছাড়িয়ে নিয়ে ইফান কে একটা চড় মারে।
রিহার চোখ লাল হয়ে গেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। রিহা জোরে জোরে শ্বাস টানতে লাগলো আর কাশতে লাগলো।
— কি করছিস তুই এসব?
— ভাই তুই আমাকে আরো মার আমি কিছু বলবো না। পরেও রিহা কে আমার চোখের সামনে থেকে দূর কর। ও আমার সামনে থাকলে আমি ওকে খুন করে ফেলবো ভাই।
— তুই রিহা কে বিয়ে করেছিস। এখন ওকে খুন করতে যাবি কেন?
— রিহা আমাকে মিথ্যে বলে আমাকে দিয়ে এসব করিয়েছে।
এখন ওর সত্যি আমার সামনে এসে গেছে।
ইফান ইশিতার কাছে এসে
— ইশিতা তুমি ভাই কে বলো তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো।
তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে চাও।
ইফানের কথা শুনে ইয়াশ ইশিতার মুখের দিকে তাকায়। ইশিতা ইয়াশের দিকে এক পলক তাকিয়ে
— কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই?
আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা একান্তই তোমার ভুল ধারনা। আমি আমার স্বামী কে ভালোবাসি। আর উনার সাথে ভিষণ সুখে আছি।
ইশিতা আজ সবার সামনে ইয়াশ কে ভালোবাসি কথা টা বলে দিলো। সবার সামনে নিজের ভালোবাসা স্বীকার করে নিলো। ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকে আছে আগের মতই।
— একটা কথা শুনে রাখো ইফান। আমার বাচ্চার উপর তোমার কোন অধিকার নেই। এই বাচ্চার বাবা ইফান চৌধুরী না। এই বাচ্চার বাবা ইয়াশ চৌধুরী। আর হ্যা এখন সম্পর্কে আমি তোমার ভাবী হই। তোমার বড় ভাইয়ের বউ। এই কথা টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিও।
ইফান ইয়াশের কাছে এসে
— ভাই তুই ইশিতা কে বুঝা। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। তুই ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে। প্লিজ ভাই আমি তোর পায়ে পড়ি। তুই আমার ভালোবাসা আমার বাচ্চা কে আমার করে দে।
ইয়াশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইয়াশ শুধু বোকার মতো ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
— তোমার কাছে বিয়ে টা ছেলেখেলা হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে না। যখন যাকে মন চাইলো তাকে বিয়ে করলে। আবার যখন মন চাইবে তাকে ছেড়ে দিবে এটা হতে পারে না। রিহা তোমার বিয়ে করা বউ এটা তুমি মানো বা না মানো। সত্যি টা সত্যি ই থাকবে তোমার না মানাতে পাল্টে যাবে না।
তুমি রিহা কে ছেড়ে দিলেও আমি কখনও আমার স্বামী কে ছাড়বো না। উনি আমার স্বামী এটাই এখন আমার আসল পরিচয়।

চলবে….

( কি লিখছি কিছুই জানি না। Sornali Akter Shrabon এই পাগলী মেয়েটার জন্য আজ এই পার্ট দিতে হলো। আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না। ভুল হলে আমাকে কেউ কিছু বলতে পারবা না। বানানে ভুল হতে পারে খুব তাড়াতাড়ি করে লিখছি। আমি কিছু জানি না কিন্তু। এতো কষ্ট করে এই পার্ট লিখছি সবাই বড় বড় কমেন্ট করবা???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here