সেই তুমি? পর্ব -৩২

0
2444

সেই তুমি?
পর্ব -৩২
Samira Afrin Samia(nipa)

ইশিতা আগে আগে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আজ ইফানের সাথে কথা বলার সময় ইশিতা একটু ও কাঁদেনি এমনকি ভয় ও পায়নি। ইশিতার নিজের ভেতর অনেক টা সাহস এসে গেছে। এখন সে সবার বিরুদ্ধতা করতে পারে। নিজেই নিজের জন্য লড়তে পারে। এই সাহস টা হয়ত ইয়াশ কে পেয়েই হয়েছে। ইয়াশ ইশিতার ভেতর এই সাহস টা তৈরি করে দিয়েছে।
ইশিতা রুম থেকে বের হওয়ার একটু পর পর ইফান ও রুম থেকে বের হয়ে আসে আর রিহা সেটা দেখতে পারে।
— এই ইশিতার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। নাহলে ও আমার থেকে ইফান কে কেড়ে নিবে। আমি এটা হতে দিতে পারি না। ইফান আমার। শুধুই একার আমার।

ইশিতার শরীর টা আজ তেমন ভালো লাগছে না। প্রতি দিনের থেকে আজ একটু বেশি ই দূর্বল লাগছে। তার পর ও ইশিতা দুপুরে রান্না ঘরে গেল।
নাজমা চৌধুরী আজ রাতের ট্রেনেই ভাইয়ের বাড়ি যাবেন। উনার ভাইয়ের শরীর টা নাকি আজকাল ভালো যাচ্ছে না। তাই উনাকে দেখতে যাবেন।
নাজমা চৌধুরী ইশিতার কাছে এসে
— আমি চলে গেলে তুই একা বাসায় থাকতে পারবি তো?
ইশিতা সবজি কাটতে কাটতে
— একা কোথায় মা। তোমার ছেলে আছে। রিহা ইফান সবাই তো বাসায় ই আছে।
— ইয়াশ তো সারা দিন বাসায় থাকে না। অফিসেই পড়ে থাকে সব সময়।
— রিহা তো থাকবে সব সময়
আমার সাথে।
— ওর থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
ইফান টা আজকাল যা পাগলামি শুরু করেছে। ভয় হয় না জানি কখন কি করে বসে।
— কিছু হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার ভাইকে গিয়ে দেখে আসো।
— তোকে ও সাথে করে নিয়ে যেতাম। কিন্তু তোর এই অবস্থায় কিভাবে যাবি।
— আরে মা এতো চিন্তা করো না তো। আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি।

নাজমা চৌধুরী রাতের ট্রেনে যাবে তাই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাসায় শুধু রিহা আর ইশিতা। রিহা নিজের রুমে বসে আছে। ভাবছে কি ভাবে ইফান কে নিজের করে পাওয়া যায়।
— ইফান আমি তোমাকে মন দিয়ে পাইনি তো কি হয়েছে। শরীর দিয়ে ঠিকই তোমাকে হাসিল করবো। আমি আমার রূপ দিয়ে তোমাকে নিজের করে নিব। আজ রাতেই আমি তোমার সামনে আমার রূপের জাদু তুলে ধরবো।

— হ্যালো।
— হ্যা বলো।
— আজ কি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসা যায় না।
— কেন। কিছু হয়েছে?
— না এমনি। বাসায় আমি আর রিহা একা আছি তো।
— আচ্ছা আমি চেষ্টা করছি সব কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার।
— আচ্ছা রাখি তাহলে।
ইশিতা ফোন রেখে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। শরীর টা সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।

রিহা পুরো রুম অন্ধকার করে বেশ অনেক গুলো ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে রেখেছে। সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। অন্য রকম একটা সুগন্ধ আসছে রুম থেকে। মাতাল করা গন্ধ।
রিহা একটা নাইটি পড়ে ইফানের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।

ইশিতার শরীর দূর্বল লাগছে তাই শুয়ে ছিল কখন যে চোখ দু’টো লেগে গেছে তা ইশিতা ও জানে না।
ইফান মদ খেয়ে মাতাল হয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে। আজ ইফান এতটাই ড্রিঙ্ক করেছে সোজা হয়ে হাঁটতে ও পারছে সব। দুই তিন বার পড়ে গিয়ে নিয়ে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছে। এখানে সেখানে কয়েক বার ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে যেতে কোন ভাবে নিজেকে সামলে নেয়।
আজেবাজে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো ইফান। নেশার ঘোরে কি সব যা তা বলছে তা ইফান ও জানে না।
ইফান অনেকক্ষণে নিজের রুমে যায়। রুমে অন্ধকার থাকায় ইফান কিছু দেখতে না পেতে হুংকার দিয়ে
— কে আমার রুম অন্ধকার করে রেখেছে?
তাকে আমি খুন করবো।
এমন ভাবে কথা বলছে ইফান চেষ্টা করে খুব কষ্ট করে কথা গুলো বুঝা সম্ভব হবে। রিহা ইফানের কোন কথাই বুঝলো না।
রিহা এসে ইফান কে ধরে সোজা করে রাখার চেষ্টা করছে।
— কে, কে আমাকে ধরলো?
কার এতো বড় সাহস?
রিহা ইফানের কানের কাছে গিয়ে খুব কষ্ট করে এই বার ইফানের কথা একটু একটু বুঝতে পারলো।
— ইফান আমি।
ইফান রিহার থেকে সরে নিজে টলতে টলতে দাঁড়িয়ে থেকে রিহার দিকে তাকিয়ে
— কে ইশিতা?
নেশার ঘোরেও ইফানের মুখে ইশিতার নাম শুনে রিহা রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
— আমি ওই ইশিতা কে ছাড়বো না। জানে মেরে দিব ওকে।
— কি বললে?
ইফান রিহার কথা বুঝলো না
— কিছু না। তুমি আজ ড্রিঙ্ক করে এসেছো।
ইফান চোখ বড় বড় করে রিহা কে দেখে চেনার চেষ্টা করছে।
— কে তুমি আগে তো তোমাকে দেখিনি।
— এতো ড্রিঙ্ক করো কেন?
আমাকেও চিনতে পারছো না।
রিহা কিরমির করে আস্তে করে বললো।

ইফান হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরে রিহার উপর ই পড়ে গেল। রিহা ইফান কে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল। ইফান উপরে আর রিহা নিচে পড়ে আছে।
— ইশিতা তুমি আমাকে
ইফান কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই রিহা ইফান কে উপর থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইফান কে তুলার চেষ্টা করছে ।

রিহা ইফান কে তুলে বেডে শুইয়ে দিয়ে রুমের আলো জ্বালায়।ইফান মাতাল হয়ে বেঘোরে পড়ে আছে। রিহার রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। রিহা এতো প্লেন করার পরও ইফান কে কোনো ভাবেই নিজের করে পাচ্ছে না। ইফান তার থেকে প্রতিনিয়ত আরো দূরে সরে যাচ্ছে। আর এসব কিছুর জন্য রিহা ইশিতা কে দায়ী করে।

রিহা ইফানের কাছে গিয়ে। ইফানের পাশে শুয়ে ইফানের গালে হাত বুলাতে বুলাতে
— কি কমতি আছে আমার মাঝে?
কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো না? কেন বার বার ওই ইশিতার কাছে ফিরে যাও?
একটা বার আমাকে ভালোবেসে দেখো। আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিব।
রিহা ইফানের হাত রেখে একটু নাড়িয়ে
— কি হলো কথা বলছো না কেন?
ওহ কথা বলবে কি করে তুমি তো এখন ঘুমাচ্ছো।
আচ্ছা ঘুমাও। ঘুমানো অবস্থায় তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে।
রিহা ইফানের মুখের কাছে গিয়ে ইফানের ঠোঁটে একটা চুমু খেলো। কিছুক্ষণ পর ইফানের থেকে সরে এসে কপালে গাঢ় করে একটা চুমু দিয়ে ইফান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
সকালে রিহার আগে ইফানের ঘুম ভেঙে গেল। ইফান চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মাথা টা প্রচন্ড ব্যথা করছে। চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্টে জোর করে মিটমিট করে চোখ মেলে তাকালো। মাথা ঝিমঝিম করছে। ইফান উঠতে নিলে নিজের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো। রিহা ইফান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ইফান নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে রিহা ওর উপর শুয়ে আছে। ইফান সাথে সাথেই রিহা কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো।
রাগে ইফানের গা জ্বলছে। রুমের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো ইফান। ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো।
রিহার এখনও ঘুম ভাঙেনি।
ইফান হেঁচকা টান দিয়ে রিহা কে বেড থেকে নামিয়ে নিয়ে সোজা দাঁড় করিয়ে
— তোর সাহস হয় কি করে আমার সাথে আমার বেডে শোবার।
রিহা এখনও ঘুমে টলছে। ঠিক মত দাঁড়াতে পারছে না।
ইফান রিহার হাত ধরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে
— তোকে বলেছিলাম আমার সামনে না আসতে পরেও তুই আমাকে পাওয়ার জন্য এসব করছিস।
রিহা ঘুমের ঘোরে
— ইফান হাতে ব্যথা পাচ্ছি। কি করছো। আজকাল কি হলো তোমার?
— ব্যথা পাচ্ছিস?
আচ্ছা আজ তোকে বুঝাবো ব্যথা কাকে বলে। আমি যে টুকু কষ্ট পাচ্ছি। আজ তোকেও ঠিক ততটাই কষ্ট দিব।
আমার কিছুই হয়নি। তুই শুধু আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা তাহলে আমি একদম ঠিক হয়ে যাবো।
— আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। যতটুকু কষ্ট দিতে চাও দিতে পারো। আমি তোমার জন্য পৃথিবীর সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে নিবো।
ইফান শয়তানি হাসি দিয়ে
— ওহ ওকে তাহলে তোর ইচ্ছা টা ই আজ পূরণ হোক। আমিও দেখি আমার জন্য তুই ঠিক কতটা কষ্ট সহ্য করতে পারিস।
ইফান সাথে সাথে ওয়ারড্রব থেকে একটা বেল বের করে। বেলের উপরের একটু অংশ ইফান হাতে পেঁচিয়ে নিলো।
শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে ইফান রিহার শরীরে আঘাত করছে। রিহা কিছু করছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইফানের এতো আঘাত আদৌও রিহার শরীরে লাগছে কিনা, রিহা ব্যথা পাচ্ছে কিনা তা রিহা কে দেখে বুঝা যাচ্ছে না। ইফান এতো দিনের জমিয়ে রাখা সমস্ত রাগ রিহার উপর ঝাড়লো। রিহার সুন্দর শরীরে আঘাতের প্রতি টা দাগ গাঢ় হয়ে ফোঁটে উঠেছে। যেখানে যেখানে আঘাত লেগেছে মনে হচ্ছে এখনই ওই জায়গা ফেটে রক্ত ঝড়তে লাগবে। আঘাতের স্থান গুলো উঁচু হয়ে ফোলে উঠেছে। একজন মানুষ এতটা কষ্ট সহ্য করতে পারে তা রিহা কে না দেখলে বুঝাই যেত না। এতো কিছুর পর ও রিহা মুখ ফোটে একটা শব্দ করছে না। নিরবে ইফানের দেওয়ার সমস্ত কষ্ট, সব আঘাত গুলো সহ্য করে যাচ্ছে। এভাবেই কি ইফান ওর ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছে আর রিহা কি এভাবে ভালোবাসার পরীক্ষা দিচ্ছে?

একসময় ইফান নিজে থেকে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেল। ইফান হাঁপাচ্ছে। কপালে কয়েক বিন্দু ঘাম জমে গেছে। হাত থেকে বেল নিচে ফেলে দিয়ে। ইফান হাঁপাতে হাঁপাতে রিহার দিকে তাকালো। রিহা এখনও ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু রিহার চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। চোখের কোণা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল।সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
রিহা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
— কি হলো ইফান? থেমে গেলে কেন?
ক্লান্ত হয়ে গেছো এটুকু তে ই।
তুমি মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেলে কি হবে দেখো আমি কিন্তু মার খেতে খেতে এখনও ক্লান্ত হয়নি।
তোমার যত কষ্ট আছে সব আমার উপর দিয়ে বের করে দেও। তোমার ভিতর লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলোর আমি ও ভাগীদার হতে চাই।
ইফান রিহার কথা শুনে রেগে রিহা কে আবার মারতে আসলে পেছন থেকে কে যেন ইফানের হাত ধরে নেয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here