সেই তুমি? পর্ব -৩৪

0
2444

সেই তুমি?
পর্ব -৩৪
Samira Afrin Samia(nipa)

(গল্প নিয়ে কিছু কথা না বলে পারছি না।
অনেকেই অনেক ধরনের কমেন্ট করে ভাল খারাপ মিলিয়ে। সব গুলো কমেন্ট পড়ে মাথা ঠান্ডা রেখে রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করি। কখনও কারো সাথে বাজে ব্যবহার করছি বলে আমার মনে হয় না।
গল্পে অনেকে বাস্তবতা খুঁজেন। হুম ভালো কথা, কিন্তু কোন ধরনের বাস্তবতা খুঁজেন বলেন তো?
বাস্তবে কি কোন মেয়ে বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হয় না? কোন মেয়ে কি বাচ্চা নষ্ট করে না? তাদের কি শেষে তাদের বফের সাথেই বিয়ে হয়?
হলেও হাতে গুনে কয় জনের হয়?
এতই বাস্তবতা খুঁজেন তাহলে গল্প না পড়ে পুরো বাংলা একবার ঘুরে দেখুন, এমন অনেক ঘটনা চোখে পড়বে।
আর একজন আপু বললো ” গল্প টা বাস্তবিকতা তো দূর সিনেমা কেও হার মানাচ্ছে”
আপু আপনি কি সিনেমা দেখেন?
যদি সিনেমা দেখে থাকেন তাহলে শুনুন। যখন কোন মুভির হিরো দশ/বিশ তলা বিল্ডিং এর উপর থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কি সেখানে বাস্তবতা খুঁজেন?
নাকি হাত তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠেন?
আমাদের সমাজে কি এমন হচ্ছে না? একটা ছেলে মেয়েটার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করে তাকে বিয়ে না করে ফ্যামিলির পছন্দ মত মেয়েকে বিয়ে করছে?????
আসলে এফবি তে গল্প পড়ে সবাই জ্ঞান দিতে পারে। কিছু সংখ্যক লোকের তো ফ্রি তে জ্ঞান দিতে সেই মজা লাগে।
এসব করে আপনারা কতটা মজা পান তা জানি না। তবে আপনাদের এসব কান্ড দেখে আমি অনেক মজা পাই।
✌✌✌ ভাই ও বোনেরা আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে আল্লাহ আমাকে জ্ঞান দিয়েছে।
আপনাদের এতো কষ্ট করে আমাকে বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে না।
এই কথা গুলো তাদের গায়ে লাগবে যারা এখন পর্যন্ত আমাকে জ্ঞান দিয়ে আসছেন।
এতো কথা কখনোই বলতাম না। তবে কিছু লোকের জন্য বাধ্য হয়ে আজ বললাম। আমি এতটা দূর্বল না যে আপনাদের দুই লাইনের কথা শুনে কান্নাকাটি করবো+গল্প লিখা ছেড়ে দিব। শেষ কথা গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করেন কষ্ট করে কমেন্ট বক্সে এসে জ্ঞান ছাড়বেন না।)

.
.
.
.
রাতে গা কাঁপিয়ে রিহার জ্বর আসে। জ্বরে আবোলতাবোল বলতে থাকে। বাসায় কেউ নেই শুধু রিহা আর ইশিতা। ইয়াশ অফিসে, ইফান কোথায় তা জানা নেই। রিহার জ্ঞান নেই জ্বরে থরথর করে কাঁপছে আর বিরবির করে কি যেন বলছে। ইশিতা রিহার পাশে বসে রিহার মাথায় জলপট্টি করে দিচ্ছে।
— রিহা কেমন লাগছে তোমার?
আমাকে বলো।
ইশিতা ফোন হাতে নিয়ে ইয়াশ কে কল করছে। কিন্তু ইয়াশ কল তুলছে না। ইয়াশ অফিসে একটা মিটিংয়ে আছে তাই ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে।
অফিসের কাজের ঝামেলায় বাসার কথা ভুলে গেছে বললেই হয়।
— কি করছে ইয়াশ?
ফোন তুলছে না কেন?
রিহা বিরবির করে কিছু বলছে
— রিহা কিছু বলছো?
স্পষ্ট করে বলো আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
ইশিতা রিহার মুখের কাছে কান নিয়ে শুনার চেষ্টা করলো। রিহা কি বলছে।
রিহা অস্পষ্ট ভাবে
— ইফান তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া
রিহা বলতে বলতে চুপ করে গেল।
ইশিতা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। রিহা সত্যি ই ইফান কে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু রিহা যা করেছে তার পর আর কোন ভাবেই ইফান তার হবে না।

প্রায় অনেক রাত করে ইয়াশ বাড়ি ফিরে আসে। নিজের রুমে গিয়ে ইশিতা কে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে ইশিতা কে খুঁজতে যায়। ইফানের রুমে গিয়ে রিহার পাশে ইশিতা কে পেল। রিহার মাথায় জলপট্টি করে দেওয়ায় জ্বর অনেকটা কমে গেছে। রিহা এখন ঘুমিয়ে আছে ইশিতা পাশে বসে ঝিমাচ্ছে।

ইয়াশ রুমে ঢুকে ইশিতার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ ইশিতা কে দেখলো। এতো ভালো মানুষ হয় কি করে। মনে কোন হিংসা নেই, কারো প্রতি একটু ঘৃণা নেই। কিছু যদি থেকে থাকে তা শুধু ভালোবাসা। প্রান উজাড় করে সবাইকে ভালোবাসতে জানে ইশিতা। ইয়াশ যে দাঁড়িয়ে আছে তা ইশিতা খেয়াল করলে তো। ইশিতা বেডের সাইডে বসে ছিল। ঘুরে চোখ লেগে আসলে একটু হেলে পড়ে যেতে নিচ্ছিল ইশিতা। ইয়াশ ইশিতা কে ধরে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইশিতার মনে হলো সে শূন্যে বাসছে। ভয় পেয়ে সাথে সাথে চোখ খুলে দেখে ইয়াশ ওকে পাচঁকোলে তুলে রুমের দিকে যাচ্ছে।
— তুমি কখন আসলে?
— এসেছি অনেকক্ষণ।
— আমায় ডাকলে না কেন?
— তোমার নিজের স্বামীর দিকে কি তোমার কোন খেয়াল আছে?
আমি কি করছি, কোথায় আছি, খেয়েছি কিনা তা তো একবার ও জানতে চাও না। সারাক্ষণ অন্যদের নিয়ে পড়ে থাকো।
— কে বললো মশাই আমি আপনার খবর নেই না। নিজের ফোন টা ধরে দেখছেন কত বার কল দিছি।
ইয়াশের ফোনের কথা শুনে মনে হলো সে তো মিটিংয়ের সময় ফোন অফ করে রেখেছিল। তার পর আর ফোন ধরার কথা মনে নেই। এখনও ফোন অফ করাই আছে।
— কি মনে পড়েছে তো?
এতক্ষণে ইয়াশ ইশিতা কে নিয়ে রুমে চলে আসে। ইশিতা কে বেডে বসিয়ে দিয়ে
— হুম মনে পড়েছে।
— এখন আমি রাগ করি?
— কেন, তুমি রাগ করবে কেন?
— তুমি সারাদিন ফোন অফ রাখছিলা তাই।
— না, না প্লিজ এখন আর রাগ করো না। ভুল আমার ই।
ইশিতা খিলখিল করে হেসে দিয়ে
— আরে বাবা ভয় পাচ্ছো কেন? আমি এমনিতে ও রাগ করবো না। আমি জানি তুমি সারাদিন কাজে বিজি ছিলে। নয়তো তুমিই হাজার বার কল করে আমার খোঁজ দিতে।
ইয়াশ সত্যি ই মাঝে মাঝে ইশিতা কে দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
— রাত অনেক হয়েছে,তুমি খেয়েছো?
— তুমি রিহার কাছে ছিলে আমি একা খাই কি করে?
— তুমি অফিস থেকে ফিরে এসে এখনও খাও নি?
— না ম্যাডাম। তুমি খেয়েছো? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে সন্ধ্যার পর থেকে এক ফোঁটা পানি ও মুখে নেও নি। সবার দিকে তোমার খেয়াল আছে। শুধু নিজের দিকে আর নিজের সন্তানের দিকে নেই।
— রিহার অনেক জ্বর ছিল ওর পাশেই থাকতে হয়েছে।
— তাই বলে এখনও রাতের খাবার খাবে না?
— একদিন রাতে না খেলে কি হয়?
— কি হয় মানে? তুমি কি বলো তো। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে না। তুমি এমন করে না খেয়ে থাকলে আমাদের বাচ্চা কি করে হেলদি হবে। ও তো রোগা পাতলা হবে তখন?
— আরে এমন কিছু হবে না। দেখো আমাদের বাবু একদম গুলোমুলো হবে।
— কি করে হবে?
— এভাবেই। চলো তো এখন তোমাকে খাবার দেই।

ইয়াশ আজ নিজের হাতে ইশিতা কে খাইয়ে দিচ্ছে। ইশিতা ও ইয়াশের হাতে তৃপ্তি করে খাচ্ছে।
— রিহা এখন কেমন আছে?
— মোটামুটি ভালোই। দুপুরের পর প্রচুর জ্বর আসছে। আমি খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে দিছি।
— রিহা তোমার সাথে এতো কিছু করেছে তার পর ও তুমি রিহার সেবা যত্ন করছো?
— হুম।
— রিহা তোমার সাথে যা করেছে তা অন্য কারো সাথে করলে। সে রিহার মুখ দেখতো না কোন দিন সেবা করবে তো দূর।
— রিহা আমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছে। আমাকে নানা ভাবে কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে। এমনকি আমার জীবন টাই নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল।
রিহা যা করেছে তার জন্য ওকে হ্মমা করা উচিত কিনা আমি তাও জানি না।
তবে একটা কথা রিহা আমার সাথে যা যা করেছে তা মনে রেখে ওর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমিও যদি তাই করি তাহলে ওর আর আমার মাঝে পার্থক্য টা কি থাকবে?
রিহা আমার সাথে খারাপ করেছে সেটা মনে রেখে এখন আমি ওকে অসুস্থ দেখেও ওর কাছে না যাই তাহলে তো আমি ও ওর মতই হয়ে গেলাম তাই না?
ইয়াশ ইশিতা কে কি বলবে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
— আর কেউ ভুল করলে তাকে হ্মমা করে দেওয়া টা ই মহত্ততা। তার প্রতি মনে কষ্ট চেপে রাখার মধ্যে কোন মহত্ততা নেই।
রিহা তার ভুল ঠিকই বুঝতে পেরেছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছি। রিহা মনে মনে অনুশোচনায় ভোগছে। ও বাহির থেকে একটু কঠিন তাই এখনও স্বীকার করছে না।

ইয়াশ ইশিতা নিচে গিয়ে খাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে আসে। ইশিতা বিছানা গোছাচ্ছে। ইয়াশ ল্যাবটপ নিয়ে বসে কি যেন করছে।
বিছানা গোছানো শেষ হলে ইশিতা পা তুলে বেডের উপর বসে। ইয়াশের দিকে তাকায়। ইয়াশ এতক্ষণে ল্যাবটপে পুরো ডুবে গেছে।
— এতো কাজ করতে পারে লোকটা। অফিসে কাজ করে শখ মিটে না। এখন আবার বাড়িতে এসে ও কাজ করতে হবে।
দেখো দেখি আমি গলা ফাটিয়ে এতো কথা বলছি তা উনার কানে গেলে তো। উনি তো ল্যাবটপে ডুবে আছেন।
ইশিতা জোরে ইয়াশ কে ডাক দিয়ে
— এই যে আপনার কানে কি আমার কথা গুলো পৌঁছাচ্ছে?আমি কিছু বলছি। শুনতে পাচ্ছেন?
ইয়াশ বেখেয়াল ল্যাবটপ বন্ধ করে রেখে বেডে আছে। ইয়াশ কে কেমন যেন দেখাচ্ছে। খাবার আগে তো এমন দেখায় নি। রুমে এসে ল্যাবটপে কি এমন দেখে নিলো যার জন্য ওর মোড অফ হয়ে গেল।
ইশিতা কিছু আন্দাজ করতে পেরে শান্ত গলায় বললো
— কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— কিছু হয়নি।
— মিথ্যে বলো না। তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
ইয়াশ ইশিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে
— আমাকে ছাড়া তুমি একা একা থাকতে পারবে?
— কি বলছো এসব?
— আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার কষ্ট হবে না?
— পাগল হয়ে গেলা নাকি? উল্টো পাল্টা এসব কি কথা বলছো তুমি?
দেখো কি হয়েছে সোজাসুজি বলো। আমি কিন্তু এখন কেঁদে দিব।
— আরে কাঁদবে কেন?
— কাঁদবো না তো কি করবো। তুমি এসব কেমন কথা বলে যাচ্ছো।
ইয়াশ আমতা আমতা করে
— আমাকে কয়েক দিনের জন্য অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে।
ইশিতা এবার কেঁদে দিলো
— কি হলো কাঁদছো কেন?
— তুমি এতক্ষণ আমাকে ভয় দেখিয়েছো। বাইরে যেতে হবে একথা না বলে কি সব বলছিলে। আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম তুমি জানো?
ইয়াশ ইশিতা কে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে
— সরি বাবা কাঁদে না। ভুল হয়েছে আমার। এই কানে ধরছি। এবার তো কান্না থামাও।
— তোমার সাথে কোন কথা নেই।
— সত্যি তো?
— হুম।
— তাহলে আমি একে বারের জন্য ই বাইরে চলে যাবো। আর দেশে আসবো না।
— একদম খুন করে ফেলবো।
ইয়াশের গলা চেপে ধরে। ইয়াশ হাসতে লাগলো।
— কতদিনের জন্য যেতে হবে?
— দুই বা তিন সপ্তাহ। কাজ শেষ করতে পারলে আরও আগে চলে আসা যাবে।
— কবে যেতে হবে?
— কাল ই।
— আচ্ছা।
— আমি ভাবছি যাবো না।
— যাবে না কেন?
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
— তোমাকে এই অবস্থায় বাড়িতে একা রেখে কি ভাবে যাই তুমি ই বলো। আর তাছাড়া তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার একটু ও ভালো লাগে না। এক একটা মুহূর্ত এক এক বছরের মত মনে হয়।
— একা কোথায় রিহা আছে। মা ও চলে আসবে কিছু দিনের ভেতর। না গেলে তোমার বিজন্যেসের হ্মতি হয়ে যাবে।
— হোক। তোমাকে আর আমার পুচকো কে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
— জ্বী না মশাই যাবেন। কিছু দিনের ই তো ব্যাপার। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আবার চলে আসবেন।

চলবে…..
( লিখতে ভালো লাগলো না। মনের উপর জোর করে এই পর্ব টা লিখা। আজ ছোট করে দিলাম কাল বড় করে দিব☺ আবারো বলছি দরকার হলে ইগনোর করবেন তবুও জ্ঞান দিবেন না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here