সেই তুমি? পর্ব -৩৫

0
2669

সেই তুমি?
পর্ব -৩৫
Samira Afrin Samia(nipa)

(একটা সমস্যার কারনে প্রোফাইল লক করতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম এ কয়েক দিন গল্প দিব না।
তবে প্রোফাইল লক করার পর অবাক না হয়ে পারলাম না।
আমি তো জানতাম ই না এতো দিন ধরে এতো এতো লোক চুপিচুপি আমার গল্প পড়ে চলে যায়।
প্রোফাইল লক করার পর যারা যারা ম্যাসেজ রিকুয়েস্ট পাঠাইছে তাদের আমি জীবনে ও দেখি নাই। কোন কমেন্ট করবে তো দূর মনে হয় না লাইক ও করে।
থাক আমার এতো লাইক কমেন্ট এর দরকার নাই যারা চুপিচুপি চুরি করে গল্প পড়তে ভালোবাসো তারা ওভাবেই পড়ো সমস্যা নাই ☺☺)

.
.
.
.
.

সকালে রিহার ঘুম ভাঙে। চোখ খুলে পাশে কাউকে পেল না। তবে বেড সাইড টেবিলের উপরে জলপট্টি দেখতে পেল। রিহা মনে করতে লাগলো রাতে তার জ্বর আসছিল আর ইশিতা তার পাশে বসে কিভাবে তার যত্ন নিয়েছে।
এখন অনেকটা ভালো লাগছে রিহার জ্বর ও সেরে গেছে। শরীরে এখনও অনেক ব্যথা। রিহা আস্তে আস্তে বেড থেকে উঠে সিঁড়ির রেলিং ধরে নিচে নেমে এলো। নিচে কেউ নেই। ইশিতা কোথায়? রিহা মনে মনে ইশিতা কে খুঁজছে। কাল রাতের পর থেকে ইশিতার প্রতি রিহার নতুন এক ধারনা তৈরি হয়েছে। আগে রিহা ইশিতা কে সম্পূর্ণ ভাবে ভুল চিনতো। কাল সারা দিন রিহা অসুস্থ থাকায় ইশিতা কে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। সত্যি ই একটা মানুষ কে কাছে থেকে না দেখলে কখনও বুঝা যায় না সে কেমন।
রিহা হাঁটতে হাঁটতে কিচেনে চলে গেল। ইশিতা রান্না করছে ইয়াশ আজ সকালের ফ্লাইটে ই চলে যাবে। ইশিতা রিহা কে দেখে
— রিহা তুমি নিচে আসলে কেন? কিছু লাগবে?
আমাকে ডেকে বলতে আমি তোমার কাছে যেতাম।
রিহা কিছু না বলে ইশিতার পাশে এসে দাঁড়ায়। ইশিতা কাজে ব্যস্ত হয়েই রিহার সাথে কথা বলছে।
— এখন কেমন আছো?
শরীর ঠিক লাগছে তো?
জ্বর কমেছে নাকি এখনও আছে?
— আমি ঠিক আছি। জ্বর নেই এখন।
— আচ্ছা তাহলে তুমি রুমে যাও। আমার রান্না শেষ হয়ে গেলে আমি তোমাকে ডেকে নিব।
ইশিতা খুব তাড়াতাড়ি করে সব কাজ করছে।
— তুমি নিচে এসে খাবে নাকি আমি খাবার তোমার রুমে নিয়ে যাবো?
রিহা এবার ইশিতার হাত ধরে ইশিতা কে সোজা দাঁড় করিয়ে
— কিছু কথা ছিল তোমার সাথে। একটু চুপ করে শান্ত হয়ে দাঁড়াবে।
আজ রিহা এই প্রথম ইশিতা কে তুমি করে বললো। আর ইশিতার সাথে কোন কথা বলতে চাইলো তাও এতো ভালো করে। ইশিতা মনে মনে হাসলো।
— এখন তো কোন কথা শুনতে পারবো না। আসলে তোমার ভাইয়া আজকের সকালের ফ্লাইটে ই দেশের বাইরে চলে যাবে। অফিসের কিছু কাজের জন্য সপ্তাহ কয়েক থাকবে। তাই ওর জন্য ই এতো রান্না হচ্ছে।
— ওহ তাহলে আমিও তোমার সাথে হাতে হাতে কিছু কাজ করে দেই। আমি তো কাজ তেমন পারি না। আমি তোমাকে এটা সেটা এগিয়ে দেই?
— তোমার কিছুই করতে হবে না। আমি একাই পারবো। আর তাছাড়া তোমার শরীর ভালো না। তুমি অসুস্থ। তুমি গিয়ে রেস্ট নেও।
— আরে না আমি পারবো। তুমি শুধু আমাকে বলো আমার কি কি করতে হবে।
ইশিতা মনে মনে অনেক খুশি। সে যেন আজ নতুন কোন রিহা কে দেখছে। এই রিহার সাথে তার আগে পরিচয় ছিল না। ইশিতা কখনও রিহা কে এমন করে দেখে নি। শুধু ইশিতা কেন কেউই দেখি নি হয়ত।

ইফান রুমে সব কিছু গুজগাজ করছে। নিজের যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও ইশিতার জোরে যেতে হচ্ছে। ইশিতা চায় না তার জন্য ইয়াশের বিজন্যেসের কোন হ্মতি হোক।
নাজমা চৌধুরী বাসায় নেই তাই উনিও ইয়াশ কে এখন বাসা থেকে কোথাও যেতে না করছিল। ইশিতা নাজমা চৌধুরী কে ও বুঝায়। অনেক বলার পর নাজমা চৌধুরী রাজি হয়। ইয়াশ আজ চলে গেলে ইশিতা বাসায় পুরো একা হয়ে যাবে। রিহা আছে ইফান ও আছে। কিন্তু তাদের থাকায় ইয়াশের আরও বেশি চিন্তা। ইফান রিহা ইশিতার সাথে যেকোন সময় যে কিছু একটা করে ফেলতে পারে।
নাজমা চৌধুরী আজ আসতে না পারলেও কাল ঠিক চলে আসবে যেভাবেই হোক।

ইশিতা রুমে এসে দরজার সামনে থেকেই বলতে লাগলো
— তোমার ফ্লাইট কয় টায়?
বাসা থেকে কখন বের হবে? এখনও কি করছো তুমি?
ইশিতা ইয়াশের কাছে এসে দাঁড়ালে ইয়াশ ইশিতা কে কাছে নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
— না গেলে হয় না?
— যাওয়ার সময় এটা কেমন কথা?
— ইচ্ছে হচ্ছে না তোমাকে একা রেখে যেতে। কেনই যেন মন বলছে তোমাকে একা রেখে না যেতে।
ইশিতা ইয়াশের হাতে আলতো করে হাত রেখে
— কি হয়েছে হুম?
এতো টেনশন কেন? কিছু দিনের ই তো কথা। তুমি একদম চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে। মা কাল চলে আসলে তার পর তো আমি আর একা থাকবো না তাই না?
— জানি না কিছু ভালো লাগছে না। কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
— এতো চিন্তা করলে এমনই হবে।
এখন চলো খেয়ে তোমাকে আবার বের হতে হতে। তা নাহলে ফ্লাইট মিস করে যাবে।
— ইশিতা?
— হুম।
— আমি চলে গেলে তোমার একা থাকতে কষ্ট হবে না?
— কষ্ট কিসের তুমি কি একে বারের জন্য চলে যাচ্ছো নাকি?
কিছু দিনের ই তো ব্যাপার। তার পর তো কাজ শেষ করে চলেই আসবে। আর তাছাড়া তুমি তো আমাদের ফিউচারের কথা ভেবেই এতো কাজ করছো। আমাদের পুচকো টা কে ভালো একটা লাইফ গিফট করার জন্য ই তো এতো কিছু।
কথা গুলো বলার সময় ইশিতার বুক ফেটে যাচ্ছিল। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল তুমি যেও না, তুমি চলে গেলে যে আমি বড্ড একা হয়ে যাবো।
ইশিতার দু’চোখ ভরে পানি আসছিল। অনেক কষ্টে ইশিতা নিজের কান্না থামালো। ইয়াশ এখন ইশিতা কে কাঁদতে দেখছে কোথাও যাবে না। দেশের বাইরে তো দূর বাসা থেকে এক পা ও বের হবে না।
ইয়াশের দু’চোখ লাল হয়ে আছে। ইশিতা কে ছেড়ে যেতে ইয়াশের একদম ই ইচ্ছে হচ্ছে না।

ইয়াশ চলে গেল। গাড়ি নিয়ে ড্রাইভারে সাথে এয়ারপোর্টের উদেশ্যে রওনা দিলো। ইয়াশ চলে যাওয়ার পর ইশিতা সমানে কেঁদে যাচ্ছে। ইয়াশ কে নিজের থেকে দূরে যেতে দিয়ে ইশিতার ও ভালো লাগছে না। ইয়াশের বিজন্যেস প্রায় সব টা ই বিদেশে। দেশে কয়েকটা কোম্পানি আছে তবে বেশির ভাগ কোম্পানি দেশের বাইরে ই। আগে ইয়াশ প্রায় সময় ই দেশের বাইরে থাকতো।বিকেলে রিহা ইশিতার কাছে আসে। ইশিতা শুয়ে আছে। রিহা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে জিঙ্গেস করলো
— ইশিতা আসবো?
ইশিতা উঠে বসে
— হ্যা রিহা আসো।
রিহা রুমের ভেতর এসে ইশিতার কাছে বসলো
— তুমি এখানে কিছু লাগবে?
— না। এমনিতে কি আমি তোমার রুমে আসতে পারবো না?
— তা না।
— তুমি কাঁদছিলে?
ইশিতা ফ্যাকাশে হাসি দিয়ে
— কই না তো।
— তাহলে তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেন? আর চোখ ফোলা ফোলা ও লাগছে।
ইশিতা কি বলবে তা ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু বলতে গেলে
— আচ্ছা থাক আমার সাথে আর মিথ্যে কথা বলতে হবে না।
আমি জানি তুমি কাঁদছিলে। আর তাই চোখ লাল হয়ে ফোলে গেছে।
— তুমি এখন কেমন আছো?
— ভালোই। ইশিতা?
— হ্যা বলো।
— তুমি আমার সাথে কথা বলছো। এতে তোমার কোন রকম খারাপ লাগছে না?
— খারাপ লাগবে কেন?
— আমি তোমার সাথে
ইশিতা রিহা কে থামিয়ে দিয়ে
— রিহা যা ঘটে গেছে তা মনে রাখার কোন মানে নেই। আমরা সবাই সবার জীবনে অনেক টা আগে চলে গেছি। এখন পিছনে তাকিয়ে দেখলে আমাদের ই কষ্ট হবে।
— আমি কারো কাছে কখনও হ্মমা চাইনি। আমার হাজার ভুল হলেও না। আজ কেনই যেন খুব ইচ্ছে করছে তোমার কাছে একবার হ্মমা চাই।
— এসব কি কথা রিহা।
— তোমার মত মানুষ খুব কম হয়। তোমার সাথে আমি যা যা করেছি আমার সাথে কেউ এমনটা করলে আমি তো তাকে মার্ডার করতাম। কখনও হ্মমা করা তো দূর আমি যেকোন মূল্যে তার জীবনের সব সুখ কেড়ে নিতাম।
— রিহা সবাই ভুল করে কেউ বড় কোন ভুল করে আবার কেউ ছোট ভুল করে। আমাদের সবার দ্বারা ই ভুল হয়ে থাকে।
তবে একটা কথা কি জানো সবাই কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করে নেয় না। যারা ভুল করে ভুল স্বীকার করে তাদেরকে কি আমাদের হ্মমা করে দেওয়া উচিত না?
— আমি তো কখনও ই আমার ভুল স্বীকার করিনি। তার পর ও তুমি আমার জন্য কত কিছু করলে।
— তুমি মুখে তোমার ভুল স্বীকার করো নি তা ঠিক। তবে মনে মনে ঠিকই কষ্ট পেয়েছো। তোমার ভুলের জন্য তুমি অনুতপ্ত হয়েছো।
— সত্যি ই ইশিতা তোমার মত কেউ হতে পারবে না। আমি হাজার বার জন্ম নিলেও তোমার মত হতে পারবো না।
তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি নিজে একটা মেয়ে হয়ে তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য আমার কোন হ্মমা নেই আমি তা জানি।
— ওসব কথা এখন বাদ দেও। এখন তো তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে হ্মমা চাইতে আসছো এটাই অনেক।
রিহা আজ সত্যি সত্যি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ও ইশিতার সাথে কতটা খারাপ কাজ করেছে তা আজ উপলব্ধি করতে পারছে। নিজের এই ভুলের জন্য রিহা হয়ত কখনও নিজের বিবেকের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। তবে ইশিতা যে তাকে হ্মমা করে দিয়েছে এটা ভেবেই রিহা সস্তি পাচ্ছে।

ইয়াশ ঠিকঠাক পৌঁছে গেল। গিয়ে ইশিতা কে ফোন করেছে। নাজমা চৌধুরী পরের দিনই চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারে নি। উনার ভাই অনেক অসুস্থ বাঁচবে না হয়ত। ইশিতা এসব শুনে নাজমা চৌধুরী কে এখন আসতে বারণ করে দিয়েছে। রিহা আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছে। ইশিতা মাঝে মাঝে রিহা কে দেখে চিন্তা করে এটা কি সেই আগের রিহা?
ইশিতা প্রেগন্যান্ট, আট মাস চলছে। রিহা ইশিতার অনেক খেয়াল রাখে। এমন ভাবে সব সময় ইশিতার কাছে থেকে ওর খেয়াল রাখে মনে হয় রিহা ওর মায়ের পেটের বোন। মানুষ ভুল করে সেই ভুল টা শোধরে নিতে পারে কয়জন?
রিহা তার ভুল শোধরে নিয়েছে।

এভাবে দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। নাজমা চৌধুরী এখন আসতে পারলেন না। কারণ উনার ভাই মারা গেছেন। ভাবী আর ভাইয়ের ছোট ছোট তিন টা সন্তান কে রেখে আসবে কি করে?
ইফান এই এক সপ্তাহ বাসায় আসেনি। কোথায় ছিল তা কেউ খোঁজ নেয়নি। আজ নিজে থেকেই ইফান বাসায় এসেছে।
বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
ইশিতা আজ একটু অসুস্থ। দুপুর থেকেই পেট ব্যথা করছে। রিহা ইশিতা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
— ইশিতা আমি ডক্টর ডাকি?
— ডক্টর ডাকতে হবে না। একটু ব্যথা এমনিতেই থেমে যাবে।
— বাসায় কেউ নেই। তোমার কিছু হলে আমি একা একা কিছুই করতে পারবো না।
এক কাজ করি ইফান কে কল করে দেখি ও কোথায় আছে।
— না রিহা তুমি ইফান কে কল করে বাসায় আসতে বললে ও এসে আরও ঝামেলা করতে পারে।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
ইশিতা কিরমির করে চুপ থেকে ব্যথা সহ্য করছে। হঠাৎ করে এটা কিসের ব্যথা হলো ইশিতা তা ই বুঝতে পারছে না।
রাত প্রায় এগারোটা ইশিতার পেট ব্যথা একটু কমেছে। রিহা ইশিতা কে কোন ভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে রুমের লাইট অফ করা রিহা তো লাইট অফ করে যায়নি। তাহলে কেউ আছে নাকি রুমে। রিহা এসব ভাবতে ভাবতে রুমের লাইট অন করে দেখে ইফান বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
ইফান এতো দিন পর হঠাৎ করে কোথায় থেকে আসলো। ইফান কে দেখে রিহার চোখ আনন্দে ঝলমল করতে লাগলো।
ইফান তখনও পুরোপুরি ঘুমায় নি। তবে চোখ লেগে এসেছিল। ঘুম ভর করে এসেছিল চোখের পাতায়। হঠাৎ রিহা রুমের লাইট অন করায় ইফানের কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল। ইফান কে বলে রেগেমেগে বেড থেকে উঠে এসে
— তোর সমস্যা কি?
আমি ঘুমাচ্ছিলাম এটা তোর সহ্য হলো না। তুই আমাকে একটু ও শান্তিতে বাঁচতে দিবি না।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here