সেই তুমি?
পর্ব -৪
Samira Afrin Samia(nipa)
সকালে মামীর ডাকে ইশিতার ঘুম ভাঙ্গে। সকাল প্রায় দশটা বাজতে চলেছে ইশিতা এখনও ঘুম থেকে না উঠায় সালেহা বেগম গিয়ে ইশিতা কে ডেকে তুললো।
ইয়াস সকালে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। নাজমা চৌধুরী খাবার দিচ্ছে। ইয়াস খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে নাজমা চৌধুরীর কাছে ইফানের কথা জিঙ্গেস করলো।
— মা ইফান কোথায়?
নাজমা চৌধুরী চেয়ার টেবে বসে
— তোর ভাইয়ের খবর আমি রাখি না। কখন কি করে কোথায় যায় তা কি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে?
তাহলে শুধু শুধু আমি কেন ওকে নিয়ে টেনশনে থাকবো। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক। যা ইচ্ছা তা করুক আমার কিছু যায় আসে না। তুই তোর ভাইয়ের কথা আমার কাছে জিঙ্গেস করবি না।
— রাগ করছো কেন মা। তুমি তো জানোই ইফান একটু ছেলেমানুষি করে। কোনো কিছু নিয়েই সিরিয়াস হয় না। সব কিছুতে ই শুধু ফান করে।
— ইফানের এসবের জন্য তো তুই ই দায়ী। ছোট থেকে আদর দিতে দিতে ওকে একেবারে বাদর করে তুলেছিস। তোর আঙ্কারা পেয়েই তো ও এতো টা বিগড়ে গেছে।
— কি করবো বলো। ও তো আমার একমাত্র ছোট ভাই। বাবা তো আমাদের দু’ভাই কে সমান ভাবে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিল। বাবা চলে যাওয়ার পর তো ওর সব আবদার আমার কাছেই ছিল। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি ওর সব আবদার পূরণ করতে। কোনো দিন ও যাতে ও বাবার অভাব বুঝতে না পারে তাই তো ওকে প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি ভালোবাসা দিয়েছি।
নাজমা চৌধুরী একটু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে
— আমি জানি রে বাবা। তুই তোর ভাইকে কতটা ভালোবাসিস। তাই তো ওর সব ভুল মাফ করে দিস। হাজার ভুল করলে ওকে কোনো শাস্তি দেস না। আর এজন্যই ইফান টার আজ এই অবস্থা। সারা দিনে একবার ও বাসায় আসে না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না। রাতে কখন বাসায় আসে তা কেউ জানে না। বন্ধুদের সাথে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় পার্টি করে বাজে জিনিস গুলো খায়। আরো কি কি করে তা আল্লাহ ই জানে। সকাল এগারো/বারোটার মত ঘুমায়।এগুলো তো ভালো লক্ষন না। আমার ছেলেটার জীবন টা কি এভাবে ই আমাদের চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাবে? আমরা কি কিছু করতে পারবো না শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো ই ?
— তুমি চিন্তা করো না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব ঠিক করে দিবো। আর ইফান শুধু বন্ধুদের সাথে ই একটু আড্ডা দেয়। ও তেমন কোনো কাজই করবে না যার জন্য আমাদের অসম্মানিত হতে হবে। তুমি ইফানের জন্য খাবার দেও আমি ওকে ডেকে আনছি।
ইয়াস উঠে উপরে ইফানের রুমের দিকে যেতে লাগলো। ইফানের রুমের সামনে গিয়ে ইফান কে ডাক দিতে যাবে তখনই ইয়াস দেখে রুমের দরজা খুলা ই আছে। ইয়াস রুমের ভিতরে গেল।
— ইফান। ইফান,,,,,,
ইয়াসের ডাকে ইফান কোনো সাড়া দিচ্ছে না। হাত পা ছড়িয়ে মরার মত পড়ে ঘুমাচ্ছে। ইয়াস আবার ইফান কে ডাক দিলো।
— ইফান উঠ বলছি। ইফান,,,, এই ইফান।
অনেকক্ষণ ডাকার পর ইফান একটু নড়ে উঠলো। মিটমিট করে চোখ খুলে সামনে ইয়াস কে দেখে এক লাফে উঠে বসলো।
— ভাই তুই? কখন আসলি আমার রুমে?
— কয়টা বাজে খেয়াল আছে? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। খাবার নিয়ে মা আর আমি তোর জন্য ওয়েট করছি।
ইয়াস আর কিছু না বলে ইফানের কোনো কথা না শুনে নিচে চলে গেল।
— বাবা! সকাল সকাল জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম। ভাই আজ আমাকে ডাকতে আসছে কেন? নিশ্চয় মা কিছু বলেছে।
ইফান ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে। একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বললো।
— মা তাড়াতাড়ি খাবার দেও। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
ইয়াস নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে
— এতো কিসের তাড়া তোর?
কোথায় থাকিস আজকাল? কাদের সাথে চলাফেরা করিস এখন? আর আজ রাতে বাসায় ফিরলি কখন?
— ভাই তুই তো জানিস ই আমি কাদের সাথে থাকি সারাদিন। রাতে তুই আসার একটু আগেই আমি নিজের রুমে ছিলাম। মা কে জিঙ্গেস করে দেখ।
এই কথা শুনে নাজমা চৌধুরী ইফানের দিকে তাকিয়ে
— মা কে জিঙ্গেস করতে বলছিস?
আর তুই ইয়াস কে এখনও তুই করে বলিস? তোকে কতদিন বলছি বড় ভাই কে তুমি করে বলতে।
— মা! ভাই আমার কতটা ই বড়? হবে কয়েক বছরের। ভাই করে বলি তো এখন আবার তুমি করেও বলতে হবে?
— ইয়াস তোর থেকে কয়েক বছরের বড় হোক বা কয়েক মিনিটের বড় হোক। তোর থেকে বড় তো। তুই ইয়াস কে তুমি করে ই বলবি। একটু তো ভদ্রতা বজায় রাখবি?
ইফান আস্তে করে বলে উঠলো
— ভদ্রতা আর আমি? হাসালে মা।
নাজমা চৌধুরী ইফানের দিকে রেগে তাকিয়ে
— মিনমিন করে কি বলছিস। যা বলার জোরে বল।
— ইফান তুই ঠিক মত কলেজ যাস তো?
আমি কিন্তু প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলবো যদি শুনি তুই ঠিক মত কলেজ যাস না ক্লাস করিস না তাহলে কিন্ত তোর হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিব। কথাটা মনে থাকে যেন।
— প্রিন্সিপাল তোকে আমার ব্যাপারে কিছু বললে তো।
মাথা চুলকিয়ে আস্তে করে কথাটা বললো ইফান।
— ভাই আমার কিছু টাকা লাগবে। আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিস তো।
— তোর আজ আবার টাকা লাগবে? কিছু দিন আগেই না ইয়াস তোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলো। ওই টাকা গুলো দিয়ে কি করছিস?
ইয়াস তুই ওকে আর একটা টাকা ও দিবি না।
— মা এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার না পঞ্চাশ লক্ষ টাকা নিছি। ভাইয়ের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা কোনো ব্যাপার ই না। আমি ফ্রেন্ডদের সাথে চলি সবার সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাই টাকা লাগে। তুমি এসব বুঝবে না তাই তুমি এসব নিয়ে কোনো কথা ও বলো না।
— আহ! ইফান মায়ের সাথে কেমন ভাবে কথা বলছিস তুই? মা জিঙ্গেস করতেই পারে, মায়ের অধিকার আছে জানতে চাওয়ার। তোকে তো টাকা দিতে আমি একবার ও না করি না। কিন্তু এতো অল্প সময়ে এত গুলো টাকা কিভাবে খরচ করিস তা জানতে চাওয়া টা ভুল কিছু না তাই না?
— ভাই তুই ও মায়ের সাথে শুরু করলি?
আমি নার্সারিতে পড়া কোনো বাচ্চা না,যে তোদের কাছে আমার প্রতি টা কাজের কৈফিয়ত দিতে হবে। ইচ্ছে হলে টাকা দে নয়তো সোজা না করে দে ড্রামা করার দরকার নাই।
ইফার খাবার অর্ধেক ফেলে রেখেই উঠে গেল। নাজমা চৌধুরী হুহু করে কেঁদে উঠলো।
— মা কাঁদছো কেন?
— ইফান কখনও শুধরাবে না। তুই তো জানিস ই ও এতো টাকা দিয়ে কি করে। আমি মা হয়ে ওকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি। যার কারনে ওর আজ এই অবস্থা।
— মা তুমি কেঁদো না। আমি ইফান কে ঠিক করে ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। ও একদিন ঠিকই ওর ভুল বুঝতে পারবে।
ইশিতা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার উদেশ্যে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। পিছনে থেকে ইশিতার মামী ডেকে বললেন
— কোথায় যাচ্ছিস তুই?
ইশিতা মামীর কথা শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
— ভার্সিটি তে যাচ্ছি মামী।
— কোথাও যেতে হবে না। ঘরে যা।
— কেন মামী?
— আমি কেন তোকে বাইরে যেতে না করছি তা তুই খুব ভাল করেই জানিস। আমি চাই না তুই এখন বাড়ি থেকে বের হস।
— এভাবে কতদিন ঘরে বসে থাকবো?
— যতদিন না সব কিছু ঠিক হয় ততদিন। আমি চাই না এখন বাইরে গিয়ে তুই দশ লোকের মুখে দশ রকমের কথা শুনিস।
ইশিতা কিছু না বলে ঘরে চলে গেল। ইশিতা এবার হর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ইফান ও ইশিতার সাথে একই ক্লাসে পড়ে। ভার্সিটির প্রথম থেকেই ওদের পরিচয়।
চলবে…..