সেই তুমি? পর্ব -৪১

0
2311

সেই তুমি?
পর্ব -৪১
Samira Afrin Samia (nipa)

রকিব ফোন রাখার পর রিহা ভাবতে লাগলো। এতদিন পর হঠাৎ রকিব কি মনে করে ফোন দিল। আর কি ই বা জরুরি কথা বলার আছে? কি এতো দরকারি কথা যার জন্য রকিব আলাদা করে রিহা কে দেখা করতে বলেছে?
রিহা কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। রকিব রিহার বাবার কাছে কাজ করে। রিহার খুব ভালো বন্ধু।
রকিবের কাজ হলো মারামারি চাঁদাবাজি আরও যা যা খারাপ কাজ গুলো আছে। রকিব তো মাঝে মাঝে রিহার কথায় ও কাজ করেছে। কিন্তু এখন তো রিহা আগের মত নেই। রিহা এখন নিজেকে শোধরে নেওয়ায় তার বাবার সাথে এমনকি রকিবের সাথে ও সম্পর্ক কিছুটা বদলে গেছে।

পরের দিন রিহা রকিবের সাথে দেখা করতে আসে। রকিব যে জায়গায় আসতে বলেছিল রিহা সেখানেই আসছে। রিহা একটু আগে এসে গেছে। এখনও রকিব আসেনি। রিহা রকিবের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর রকিব আসলো।
— হ্যাঁ রকিব বলো হঠাৎ এভাবে কেন দেখা করতে বললি?
— তোকে তো ফোনে বলেছিলাম তোর সাথে কিছু কথা আছে।
— ওই কথা গুলো কি তা শুনার জন্য ই তো আসছি। এখন সোজাসুজি বল কি কথা।
— কথা গুলো বললে তুই বিশ্বাস না ও করতে পারিস। তবে আমার মন বলছে তুই আমাকে অবিশ্বাস করবি না।
— কথা না পেঁচিয়ে সরাসরি বল। তুই জানিস আমি এতো কথা বলা পছন্দ করি না।
— আচ্ছা তাহলে শুন।
তোর বাবা তোর হাজবেন্ড মানে ইফান কে মার্ডার করতে চায়।
রিহা অবাক হয়ে
— কি?
কি বলছিস তুই এসব?
— আমি ঠিক ই বলছি। তোর বাবা ইফান কে মেরে ফেলতে চায়। তাও এমন ভাবে যেন মনে হয় ইফানের মৃত্যু একটা এক্সিডেন্ট। তোর বাবা জেনে বুঝে প্লেন করে মার্ডার করে তাকে এক্সিডেন্টের রূপ দিতে চায়।
— বাবা ইফান কে মারতে চায়!
কিন্তু কেন?
বাবা তো নিজেই আমার আর ইফানের বিয়ে দিয়েছে। তাহলে বাবা কেন ইফান কে মারতে চাইবে?
রকিব একটু হেসে
— তুই তোর বাবার মেয়ে ঠিকই। কিন্তু তুই এখন পর্যন্ত তোর বাবা কে চিনে উঠতে পারিস নি।
তুই যদি তোর বাবা কে চিনতি তাহলে আমার থেকে ভালো তুই জানতি কেন তোর বাবা ইফান কে মারতে চায়।
রিহা কিছু বুঝতে পারছে না তার নিজের বাবা কেন শুধু শুধু মেয়ের জামাই কে মারতে যাবে।
— রকিব আমি সত্যি ই কিছু বুঝতে পারছি না। তুই আমাকে সব কিছু একটু ক্লিয়ার করে বল প্লিজ।
— ইফান তোর বাবার কাছে বলেছিল ও তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
— হুম তারপর?
— তার পর আর কি তোর বাবা তোকে ইফানের সাথে কেন বিয়ে দিয়েছিল এটা তো তোর অজানা না তাই না।
ইফানের সম্পত্তি যেন তোর নামে হয়। এখন যখন তোর বাবা জানতে পারলো ইফান তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে, নিজের এত বছরের প্লেন কি করে চোখের সামনে মাটি হতে দিতে পারে?
তাই ইফান কে ই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্লেন করছে।
তুই ইফানের ওয়াইফ। এখন কোন ভাবে ইফান মারা গেলে ওর সব সম্পত্তির মালিক হবি তুই। কারণ ইফানের বাবা আগে থেকেই ওদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সব কিছু ভাগাভাগি করে দিয়ে গেছে।
এসব কথা শুনে রিহার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। শেষে কিনা ওর বাবা ইফান কে মারতে চায়। নিজের মেয়েকে সামান্য সম্পত্তির লোভে বিধবা করতে চায়। এটা সত্যি ই রিহা বিশ্বাস করতে পারছে না। একজন বাবা কি করে নিজের মেয়ের সাথে এমনটা করার কথা চিন্তা করতে পারে?
— ইফান মারা গেলে ওর সম্পত্তি হবে তোর নামে। কিন্তু ইফান যদি তোকে ডিভোর্স দেয় তাহলে তুই ওর কিছু পাবি না তাই তোর বাবা ইফান কে মারার কথা ভাবছে।
আমি তোর বন্ধু। আমি জানি তুই ইফান কে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসিস। ইফানের কিছু হয়ে গেলে তুই বাঁচতে পারবি না।কেউ না জানুক আমি তো জানি তুই ইফানের জন্য কি কি করেছিস।
তাই যখন তোর বাবা ইফান কে মারার দায়িত্ব আমার উপর দিল। তখন আমি আর তোকে না জানিয়ে থাকতে পারলাম না।
রিহা নিজেকে সামলে নিয়ে রকিব কে জিঙ্গেস করলো
— বাবা কিভাবে ইফান কে মারার প্লেন করেছে?
— এখনও কোন প্লেন হয়নি। তবে আজ কালের মধ্যেই কিছু একটা করতে পারে ইফানের সাথে। খুব খারাপ কিছু একটা হতে চলছে ইফানের জন্য।
— রকিব তুই আমাকে ফ্রেন্ড মনে করে যখন এতকিছু বললি তাহলে আমার জন্য আর একটু কষ্ট করবি দোস্ত?
— বল কি করতে হবে। মন থেকে তোকে ফ্রেন্ড মনে করেছি। তোর জন্য যা করতে পারবো তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করবো।
— বাবা ইফান কে মারার জন্য কখন, কিভাবে, কি প্লেন করে তা একটু কষ্ট করে আমাকে জানাবি।
— অবশ্যই তুই না বললেও আমি তোকে জানাতাম।
— ধন্যবাদ রকিব তোর এই উপকারের জন্য আমি সারা জীবন তোর কাছে ঋণী হয়ে থাকবো। তুই আমার অনেক বড় একটা উপকার করলি দোস্ত। আমি তোর এই উপকারের কথা কোন দিন ও ভুলবো না।
— আরে এভাবে বলিস না। তুই ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছিস আমি তা ভুলিনি।
— আচ্ছা তাহলে আজ আসি। আর হ্যাঁ পারলে এই পথ ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালো ভাবে জীব কাটা।
রকিব রিহার কথা শুনে হেসে দিয়ে
— সত্যিই তুই অনেক টা পাল্টে গেছিস রিহা। তোকে এমন ভাবে দেখে অনেক ভালো লাগছে।

রিহা রকিবের সাথে দেখা করে বাসায় না ফিরে সোজা ওর বাবার কাছে গেল।

রিহার বাবা মনির চৌধুরী হলরুমে বসে ছিল। হঠাৎ রিহা কে দেখে মনির চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে
— আরে মামনি যে। এই সময়ে আমাকে ফোন করে বলতে তুমি আজ আসবে তাহলে আমি ড্রাইভার পাঠিয়ে দিতাম।
— তুমি ঠিক কি করতে চাইছো বাবা?
— কি করতে চাইছি?
তুমি কি বলছো মামনি?
— প্লিজ বাবা আমার সাথে ড্রামা করার দরকার নেই।
আমি খুব ভালো করে জানি তুমি কি করতে চাইছো। তুমি যদি এটা ভেবে থাকো তুমি ইফানের হ্মতি করে ওর প্রপার্টি তোমার করে নিবে তাহলে এটা তোমার শুধু মাত্র একটি ভুল ধারণা। আমি বেঁচে থাকতে তুমি ইফানের কোন হ্মতি করতে পারবে না। তুমি কেমন বাবা?
নিজের মেয়ের এতো বড় হ্মতি করতে চাইছো?
মনির চৌধুরী বুঝতে পারলো রিহা সব কিছু জেনে গেছে।
তাই আর এক্টিং না করে রিহা কে সব সত্যি বলে দেওয়া ই ভালো হবে।
— দেখো মামনি আমি যা করছি সব তোমার জন্য ই করছি। তোমার ফিউচারের কথা ভেবে করছি। ইফান তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে তুমি ওর প্রপার্টির এক অংশ ও পাবে না। কিন্তু ইফান যদি কোন ভাবে মারা যায় তাহলে সব কিছুই তোমার হবে।
রিহা তার বাবার কথা শুনে চিৎকার দিয়ে উঠে
— তুমি মানুষ?
সামান্য একটু প্রপার্টির জন্য নিজের মেয়েকে বিধবা করার কথা চিন্তা করছো।
ইফান আমাকে ডিভোর্স দিবে বলেছে এখনও দেয়নি।
তুমি ভাবলে কি করে তুমি এমন একটা নোংরা প্লেন করতে আর আমি তা জানার পর কিছু না করে চুপচাপ থাকবো।
— রিহা তুমি বুঝতে পারছো না। আমি তো তোমার জন্য ই
— চুপ করো বাবা। তোমার কথা শুনতে আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে।
আমার কথা তোমার ভাবতে হবে না। ইফান আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলেও আমি ওর কোন হ্মতি হতে দিব না।
আমি ইফান কে প্রপার্টির জন্য ভালোবাসিনি। আমি প্রথম থেকেই জানতাম তুমি আমাকে ব্যবহার করছো ইফানের সম্পত্তি পাওয়ার জন্য। তবুও এতদিন আমি চুপ ছিলাম।
আমি ভাবতেই পারিনি। তুমি শেষ পর্যন্ত কাউকে মার্ডার করতে চাইবে।
— রিহা মামনি মাথা ঠান্ডা করে একবার আমার কথা শুনো।
— আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না। তুমি একদম আমাকে মামনি বলে ডাকবে না। তোমাকে নিজের বাবা বলে মানতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।
তুমি ইফানের কোন হ্মতি করবে না। আমি তোমাকে ভালো করে বলে যাচ্ছি বাবা। যদি তুমি ইফানের কোন হ্মতি করো তাহলে আমি ও বাধ্য হবো তোমার সাথে অতি নিচু মানের কোন কাজ করতে। ভুলে যেও না বাবা আমি তোমার ই মেয়ে। তুমি যদি নিজের সার্থের জন্য নিজের মেয়ে জামাই কে মারার কথা ভাবতে পারো। তাহলে আমি তোমার মেয়ে হয়ে নিজের স্বামী কে বাঁচানোর জন্য কি কি করতে পারবো তা একবার ভেবে দেখো।
আর এর আগে আমি ইফানের জন্য কি কি করেছি তা তোমার অজানা নয়। তুমি আমার সব অপরাধে আমাকে সার্পোট করেছো।

রিহা কথা গুলো বলে এক সেকেন্ড ও দেরি না করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মনির চৌধুরী রিহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে রিহা কি সত্যি ই বদলে গেছে? আর রিহা ইফান কে সত্যি সত্যি ভালোবাসে?
মনির চৌধুরী তো ভেবেছিল রিহা ইফান কে ভালোবেসে নয় সম্পত্তির জন্য বিয়ে করতে চায়।

কয়েক দিন হয়ে গেল।
রিহা খুব টেনশনে থাকে ইফান কে নিয়ে। ওর বাবা যদি সত্যি ই ইফান কে মারার চেষ্টা করে?
ইফান কে রিহা অনেক ভাবে বুঝিয়েছে রাতে লেট করে না ফিরতে কিন্তু ইফান রিহার কোন কথা শুনলে তো।
এদিকে ইয়াশ আর ইশিতার বিয়ের আয়োজন খুব তাড়াতাড়ি ও দুমদাম সহকারে করা হচ্ছে।
ইফান এখনও ইয়াশ আর ইশিতার বিয়ের কথা কিছুই জানে না। জানলেও অবশ্য আর আগের মত রিয়েক্ট করবে না।

নাজমা চৌধুরী হলরুমের সোফায় বসে সবাই কে নিজের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। কখন কিভাবে কাকে কি করতে হবে।
এমন সময় ইফান বাসার ভেতর ঢুকে হঠাৎ করে বাসায় এতো মানুষ দেখে ইফান কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও কাউকে কিছু জিঙ্গেস না করে নিজের রুমে চলে যায়। আজ ইফান তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে এটা দেখে রিহার খুশির বাঁধ মানছে না।
ইফান ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে এখনও বাসায় অনেক মানুষ।
ইফান নাজমা চৌধুরীর পাশে বসে
— বাসায় এতো লোক কেন?
নাজমা চৌধুরী সবাই কে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার ফাঁকে ইফানের কথার উত্তর দিলো
— তুই তো জানিস ই না।
আমি ইয়াশ আর ইশিতার আবার বিয়ে দিতে চাইছি। ওর জন্য ই এতো আয়োজন করা হচ্ছে।
— ভাইয়ের বিয়ে?
— হুম।
নাজমা চৌধুরী আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।
ইফান কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। ইয়াশ আর ইশিতার আবার বিয়ে হবে একথা শুনে ইফান একটু ও রিয়েক্ট করলো না। এখন ইশিতার কাছে ইফানের কোন চাওয়া নেই কোন অভিযোগ ও নেই। ও ইশিতার সাথে যা করেছে তার পর ইশিতা ইফান কে ভালোবাসবে না এটা স্বাভাবিক। তবে রিহার উপর ইফানের অনেক রাগ।

ইফান গন্তব্যহীন পথে কার ড্রাইভ করে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। ইফান নিজের ভুলের জন্য সব কিছু হারিয়েছে। এরজন্য ইফান কাউকে দোষী করতে পারবে না। রিহার কথায় ইফানের ওসব করা ঠিক হয়নি এটা ইফান আজ বুঝতে পারে।
— আমি তো কোন ছোট বাচ্চা ছিলাম না। যে যা বুঝাবে তা বুঝেই ইশিতার উপর প্রতিশোধ নিয়েছি। দিনের পর দিন ইশিতার সাথে অন্যায় করেছি।
এখন ইশিতা আমাকে ভুলে গিয়ে ভাইয়ের সাথে নতুন করে সব কিছু শুরু করেছে। আমার দেওয়া সব কষ্ট ভুলে ভাইকে ভালোবাসে তার সাথে জীবনে সুখী হতে চাইছে। এখন আমার তো কোন অধিকার নেই ইশিতার খুশির পথে বাঁধা হওয়ার।
ইশিতা সব কিছু ভুলতে চাইলে আমি কেন জোর করে ইশিতা কে সব কিছু মনে রাখতে বাধ্য করবো।

রিহা পুরো বাসায় ইফান কে খুঁজছে।
— কোথায় গেল ইফান। আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এখন আবার কোথায় চলে গেল?
ভয়ে ইশিতার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
— ইফানের কিছু হয়ে গেল না তো? ধুর! কি হবে ইফানের?
ইফান একদম ঠিক আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here