সেই তুমি? পর্ব -৪২

0
2678

সেই তুমি?
পর্ব -৪২
Samira Afrin Samia+Sornali Akter Shrabon

(এই পার্ট টা মেঘু লিখছে। আমি ফাস্ট এর কয়েক লাইন লিখছি তবে বাকি টা ও ই লিখছে। মেয়েটা এতো ট্যালেন্টেড যা বলার বাইরে। নিজের দুই টা গল্প তো লিখে ই সাথে আমার টা ও লিখে দিলো ??????????????)

কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর ইফান বুঝতে পারলো তার গাড়ি ব্রেক ফেল করেছে। ইফান গাড়ি ব্রেক করতে চাইলে ও ব্রেক হচ্ছে না। অফিস থেকে তো ইফান এই গাড়ি করেই বাসায় ফিরেছে তখন তো গাড়ি একদম ঠিক ছিল। তাহলে এখন গাড়ির ব্রেক নষ্ট হয়ে কি করে? ইফান কিছু বুঝতে না পেরে রাতের ফাঁকা রাস্তায় ফুল স্পিডে কার ড্রাইভ করে যাচ্ছে। হতে পারে এটা ইফানের জীবনের শেষ কিছু মুহূর্ত।

ইফান সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়েছে এখন প্রায় রাত নয়টা বাজে এখনও বাসায় ফিরে নি। রিহার তো এবার ইফানের চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।

নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা এক সাথে বসে ইফান আর রিহা কে নিয়েই কথা বলছিল এমন সময় নাজমা চৌধুরীর ফোন বেঁজে উঠে। নাজমা চৌধুরী ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইফান ফোন করেছে।
— হ্যাঁ ইফান।
ফোনের ওপাশ থেকে অন্য কেউ কথা বললো
— আন্টি আমি ইফান না।
আমি আরিফ। আমাকে চিনেছেন তো আন্টি?
আরিফ ইফানের বন্ধু। বয়সে ইফানের থেকে বড় হবে। পরেও এক সাথে সব সময় চলাফেরা করায় ইফানের বন্ধু হয়ে গেছে।
— আরিফ তুমি।
— হুম আন্টি।
— ইফানের ফোন থেকে তুমি। ইফান কোথায়?
— আন্টি আসলে ইফানের
আরিফ কথা শেষ করার আগেই নাজমা চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে উঠলো
— কি হয়েছে ইফানের?
ইফান ঠিক আছে তো?
— হ্যাঁ আন্টি ইফান ঠিক আছে। তবে ইফানের ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।
নাজমা চৌধুরী দাঁড়িয়ে উঠে
— এক্সিডেন্ট?
কিভাবে হলো। ইফান এখন কেমন আছে। কোথায় ইফান?
— আন্টি টেনশন নিবেন না।
তেমন কিছু হয়নি। ইফান ঠিক আছে।
— তোমরা কোথায় আমাকে বলো। আমি এখনই আসছি।
— আচ্ছা।
আরিফ ফোন কেটে দিলে ইশিতা নাজমা চৌধুরী কে জিঙ্গেস করলো।
— ইফানের কি হয়েছে মা?
— জানি না। ইফানের বন্ধু ফোন দিয়ে বললো ইফানের নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে।
ইফান হসপিটালের ক্যাবিনে বসে আছে। তেমন আঘাত লাগে নি। হাতে পায়ে একটু ছোলে আর ডান হাতে অনেক ব্যথা পেয়েছে তবে হাত ভাঙেনি। দুই তিন দিনের ভেতর ই ঠিক হয়ে যাবে। ভাগ্য ভালো রোড একদম ফাঁকা ছিল। ইফান চলন্ত কার থেকে লাফিয়ে নেমে যায়। এবারের মত কোন মতে জীবন বেঁচে যায়। কিন্তু কি ভাবে কারের ব্রেক ফেল হলো ইফান তাই ভাবছে। কেউ ইচ্ছে করে ইফান কে মারতে চাইছে না তো?
ইফানের সাথে কার এমন শত্রুতা যার জন্য ইফান কে জানে মেরে ফেলতে চাইছে?
ইফানের কপালে ও হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে।
আরিফ ইফানের কাছে এসে।
— কি করে হলো?
— আমি কি জানি?
— তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তুই এখন ড্রাংক অবস্থায় আছিস তাহলে এক্সিডেন্ট টা হলো কি করে?
— তোর কি মনে হয় আমি ড্রিঙ্ক করে ড্রাইভ করলে এক্সিডেন্ট হবে?
অসম্ভব। আরে কারের ব্রেক ফেল করছিল তাই জীবন বাঁচাতে চলন্ত কার থেকে লাফ দিতে হয়েছে।
— আচ্ছা বুঝলাম।
ইফান উঠে যেতে নিলে
— কোথায় যাচ্ছিস?
— বাসায় যাবো না?
— তোর কোথাও যেতে হবে না। আমি আন্টি কে ফোন করেছিলাম। আন্টি আসছে।
— কি করলি তুই শুধু শুধু বাসায় জানালি কেন?
মা এমনিতেই আমাকে নিয়ে টেনশন করে।
— শুধু শুধু বলছিস?
আজ কত বড় একটা দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেলি তুই।

নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা হসপিটালে পৌঁছে গেল। ইফানের কাছে গিয়ে নাজমা চৌধুরী ইফান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
— তোর কি হয়েছে বাবা?
— আমার কিছু হয়নি মা। তুমি শুধু শুধু কেঁদো না তো।
— কিছু না হলে তোর এই অবস্থা কেন?
নাজমা চৌধুরী আবারও কাঁদতে লাগলো। ইফান ইশিতা ইশারা করে
— মা কে একটু সামলাও প্লিজ।
ইশিতা নাজমা চৌধুরী কে ধরে
— মা কাঁদছো কেন?
ইফান তো ঠিক আছে। কিছু হয়নি ওর।

এদিকে রিহা একা বাসায় ইফানের জন্য চিন্তা করে পাগল হচ্ছে। ইফান কে বার বার কল করেও পাচ্ছে না। ইফান ফোন তুলছে না। নিচে এসে দেখে নাজমা চৌধুরী ইশিতা কেউ বাসায় নেই।
— মা আর ইশিতা কোথায় গেল?
কাউকে পাচ্ছি না। বাসা থেকে বের হলে বলে বের হবে তো। এমনিতেই ইফান কে নিয়ে টেনশন হচ্ছে তার উপর মা আর ইশিতা না বলে কোথায় চলে গেল।
রিহার ফোন বেঁজে উঠলে রিহা প্রথমে ভাবলো হয়ত ইফান ফোন করেছে কিন্তু ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে রকিব কল করেছে। রকিবের কল দেখে রিহার ভয় আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
— এই সময় রকিব কেন কল করেছে। বাবা ইফানের সাথে কিছু করে দিলো না তো?
রিহা কল রিসিভ করে
— রকিব বাবা ইফানের কোন হ্মতি করে নি তো?
— রিহা আমার মনে হয় ইফান ঠিক নেই তোর বাবা ইফানের সাথে কিছু একটা করে ফেলেছে।
— কি বলছিস তুই?
আমি তোকে জানাতে বলছিলাম। বাবা যা যা তোকে করতে বলবে তুই আমাকে তা জানাবি।
— তোর বাবা কাজ টা আমাকে দিয়ে করায় নি।
তুই ওই দিন তোদের বাসায় গিয়ে তোর বাবা কে সব কিছু বলে এসেছিস তার পর থেকে তোর বাবা আমাকে কিছু জানায়নি।
তোর বাবা একজন কে একটু আগে অনেক গুলো টাকা দিলো তা থেকেই আমি আন্দাজ করতে পারলাম হয়ত ইফানের হ্মতি করার জন্য ই ওকে এতো গুলো টাকা দেওয়া হয়েছে।
রিহা সোফায় বসে পড়লো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রাগে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কটমট করতে করতে বলতে লাগলো
— ইফানের কিছু হলে আমি বাবা কে এতো সহজে ছেড়ে দিব না।
আমি বাবা কে ভালো করে বলে এসেছিলাম তার পর ও বাবা আমার কথা শুনলো না।
বাবা ঠিকই ইফানের হ্মতি করতে চাইছে। আজ যদি ইফানের কিছু হয় তাহলে

নাজমা চৌধুরী আর ইশিতা ইফান কে নিয়ে বাসায় ঢুকে। রিহা ইফান কে দেখে হাত থেকে ফোন ফেলে দিয়ে দৌঁড়ে ইফানের কাছে যায়। ইফানের হাতে ও কপালে ব্যান্ডেজ দেখে রিহা শব্দ করে কেঁদে উঠে।
— ইফান কি হয়েছে তোমার?
তুমি ঠিক আছো তো?
ইফান কিছু বললো না। নাজমা চৌধুরী রিহা কে ইফান কে ধরতে বললো। রিহা ইফান কে নিজের কাঁধে ভর করে দাঁড় করায়।
— রিহা এখন ইফান কে রুমে নিয়ে যা। কি হয়েছে তা পরেও জানা যাবে।
রিহা আর কিছু না বলে ইফান কে রুমে নিয়ে যেতে লাগলো।
ইফান ভালো করে হাঁটতে পারছে না। পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছে। ইফান সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না হাঁটবে তো দূর।

প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলো। ইফান এখন অনেকটা সুস্থ হলেও পুরোপুরি সুস্থ নয়।অফিস যেতে পারে না।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে পারে না।রিহাকে সহ্য না করলেও রিহা সর্বদা ইফানের পাশে থেকেছে।রিহার জন্যই কিছুটা সুস্থ হয়েছে ইফান।
ইফান এখন আর আগের মত যখন তখন মারে না রিহাকে।প্রয়োজনে হু হা ছাড়া তেমন কথাও বলে না।
ইফানের অসুস্থতার জন্য ইশিতা ইয়াশের বিয়ে আরো কিছু দিন পেছানো হলো।
বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ইফান।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কিছুই যেনো ভালোলাগছে না ওর।সব কিছু থেকেও নেই নেই মনে হচ্ছে।

রিহা ইফানের জন্য স্যুপ করছে।ইশিতা রান্না ঘরে ডুকতেই মুচকি হাসল রিহা।
— রিহা মায়ের শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।তাই রাতের খাবার ঘরে দিয়ে আসবো।তুমি বরং তোমার আর ইফানের খাবার ঘরে নিয়ে যাও।
আচ্ছা..!
— হুম।
ইশিতা খাবার নিয়ে মায়ের ঘরে গেলো।তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন তাই ইশিতা কিছু না বলে টেবিলে খাবার ঢেকে রেখে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো।রুমে ডুকতেই পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে ইয়াশ।তারপর হাত থেকে ফলের প্লেটটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখে।
— ইশিতা?
— হু
— আরো কত দিন?
— কিসের কত দিন??
— বিয়ের??
— বিয়ে তো হয়েছেই।
— আবার যে হবে।
— এই তো আর মাত্র কয়েকটা দিন।
হু এখনো অনেক দিন বাকী বলেই ইশিতাকে নিজের কোলে বসালো ইয়াশ।
— ইয়াশ আমি ভাবছি অন্য কিছু।
— কি?
— আমাদের সাথে যদি রিহা-ইফানের বিয়েটাও হয়ে যায় কেমন হয়??
— কি বলছো!
— হুমম
— ইফান কি রাজি হবে??
— ঠিক হবে।
— কিন্তু কি করে সম্ভব?
— আমি আর মা মিলে বোঝাবো।তাছাড়া ইফান ও এখন চুপচাপ হয়ে গেছে আগের মত চিল্লাপাল্লা করে না রিহার গায়ে হাত তুলে না।ঠিক সময় বাড়ি আসে।
— তারপর ও আমার মনে হয় না রাজী হবে।হলে তো ভালোই হতো।
— হুমম তা ঠিক বলেছো।আমার মনে হয় ইফান রিহার উপর দুর্বল হয়েছে কিছুটা।দেখো না আজকাল কত যত্ন করে রিহা ইফানের।
— হুমমম।
— কি হুমম হুমম করছো?
— ভালো লাগছে না।
— কেনো??কি হয়েছে??শরীর খারাপ লাগছে??
— উহু।
— তবে?
— চোখ বন্ধ করো।
— কেনো?
— করোই না।
— ওকে।
ইশিতা চোখ বন্ধ করতেই ইয়াশ আলতো করে ইশিতার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দেয়।ইশিতা স্পর্শে কেপে ওঠে।সঙ্গে সঙ্গে মুখ লুকায় ইয়াশের বুকে।ইয়াশ আবেশে জড়িয়ে নেয় ইশিতাকে..!

রিহা স্যুপ আর ফলের প্লেট নিয়ে ইফানের পাশে বসে।ইফান চোখ মেলে তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে।
— নাও খেয়ে নাও।
চামচে স্যুপ তুলে ইফানের সামনে ধরে রিহা।
— খিদে নেই।
— খেয়ে নাও ঔষধ খেতে হবে।
— বললাম তো খাবো না।
— ইফান প্লিজ…রাগ আমার উপর খাবারের সাথে নয়।খেয়ে নাও।
— খাবো না বললাম তো।
একটু জোরে বলে ইফান।
— খেয়ে নাও না।প্লিজ এরকম করো না।না খেলে আবার শরীর খারাপ করবে।
ইফান এবার চুপ করে থাকে।
— না খেলে সুস্থ হবে কি করে??সুস্থ না হলে আমার গায়ে হাত তুলবে কি করো বলোতো।আমাকে শাস্তি দিতে হলেও তো তোমাকে ফিট থাকতে হবে নাকি..?
ইফান অবাক চোখে তাকায় রিহার দিকে।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রিহা।এই বুঝি টুপ করে পানি পড়বে।চোখ সরিয়ে নেয় ইফান।
খেয়ে নাও বলেই চামচ এগিয়ে দেয়।
একটু স্যুপ আর ফল খেয়ে নেয় ইফান।
— আর খাবো না।
— আচ্ছা রেস্ট করো।আমি এসে ঔষধ খায়িয়ে দেবো।বলেই উঠে চলে গেলো রিহা।নিচে যাওয়ার আগে ওদের সব কথপোকথন শুনে নেয় ইশিতা।রিহা বেরিয়ে যেতেই ইফানের ঘরে ডুকে ইশিতা।ইফানের পাশে বসে।ইফান চোখ খুলে ইশিতাকে দেখে চমকে যায়।ঈশিতা ওর দুই হাতের মুঠোয় ইফানের বা হাত নেয়।এতে অনেক অবাক হয় ইফান।এক দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
— ইফান কিছু কথা বলবো শুনবে?
মাথা নাড়ায় ইফান।
— ইফান দেখো সময়ের সাথে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে।সম্পর্কটা ও অন্যরকম সুন্দর হয়ে গেছে।দেখো ইফান কোনো কিছুই আমাদের হাতে নেই সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়।তবে আমি বলবো যা করেছে অনেক ভালো করেছে উনি।তুমি যদি এরকম না করতে আমার সাথে তাহলে আমি ইয়াশকে পেতাম না।এত ভালোও হয়ত থাকতাম না আমি।এরকমটা না হলে হয়ত অনেকেই কষ্ট পেতাম।কারন তোমার ভাই সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে আমায়।ও আমাকে দেখে কষ্ট পেতো।আমি যখন জানতে পারতাম আমিও কষ্ট পেতাম।রিহা কষ্ট পেতো।তারচেয়ে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। জানো ইয়াশ আমায় খুব ভালোবাসে।আর আমিও অনেক ভালোবেসে ফেলেছি ইয়াশকে।ওকে ছাড়া একটা দিনও আমি কল্পনা করতে পারি না।ওকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।
আমি যদি সব ভুলে ভালো থাকতে পারি তুমি কেনো পারবে না??রিহা আমার থেকে কম কিসে??বরং আমার থেকেও ভালো।মানছি ও অন্যায় করেছে কিন্তু সব তোমাকে ভালোবাসে বলে করেছে।একবার ভাবো তো একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এতটা ভয়ংকর হয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here