সেই তুমি? পর্ব -৪৭

1
5837

সেই তুমি?
পর্ব -৪৭
Samira Afrin Samia (nipa)

হঠাৎ করে গান শেষ হওয়ার আগেই নাচের মাঝ থেকে ইফান রিহা কে ছেড়ে স্টেজ থেকে নেমে চলে যায়। ইফান চলে গেলে রিহা একা স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকে। রিহার চোখ ঝলঝল করছে। হঠাৎ করে ইফানের রিহা কে এভাবে একা রেখে চলে যাওয়া রিহা মেনে নিতে পারেনি। ইফানের এমন কান্ড দেখে রিহার সাথে সাথে ইয়াশ ইশিতা কাজল বাকি সবাই অবাক হয়ে গেল। ডান্সের মাঝ থেকে ইফানের কি এমন হলো যার জন্য ইফান এমন কাজ টা করলো?
সবাই কে আরো অবাক করে দিয়ে ইফান সোজা মেইন ডোর দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল। রিহা এবার কেঁদেই দিল। রিহার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। ইফান তো স্বাভাবিক হয়ে গেছিল তারপরও কেন এমন করলো ইফান?
তাহলে কি ইফান রিহা কে এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। একটু আগে পরিবেশ টা যতটা আনন্দ ও হৈচৈ মাখা ছিল। এখন ঠিক তেমন টাই নীরব হয়ে গেছে। সবাই চুপ করে আছে। থমথমে নীরবতা কাজ করছে সবার মাঝে।
রিহা কে কাঁদতে দেখে কাজল আর ইশিতা রিহার কাছে স্টেজে চলে যায়। ইয়াশ ও ইফানের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
— ইফান কোথায় যাচ্ছিস তুই?
দাঁড়া বলছি।
ইফান ইয়াশের কথা কানে না নিয়ে একবার ও পেছনে না ফিরে কার নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। ইয়াশ তাড়াতাড়ি বের হয়েও ইফান কে আটকে পারলো না। ইয়াশ ইফানের কাছে আসার আগেই ইফান চলে গেছে।
রিহা এখনও কেঁদেই যাচ্ছে। ইশিতা রিহা কে বুঝাচ্ছে।
— প্লিজ রিহা কেঁদো না। ইফানের হয়ত হঠাৎ করে কোন কাজের কথা মনে পড়ে গেছে আর তাই তাড়াহুড়ো করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
— না ইশিতা আমি জানি ইফান কোন কাজে যায়নি। ইফান এখনও আমাকে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারেনি।
— তুমি এমন কেন ভাবছো?
এমনটা তো না ও হতে পারে।
— এমন টাই হয়েছে।

রিহা নিজের রুমে চলে গেল। ইশিতা অনেক বুঝিয়ে ও রিহা কে শান্ত করতে পারেনি। গান বাজনা অফ হয়ে গেল। প্রায় সব গেস্ট রা চলে গেল। এখন শুধু ফ্যামিলির মানুষ গুলো বাসায় আছে।
ইশিতা কাজল অনেক বুঝিয়ে রিহা কে নিচে নিয়ে আসে মেহেদী পড়ানোর জন্য।
রিহা প্রথমে হাতে মেহেদী লাগাতে না চাইলে ও পরে ইশিতার জন্য লাগাতে হয়েছে।
ইশিতা রিহা কে বলে দিয়েছে রিহা যদি মেহেদী না লাগায় তাহলে ইশিতা ও লাগাবে না।

কাজল ইশিতা ও রিহার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়। ইশিতার হাতে ইয়াশের নাম আর রিহার হাতে ইফানের নাম লিখে দিয়েছে।
রাত বারোটার উপরে বাজে এখনও ইফান বাসায় আসেনি। ইয়াশ অনেক বার ইফান কে ফোনে ট্রায় করে পায়নি।

রাত ঠিক দুই টা বাজে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ইশিতা রিহা আর কাজল জেগে আছে। ইশিতা আর রিহার হাতের মেহেদী শুকিয়ে গেছে।
ইয়াশ ও অনেক আগে কার নিয়ে বের হয়েছে ইফান কে খুঁজার জন্য।

ইশিতা রিহা আর কাজল তিন জনের চোখে ই ঘুর ভর করে আসছে। বলতে গেলে তিন জন ই ঝিমাচ্ছে। কাজল হামি তুলতে তুলতে
— ভাবী আমি এখন ঘুমাতে যায়। একটু না ঘুমালে আমার আর কাল তোমাদের বিয়ে দেখা হবে না। এখন আমি ঘুমাতে না গেলে দেখা যাবে কাল তোমাদের বিয়ের রেখে আমি রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি।
— আচ্ছা যাও। অনেক ধকল গেছে আজ সারা দিন। এখন তোমার সত্যি ই ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
— যাই রিহা ভাবী। আর হ্যাঁ ইশিতা ভাবী তোমরা ও ঘুমোতে চলে যেও। আর রাত করো না। ইয়াশ ভাইয়া তো গেল ইফান ভাইয়া কে খুঁজে আনতে।
দেখো ওরা ঠিক চলে আসবে।
রিহা কাজলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।
— হুম। এখন তুমি যাও।

কাজল রুমে চলে যাওয়ার একটু পর ই ইয়াশ ইফান কে নিয়ে বাসায় ফিরে। ইয়াশ ভেতরে এসে কারো দিকে না তাকিয়ে
— ইফান রিহা কে নিয়ে রুমে যা। আর ইশিতা তুমি ও রুমে আসো।
ইয়াশ সিঁড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়। ইশিতা ও ইয়াশের পেছন পেছন রুমে চলে যায়। ইফান ও রিহা কে নিয়ে রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে রিহা ইফান কে কিছু জিঙ্গেস করেনি। ইফান কোথায় গেছিল। আর ওভাবে কেনই বা চলে গেছিল। রিহা শুয়ে পড়ে। এক সময় রিহা ঘুমিয়ে ও যায়। রিহা ঘুমিয়ে গেলে ও ইফান ঘুমাতে পারে না। ইফানের চোখে ঘুম আসে না।
ইফান রিহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। রিহার মুখের উপর আসা চুল গুলো সরিয়ে দেয় এক নজরে চেয়ে দেখতে থাকে রিহা কে।
— কি করবো আমি?
আমি অনেক চেষ্টা করছি নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে। এতো চেষ্টা করে তবুও কেন আমি সব কিছু ঠিক করতে পারছি না। কেন না চাইতে ও বার বার আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আমার চোখে ভেসে উঠে। আমি তো ওসব মনে রাখতে চাই না। তার পর ও কেন আমি ওসব কথা ভুলতে পারছি না। আমি তো রিহা কে হ্মমা করে দিয়েছি তাহলে কেন আমি রিহা কে ভালোবাসতে পারছি না।
ইফানের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ইফান লাইট অফ করে রিহার পাশে শুয়ে পড়ে। কাল নতুন করে রিহার সাথে সব কিছু শুরু করবে ইফান। তখন হয়ত সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।পরের দিন সকালে বিয়ের আয়োজন ধুমধাম করে চলছে। কাজল সবার আগে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ইশিতা আর রিহা কে ডেকে তুলে নিচে নিয়ে আসে।
নিচে সবাই সবার মত করে ছুটাছুটি করে কাজ করছে কারো এক মিনিট ও সময় নেই একটু দাঁড়াবার জন্য। সবাই প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত। অবশ্য ব্যস্ত হওয়ার ই কথা এক সাথে দুই টা বিয়ে হচ্ছে। আয়োজন দ্বিগুণ আর তাই সবার ব্যস্ততা ও দ্বিগুণ।

নাজমা চৌধুরী হাতে কিছু কাগজ নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। হঠাৎ ইশিতা কে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে
— তোরা এখানে কি করছিস। একটু পর তোদের সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসে যাবে।
— মা তুমি এতো ছুটাছুটি করছো কেন?
জানোই তো তোমরা শরীর ভালো না।
— আরে ছেলের বিয়েতে মা ছুটাছুটি করবে না তো কে করবে?
— আচ্ছা তোমার আর কি কি কাজ বাকি আছে আমাকে বলো আমি করে দেই।
— শুনো পাগলী মেয়ের কথা। বিয়ের দিন ও নাকি তাকে দিয়ে কাজ করাবো।
রিহা পাশ থেকে বলে উঠলো
— ইশিতা তো ঠিকই বলেছে মা। তোমার এতো কাজ একা করতে হবে না। তুমি আমাদেরকে বলো আমরা ই সব কিছু করতে পারবো।
নাজমা চৌধুরী হেসে দিয়ে
— তুই তো দেখছি ইশিতার থেকেও বেশি পাগল।
তোদের কোন কাজ করতে হবে না। তোরা উপরে চলে যা
এই কাজল তুই ওদের দুই জন কে রুমে নিয়ে যা তো।
— আচ্ছা চাচি।
— পার্লারের লোক আসলে আমি ওদের রুমে পাঠিয়ে দিব।

দুপুরের দিকে ইশিতা গোসল সেরে রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে। হঠাৎ কোথায় থেকে ইয়াশ এসে পেছন থেকে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে। ইশিতা প্রথমে ইয়াশ কে দেখতে পায়নি। তাই একটু ভয় পেয়ে গেছিল। ইশিতা চিৎকার দিতে নিলে ইয়াশ ইশিতার মুখ চেপে ধরে
— আরে ভয় পাচ্ছ কেন?
আমি ই আসছি অন্য কেউ আসেনি।
ইশিতা ইয়াশের কন্ঠ শুনে একটু স্বাভাবিক হলো কিন্তু এখনও ইশিতার বুধ ধরফড় করছে।
— তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিছিলে।
— এতো ভয় পাও কেন?
ভয় পাওয়ার কি আছে হুম?
ইয়াশ আয়নায় তাকিয়ে ইশিতা কে দেখে নিলো। ইশিতার ভেজা চুল থেকে এখনও টুপটুপ করে বিন্দু বিন্দু পানি ফোটা মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
ইয়াশ পেছন থেকে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে আছে। ইশিতা আয়নায় দেখা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে।
ইয়াশ ইশিতার হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে বেডের উপর রেখে দিলো। ইশিতা কিছু বলার আগে ইয়াশ ইশিতার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে নিয়ে ইশিতার পিঠে মুখ গুঁজে নেয়।
হঠাৎ পিঠের মধ্যে ইয়াশের গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া অনুভব করে ইশিতার হার্ট বিট বেড়ে যায়। ইশিতা ইয়াশের হাত আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ইয়াশ ইশিতার পিঠে আলতো করে চুমু খেলে ইশিতা পেছন ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়াশ কে।রিহা গোসল শেষ করে রুমে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে পেছনে ফিরতে নিলে ইফানের সাথে ধাক্কা লেগে একটুর জন্য পড়ে যেতে নিলে ইফান রিহা কে ধরে নেয়।
ইফান নিচু হয়ে রিহার দিকে ঝুকে আছে। রিহা পড়ে যাওয়া অবস্থায় শক্ত করে এক হাতে ইফানের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে আরেক হাতে ইফানের হাত ধরে রেখেছে। ইফান বেশ কিছুক্ষণ রিহার দিকে তাকিয়ে থেকে রিহা কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে শার্ট ঠিক করতে লাগলো। রিহা ইফানের দিকে না তাকিয়ে
— থেংক্স।
ইফান প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে রিহার দিকে তাকায়।
— আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য থেংক্স।
ইফান এবার ক্লান্ত দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইফান বুঝতে পারছে কাল হঠাৎ করে ডান্সের মাঝ থেকে ওভাবে রিহা কে ছেড়ে চলে যাওয়ায় রিহা রাগ করেছে। সত্যি ই ইফানের ওমন করা ঠিক হয়নি। সবাই কি ভেবেছে। আর রিহা ই বা ওই ঘটনার পর সবাই কে কি বুঝিয়েছে?
রিহা একটা হালকা হলুদ রঙের সুতি শাড়ি পড়েছে। আঁচলের দিকে হালকা একটু সবুজ ডোরা কাটা। ভেজা চুলে মেকআপ ছাড়া খুব সিম্পল ভাবে রিহা কে বেশ ভালো লাগছে। ইফান কতক্ষণ এভাবে এক দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে ছিল তা ইফানের ও খেয়াল নেই। রিহা ইফানের সামনে থেকে চলে গেলে ইফানের হুশ হয়। রিহা এখনও ইফানের উপর অভিমান করে আছে এটা ইফান খুব ভাল করে বুঝতে পারছে। ইফান ও আর রুমে না থেকে বেরিয়ে গেল। তবে এবার বেড়োনোর আগে রিহা কে বলে বের হলো।
— রিহা আমি একটু বের হচ্ছি ঘন্টা খানেকের মধ্যে ই চলে আসবো।
ইফানের এই কথা শুনে রিহা অবাক হয়ে ইফানের দিকে তাকালো। মনে মনে একটু খুশিও হলো রিহা।পার্লার থেকে কয়েক জন মহিলা আসলো। দুপুর থেকে ইশিতা আর রিহা কে সাজাতে বসে গেল। ইশিতার রুমে ইশিতা কে সাজাচ্ছে আর রিহার রুমে রিহা কে সাজাচ্ছে। কাজল এক বার এই রুম আরেক বার ওই রুমে ছুটাছুটি করছে। বার বার গিয়ে দেখে আসছে কাকে কিভাবে সাজাচ্ছে। নিচে সব গেস্ট রা অনেক আগেই এসে গেছে। যেহেতু এক বাড়ি থেকেই বর কনের বিয়ে হচ্ছে তাই আর বর কখন আসবে, বরযাত্রী দেরকে কে দেখাশোনা করবে, ওদের কাছে কে যাবে তা নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই। কাজী সাহেব আসলে বর কনে কে এক সাথে নিচে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইশিতা আর রিহার শাড়ি একই রকম। দু’জনের জন্য ই লাল বেনারসি আনা হয়েছে। সব গহনাপত্র ও একই রকম। পার্লারের মহিলাদের কে বলা হয়েছে দুই জনকে যেন একই ভাবে সাজানো হয়।
ইয়াশ ইফান দু’জনের জন্য ই গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানির সাথে সাদা পাজামা।

কনে সাজানোর পর্ব শেষ হলে কাজল ইশিতা আর রিহা কে নিচে নিয়ে যায়। ইশিতা আর রিহা কে পাশাপাশি দেখে সবাই ওদের দু’জনের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। দু’জন কে ই খুব সুন্দর লাগছে। লাল শাড়ি, ভারী গহনা ও মেকআপ এর মাঝে দু’জন কে ই দুই টা লাল পরীর মত লাগছে। যেমন সুন্দর লাগছে ইশিতা-রিহা কে ঠিক তেমনই ইয়াশ-ইফান কেও কোন রাজকুমারের থেকে কম লাগছে না। দুই ভাই এক সাথে পাশাপাশি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে।
নাজমা চৌধুরী ওদের সবাইকে দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না।

সবশেষে কাজী সাহেব ওদের চার জনের বিয়ে পড়ায়। আজ ওরা চার জন ই আবার নতুন করে জীবন শুরু করছে। আজ ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহা দ্বিতীয় বার বিয়ের পবিত্র বাঁধনে বাঁধা পড়লো। যার যার ভালোবাসার মানুষ টা কে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পেল।খুব সুন্দর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো রিহা-ইফান ইশিতা-ইয়াশের বিয়েটা!
সবাই খুব আনন্দ করেছে। আজ ইশিতা রিহার বান্ধবীরাও এসেছে। রিহার খুব কাছের দু-একজন আত্নীয় ও এসেছে।
খুব জলদিই সম্পন্ন হয়ে গেছে বিয়েটা।

রাতে কাজল ইশিতা আর রিহা কে তাদের নিজেদের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময়
— আমি এখন কি করবো?
কাজলের এই কথা শুনে ইশিতা রিহা দুজন একসাথে বলে উঠে
— তুমি এখন কি করবে মানে?
— মানে টা হলো দুই ভাবী থেকে কোন ভাবী কে আগে তার রুমে নিয়ে যাবো?
আর দুই ভাইয়া থেকে কোন ভাইয়া কে রুমে যাওয়ার সময় টাকার জন্য আটকাবো?
আমি একা তো আর একই সময়ে দুই জায়গায় থাকতে পারবো না।
রিহা ইশিতা কাজলের কথা শুনে না হেঁসে পারলো না।
— ভাবী তোমরা হাসছো?
— তোমার এমন কান্ড কেউই না হেঁসে থাকতে পারবে না।
— তোমরা সবাই এক রকম। কেউ ভালো না।

পাশাপাশি ঘরে বসে আছে রিহা-ইশিতা। ইফান ঘরে ডুকতেই রিহা উঠে দাঁড়ায়।সালাম করে ইফানের পা ছুঁয়ে!
পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা বক্স বের করে রিহার হাতে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় ইফান।রিহা ইফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বক্সটা খুলে দেখলো একটা ডাইমন্ড রিং। কখন কিনেছে কে জানে ভেবেই মুচকি হাসলো রিহা!
তারপর বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে ব্যালকনিতে চলে গেলো রিহা। বেতের চেয়ারে বসে গা এলিয়ে এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ইফান। রিহা গিয়ে পাশে বসে ইফানের বুকে মাথা রাখে। ইফান শক্ত করে রিহার হাত ধরে নিয়ে আকাশের পূর্ণ চাঁদ টার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ইফানের দৃষ্টি অনুসরণ করে রিহা ও চাঁদের দিকে তাকায়।
বেশ অনেকক্ষণ দু’জনই চুপচাপ বসে চাঁদ দেখতে থাকে। চারদিকে একটা স্তব্ধতা নেমে আসে। এই স্তব্ধতার মাঝে দু’জন দু’জনার নিশ্বাসের শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

খানিকক্ষণ পর সব স্তব্ধতা ভেঙে রিহা আগে বলে উঠে
— ইফান?
— হুম।
— চাঁদ টা কি সুন্দর লাগছে তাই না?
— হুম।
— অনেক আলো দিচ্ছে তাই না?
— হুম।
— শুধু কি হুম হুম ই করবে?
— না।
— তাহলে কিছু বলো।
ইফান রিহার দিকে তাকিয়ে রিহার দুই হাত নিজের মুঠোয় বন্দী করে
— রিহা সবসময় থাকবে তো আমার পাশে??
আমি চাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে।
আর পাঁচটা সুখী মানুষের মত সুখী হতে..তুমি সাহায্য করবে তো আমায়??
— আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবো তোমার পাশে। শুধু মৃত্যু ছাড়া এই পৃথিবীর কেউ আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। আমি চেষ্টা করবো আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে। আমি তোমাকে ভালোবেসে তোমার পাশে থেকে তোমার সাথে বাঁচতে চাই। তুমি দিবে তো আমাকে এই সুযোগ টা?
কথা গুলো বলার সময় রিহার চোখের কোণা বেয়ে পানি পড়ছিল। চাঁদের আলোয় ইফান স্পষ্ট দেখতে পারছে রিহা যে কান্না করছে। ইফান রিহার চোখের পানি মুছে দিয়ে রিহা কে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে নিয়ে যায়।ইশিতা এই এতো ভারী শাড়ি আর ভারী ভারী গহনা গুলো পড়ে থাকতে আর পারছে না। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। মুখে এতো মেকআপ লাগানো হয়েছে ইশিতা নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো। ইয়াশ রুমে এসেছে। ইয়াশ আসছে বুঝতে পেরে ইশিতা কাচুমাচু করে বসে রইল।
ইয়াশ রুমে আসে দেখে এই গরমের মাঝে ইশিতা এখনও ওই ভারী ভারী গহনা আর শাড়ি পড়ে বসে আছে।
— এখনও এভাবে বসে আছো কেন?
ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসো।
ইশিতা কিছু না বলে বেড থেকে উঠে এসে ইয়াশ কে সালাম করতে নিলে ইয়াশ ইশিতা কে আটকে দেয়।
— পায়ে ধরে সালাম করতে হবে না। স্ত্রীর জায়গা স্বামীর পায়ে নয়। আমি তোমাকে আমার বুকে জায়গা দিতে চাই।
দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমে এসে পড়ছে। ইয়াশ ইশিতার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে
— ছাঁদে যাবে?
আজ দুজন এক সাথে ছাঁদে পাশাপাশি বসে চাঁদ দেখবো।
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে হুম বললো।
ইয়াশ সাথে সাথে ইশিতা কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদের দিকে যেতে লাগলো।
— আজ মাটির একটা চাঁদ কে আমার পাশে নিয়ে আকাশের আরেকটা চাঁদ দেখবো।
এই বলে ইয়াশ ইশিতার নাকের সাথে ওর নাক ঘসে দিলো। ইশিতা লজ্জা পেয়ে ইয়াশের শার্টের কলারে আরো শক্ত করে ধরলো।

আজ আকাশের ওই পূর্ণ চাঁদ টার মত পূর্নতা পাক ইয়াশ-ইশিতা ও ইফান-রিহার ভালোবাসা। নিজেদের জীবন সঙ্গীর সাথে ভালো থাকুক ওরা চার জন ই। সুখে থাকুক ভালোবাসার মানুষ টা।ছয় বছর পর,,,,,,,

— দাদুভাই তোমার ছোট বাবা ফোন দিয়েছে। তোমার সাথে কথা বলবে তাড়াতাড়ি এসো।
নাজমা চৌধুরী নিচে হলরুমে বসে ছিল। নাজমা চৌধুরীর এই কথা শুনে চার বছরের একটা ছোট চঞ্চল মেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে।
— আস্তে আসো দাদুভাই পড়ে যাবে তো।
— দাদী তুমি ছোট বাবা কে বলো আমি আসছি। অনেক কথা আছে ছোট বাবার সাথে।
ইরা নাজমা চৌধুরীর কাছে এসে হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কথা বলতে লাগলো
— ছোট বাবা তুমি কবে আসবে? তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করি। তুমি ছোট আম্মু কে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল। তোমাদের ছাড়া আমার একটু ও ভালো লাগে না। তোমরা দু’জনই খুব পঁচা আমাকে রেখে কতদিন একা আছো।
ফোনের ওপাশ থেকে
— ওরে আমার আম্মু রে। আমি ও তো তোমাকে অনেক মিস করি। তুমি একদম মন খারাপ করো না। আমি আর তোমার ছোট আম্মু কালকেই বাসায় চলে আসবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কিন্তু আমার জন্য চকলেট আনতে ভুলবে না।
এই নেও দাদীর সাথে কথা বলো আমি বাবা কাছে গেলাম। ইফান কে আর উল্টে কিছু বলতে না দিয়ে ইরা ফোন নাজমা চৌধুরীর কাছে দিয়ে চলে গেল।

ইরা ইয়াশ আর ইশিতার মেয়ে। এই তো আর দুই দিন পর ইরা পাঁচ বছরে পা দিতে যাবে।
ইরা ইয়াশ আর ইশিতার চোখের মণি। ইরা কে না দেখে কেউ এক মিনিট ও থাকতে পারে না।
ইফান রিহা কে নিয়ে দেশের বাইরে ডক্টর দেখাতে গেছে। রিহা এখনও মা হতে পারেনি। অনেক ডক্টর দেখানো হয়েছে তবুও কোন লাভ হয়নি।
সবাই রিহা কে কোন শাস্তি না দিয়ে হ্মমা করে দিলেও আল্লাহ ঠিকই রিহা কে তার পাপের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে। আর তাই হয়ত রিহা এখনও সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি।

ইফান রিহার নিজের বাচ্চা নেই এনিয়ে তাদের বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই। ইফান রিহা দুজনেই ইরা কে নিজের সন্তান মনে করে। নিজের সন্তানের মত করেই ইরা কে ভালোবাসে। ইরা ও সব সময় এই কথা বলে তার দুই টা আব্বু আম্মু। বলতে গেলে ইফান রিহা ইরা কে ইয়াশ ইশিতার থেকেও বেশি ভালোবাসে। ছোট থেকে ইরা বেশির ভাগ সময় রিহার কাছেই থেকে। রিহার বাচ্চা নেই বলে ইশিতা ও তেমন আপত্তি করেনি ইরা কে রিহার কাছে রাখতে।
ছোট ইরা কে নিয়ে বেশ সুখেই দিন পাড় করছে ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহা। চৌধুরী পরিবারে এখন দুঃখ কষ্টের কোন জায়গা নেই। ভালোবাসা দিয়ে সবাই সব কষ্ট গুলোকে চৌধুরী পরিবার থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ইরা নাজমা চৌধুরীর হাসি খুশি ভরা ছোট পরিবার টা একদম পরিপূর্ণ করে দিয়েছে।

সমাপ্ত ?

গল্প টা শেষ হয়ে গেল ? এতগুলো পর্ব হয়েছে বলে অনেকেই অনেক কথা শুনিয়েছে।
আপনাদের কাছে কিছু বলার নেই আর বললেও কেউ শুনবে না। দেখা যাবে শেষ পর্বে ও কেউ কেউ নেক্সট কমেন্ট করে দিবে ?
কষ্ট করে দুই ঘন্টা লাগিয়ে একটা পর্ব লিখে আপনাদের থেকে দুই মিনিটের একটা গঠনমূলক কমেন্ট আশা করতেই পারি তাই না? ?
যাক ভালো থাকবেন সবাই।। আমি এইচএসসির আগ পর্যন্ত আর গল্প লিখবো না। যদি মাঝে মাঝে লিখতে হচ্ছে হয় তাহলে ছোট গল্প পোস্ট দিব।

1 COMMENT

  1. Shotti Onek Onek shondor hoyese golpo ta ???❤️❤️❤️❤️amader shomaje yeash er Moto mon manoshikotar cheler khub beshi proyojon ?????thanks apu ato shondor akta golpo dear Jonno ❤️❤️❤️?????????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here