সেই তুমি?
পর্ব -৫
Samira Afrin Samia(nipa)
দিন কয়েক পার হয়ে গেল ইশিতা ঘরে বসেই কাটিয়ে দিব। সালেহা বেগম ইশিতা কে বাড়ি থেকে এক পা ও বের হতে দেয় না। এই কয়েক দিনে ইফানের সাথে একবার ও কথা হয়নি ইশিতার। ইশিতা ইফানের সাথে কথা বলতে চায়, ইফান কি চায় এটা জানতে চায়। ইফান কি সত্যি ই এই বাচ্চার দায়িত্ব নিবে না? ইফান তো ইশিতা কে ভালোবাসে তাহলে ইফান কেন এমন করছে। এরকম অনেক প্রশ্ন ইশিতার মনে উঁকি দিচ্ছে।
ইশিতা জানালার পাশে বসে ইফানের সাথে কাটানো আগের দিন গুলোর কথা মনে করছে। কত ভালো ছিল দুজন এক সাথে। ইফান ইশিতার কত খেয়াল রাখতো। ইশিতার ছোট বড় প্রতিটা জিনিসের প্রতি কত যত্ন নিত।
— ইশিতা তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই না?
— এমন কথা কেন বলছো? তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
— হুম জানি। তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। আর তাই তো আমার কথায় রাজি হচ্ছো না।
— তুমি যা বলছো তা সম্ভব না ইফান।
— কেন সম্ভব না? আমরা তো একে অপর কে ভালোবাসি তাহলে কেন সম্ভব না।
— বিয়ের আগে এসব কিছু ঠিক না ইফান। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। আমাদের ইসলাম ধর্ম এসব সমর্থন করে না। আর আমাদের সমাজ তো কখনও ই এসব মানবে না। আমি চাই না বিয়ের আগে তোমার সাথে এভাবে অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে। আমাদের ভালোবাসা পবিত্র। আমি আমাদের ভালোবাসা কে অপবিত্র করতে চাই না
— আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে একটু ও বিশ্বাস করো না। তুমি আমাকে এখনও আগের মতই মনে করো। বিশ্বাস করো ইশিতা আমি পাল্টে গেছি। তোমার ভালোবাসা আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে দিয়েছে।
— এমন ভাবে বলো না। আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। আমি জানি তুমি আগের ইফান নেই। তুমি একদম পাল্টে গেছো। আর তাই তো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।
— আচ্ছা আজ আমার বন্ধুর বাসায় পার্টি রাখছে। সবাই সবার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। আমি চাই তুমি ও আমার সাথে যাবে। তুমি কিন্তু একদম না করতে পারবে না। আমি সবাই কে বলে দিয়েছি তুমি যাবে।
— কি ভাবে যাবো?
মামী আমাকে রাতে বাড়ি থেকে এক পা ও বের হতে দিবে না। আর আমি নিজে ও ওসব পার্টি পছন্দ করি না। তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়ে মজা করো।
— তাহলে আমার ফ্রেন্ডস রা ঠিকই বলেছে।
— ঠিকই বলেছে মানে?
কি বলেছে ওরা?
— ওরা মনে হয় আগে থেকেই জানতো তুমি আমার সাথে যাবে না। আর তাই তো ওরা এতটা সিউর হয়ে বলতে পরেছে।
— কি বলেছে ওরা তা তো বলবে।
— ওরা বলেছে তুমি আমাকে ভালোবাসো না আর বিশ্বাস ও করো না। তুমি আমার সাথে পার্টিতে ও যাবে না।
— আমার দিক থেকে একটু বুঝার চেষ্টা করো ইফান।
— থাক তোমার পার্টিতে যেতে হবে না। আমি একাই যাবো। সবার সামনে একটু ছোট হবো এর থেকে বেশি কিছু তো আর হবে না।
— আচ্ছা আমি যাবো তোমার সাথে। দেখি মামীকে কিভাবে রাজি করানো যায়।
— সত্যি তুমি যাবে আমার সাথে?
— হুম।
— তাহলে তোমার মামী কে বলবে তুমি তোমার ফ্রেন্ড ইভার বাসায় যাবে। তখন তো আর না করবে না।
— হুম।
হঠাৎ করে ইশিতার মামাতো বোন পিছন থেকে ইশিতা কে ডেকে উঠলো।
ইশিতা পেছন ফিরে
— আরে রুনা তুই। আয় ভেতর আয়।
রুনা ইশিতার কাছে এগিয়ে গিয়ে। ইশিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
— কিছু বলবি?
— হুম।
— কি বলবি বল।
— আপু কি হয়েছে তোর? কিছু দিন ধরে তুই ঘর থেকে তেমন বের হস না। সারা দিন একা একা ঘরে বসে থাকিস। তোর কি শরীর খারাপ আপু।
ইশিতা কি বলবে রুনা কে তা বুঝে উঠতে পারছে না। ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়ে কি ই বা বুঝবে এসব ব্যাপারে। আর ইশিতা কিভাবে বলবে ওর কি হয়েছে।
— বল না আপু কি হয়েছে তোর?
— কিছু হয়নি রে। কিছু দিন ধরে একটু অসুস্থ তাই মামী ঘর থেকে বের হতে বারণ করেছে। দেখিস না মামীর কথা না শুনলে মামী রেগে যায়। তাই সারা দিন ঘরে ই বসে থাকি।
— ওহ। তুই ভার্সিটি যাবি কবে থেকে। তোর তো অনেক ক্লাস মিস হচ্ছে।
— যাবো তো। তুই আজ স্কুলে গেলি না কেন?
— গেছিলাম তো। আজ স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিছে।
পরের দিন
ইশিতা আজ ভার্সিটি যাবে। যেভাবেই হোক ইফানের সাথে দেখা করবে কথা বলবে ওর সাথে। ইশিতা তার মামীকে নানা ভাবে বুঝিয়ে ভার্সিটি গেল। ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকার সাথে সাথে ই আশে পাশের সবাই কেমন ভাবে ইশিতার দিকে তাকাচ্ছে। কেউ কেউ হাসাহাসি করছে। আবার কেউ কেউ ইশিতা কে শুনিয়ে এটা সেটা বলছে। ইশিতা কারো কোনো কথা কানে না নিয়ে সোজা নিজের ক্লাস রুমে চলে গেল। ইশিতা ক্লাসে গেলে ইভা ইশিতা কে দেখে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে এলো।
— ইশিতা তুই?
— হুম। ইভা ইফান কোথায় রে। ও কি ভার্সিটি আসে না।
— তুই ইফান কে খুঁজছিস? এখনও তুই ইফানের সাথে কথা বলতে চাস?
— কেন? ওর সাথে কথা না বললে এসব কিছুর সমাধান হবে কিভাবে?
— তুই কি ভাবছিস ইফার এসব কিছুর সমাধান দিতে পারবে।
তুই কবে বুঝবি ইশু ইফান ইচ্ছে করে তোর সাথে এসব করেছে। ইচ্ছে করে তোকে বদনাম করে তোর থেকে অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে। ও তোকে ভালোবাসে না। ও এতো দিন তোর সাথে এক্টিং করেছে।
— কি বলছিস তুই এসব? ইফান আমাকে ভালোবাসে। ও কেন ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করবে? আমাকে বদনাম করে ওর কি লাভ হবে আর কিসের অপমান, কিসের প্রতিশোধ এর কথা বলছিস তুই?
— পুরো ভার্সিটির সবাই জানে ইশু। তুই ই এখন পর্যন্ত জানতে পারলি না।
কিসের অপমান? তোর মনে নেই আগের কথা গুলো। ইফান তার ই প্রতিশোধ নিয়েছে তোর থেকে।
— দূর তুই ও না। আরে ইফান আগের মত নেই ও বদলে গেছে। আর ইফান আমাকে অনেক ভালোবাসে তুই দেখে নিস।এখন বল কোথায় পাবো ওকে?
— ক্যান্টিনে গিয়ে দেখ ফ্রেন্ডদের নিয়ে কিভাবে ইনজয় করছে। অপমানের বদলা নিয়ে নিছে এখন ওটা ই সেলিব্রেট করছে।
ইশিতা ইভার কথায় পাত্তা না দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যেতে লাগলো।
— ইশিতা তুই খুব বোকা রে। খুব তাড়াতাড়ি সবাই কে বিশ্বাস করে নেস। এজন্য তোকে অনেক কষ্ট পেতে হবে। না জানি ইফানের সত্যি জানার পর তোর কি অবস্থা হবে। নিজেকে সামলাতে পারবি কি না আল্লাহ ই জানে।
ইফান ক্যান্টিনে চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে
— এখানে যাঁরা যাঁরা আছিস সবার যা ইচ্ছা তা অর্ডার কর। আজকের বিল আমি দিব। ইফান হাতে থাকা বেয়ারের বোতল খুলে কয়েক ডুক খেয়ে বাকিটা রাফির কাছে দিয়ে দিল।
অনেক দিন পর আমি এভাবে মন খুলে এনজয় করছি। ঝামেলা টা মাথা থেকে নামছে। আর আমার প্রতিশোধ ও পূর্ণ হয়েছে।
রিহা ইফানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
— নিচে নেমে আসো। আর আমার পাওনা টা আমাকে দেও। এতো দিন যে তোমাকে এতো হেল্প করছি। ভুলে গেছো নাকি সব?
ইফান রিহার হাত ধরে নিচে নেমে এসে। রিহার কোমরে জড়িয়ে ধরে
— তোমাকে কি করে ভুলে যাবো জান। তুমি আইডিয়া টা না দিলে তো এসব কিছুই হতো না। আর তোমার পাওনা, দাঁড়াও এখুনি দিচ্ছি।
এটা বলে ইফান রিহার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
রাফি পিছন থেকে ইফানের কাঁধে হাত রেখে
— সত্যি ই দোস্ত তোর মত এক্টিং কেউ করতে পারবে না। এতো দিন যা যা করলি ভাবা ই যাই না তোকে দেখে একদম ই মনে হত না তুই যে আমাদের ইফান ছিলি।
— আমি তো সব কিছু জানা স্বত্বেও মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যেতাম। ভাবতাম ইফান সত্যি ই হয়ত ওই ঈশিতা কে ভালোবেসে ফেলেছে।
— আমি ভালোবাসবো ওই মেয়েটাকে?
অসম্ভব প্রশ্ন ই আসে না। আমি তো শুধু ওকে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। যা আজ দিয়েও দিয়েছে। এই ইফান চৌধুরী কে অপমান করেছিল। এতো সহজে কি করে ছেড়ে দিতাম। সমাজে ও যাতে মাথা তুলে বাঁচতে না পারে এই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার গালে চড় মেরেছিল। এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হতো। যাক বাদ দে তো ওই মেয়েটার কথা। এতো দিন ওর সাথে থেকে মাথা টা পুরো পাগল হয়ে গেছে। এতো জ্ঞান দিতে পারে মনে হয় বিদ্যাসাগরের বংশধর।
ইশিতা এতক্ষণ ধরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ইফানের সব কথা গুলো শুনছিল। ইফানের এসব কথা শুনে ইশিতার চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। ইশিতা ভাবতেই পারেনি ইফান ওই দিনের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব কিছু করেছে।
চলবে….