সেই তুমি?
পর্ব -৭
Samira Afrin Samia(Nipa)
ইফান সত্যি সত্যিই ইশিতা কে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন ইফান প্রতি দিন ভার্সিটি তে আসে। সব গুলো ক্লাস করে। ইশিতা কে এক নজর দেখার জন্য সব কিছু করতে পারে। কোনো ছেলে যাতে ইশিতা কে ডিস্টার্ব না করে সেজন্য ইফান পুরো ভার্সিটির সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে ইফান ইশিতা কে ভালোবাসে। কেউ ইশিতার কাছে আসতে চাইলে তার কি হাল করবে তা ইফান নিজেও জানবে না। ইফানের ভয়ে কোনো ছেলে ই ইশিতার সাথে ভালো করে কথা ও বলে না। ইফান তার সব বাজে অভ্যাস গুলো ছেড়ে দিয়েছে। ফ্রেন্ডদের সাথে ও মেলামেশা কম করে দিয়েছে পার্টি করা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। ইফান নিজেও বুঝতে পারছে না এতো কম সময়ে কেউ কাউকে কি ভাবে ভালোবাসতে পারে। ইফান কারো প্রতি এতোটা দূর্বল হয়ে যাবে এটা ইফান ভাবতেই পারেনি।
ভার্সিটির অনেকেই ইশিতা কে ভাবী বলে ডাকে কিছু জন সামনে ডাকে আবার কিছু জন আড়ালে। প্রথম প্রথম ইশিতা এসব ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারতো না কেন শুধু শুধু ওকে সবাই ভাবী ডাকে। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর থেকে ইশিতা বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। ইফান এখন পর্যন্ত ইশিতার সামনে এসে সরাসরি কিছু বলতে পারেনি। ইশিতা কে সামনে এসে বলার সাহস হয়ে উঠেনি ইফানের।
ইফান ক্লাস রুমে বসে আছে ইশিতা ক্লাসে ডুকে ইফানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে
— কি শুরু করছেন আপনি?
পুরো ভার্সিটি তে এসব কি বলে বেড়াচ্ছেন?আমি কি আপনাকে কোনো দিও বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি। তাহলে আপনি সবার কাছে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছেন কেন?
ইফান বেঞ্চের উপর বসে ছিল। ইশিতার কথা শুনে ইফান বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে মেনে দাঁড়ায়
— কেউ তোমাকে কিছু বলেছে কি? কেউ তোমাকে কিছু বললে আমার কাছে বলো। আমি তার বারোটা বাজাবো।
— কত জনের বারোটা বাজাবেন আপনি? ভার্সিটির সবাই ই তো আমাকে নিয়ে কথা বলছে। কেউ সামনে বলছে তো কেউ আড়ালে। আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছে। আপনি সবার চোখে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে রেখে দিলেন।
ইফান ইশিতার এ কথা শুনে এবার রেগে গেল।
— কে তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে তুমি শুধু একবার বলো। আমি তোমাকে ভালোবাসি এতে তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করার বা মজা করার কি আছে। তুমি আমার সাথে চলো কে তোমাকে কি বলেছে আমাকে জাস্ট একবার দেখিয়ে দিবে। চলো
ইফান এটা বলে ইশিতার হাত ধরে ইশিতা কে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হতে যাচ্ছিল। ইশিতা ধাক্কা দিয়ে ইফানের হাত থেকে ওর নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
— অনেক হয়েছে আর না। এখন আপনি আমাকে এভাবে হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলে নাটক যেটুকু বাকি আছে সেটুকু ও পূর্ণ হয়ে যাবে। আপনার সাহস হয় কি করে এভাবে আমার হাত ধরার। আমি তো আপনাকে আমার হাত ধরার অধিকার দেই নি। সবাই বলছে আপনি বড় লোক দেখে নাকি আমি আপনাকে আমার ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়েছি। আর আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে কেন আমার সাথে এমন নোংরা মজা করছেন?
ইফান কিছু বলছে না। রাগে ইফানের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
— আমি তোমাকে ভালোবাসি ইশিতা। সবাই কি বলছে না বলছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আর আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই এটা সবাই জানে।
— আপনি আমাকে ভালোবাসলে ই তো হবে না। আমার ও তো আপনাকে ভালোবাসতে হবে। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। তাহলে আপনি সবার কাছে মিথ্যে কেন বলেছেন, যে আমি ও আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষটা কে সন্মান দিতে হয়। তার ভালো মন্দের দিক বিচার বিবেচনা করতে হয়। তার কথা ভাবতে হয়। কিসে লোকে তাকে খারাপ বলবে আর কিসে ভালো বলবে। আপনি তো আপনার ভালোবাসার মানুষকে সন্মান ই দিতে পারেননি। রিহা তো আপনার গার্লফ্রেন্ড তা ভার্সিটির প্রতিটি মানুষ খুব ভালো করেই জানে।
— আমি তোমাকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানিয়েছি? আমি তোমাকে সন্মান দিতে পারিনি?
আমি তোমার ভালো মন্দের দিক বিচার করিনি?
আমি তোমার ভালোর কথা চিন্তা করেই, তুমি আমাকে ভালোবাসো সবার কাছে এই মিথ্যা টা বলেছি। যাতে আমার ভয়ে কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করতে না পারে।
রিহা আমাকে পছন্দ করে ঠিকই কিন্তু আমি রিহা কে পছন্দ করি না। আমি ওকে অনেক বার না করে দিয়েছি তার পরেও রিহা আমার কথা না শুনলে এই দোষ টা কি আমার। আমি এভাবে খারাপ হতে পারি কিন্তু এর আগে কোনো মেয়ের সাথে কখনও ভালো করে কথা ও বলিনি। বিশ্বাস না হলে তুমি সবার কাছ থেকে জেনে নিতে পারো।ভার্সিটির সব মেয়ে আমার পিছনে লাইন দিয়ে আছে আমি তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে এভাবে নির্লজ্জের মত তোমার পিছনে পড়ে আছি তার পর ও তুমি এতো ভাব নিচ্ছো। ভালোবাসা টা অপরাধ না আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সেটাই তোমার কাছে তুলে ধরেছি। তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহন না করতে পারলে আমার ভালোবাসা কে অপমান করার অধিকার ও তোমার নেই। তুমি এটা বলতে পারবে না আমি তোমাকে সন্মান করি না। আমি তোমাকে সন্মান করি বলেই জোর করে আমার ভালোবাসা তোমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। বা আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে বাধ্য ও করছি না।
ইফান হাতে থাকা ফোন টা নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেল।সবাই এতক্ষণ বিনা টিকিটে নাটক দেখছিল। ইফান চলে যাওয়ার পর যে যার মত করে চলে গেল। রাফি ইশিতার কাছে এসে
— কাজ টা তুমি মোটেও ভালো করোনি ইশিতা। আমি অনেক বছর ধরে ইফানের সাথে আছি। হ্যা এভাবে ইফান কেয়ারলেস কোন কিছু নিয়ে সিরিয়াস না। ঠিক মত ভার্সিটি তে আসে না ক্লাস করে না। পার্টি করে ড্রিঙ্ক করে। কিন্তু মেয়েদের প্রতি ওর বাজে কোন নেশা নেই। সব সময় সব মেয়েদের সন্মান করেছে। কোনো মেয়ের হ্মতি হবে এমন কাজ ইফান কখনও ই করেনি। আর ফিউচারে ও করবে না এটা আমি খুব ভালো ভাবেই বলতে পারি। রাফি ও একথা গুলো বলে চলে গেল। ইভা ইশিতার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইশিতা ইভার দিকে তাকিয়ে
— তোর আবার কি হলো? এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে এখনই আমাকে কাঁচা গিলে খাবি।
— একদম কথা বলবি না আমার সাথে। অনেক ভাব তোর তাই না। এভাবে এতো গুলো কথা ইফান কে না শুনালে ও পারতি। একটু বেশিই ভাব নিলি আজ।
— আমি কি করছি? তুই আমার সাথে এমন করছিস কেন?
— তুমি জানো না তুমি কি করছো? পুরো ভার্সিটির মেয়েরা ইফানের উপর জান দেয়। সেই ইফান তোকে পছন্দ করে আর তুই ছেলেটা কে কতো গুলো কথা শুনালি। তুই আর কখনও আমার সাথে কথা বলবি না। বাই যাচ্ছি আমি।
ইভা ও ইশিতা কে একা রেখে চলে গেল। এখন তো ইশিতার নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সত্যি ই কি একটু বেশি বলে ফেলছে আজ। ইশিতা কিছু ভেবে না পেয়ে আজ আর ক্লাস না করে বাড়ি চলে গেল।
দিন দুই পার হয়ে গেল ইফান আর ভার্সিটি তে আসে না। সবাই এ ব্যাপার টা ভুলেই গেছে। ইশিতা এখন মনে মনে নিজেকেই অপরাধী মনে করে। ওর জন্য হয়ত ইফান আগে থেকে আরও খারাপ হয়ে যাবে। এ ঘটনার পর থেকে মনে হয় না ইফান আর ভার্সিটিতে আসবে। এখন তো ইশিতা ও ইফান কে একটু একটু মিস করে। ইশিতা ক্লাস জানালার পাশে বসে ইফানের কথাই ভাবছে। হঠাৎ করেই বাইরে ইফানের মত কাউকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল। ইভা ও ইশিতার পিছন পিছন বের হয়ে গেল।
ইশিতা ইফানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে
— আপনি এখন আর ভার্সিটি তে আসেন না কেন?
ইফান ইশিতা কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইশিতা হাত দিয়ে সামনে যাবার পথ আটকে ধরে। ইফান বিরক্তি নিয়ে
— কি হচ্ছে টা কি? এভাবে আমার পথ আটকে রাখছো কেন? সরে যাও সামনে থেকে। আমার কাজ আছে।
— আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে আপনার পথ ছাড়বো।
— কিসের উত্তর! আমার ভার্সিটিতে আসতে ইচ্ছে হয় না তাই আসি না।
— কেন ইচ্ছে হয় না?
— আমি কারো কাছে জবাব দিতে বাধ্য না। তুমি আমার কে হও তোমার কাছে কেন এসব কথার উত্তর দিব।
এট বলে ইফান চলে যাচ্ছিল এবার আর ইশিতা ইফান কে আঁটকায় নি। ইশিতা পেছন থেকে ইফান কে ডেকে
— আপনি যদি সত্যি ই আমাকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে কাল থেকে রোজ ভার্সিটি আসবেন। কথা টা বলে ই ইশিতা দৌঁড়ে ক্লাস রুমে চলে গেল। ইফান এখন একই ভাবে আগের অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ইশিতা কি বলে গেল এটা? ইফান নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। তাহলে কি ইশিতা ও ইফান কে ভালোবেসে ফেলেছে। হ্যা ইশিতা ও এতো দিনে ইফান কে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিভাবে ইশিতার ইফান কে ভালো লাগতে লাগলো তা ইশিতা নিজেও জানে না।
সব ঠিকঠাক চলছে। ইফান আর ইশিতার রিলেশনের মাস কয়েক হয়ে যাবে। সত্যি ই দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালোবাসে। ইশিতা এই রিলেশন নিয়ে যতটা না সিরিয়াস ইফান তার থেকে হাজার গুণ বেশি সিরিয়াস। ইফান আর পাঁচ টা ছেলের থেকেও ভালো হয়ে উঠেছে। অনেক কেয়ার করে ইশিতার।
চলবে…..