সেই তুমি? পর্ব -৮

0
3602

সেই তুমি?
পর্ব -৮
Samira Afrin Samia(Nipa)

ড্রেসিন টেবিলে থাকা জিনিস গুলো একটা একটা করে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলছে রিহা। একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে আয়নায় ছুঁড়ে মারলো। সাথে সাথে আয়না হাজারো খন্ডে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রিহার রুম থেকে এমন আওয়াজ শুনে রিহার বাবা মনির চৌধুরী দৌঁড়ে রিহার রুমে আসে। রুমে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে পুরো রুমে উলট পালট হয়ে আছে। বেডের চাদর বালিশ গুলো ফ্লোরে পড়ে আছে। রুমে যত ধরনের জিনিস ছিল সব ভেঙে নিচে পড়ে আছে। আয়নার কাঁচের টুকরো পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রিহা পাগলের মত এটা ওটা নিয়ে এদিক সেদিন ছুঁড়ে ফেলছে। মনির চৌধুরী রিহার কাছে গিয়ে শক্ত করে রিহা কে জড়িয়ে ধরে
— কি হয়েছে মামনি? তুমি এমন করছো কেন?
রিহা তার বাবার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
— বাবা আমাকে ছাড়ো।আমি সব কিছু শেষ করে দিব। সব ভেঙে ফেলবো আমি।
— শান্ত হ মা। কি হয়েছে তা তো বলবি?
— বাবা ইফান আমাকে ভালোবাসে না। ও ইশিতা কে ভালোবাসে। আমি ইফান কে ছাড়া বাঁচব না বাবা। আমার ইফান চাই। তুমি আমাকে ইফান এনে দেও প্লিজ বাবা প্লিজ আমাকে ইফান এনে দেও।
— ইফান অন্য কাউকে ভালোবাসে? তুই তো বলেছিলি ইফান তোকে ভালোবাসে। আর ইশিতা কে?
— ইশিতা একটা ছোট লোক। বাবা মা নেই অনাথ। মামা মামীর কাছে থাকে। ও আমার থেকে ইফান কে কেড়ে নিয়েছে। ও ইফান কে ওর ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়েছে। ইফানের প্রোপার্টির উপর ওর নজর।
— তুই শান্ত হ মা। আমি আছি তো আমি সব ঠিক করে দিব। তুই কোন চিন্তা করিস না। ওই ইশিতা কে রাস্তা থেকে সরাতে আমার দুমিনিট ও সময় লাগবে না। তুই শুধু ইফানের সাথে সাথে থাকে।
মনির চৌধুরী রিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনে মনে বলছে
— ইফানের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে আমি ইয়াশ চৌধুরীর বিজনেস পার্টনার হবো। ইফান কে হাত করে তোকে ওই বিশাল সম্পত্তির মালিক বানাবো। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। সামান্য একটা মেয়ের জন্য আমি আমার স্বপ্ন টা নষ্ট হতে দিব না। ইয়াশ চৌধুরী তুমি আমাকে তোমার বিজনেস পার্টনার বানাও নি। আমি অসৎ ভাবে বিজনেস করি তাই না। তুমি আমাকে তোমার অফিসে জায়গা দেও নি। আমি যে তোমার বাড়িতে জায়গা করে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

ইশিতা কখন থেকে ইফানের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ ও ইফান লেট করছে।
— না আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে। প্রতি দিন লেট করে আসবে। আর আমি ওর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো। আর হচ্ছে না অনেক হয়েছে।
ইশিতা পায়চারি করছে আর নিজে নিজেই কথা গুলো বলছে। ইফান পিছন থেকে দাঁড়িয়ে ইশিতার সব কথা শুনেছে।
— আজ রহ্মে নেই। ম্যাডাম তো দেখছি রেগে আগুন হয়ে আছে। এখন ওর সামনে গেলে সিউর আজ ব্রেকআপ করে দিবে। কি করবো এখন আমি।
ইফান ভয়ে ইশিতার সামনে যাচ্ছে না অনেকক্ষণ ধরে পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। ইশিতা পায়চারি করতে করতে হঠাৎ পেছনে ফেরায় ইফানের সাথে ধাক্কা লেগে যায়।
— এই তোমার আসার সময় হলো। এসেছো এখন থাকো তুমি আমি গেলাম।
ইশিতা ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে নিলে ইফান ইশিতার হাত ধরে ফেলে
— আরে আজ কেন লেট হয়েছে সেটা শুনবে না?
— প্রতি দিন তোমার লেট হয়। আর প্রতি দিন ই তুমি নতুন নতুন বাহানা দেও। আর কত ইফান?
আমার কাছে প্রতি দিন মিথ্যা বলতে তোমার ভালো লাগে?
— প্লিজ জান আমার কথা শুনো। আজ মিথ্যে বাহানা দিচ্ছি না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভাই ঝামেলা করে দিলো।
— ঝামেলা? কি ঝামেলা করেছে?
— প্রতি দিন না খেয়ে বের হয়ে যাই। তাই আসার সময় ভাইয়ের সামনে পড়ে গেলাম। আর ভাই জোর করে ওর সাথে খেতে বসিয়ে দিলো। আর তাই লেট হয়েছে আজ।
— ঠিক হয়েছে। একদম ঠিক কাজ করেছে তোমার ভাইয়া।
আজকের কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু প্রতি দিন যে লেট করো ওটার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
— এখন আবার শাস্তি?
এবারের মত শাস্তি না দিলে হয় না?
— না হয় না। তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে।
— আচ্ছা বাবা। বলো কি শাস্তি দিবা?
— এখানে আমার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ না আমি বলি ততক্ষণ।
— সবার সামনে?
— হুম।
— আচ্ছা কি আর করার। ম্যাডাম যখন আদেশ করেছে তখন তো করতেই হবো।

রিহা ভার্সিটিতে এসে ইফান কে খুঁজে না পেলে রাফি কে ফোন করে।
— রাফি তুই কোথায়? যেখানেই থাকিস তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আয়।
ফোনের ওপাশ থেকে রাফি
— কি হয়েছে বলবি তো। এতো তাড়া কিসের?
— তুই আগে আয় পরে সব বলবো।
— আচ্ছা তুমি থাক আমি আসছি।
রিহা ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফি বাইক নিয়ে এসে রিহার সামনে দাঁড়ায়
— কি হয়েছে তোর। এভাবে ডাকলি কেন?
— ইফান কই?
— জানি না। এখন কি আর ও আমাদের সাথে থাকে। আমাদের জন্য ওর টাইম নেই।
— তুই তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর জন্য ও ওর টাইম নেই?
তুই কি চাস ইফান এভাবেই আমাদের থেকে দূরে সরে যাক।
— অবশ্যই না। আমি ইফান কে হারাতে চাই না।
— তুই যদি চাস ইফান আমাদের থেকে দূরে সরে না যাক তাহলে ওই ইশিতা কে ইফানের লাইফ থেকে বের করতে হবে। শুন আমার কাছে একটা প্লেন আছে।

এক সপ্তাহ পর

ইশিতা আজ ইফানের সাথে ইফানের বাসায় যাবে। আজ ইফান তার ফ্যামিলিতে ইশিতার কথা জানাবে। ইশিতা রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ইফান এসে ওকে নিয়ে যাবে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল ইফান আসছে না কেন?
ইশিতার ফোন বেজে উঠলে ইশিতা ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে
— হ্যালো কে বলছেন?
— তুমি একটু ভার্সিটিতে আসতে পারবে?
— কে, রিহা?
— হুম। তুমি একটু তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসো প্লিজ ইশিতা।
— এখন, কিন্তু কেন?
ইশিতা কিছু বলার আগে রিহা ফোন কেটে দিলো।
হঠাৎ করে রিহা কেন ইশিতা কে ফোন দিলো। আর কেন ই না এভাবে ভার্সিটিতে যেতে বললো। ইফানের কিছু হয়েছে কি? ইশিতার মনে এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ইশিতা দেরি না করে রিকশা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলো।
ইশিতা ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে রিহা দাঁড়িয়ে আছে। রিহা ইশিতা কে দেখার সাথে সাথে দৌঁড়ে এসে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রিহা কে কাঁদতে দেখে ইশিতা অবাক হয়ে গেল
— কি হয়েছে রিহা তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?
— ইশিতা তুমি আমার এতো বড় হ্মতি করো না। প্লিজ ইশিতা আমি তোমার পায়ে পড়ি।
— কি বলছো তুমি এসব?
আমি তোমার কি হ্মতি করবো? তুমি আগে কান্না থামাও তার পর বলো কি হয়েছে। এভাবে কাঁদছো কেন?
— তুমি আজ ইফানের সাথে ওর বাসায় যাবে?
— হুম। কেন?
— তুমি সব কিছু জেনে শুনে ও আমার এতো বড় হ্মতি করছো?
— তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
— ইফান আমাকে ভালোবাসতো। তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে ও আমার সাথে রিলেশনে ছিল। ও আমাকে বিয়ে করবে বলে আমার সাথে
এটা বলেই রিহা শব্দ করে কান্না শুরু করে দিল।রিহার এমন কথা শুনে ইশিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কি বলছে রিহা এসব। ইফান তো বলেছে রিহা শুধু ওর ফ্রেন্ড এর থেকে বেশি কিছু না। ইশিতা নিজেকে সামলে নিয়ে।
— তুমি কি সত্যি বলছো?
ইফান তো তোমাকে ভালোবাসে না। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার কথা। ইফান এমন করতে ই পারে না। তুমি মিথ্যে বলছো।
— আমি একটা মেয়ে। আমি কেন শুধু শুধু নিজের চরিত্রে মিথ্যে দাগ লাগাতে যাবো। তোমার যদি আমার কথায় বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি রাফির কাছে জিঙ্গেস করে দেখো। রাফি সব জানে।
রিহার এসব কথা শুনে ইশিতার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। ইফান ইশিতা কে ধোঁকা দিয়েছে। ও রিহা কে ভালোবাসে তার পর ও ইশিতার সাথে এমন নাটক করলো।
রিহা ওর ফোন বের করে ওর আর ইফানের একসাথে তুলা কিছু ছবি বের করে ইশিতা কে দেখালো। ছবি গুলোর মাঝে ইফান আর রিহা এক সাথে বেডে শুয়ে আছে। কয়েকটা ছবিতে রিহা ইফানের গালে কিস করছে।
ছবি গুলো দেখে ইশিতা দাঁড়ানো থেকে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো।
রিহা ইশিতার পাশে বসে
— এগুলো দেখার পরেও কি তুমি ইফানের সাথে রিলেশন রাখবে? আর ওর সাথে ওর বাসায় যাবে?
তুমি চাইলেই সব ঠিক করে দিতে পারো ইশিতা। তুমি ইফানের লাইফ থেকে দূরে সরে যাও।
ইশিতা নিচে বসে কেঁদেই যাচ্ছে।
— ইশিতা আমি জানি তুমি খুব ভালো মনের মেয়ে। তোমার যা ভালো মনে হয় তুমি তাই করো। কিন্তু তোমার কাছে আমার একটা শেষ অনুরোধ আমি যে তোমাকে এসব বলেছি তুমি এটা ইফানের কাছে বলবে না। প্লিজ ইশিতা তোমার কাছে এটাই আমার শেষ চাওয়া। ইফান যদি জানতে পারে আমি তোমাকে এসব বলেছি তাহলে ও কখনও ই আমাকে মেনে নিবে না। ইফান আমাকে মেনে না নিলে আমি বাঁচবো না। আমি যে ইফান কে অনেক ভালোবাসি।

চলবে…..

( এতো কম রেস্পনন্স কেন? গল্পটা কি ভালো লাগছে না। এতো কষ্ট করে গল্প লিখে সবার সাড়া না পেলে লিখতে ইচ্ছে হয় না। ???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here