সেই মেয়েটি,পার্টঃ3

0
736

সেই মেয়েটি,পার্টঃ3
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ

রাতে সব কাজ শেষে মাধুরি রুমে আসলো । চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বারান্দা দাড়ালো । ছায়া দেখে নিজেকে কেমন অদ্ভুত লাগছে । এমনিতে মাধুরির নিজেকে দেখতে ভালো লাগে না তার ওপর ছায়া এটাতো আরো অন্ধকার । মুচকি হাসলো সে

– মাধুরির শোয়ার আগে বই পড়ার অভ্যাস আছে, খাট থেকে নেমে তার বুক সেল্প থেকে একটা বই নিলো, পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে যাবে এমন সময় তানহা কল করলো,

বন্ধুর মাঝে একজনই আছে তানহা । মাধুরির সুখে দুখে এই মেয়েটি তার পাশে থাকে প্রতিটি জায়গায় তাকে হেল্প করে সঙ্গ দেয় ।

তানহা অনেক সুন্দরী, তবে এই সুন্দর রুপে তার কেনো অহংকার নেই,

তানহাঃ- কি করছ রে
মাধুরিঃ- এই তো একটা উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম ।
তানহাঃ-তাই নাকি গল্প টা কি কাহিনি কি ??

ও আচ্ছা শুনবি, আচ্ছা শুন, ঘুমিয়ে গেলে কিন্তু খবর আছে তর ঘুমাতে পারবি না । ওকে

তানহাঃ- আচ্ছা ঠিক আছে বাবা বল তো এইবার,

মাধুরিঃ- শুন তাহলে, গল্পটা হলো শহর কেন্দ্রিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে লেখা । গল্পটির মূল বিষয় একটি অন্ধ মেয়েকে নিয়ে । মেয়েটির নাম হলো সুলেখা রহমান, অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে উচু লম্বা, মাথা ভরা চুল, কালো চশমা চোখে, ভারতীয় নায়িকাদের মতো দেখতে পাচঁ ভাইবোনদের মধ্য সুলেখা সবার বড় ।
মেঝ নাবিল রহমান সেঝ জুলেখা রহমান, চুতর্থ রাহিদ রহমান, পন্ধম মলি রহমান । পিতা রাকিব উদ্দিন রায়হান- এর. নামের শেষ অংশটুকু জুড়ে দেওয়া হয়েছে উক্ত পাঁ পাচটি ভাইবোনের নামের শেষে ।

দুই বোন তিন ভাই । বড় সুলেখা রহমান জন্ম থেকে অন্ধ তাই তাকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হু নি । মেঝ নাবিল রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তৃতীয় জুলেখা রহমান ইউ ল্যাবের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী, চুতর্থ রাহিদ রায়হান আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পন্ধম শ্রেণীর ছাত্র, আর সবশেষ মলি রহমান কেবল হাটতে শিখেছে আব্বু আম্মু ডাকতে শিখেছে । সে বারান্দা দিয়ে দৌড়ায়, উঠে আর পরে আর আম্মু আম্মু করে ডাকা- ডাকি করে ।

পিতা রাকিব উদ্দিন সরকারি কর্মকর্তা । আজিমপুর কোয়ার্টারে তার বাসা । চার রুমের ঘর ।

বেতনের টাকায় সাত সদ্যসের সংসার চলতে চায় না তাই ঐ চার রুম থেকে একটি রুম ভাড়া দিতে হয় । নিজের বেতনের টাকায় আর ঐ রুমের ভাড়া থেকে যা আসে তা দিয়ে কেনোমতে চলে যায় সংসার ।

পিতা মাতার সাথে একটি রুমে থাকে মলি । সুলেখা আর জুলেখাদের জন্য একটি রুম । আর নাবিল আর রায়হানদের জন্য একটি রুম । ভাড়ার রুমটি দেখে শুনে ভাড়া দেন রাকিব উদ্দীন ।

প্রথম টার্গেট বাচ্ছা-কাচ্ছা হীন নতুন কেনো দাম্মতি বা একটি বাচ্ছা । নিয়ম একই পরিবারের সদ্যসের মতো মিলে মিশে থাকতে হবে ।

ভালোই চলছিল । অর্থনৈতিক সংকট, তবুও বলতে হয় ভালোই চলছিল । বড় মেয়ে সুলেখা বিয়ের বয়স উতড়ে যাচ্ছে । অপূর্ব সুন্দরী কিন্তু বিয়ে দেবার উপায় নেই ।

একটি অন্ধ মেয়েকে কে বিয়ে করবে, কোথায় আছে এমন দরদী পুরুষ ?

“” দু’চোখে যত মানুষ দেখে সে সবাই ভিক্ষুক । ভিক্ষুদের হাতে তো আর মেয়ে দেওয়া যায় না । তাই ঘরে পড়ে আছে সুলেখা ।

– সংসারে তেমন কেনো কাজ নেই তার । ছোট বোন মলি ও ভাড়াটে জহুিরুলের ছেলে জিহাদকে দেখা শুনা করে সে,
মলি আর জিহাদ বয়সে সমান সমান মূলত তাদের দুজনের খাওয়া দাওয়া, ঝগড়া এই বিষয়টি দেখা শুনা করে অন্ধ সুলেখা,

তানহাঃ- গল্পটা ইন্টারেস্টিং একটা মেয়ের কাহিনি লিখা, আচ্ছা তারপর বল আর ধীরে সুস্থে বল সমস্যা নেই আজ পুরো রাত দরকার হলে সজাগ থাকবো এর শেষ অব্দি শুনে ঘুমাবো ।

মাধুরিঃ- হুম ঠিক আছে শুন তাহলে, সুলেখা মাঝে মধ্য মাকে সহযোগিতা করে । অন্যান্য ভাই বোনের খাওয়া দাওয়া বিদ্যালয় যাওয়া, বাসার পড়ার তাগিদ দেওয়াও তার নিয়মিত কাজের অংশ ।

ভাড়াটিয় জহিরুলের স্তী মাহামুদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক সুলেখার । তার সুখে দুঃখে আপদে-বিপদে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে তার । প্রায় চার বছর হয়ে গেলো তারা এই বাসায় আসছে ।

হঠাৎ একটা বিভ্রাট দেখা দেখা গেল সংসারে । জুট নেই ঝামেলা নেই জহিরুল বাসা ছাড়ার নোটিশ দিলো রাকিব সাহেবকে । বাসা ছাড়ার সময়টি থাকে সাধারণত মাসের শেষের দিকে । কিন্তু জহিরুল মাসের শুরুর প্রথম সপ্তাহে বাসা ছাড়তে চায় এবং মাসের পুরো টাকা দিয়ে । জহিরুল রাকিব সাহেবকে বললো, আঙ্কেল একটি বিশেষ কারণে আমাকে ঢাকা ছেড়ে যেতে হচ্ছে, এবং দেশে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে ।

রাকিব সাহেব বললেন, দেশে কি চাকরি করবে, এইখানেই তো ভালো আছো । জহিরুল বললো আংঙ্কেল দেশে একটি এনজিওতে চাকরি হয়েছে । বাবার বয়স হয়েছে সংসারে দেখা শুনার কেনো লোক নেই, বোনরা সব বিয়ে হয়ে গেছে ছেলের মধ্যে আমি‌ একা তাই আমায় যেতে হবে ।

রায়হান সাহেবেও আর কিছু বলার নেই, ভাড়াটিয়া যতই ভালো হক তাকে তো আর আটকানো যায় না । তিনি বললেন আচ্ছা যাও, ভালো থাকো, আর ঢাকায় আসলে আমাদের বাসায় আসবা, বুড়ো বাবার যত্ন নিয়ো ওকে ।

জহিরুলঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আসবো

একটি দোটানি ছোট্ট ট্রাক নিয়ে, ছোট্ট সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে দুদিনের মাথায় স্তী মাহামুদাকে নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে পালালো জহিরুল ।

জহিরুল চলে যাওয়ার সময় সুলেখার মন কেমন জানি ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । সে মান ভাড় করে রুমে ঘরের দরজায় আটকিয়ে খাটে বালিশের উপর মুখ ঠেষে উপুড় হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিলো সে ।

সুলেখার এমন কাহিনি দেখে তার বাবা মা ভাবলো অন্ধ মেয়ে, বিগত চারটি বছর তাদের সাথে থেকেছে কত আনন্দ করেছে, জিহাদকে নিজের মতো স্নেহ করেছে, তারা চলে যাচ্ছে তাই মনে হয় মন খারাপ সুলেখার

কিন্তু জানিস কি এর চরম পরণিতি প্রকাশ পেলো পরের রাতে । সে রুমটিতে জহুিরুলের নিকট ভাড়া দেওয়া ছিল সেই রুমটির ফ্যানের পয়েন্টে গায়ের উড়না পেচিয়ে ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করল সুলেখা রহমান, পরিবারের সবাই তো বিস্মিত । কেন এই দুর্ঘটনা ।

তানহাঃ- বলিস কি করে কেনো এমন অঘটন ঘটলো কি হয়েছে সুলেখার জিবনে?? তারপরে বল

মাধুরিঃ- আমার আর মনে পড়ছে না, কালকে বলতে হবে তোকে অনেক রাত হয়েছে যা ঘুমা কালকে আমাদের বাসায় আসিস তখন খুলে বলবো ।

তানহাঃ- না এখনি বলল কি হয়েছে সুলেখার জিবনে শুনতে মন চাচ্ছে । আর জহিরুল কেনো এমনভাবে চলে গেলো ?? বলল প্লিজ

মাধুরিঃ- না, রাত জেগে থাকলে পরে কালকে সকালে উঠতে পারবো না আম্মুর কাছে তখন একগাধা বকা শুনতে হবে আর কালকে তর সাথে জরুরি কথা আছে একটি বিষয় নিয়ে এখন যা ঘুমা বায় ।

তানহাঃ- আচ্ছা ঠিক আছে কালকে কিন্তু বলবি ওকে বায় ।

মাধুরি শুয়ে শুয়ে ভাবে, কি এমন ঘটে গেলো মেয়েটির জিবনে যার জন্য সে আত্মহত্যার মতো মহাপাপকে সে বেছে নিলো ।

মেয়েরা আর কত নিযার্তিত থাকবে নিরবে আর কতো আত্মহনন দিবে, আহ এমনটি আর দেওয়া যায় না । অব্যশই প্রতিবাদ করতে হবে বেচে থাকতে হলে সংগ্রাম করতে হবে ।

পরের দিন একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সে আজকে মেহেদির সাথে দেখা করার কথা । কালকে মেহেদি একজনের মাধ্যমে তাকে আসতে না করেছে । কি কাজের জন্য আজকে আবার বিকালে যেতে বলছে । আর তানহাও আসবে ।

এসে আগে পুরো ঘটনটা শুনবে তারপর তানহা তাকে ছাড়বে ।

ঘুম থেকে উঠে সে সবার জন্য নাস্তা রেডি করলো । তারপর জামা কাপড় গুলো নিয়ে ছাদে গেলো । কাপড় গুলো শুকাতে দিয়ে আসতেই সে পা ফসকে পড়ে গেলো । ব্যাথা তেমন পায় নি, কোনো মতে উঠে আবার পড়তে যাবে তখন সে নিজেকে ধরে সামলে নিলো, যাক প্রথমবার হোচট খাওয়ার পর দ্বিতীয় বার পড়তে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলো আর সে পড়লো না ।

-তার মানে জিবনে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে প্রথমবার হোচট খেয়ে পড়ে যাবে আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিলে তাহলে জিবনটা সুন্দর হবে ।

আজকে সারাটা দিন মাধুরির মাথায় সুলেখার চরিত্রের কাহিনিটা ঘুরপাক খাচ্ছে কেনো মেয়েটি এই পথ বেছে নিলো ।

সব কাজ শেষে সে বই নিয়ে আবার বসলো, উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বার ভালো করে তানহার সামনে উপস্থাপনা করতে হবে ।

এইদিকে মেহেদি আজকে খুব আনন্দিত মাধুরির সাথে দেখা করবে, মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছে সে, এটা হয়ে যায় কখন কিভাবে কেউ জানে না, একটা প্রবাদ আছে না প্রেম কখনো বয়স মানে না । না রুপ না সৌন্দর্য । এটা একটা অমৃত সুখ যা সবার ভাগ্য জুটে না ।

ঘড়িতে তিনটা বাজে কলিংবেল বেজে উঠলো, তার মানে তানহা এসে পড়েছে । মাধুরি দ্রুত পা চালিয়ে দরজা খুলে দেখলো তার আনুমান ঠিক তানহা এসছে ।

দুই বান্ধবি মিলে ছাদে চলে গেলো, ছাদে আগে থেকে দুইটা চেয়ার রাখা ছিলো ।

তানহাঃ- আজকে বাসার সব কাজ তাড়াতাড়ি করে তর কাছে ছুটে আসলাম গল্পের পরের কাহিনিটা শুনার জন্য এখন আর দেরি না করে বল

তাই নাকি মাধুরি চেয়ারে খুব আয়েশ করে বসে বললো আচ্ছা শুন পরের কাহিনি তাহলে সেটা শুনে তুই অনেক অবাক হয়ে যাবি ???

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here