সেই মেয়েটি❤,পার্টঃ1

0
1600

সেই মেয়েটি❤,পার্টঃ1
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ

কাচঁ ভাঙ্গার শব্দে সবাই ছুটে আসলো তার দিকে । ইসস কি করলাম এইটা আমি বলে জিহ্বা কামড় দিলো মাধুরি । এই মূহর্তে তার ওপর যে কি ঝড় বয়ে যাবে সে সেটা কল্পনা করতে শিহরে উঠছে । একটু আগে এখানে মুছে দিয়েছে সে, কিন্তু এখানে পানি আসলো কিভাবে সেটা সে বুজতে পারছে না ।

মাধুরির শাশুড়ি মা এসে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা শুরু করে দিলো , আহ এই যে দিন থেকে এই অলুক্ষণে আমাদের বাসায় আসলো সেইদিন থেকে একটা না একটা আপদ ডেকে আনছে ।

– কোন দোষে যে আমার কপালে এমন আপদ আসলো আল্লাহ ভালো করে জানে । এইই মেয়ে তুমার সমস্যা কি, একটা কাজও কি পারো না, নাকি হাতুমের মতো চেহারা না আছে রুপ না আছে ঢক, কোন কারণে যে আমার ছেলেটা এই মেয়েকে পছন্দ করলো আল্লাহ মাবুদ জানে । আচ্ছা তুমাকে যে এতো বকি তুমার কি কানে যায় না নাকি, আমার ছেলের জিবনটা তো শেষ করে দিচ্ছো । পাড়ার সকলকে বলে বেড়িয়েছি আমার বউ হবে রাজরাণী আর এখন তো আমি মুখই দেখাতে পারি না বাহিরে ।

– মা মা ও মা একটু এইদিকে আসো তো ‌‌,

আচ্ছা আসছি দাড়া, এইই মেয়ে এমন হাবার মতো দাড়িয়ে না থেকে এই গুলো পরিষ্কার করো জলদি আর আমি এসে যেনো একটা ময়লা যেনো না দেখি । এই বলে মাধুরির শাশুড়ি চলে গেলো ।

– মেয়েটা মাধুরির দিক চেয়ে মুচকি হাসি দিলো , মাধুরির আর বুজতে বাকি রইলো না যে এইখানে পানি কে ফেলেছে । মেয়েটা হলো তার নানদ নাম তার সাদিয়া, বদমেজাজি আর প্রচুর হিংসুটে

বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও বাপের বাড়ি থাকে সারা বছর কোনো কারণ ছাড়াই । আর সারাক্ষন মাধুরির পিছনে লেগে থাকে । কোনো কিছুর খুত পেলেই শুরু করে দেয় মাধুরিকে বকা ঝকা । তার সাথে এসে তাল দেয় মাধুরির শাশুড়ি
এই হলো নিত্যদিনের কাহিনি

চোখের পানি গুলো মুছে সে পরিষ্কার করা শুরু করলো ।
– কাদতে নেই তার । সেই ছোটবেলা থেকে কাদতে মানা তার । একটু কালো হওয়ার জন্য আজকে তার এমন কথা শুনতে হলো,

( আচ্ছা এই সমাজে কি রুপ আর সৌন্দর্য সব কিছু । যারা সুন্দর থাকবে সুখটা শুধু তাদের আর যারা কালো হবে তাদের কপালে সুখ নেই এই কেমন নিয়ম । সৃষ্টিকর্তা কি তাহলে সুন্দর মানুষের কপালে সুখটা রেখেছে আর অবেহলা, কষ্ট দুঃখ সব কালো মানুষদের জন্য বরাদ্দ )

কাচঁ গুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে তার হাতে একটা কাচ বিধে গিয়ে রক্ত ঝড়া শুরু করছে, কেনো মতে কাপড় দিয়ে রক্তটা বেধে সে বাকি ময়লা গুলো পরিষ্কার করে নিলো ।

এর মধ্যে মাধুরির শাশুড়ি এসে দুই তিনবার ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে জলদি বাকি কাজ গুলো সারতে ।

– মা আমার হাতটা একটু কেটে গেছে, আমি এখন পারবো না !!

কি পারবি না কেনো, আর হাতটা কেটে গেছে মানে কি হুম সব নাটক । এইসব করে লাভ নেই, দ্রুত কাজ গুলো শেষ কর আমি একটু সাদিয়াকে নিয়ে বাহিরে যাচ্ছি, এসে যেনো দেখি সব পরিষ্কার থাকে ।

– মাধুরি আর কিছু না বলে হাত কাটা নিয়ে বাকি কাজ গুলো শেষ করলো । হাতে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে তার । কিন্তু কিছু করার নেই কাজ গুলো তার করতে হবে না হলে কপালে দুঃখ আছে তার ।

আজকে খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলো মেহেদি ।
অল্প করে মেহেদির পরিচয়টা দিয়ে দেই । মেহেদি হলো মাধুরির হাজবেন্ট আর চরিত্র তার মা এবং বোন থেকে উল্টো । ঠান্ডা মেজাজের মানুষ । মাধুরিকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে । এক কথায় মাধুরিকে এই পৃথিবীতে কেউ যদি ভালোবাসে সেটা হলো তার বর মেহেদি ।

মেহেদির এত তাড়াতাড়ি চলে আসাতে মাধুরি কিছুটা অবাক হলো , রুমে এসে মেহেদি ড্রেস চেন্জ না করে খাটে শুয়ে পড়লো আড়া আড়ি ভাবে ।

মাধুরি এসে মেহেদির পা থেকে জুতা গুলো খুলতে খুলতে বললো আজকে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে অফিসের সকল কাজ কি শেষ??

মেহেদি কিছুক্ষণ চুপ করে বললো – না

মাধুরিঃ- তাহলে ??

মেহেদিঃ- না অনেক দিন ধরে ভাবলাম তুমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি তাই ভাবলাম আজকের ডিনারটা আমরা বাহিরে করবো । আর সারাদিন খাটাখাটুনি করে তুমি খুব ক্লান্ত হয়ে যাও ঘুরে আসলে তুমার মনটা একটু ফ্রেশ হবে এবং ভালো লাগবে ।

মাধুরি মেহেদির মুখ থেকে এমন কথা শুনে বিস্মিত হলো কিছুটা মানুষটা এমন ভালো কেনো, তার সকল কথা ওনি কিভাবে বুজে যায় । মাধুৃরিকে অনমনষ্ক দেখে মেহেদি মাধুরিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো কি ভাবছো এতো জলদি যাও খাবার নিয়ে আসো ক্ষিধা লাগছে খুব.!!

– মাধুরি মেহেদির ধাক্কাতে লাফিয়ে উঠে বলে ওহ হে তাই তো আমি তো ভুলেই গেছি । দেখছেন কি ভুলো মন আমার আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন জলদি আমি খাবার নিয়ে আসছি । এই বলে সে চলে যেতে লাগলে মেহেদি তাকে ডাক দেয় মাধুরি এইদিকে আসো তো একটু ??

মেহেদির এমন ডাকে মাধুরি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো কারণ মেহেদি কেনো বিষয়ে খুব গভীর ভাবে ভাবলে তাকে ডাক দেয়, এখন কি এমন বিষয় ঘটে গেলো মাধুরি বুজতে পারছে না ।

মাধুরি নিঃশব্দে মেহেদির কাছে আসে, মেহেদি মাধুরির হাতটা তার হাতে নিয়ে ভালো করে তদন্ত করে বলে এটা কিভাবে হলো হুম…

মাধুরি হাতটা এক ঝটকায় ছেড়ে বলে ও কিছু না কাজ করতে গিয়ে কিসের যেনো লেগে হাতটা একটু কেটে গেছে , আপনি চিন্তা করবেন না আমি মলম লাগিয়ে দিয়েছি চিন্তা করবেন না এই বলে মাধুরি সে স্থান প্রস্থান করলো ।. মেহেদি আর কিছু বললো না রাগে সে গজ গজ করছে । মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে, আর তার একটু কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না

আচ্ছা চলুন মাধুরি আর মেহেদি প্রেমকথনের দিক থেকে আমরা ঘুরে আসি কিভাবে তাদের দেখা বা পরিচয় হলো‌… হুম তারপর আমরা মূল গল্পে আসবো ওকে :::

মেয়েটাকে ছাদে দেখেছিলো ওইদিন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি যাবে এমন সময় ছাদে একটা মেয়ে আসছে কাপড় নিতে হয়তো । একটু কালো তবে চেহারাটা মোটামোটি ঠিক আছে তার কাছে, চেহারা দেখে বুজা যাচ্ছে খুব কাজ করছে আজকে কপাল থেকে ঘাম ঝড়ে পড়ছে। মেহেদি মেয়েটার দিকে একনজর তাকিয়ে থাকে ।

– মাধুরি কপাড় গুলো নিয়ে ছাদ থেকে নামতেই মেহেদির এমন চাহনিতে সে কিছুটা অবাক হয়ে যায় । এই ছেলেটা তার দিকে এমন ভাবে চেয়ে আছে কেনো মনে হচ্ছে সে স্বর্গের কেনো পরী, আর ছেলেটা রাজকুমার হয়ে তার পরীটা দেখছে ।

মাধুরি আর কিছু না ভেবে সেখান থেকে চলে গেলো, মাধুরিকে দেখে মেহেদির ভালো লেগে গেলো, মনে তুফান গুলো একটু জোরে ছুটে চলছে বোধ হয় । এটা কেমন তুফান সে জানে না তবে মেয়েটা পেলে হয়তো মনের তুফানটা নেভানো সম্ভব

বন্ধু সাকিবকে জিজ্ঞাসা করলো মেয়েটি কে রে‌‌

সাকিবঃ- কোন মেয়েটি,

মেহেদিঃ- আরে সালা একটু আগে যে ছিলো এইখানে এই মেয়েটি ‌.

সাকিবঃ- ওহ আচ্ছা,তুই মনে হয় মাধুরি আপুর কথা বলছিস ওনার নাম মাধুরি, আর ছাদটা যে দেখলি সেটা তাদের বাসা ।

মেহেদি আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে সেখান থেকে চলে গেলো

মাধুরির বাসায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে কলিংবেল বাজাল বাসার ।

দরজা খুলতেই আরে বাবা তুমি ( মাুধরির মা..)

আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন ( সে কিন্তু চিনে না তাকে হয়তো চিনে মহিলাটা তাই প্রথম দেখাতে তুমি করে বলছে মেহেদি মনে মনে ভাবলো)

ওয়ালাইকুম আসসালাম ঘরে আসো বাবা ।

মেহেদি মুচকি হাসি দিয়ে ঘরে ডুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সে মেয়েটিকে খুজতে লাগলো আই মিন মাধুরিকে ।

– মাধুরি মেহেদিকে দেখে আড়াল হয়ে গেলো , এই ছেলেটা এখানে কি করতে এসেছে আর এখানেই বা কিভাবে আসলো । সামনে যাওয়া মানা তার । কারণ বাসায় কেনো মেহমান আসলে তার সামনে যাওয়া নিষেধ ।

মেহেদি অনেকক্ষণ বসে মাধুরিকে না পেয়ে চলে গেলো ।

রাতে শুয়ে শুয়ে মাধুরি আজকে আসা ছেলেটির কথা ভাবছে, হঠাৎ করে এমন হওয়ার কি কারণ আর তাকেই বা কেনো খুজছে ছেলেটি, একটু একটু ভালো লাগছে তবে ভালোর থেকে খারাপ লাগছে বেশি । কারণ তার মতো মেয়েকে কেই বা খুজবে সে না সুন্দর না আছে রুপ, এইগুলো যারা সুন্দর তাদের কপালে আমাদের কপালে না । মন খারাপ নিয়ে কোলবালিশটা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো সে,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here