সেই_তমসায়_৪

0
229

#সেই_তমসায়_৪
নুসরাত জাহান লিজা

৯.
“সাজিদ সাহেব, আমার আসার আসল উ*দ্দে*শ্য এই বাড়ির কারা কারা জানেন?”

“আমি আর সাঈদ স্যার ছাড়া আমরা কাউকে জানাইনি।”

“তার মানে অন্য কারোর পক্ষে আপনাদের অ*জ্ঞা*ত*সারে জানাটা অসম্ভব নয়, তাই তো?”

আগেরদিন ওর ঘরের পর্দার পেছনে কাউকে লু*কি*য়ে থাকতে দেখার পর থেকেই ময়ূখের মাথায় কিছু প্রশ্নের আনাগোনা চলছিল। আজ সকাল হতেই সাজিদকে জিজ্ঞেস করল সেসব। সন্তোষজনক উত্তর পেল না।

“আমরা আমাদের মধ্যে পুরো গো,*প*নী*য়তা মেইনটেইন করেছি। বাকিটা জানি না।”

“মুনিম লোকটা সম্পর্কে যেটুকু জানি তা যথেষ্ট নয়। এখন নাকি সে অন্য জায়গায় আছে। কোথায়, কী করছে এখন সেসব জানা প্রয়োজন।”

“আপনি ওকে স**ন্দে**হ করছেন কীসের জন্য? উ*ই*লের সাথে তার কোনো সম্পর্ক আছে?”

“আপনার কাছে যেটুকু সহযোগিতা চাইছি সেটুকু করলেই হবে। আমার কাজের একটা ধারা হলো, অন্যের অ*যা*চিত কৌ*তূ*হল বা হ*স্ত*ক্ষে*প আমাকে ভীষণ বি*র**ক্ত করে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?”

“কিন্তু ময়ূখ সাহেব, আপনার অ*ন*ধি*কা*র চর্চা…”

“সেটা আমাকেই বুঝে নিতে দিন। আরেকটা কথা, আমি দিনের বেলা একবার এহতেশাম সাহেবের শোবার ঘর, স্টাডি এসব দেখতে চাই। এটার ক্ষেত্রে কনফিউশন নেই তো?”

সাজিদের মুখে নেমে আসা ঘোর অ*ন্ধ*কা*র ময়ূখের নজর এড়ায় না৷ মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে সে চলে যেতেই ময়ূখ হ*তা*শা*য় রে**গে উঠল। এই ব্যাটার ব্যা*ক*গ্রা*উ*ন্ড চে*ক করাও জরুরি। সেজন্য বাইরে যেতে হবে। কয়েকটা সো**র্স কাজে লাগাতে হবে। এদের বোঝাতে হবে একটা জ্ব*ল*জ্যা*ন্ত *খু** /নি সাথে নিয়ে তারা সময় পার করছে৷ যে একবার এটা করতে পারে, সে আরও অসংখ্যবার পারে। তবে তার আগে আলো, আর অ**ন্ধ*কা*র সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানো যাক।

১০.
আজ এহতেশাম সাহেবের তিন ছেলেমেয়ের সাথে মৃদুলা আর মুনিমও উপস্থিত থাকল অ*নু*স*ন্ধা*ন কাজে। ময়ূখ অত্যন্ত বি*র**ক্ত**বো*ধ করলেও মুখে কিছুই বলল না। একবার মুনিম বলল,

“দেখুন, আপনাকে বু*দ্ধি*মা*ন মনে করে এখানে আনা হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের কিছু প্রা*ই*ভে*সি তো আছে। এভাবে সব জায়গায় হাত দেওয়া শি*ষ্টা*চার বহি*র্ভূ*ত।”

“আমি তার সন্তানদের অনুমতি নিয়েই করছি। আর প্লিজ, এভাবে অন্যের কাজে বা*গ*ড়া দেবার চেষ্টা করাও কোনো শি*ষ্টা*চা*রের মধ্যে পড়ে না।”

“মুনিম, উনাকে উনার মতো কাজ করতে দাও।”

“কিন্তু মুনিম ভাই তো ভুল কিছু বলেননি সাঈদ ভাই। তোমার বন্ধু বলে পরিবারের একান্ত জিনিস তার সামনে তুলে ধরতে হবে?” মুনিমের সাথে সায় দিয়ে বলল মৃদুলা।

“সাঈদ, শুধু তোমরা তিন ভাইবোন থাকো। বাকিদের বে*রি*য়ে যেতে বলো। আমার কাজ বি*ঘ্নি*ত হচ্ছে।”

সাঈদসহ সবাই বেরিয়ে গেল সাঈদ আর রায়হানের হ*স্ত*ক্ষে**পে। দিনের বেলাতেও এই ঘরে ততটা আলো আসে না। বিশাল শোবার ঘরটা বেশ মনোগ্রাহী। ভদ্রলোক সত্যিকারের অভিজাত ছিলেন তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে এই ঘরের প্রতিটি কোণে।

এক প্রান্তে একটা টেলিস্কোপ সদৃশ জিনিস চোখে পড়ল। সাঈদ জানায়,

“চাঁদের প্রতি বাবার একটা দুর্বলতা সবসময়ই ছিল। এটা তিনি তার এক পরিচিতের মাধ্যমে বাইরে থেকে আনিয়েছিলেন।”

এই ঘরের আসবাবপত্রের ভেতর বাইরে দেখা শেষ করে তার স্টাডিতে গেল চারজনের দ*ল**টা। এখানে ঢুকেই ময়ূখের মনে হলো কিছু একটা নি*শা*না এখানে পাবেই পাবে। এই ঘরটায় নানা প্রকারের বইতে ছেঁয়ে আছে। বড়সড় লাইব্রেরি বললেই বরং ঠিকঠাক হয়। ময়ূখ কিছুক্ষণ সব ভু*লে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল চারপাশটা। সচকিত হলো রায়হানের কথায়,

“বাবা সব ধরনের বই পড়তেন। এখানে মাঝেমধ্যে পড়তে পড়তে ঘুমিয়েও পড়তেন।”

নির্দেশিত জায়গায় তাকিয়ে দেখল সেখানে একটা তক্তপোশ বিছানো আছে। ওইদিকের বিশাল জানালা খুলতেই আলো প্রবেশ করল হুহু করে।

এবার ওর নজর গেল একটা কুচকুচে কালো রঙের প্রদীপের দিকে। এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে তুলে নিল। রূপোর তৈরি বলে মনে হলো, কালো রঙের প্রলেপ দেয়া আছে। রঙটা খুব বেশি আগে করা হয়নি। সর্বোচ্চ তিন মাস হবে মনে হলো।

চকিতে একটা ভাবনা মাথায় খে*লে গেল ময়ূখের।

‘Te*neb*rae ce*du*nt lu*ci’

চিরকুটের সূ*ত্র এটাকেই ইঙ্গিত করেছিল কী! কালো প্রদীপ অ* *ন্ধ*কা *র ঘরে থাকলে আঁধার, আবার এর সলতে জ্বালিয়ে দিলেই পুরো ঘর আলোকিত হয়ে যায়। অন্ধকার বলতে প্রদীপের কালো রঙ, আবার প্রদীপের আলোয় আলোকিত হবার একটা ই*ঙ্গি*ত।

আঁ*ধা*র থেকে আ*লো মন বলছে একটা র**হ**স্যে*র দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে ভেতরে বেশ উ* ত্তে* জি *ত হলেও বাইরে প্রকাশ করল না একেবারেই। আগে খুলে দেখা যাক৷

ওকে এটা এত কৌতূহল নিয়ে প*র্য*বে*ক্ষ*ণ করতে দেখে এহতেশাম সাহেবের মেয়ে মুনিয়া এই প্রথম মুখ খুলল,

“দাদির কাছে শুনেছি এটা আমার দাদার হাতের প্রদীপ। বাবার পছন্দের ছিল। সবসময় এটাকে কাছে রাখতেন।”

ময়ূখ সলতের মাথার অংশটুকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলল। প্রদীপটা বেশ বড় আকৃতির তাই এর মুখটাও বড়। খুলে সেটা কাৎ করতেই একটা ছোট্ট ভাজ করা কাগজ বেরিয়ে এলো। ময়ূখ নিচ থেকে সেটা তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলল। একইরকম লেখা। তবে এবার তার স্বর বদলে গেছে।

“প্রিয় সন্তানরা,
আমি কিন্তু তোমাদের ভালোবাসি। কখনো প্রকাশ করিনি। তোমরা বো**কা, সেটা সম**স্যা নয়। কিন্তু নিজেদের অতিরিক্ত চা**লা**ক ভাবাটা আরও বড় বো*কা*মী। যা আমি তোমাদের মধ্যে দেখেছি। তোমাদের চারপাশের সবাইকে বি**শ্বা**স কোরো না। কারণ সবাই বি**শ্বা**সের মর্যাদা রাখতে জানে না।

আরেকটা স্বীকারোক্তি, পা** প ফিরে আসে। ধ্ব*** ং ** স করতে। আমার জীবনের সবটা তোমরা জানো না। যেটুকু জানো তাতেই আমার উপরে রা* *গ ছিল তোমাদের। তোমরা সোজা পথ থেকে বি*চ্যু*ত হয়ো না। আমার অন্তস্থল থেকে শুভাশিষ রইল।

কিছুটা বু*দ্ধি তোমাদের হয়েছে বলে ধরে নিলাম, এটা যেহেতু খুঁজে পেয়েছ। আমার ঘরের পুরনো আলমারি সরিয়ে একেবারে নিচের দিকে একটা ছোট্ট দরজার মতো দেখতে পাবে। সেখানেই তোমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। আশাকরি এসবের গুরুত্ব বুঝতে পারবে, ধরে রাখতে শিখবে।”

চিঠি পড়া শেষ হতেই মুনিরা সেটা খ**প করে টেনে নিয়ে নিল। তিনজনের চোখ একসাথে স্থির হলো কাগজটাতে।

পড়া শেষ হতে পড়িমরি ছুটল নির্দেশিত জায়গায়। লোক ডেকে আলমারি সরানো হলো। নিচের দিকে একটু ভালো মতো খেয়াল করতেই বুঝতে পারল মেঝে আর তা সংলগ্ন খানিকটা দেয়াল কাঠের। তবে এখানেও র*ঙে*র আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে এক নজরে চোখে পড়ে না। পুরনো দেয়ালের আর কাঠের রঙ মিলেমিশে একাকার।

প্রদীপের ভেতর থেকে পাওয়া চাবিটা ময়ূখের হাতে ছিল। সেটা দিয়ে ট্রা**প*ডো*র খুলল। না ঠিক ট্র‍্যা**প*ডো**র বলা যায় না, বরং দেয়াল কুঠুরি বলা ভালো। কারণ ভেতরে কিছুটা আলমারির তাকের মতো। তাতে একটা ফাইল পেল। আর কিছু নেই। সেটা থেকে উইলের পাশাপাশি একটা চিরকুট বেরিয়ে এলো।

তাতে একটা বাচ্চাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র মিকিমাউসের মুখ আঁকা। তবে এখানে যে এঁকেছে সে হাসিটা কেমন ধূর্ত করে দিয়েছে। নিচে লেখা,

“খে**লা এখনো বাকি প্রিয় সন্তানগণ।”

উ*ই*ল থাকলেও আর কিচ্ছু সেখানে নেই।

রায়হান বলল, “আমি জানতাম, উনি এমন কিছুই করবেন। আমাদের জ* **ব্দ না করলে তার চলবে কেন?”

সাঈদের বক্তব্য হলো, “একটু আগে তার প্রতি অন্যরকম ধারণা এসেছিল। তিনি কোনোদিন আমাদের কথা ভাবেননি।”

মুনিরা কিছু বললেন না ঠিকই, কিন্তু তিনিও বেশ ক্ষু**ব্ধ বেশ বুঝা যাচ্ছে।

তবে ময়ূখের ভাবান্তর হলো না, সে কাগজটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখল। তী*ক্ষ্ণ থেকে তী**ক্ষ্ণ*তর হচ্ছে দৃষ্টি। আগের চিরকুটের সাথে এখনকারটা সাং*ঘ**র্ষি*ক। তিনি ইচ্ছে করলেই ক**ঠি*ন সূ*ত্র দিতে পারতেন৷ কিন্তু ছেলেদের বু*দ্ধি*র* দৌড় জানা আছে বলেই প্রায় সহজ করেই ধাঁধা দিয়ে রেখেছেন। তিনি এমন করবেন না বলেই ওর বিশ্বাস।

দুটো এবং আগের চিরকুটগুলো পাশাপাশি রেখে হাত বুলিয়ে দেখছে ময়ূখ। লেখা একই কিন্তু অবশ্যই ভিন্নতা একটা আছে। কাগজ উল্টে সেটা উপলব্ধি করল। আগের গুলোর সবগুলোতে কাগজের উল্টো পিঠেও হাতে যেন লাগছে অক্ষরগুলো। অর্থাৎ এহতেশাম সাহেব কলমে অনেকটা ভর দিয়ে লিখতেন। এতদিন পরেও যার চিহ্ন রয়ে গেছে। কিন্তু শেষের কাগজে যে লেখাটা ন**ক**ল করেছে, সে হালকা চা*পে লিখেছে। উল্টো পিঠে তেমন ছাপ পড়েনি। এখানেই এত প*রি*ক*ল্প*না মাঠে মা** রা গেছে।

ময়ূখের মাথায় রা**গে**র আভাস। তবে যেটুকু সান্ত্বনা, ও আসার আগেই এটা হা* পি**শ করা হয়েছে। ওর বু**দ্ধি*কে টে** *ক্কা দিয়ে নয়।

তবে এতদিন যেন কিছুটা ম্যাড়মেড়ে ছিল এই কে** *স*টা, এখন সে একটা উদ্যম ফিরে পেল। এবার আসল ছোটাছুটি শুরু হবে। সেই অ*জ্ঞা*ত চো** *র এবং আ/; ত; তা;য়ী একজনই কিনা সেটাও জানা নেই।

দুটো ঘটনার মধ্যে একটা যো*গ*সূ*ত্র না থেকেই যায় না বলেই ময়ূখের অভিমত।

তবে শেষ চিরকুট লেখকের কথা অনুসারে ময়ূখ তারই উদ্দেশে মনে মনে আওড়ালো,

“খে**লা বাকি নয়, খে**লা কেবল শুরু।”
…………
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here