সেই_তমসায়_৮,০৯

0
164

#সেই_তমসায়_৮,০৯
নুসরাত জাহান লিজা
০৮

১৯.
ময়ূখের চে/ত/না কতক্ষণ পরে ফিরল সে ঠাহর করতে পারল না ঠিকঠাক। প্রথমে সব ঝাপসা লাগল, আস্তে আস্তে দৃশ্যপট স্পষ্ট হল্প চোখের সামনে। সে একটা টিনের চাল দেয়া বারান্দায় বেঞ্চিতে শুয়ে আছে। কিছু স্থানীয় লোক ওকে ঘিরে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে। এখানে কীকরে এলো সেই চিন্তার আগে মনে হলো, মাথার ব্য*থা*টা বেশি ভো/গা/বে।

উঠে বসার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না, সব আবার অন্ধকার হয়ে আসছিল মনে হচ্ছে। একজনের সহযোগিতায় উঠে বসে পেছনের টিনের সাথে হেলান দিল। চোখ বন্ধ আর খুলছিল মানিয়ে নেবার জন্য। এরইমধ্যে পরিচিত গলা শুনল।

“আপনার জ্ঞা//ন ফিরল তাহলে। আপনার কী হয়েছিল বলুন তো? এই রাস্তায় কোথায় যাচ্ছিলেন?” মৃদুলা এমনভাবে বলছে যেন সে কিচ্ছু জানে না। তবুও ময়ূখের মনে হলো এই প্রশ্নের মাধ্যমে ধূ/ /র্ত মেয়েটা ওকে বুঝি বি/দ্রু/প করল।

“আপনি জানেন না?” মেজাজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টারত ময়ূখ বলল।

“আমি কীকরে জানব বলুন? আমি তো একটা ব্যক্তিগত জরুরি কাজে বেরিয়েছিলাম৷ তাড়া ছিল খুব। হঠাৎ পেছনে একটা কোঁকানোর মতো শব্দ শুনি। সাথে সাথে তাকাইনি। আসলে পাত্তা দেইনি৷ কয়েক কদম এগিয়ে মনে হলো একবার দেখা উচিত। তাই ফিরে তাকিয়ে দেখলাম একটা মানুষ পড়ে আছি রাস্তায়৷ আমি ছুটে গিয়ে আপনাকে সেখানে আবিষ্কার করলাম। এরপর আশেপাশে বাড়িতে কিছু পরিচিত মানুষ ছিল। গিয়ে ডেকে নিয়ে আসলাম। বাকিটা তারাই করেছে।”

ময়ূখ এখনো ঠিকঠাক কিছু ভাবতে পারছে না। তবে ওর মনে হলো, বড় কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা ওদের নেই, ওর ধারণা এখানে একজন নয়, কয়েকজন জ/ড়ি/ত। আপাতত ওকে ভ/য় দেখিয়ে নিরস্ত করাই তাদের উদ্দেশ্য।

ময়ূখ গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানালো, ওদের পাশাপাশি অনিচ্ছা সত্ত্বেও মৃদুলাকেও কৃতজ্ঞতা জানাতে হলো। আপাতত ওর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ যে তাদের নখদর্পনে এ বিষয়ে কোনো স/ন্দে//হ নেই।

“আমার জন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত কাজ ব্যহত হলো। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।”

“তা তো হলো। কিন্তু আপনি হাজার হোক, আমাদের বাড়ির মেহমান। অন্যের পিছু নেওয়া আপনার কাজ হলেও আমাদের তো একটা দায়িত্ববোধ আছে নাকি!”

ময়ূখের উপরে কেউ টে/ক্কা দেবার চেষ্টা করুক এটা সে একেবারেই মেনে নিতে পারে না। একে তো মাথায় প্রচুর পানি ঢালা হলেও নিরাময় হয়নি তেমন। তার উপর এসব খোঁ/চা। ভেতরের রাগী সত্তা বেরিয়ে আসতে চাইছে প্রবল পরাক্রমে।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটা উপলব্ধি খুব কাজে দিল, আজ যদি সে ম/ /রে রাস্তায় পড়ে থাকত, কেউ কি ওর খোঁজ করত? কেউ তো অপেক্ষায় নেই ওর জন্য। সেখানেই একজন ময়ূখ হা/রি/য়ে যেত এই মহাবিশ্ব থেকে। কিন্তু সে তা চায় না, সে না থেকেও মানুষের মনে থেকে যেতে চায়! তার জন্যই সে এই পথ বেছে নিয়েছে! এখন এই একটা খোঁ/ /চা/য় মে/জা/জ হারানো ওর শোভা পায় না। এরা যত খুশি চাল দিক, শেষ চালটা সে-ই দেবে এবং কিস্তিমাত হতেই হবে! নিজেকে আত্মবিশ্বাস দিল নিজেই।

চোখ বন্ধ করে কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে ফুরফুরে গলায় বলল, “অন্যের পিছু না নিলে তো আপনার অতিথিপরায়ণতা সম্পর্কে জানতে পারতাম না, আবার কার কোনো কাজের পিছে কোন উদ্দেশ্য তাও জানতে পারতাম না। একটা মজার বিষয় কি জানেন? আমার পেছনেও কিন্তু কেউ ঘুরছে, যতদূর মনে হয় তার এটা পেশা নয়। সে কীসের স্বা//র্থে এটা করছে বলতে পারবেন?”

এক মুহূর্তের জন্য ক্রু/র/তা” এসে ভর করল মৃদুলার মুখাবয়বে, চোখ দুটো /জ্ব/ /লে উঠল যেন। তবে এই মেয়ের স্নায়ুবিক শক্তি মারাত্মক। কারণ মুহূর্তেই সামলে নিয়েছে। তবে ময়ূখের চোখ ফাঁ//কি দেয়া সহজ নয়!

“সে যারা ঘুরছে সেটা তো তারাই বলবে। আমি তো বলতে পারব না।” মিষ্টি করে হাসলেও কোথাও একটা ধূ//র্ত// শে/য়া/ল এসে মৃদুলার মুখচ্ছবিতে অবতীর্ণ হলো যেন!

“এটা জানার জন্যই তাকে খুঁজছি। আমিও খুব একটা সহজ মানুষ নই তো।”

মৃদুলা কাকে যেন তাড়া দিল একটা রিকশা বা ভ্যান ডেকে আনতে। ময়ূখ নিজের মাথার পেছনে হাত দিয়ে দেখল, একেবারে গোল আলু গজিয়েছে সেখানে। এখনো টনটন করছে পুরো মাথা!

২০.
রাতের মধ্যে খানিকটা কমলো মাথার যন্ত্রণা। ওষুধ, ডাক্তার সব দেখানো হয়েছে। একটা এক্সরেও করানো হয়েছে, স্থানীয় হাসপাতাল থেকে। সে যদিও চায়নি, তবে মৃদুলা নিয়ে গেছে। ওকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে নিজেদের কার্যোদ্ধার করার জন্যও হতে পারে! কী কাজ হতে পারে!

বিকেলে ফিরেছে, তারপর লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে। নয়টার আগে আগে যখন ঘুম ভেঙেছে তখন অনেকটাই ভালো লাগছিল। আগামীকাল ওর সো/ /র্স/রা আসবে। তাই কিছু জিনিস গুছিয়ে রাখা প্রয়োজন। চাবি সকালেই নিয়েছিল সাঈদের কাছ থেকে।

এহতেশাম সাহেবের স্টাডিতে ঢুকার মুখে সাজিদের সাথে দেখা হলো।

“আপনার ব্যাপারটা শুনলাম। দুঃখজনক, ঝুঁ/ /কি নেয়া হয়ে যাচ্ছে।”

“নো রি/ /স্ক নো গেইন। কথাটা জানে নিশ্চয়ই? আমি এসবে ভ/ /য় পাই না।”

“তবুও বললাম।”

“আপনাকে ভাবার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আজ কোথায় গিয়েছিলেন? ছুটিতে ছিলেন শুনলাম!”

“হ্যাঁ, একটা ব্যক্তিগত কাজ ছিল।”

“ভালো। আজ ব্যক্তিগত কাজ ছিল অনেকেরই।”

বলেই তালা খুলে ফেলল ময়ূখ, সাজিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, “আমি একটা ব্যক্তিগত কাজে এখানে এসেছি। একা থাকতে ভালো লাগবে।”

সাজিদ নাখোশ হয়েছে এটা স্পষ্ট। তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। সে নির্বিঘ্নে কাজ করতে চায়, লেজ আপাতত ওর প্রয়োজন নেই।

***
ভেতরে এসেই দরজার সিঁটকিনি তুলে দিল। আজ ইলেকট্রিসিটি আছে। বইয়ের তাক ঘাটছে র‍্যা/ন্ড/ম/লি। ওর আচমকা চোখ গেল সেদিনের প্রদীপের দিকে। সেদিন একটা চাবি পেয়ে ছুটে গিয়েছিল। তাতে ফাঁকফোকরে অন্যকিছু থেকে গেল কিনা দেখা দরকার। ভাবতেই সেদিকে গেল। প্রদীপের প্যাঁচ খুলে উল্টে দেখল, কিছু নেই। সেদিনও এভাবে উল্টেছিল। এবার ঝাঁকালো, প্রথমে হালকা একটা খসখস এরপর প্রবল ঝাঁকুনি দিতেই একেবারে মৃদু টুংটাং শব্দ হলো।

সেটার প্রতিটি কোণে কোণে চোখ রেখে হাতড়াতে হাতড়াতে একটা আলগা অংশ নজরে এলো। সেটা খানিকক্ষণ খুঁ/চি/য়ে নিতেই আরেকটু আলগা হলো। আশেপাশে খুঁজে টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে সেই আলগা জায়গায় ঢুকিয়ে শক্তি প্রয়োগ করতেই ফাঁকা হয়ে এলো। আরেকটু কসরত করে খোলার পরে সেখানে একটা কাগজে মোড়ানো চাবি পেল। এটা নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ চাবি হবে। তার কোনো গো/ /প/ /ন ড্রয়ার বা সিন্দুকের হতে পারে। তার শোবার ঘরে আর কোনো গো””প”ন ড্রয়ার নেই। এই ঘরে তেমন কিছুই খুঁজতে এসেছিল সে।

লোকটা কেন বে/ /ঘো//রে প্রা/ /ণ /হা/ /রা/ /লো! শুধু শুধু নিশ্চয়ই নয়।

বইয়ের তাকগুলোর পেছনে একটা টর্চ জ্বেলে আলো ফেলে দেখতে লাগল। একেবারে শেষেরটা দেয়াল ঘেঁষে। একা একা সরানো সম্ভব কিনা ভাবছিল। ভালো মতো খেয়াল করে দেখল এটাতে তেমন বইপত্র নেই। হালকা কিছু ফাইলপত্র। সে আস্বস্ত হলো। সব নামিয়ে একটু কসরত করতেই সরে গেল। এটুকু পরিশ্রমেই আজ হাঁপিয়ে উঠল সকালের আকস্মিক আ/ /ক্র/ ম/নের প্রভাবে।

সরাতেই বেশ আমোদিত হলো। একটা জায়গা পাওয়া গেল। সে চাবি ঢুকাতেই নিভে এলো মনটা কাজ করছে না। তবে নিরাশ হতে হলো না একেবারেই। হ/তা/শ হয়ে যখন উঠে আসছেল, এপাশের তাকের সাথে ওর সোয়েটারের সুতো আটকে যায়। সেটা ছাড়াতে গিয়ে দেখে এই উল্টো অংশে একটা চাবি দেয়ার জায়গা রয়েছে। অর্থাৎ এদিক থেকেও একটা ড্রয়ার আছে।

এবার চাবি ঘুরানোর সাথেই ক্লি//ক শব্দ পেল। ড্রয়ার খুলে একটা ছবি পেল। আর কিচ্ছু নেই৷ এটা এত আগলে রাখার কী আছে ভেবে উঠে এসে আলোয় মেলে ধরল। আর তাতেই ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল।

যুবক বয়সী এহতেশাম সাহেবের ছবি। সাথে একজন ভদ্রমহিলা মিষ্টি হেসে তার গা ঘেঁষে বসে আছেন। মাথায় ঘোমটা টানা। তবে এহতেশাম সাহেবের ঘরে তার স্ত্রীর সাথে যে যুগল ছবি দেখেছেন, এই ভদ্রমহিলা নিঃসন্দেহে তিনি নন!

এটা নিশ্চয়ই এবাড়িতের কেউ জানে না, নাকি জানে! এজন্যই কি সন্তানদের কাছে থেকেও অনেক দূরের মানুষ? কেউ কী তাকে /ব্ল্যা/ /ক/ /মে/ই/ল// করছিল!

সবাই যদি না জেনে থাকে এখনো, এটা জানলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে! একটা বি/ /স্ফো/ */র /ণ/ হবে নিশ্চিত!
………
(ক্রমশ)

#সেই_তমসায়_৯
নুসরাত জাহান লিজা

ময়ূখ নিজের ঘরে এসেও সেই ছবিটা বেশ কয়েকবার দেখল। মহিলা শাড়ি পরা, মাথায় ঘোমটা টানা, মুখে কিঞ্চিৎ লাজুক হাসি। নতুন বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেমন ভাবভঙ্গি থাকে, এটাও ঠিক তেমন।

ময়ূখ বিষয়টা আগেই বুঝতে পেরেছে, তবুও ছবিটা বারবার দেখার একটা কারণ আছে। ভদ্রমহিলাকে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে, কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারল না। মনে করার চেষ্টা করতে গিয়ে একটা উপকার হলো, মাথা ব্যথাটা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। তবে এই উপকার ওর সহ্য হলো না।

অদৃশ্য আ /ক্র/ /ম/ ণ/ কা/ রী/র উদ্দেশ্যে কিছু অশ্রাব্য গালি ছুঁড়ে দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল। ওই ব্যাটাকে সামনে পেলে এরকম কয়টা লোকটার নিজের মাথায় বসিয়ে দেবে। তারপর বাকি কথা!

২১.
ঘুম থেকে উঠার পরে আর মাথা ব্যথা তেমন ছিল না, গোসল করে নিতেই বেশ ঝরঝরে লাগল। নাস্তা করে ওষুধ খেয়ে বেরিয়ে পড়ল। ছবির ব্যাপারে আগেই কাউকে কিছু বলবে না, এতে নিজের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। যা ওর ঘোরতর অপছন্দ।

আজ বেরিয়ে প্রতি মুহূর্তে স/ত//র্ক থেকেছে। এলোমেলে হেঁটেছে, এরপর একটা পায়ে চালিত ভ্যানে উঠে পড়ে চালককে তাড়া দিয়েছে দ্রুত চালানোর জন্য। আশেপাশে আর কোনো বাহন চোখে পড়েনি। তাই অনুসরণকারী থেকে দূরত্ব রক্ষা করা গেছে। এটুকু সে নিশ্চিত হয়েছে সে যেহেতু এতদিন হেঁটে চলাফেরা করেছে তাই ওই লোকের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

সূর্য আজ বেশ ভালো মতো হেসেছে। এমন শীতের সকালে এই মিঠে রোদের ছোঁয়া ময়ূখের মনে এসেও লেগেছে। আজ দিনটা ফুরফুরে। আজকের সুন্দর সকালটা ময়ূখের জন্য কতটা সুন্দর হয় সেই প্রত্যাশায় আছে খুব করে।

বাজারে হেঁটে পোঁছাতে লাগে পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট। সে তেরো মিনিটে এসে পোঁছালো। এরপর এখানকার একটা খাবার হোটেলে ঢুকল। তেমন ভিড়ভাট্টা নেই। এগারোটা পেরিয়েছে। একটা টেবিলে দু’জন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদের পাশে গিয়ে বসল। কয়েক টেবিল সামনে আরও দুই তিনজন স্থানীয় লোক বসেছে।

“মন দিয়ে শোনো হাতে সময় বেশি নেই। যা বলার দ্রুত বলো। তার আগে এটা নাও।”

বলেই ছবি রাখা ফাইলটা এগিয়ে দিল।

“স্যার, আপনি ভালো আছেন?”

“আর ভালো। একটুর জন্য বেঁচেছি। কাল যেকোনো কিছুই হতে পারত। মৌচাকে কেবল একটু হাত ছুঁইয়েছি, তাতেই হুল ফুটারে মরিয়া হয়েছে। শীঘ্রই ঢিল ছুঁড়ব। তখন কী হবে কে জানে? তবে তার আগে আমার ইনফরমেশনগুলোর কী হলো, কতদূর এগুলে?”

“স্যার, যা পেয়েছি তাতে বেশ ভালোই এগিয়েছে বলা যায়।”

“বলো, ফাস্ট।”

“স্যার, সাজিদের ব্যাপারে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আপনি যা বলেছেন তেমনই। তবে মুনিমের ব্যাপারটা যথেষ্ট /গো///ল//মে//লে।

“স্যার শিরিনেরটাও।” দু’জনই পর্যায়ক্রমে মুখ খুলল।

“রেদোয়ান, তুমি আগে বলো। আর একটা কথা, আমাকে এখনো স্যার বলা বাদ দেয়া উচিত। সময় নষ্ট না করে পয়েন্টে আসো।”

“ভাই, আমি প্রথমে শিরিনের হাসপাতালে খোঁজ করলাম। প্রথমে চিনতে পারল না, পরে অন্য একজন কর্মী বলল তার পরিচিত ছিল সে। তার কাছ থেকে শুনলাম সে আরও দুই বছর আগে কাজ ছেড়ে দিয়েছে শিরিন।” ময়ূখের তাড়া খেয়ে সম্বোধন পরিবর্তন করল রেদোয়ান।

“কিন্তু সাজিদ আর সাঈদ তো বলল পুরনো কর্মস্থলেই গেছে।”

“না ভাই। এখন কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তর দিতে পারল না। পরে ওর সম্পর্কে সব জানতে চাইলাম। ওদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না বুঝতে পেরে, অথোরিটির সাথে কথা বললাম। প্রথমে তো ওদের প্রাইভেসির জন্য কিছু বলতে চাইল না। পরে বললাম পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হতে পারে৷ এরপর তারা সেখানে কর্মরত কর্মীদের ফাইল ঘেঁটে শিরিনের সিভি বের করল। সেটার একটা ফটোকপি নিয়ে এসেছি।”

একটা কাগজ ময়ূখের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রেদোয়ান বলল, “বাবার নামটা দেখে খ/ট/কা লেগেছিল। তাই নিয়ে এলাম।”

কাগজের দিকে তাকিয়ে সেটা পড়ে এবার নির্বাক বিস্ময়ে হতবিহ্বল হবার পালা ময়ূখের। শিরিনের বাবার নামের জায়গায় স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে যে নাম তা হলো,

‘এহতেশাম আহমেদ।’

“স্যার, কাহিনী আরও আছে। বলব?”

“বলার জন্যই তো এসেছো নাকি?” সম্বিৎ ফিরতে কড়া গলায় বলল ময়ূখ। ওর ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে মঈদুল বলল,

“ভাই, টাস্কি খাবেন এক্কেবারে। আমি আর রেদোয়ান তো ভাই আ/ /হা/ /ম্ম/ /ক হয়ে গেসিলাম।”

“মঈদুল, সময় নেই, তুমি বলতে না পারলে…” মঈদুলের স্বভাব সম্পর্কে ময়ূখ অবগত। একবার বলতে শুরু করলে রসিয়ে রসিয়ে বলতে থাকে। তাই এভাবে ঝাঁঝের সাথে বলল, তবুও থামানো গেল কিনা কে জানে!

“বলছি বলছি। আমি গেলাম মুনিমের ঠিকানা দেয়া এলাকায়। গিয়ে শুনলাম মুনিম নাকি ওর মা আর বোনের সাথে থাকত। তবে ওরা ওই এলাকার লোকাল না। বগুড়া থেকে আসছিল। মুনিম নাকি তখন ইস্কুলে পড়ে, আর ওর বোন ছোট। তবে এই জায়গাও নাকি বিক্রি করছে কিছু, বাকিটুকু বিক্রির বন্দোবস্ত করতাসে। দেশের বাইরে চলে যাব বোনরে নিয়ে।”

“দেশের বাইরে? মুনিম তো অন্য একটা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দিয়েছে, সেখানে নাকি কাজ পেয়েছে?

“ওইখানেও গেসিলাম স্যার। সেখানে জয়েন করছে কয়দিন হয়। তবে এত অনিয়মিত যে ওরা না/খো/শ। একটু কৌশল করে বললাম, সে আমার পুরোনো আত্মীয়। আমার কাছে টাকা ধার নিসে। এখন আমার বউয়ের অসুখ খুব। এখন তখন অবস্থা। টাকাটা খুব দরকার। যদি ওর নতুন বাসার ঠিকানাটা দিতেন।”

ময়ূখ নিজেই এবার হেসে ফেলল শব্দ করে। “বিয়ে না করেই বউকে তো প্রায় /মে/ /রে/ / ফেললে?”

রেদোয়ানও হাসতে হাসতে বলল, “ভাই, ওর হবু বউ এবার বিয়েতে না করে দিলেই ষোলোকলা পূর্ণ। ”

“শ/কু/নের দোয়ায় গরু…” রেদোয়ানকে আরও কিছু বলার আগে ময়ূখ আবার তাড়া দিল। মঈদুলও সিরিয়াস হলো।

“মুনিমের ঠিকানা দিতেসিল৷ তখন আমি ফাইলের কাগজটায় দেখলাম ওর বাপের নাম। জানেন কি দেখলাম?”

“এবারও এহতেশাম সাহেবের নাম দেখেছো নাকি?” ঠাট্টাচ্ছলে বলল ময়ূখ।

“একদম ঠিক স্যার। এইটাই দ্যাখসি।”

ময়ূখের বিস্ময় এবার আকাশ ছাড়ালো। হুট করে মনে হলো কিছু এলোমেলো পাজল মিলে গেল। শিরিন আর মুনিম ভাইবোন! দুজনেই এহতেশাম সাহেবের লুকোনো স্ত্রীর সন্তান। এজন্যই এদের জন্য তার অপরিসীম স্নেহ ছিল। সত্যিই কি তাই? তাহলে তাদেরকে তিনি ছেড়েছিলেন কেন?

নিশ্চয়ই তারা উনার ছায়া বঞ্চিত ছিল। অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে জীবনে চলার পথে। এহতেশাম সাহেবের মতো মহীরুহ ব্যক্তিত্ব যাদের মাথায় তাদের এমন জীবনযাপন করতে হতো না নিশ্চয়ই। এরাই কি তাকে নিজেদের /প্র/ /তি/ /শো/ /ধ কিংবা স্বা/ /র্থ/ সি//দ্ধির জন্য ব্ল্যা// /ক /মে/ /ই/ল করছিল! নাকি এর পেছনে অন্য গল্প আছে!

নিমগ্ন বসে থাকতে থাকতে সহসাই নতুন একজন এই হোটেলে প্রবেশ করছে বুঝতে পারল। ময়ূখ এক নজর তাকিয়েই জরুরি গলায় সঙ্গীদের বলল,

“হ্যাট পরে নাও, মাফলার থাকলে মুখ ঢেকে ফেল। টি//ক//টি//কি এসে পড়েছে। দুজন দুই পথে যাবে৷ এখান থেকে বেরিয়ে কেউ কাউকে চেন না। কী করে ফাঁ//কি দিতে হয় তোমরা জানোই। এখনি উঠো না। আমি সংকেত দিলে উঠবে। আমার কথার খেই ধরে উত্তর দেবে। বুঝতে পেরেছ?”

দুজনেই মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল। ততক্ষণে মঈদুল আর রোদোয়ানের চেয়ারের সাথে লাগোয়া উল্টোদিকের চেয়ারে বসল নতুন আগত লোকটা। ময়ূখ মুখ দেখতে পায়নি। টুপি আর মাফলারে ঢাকা মুখ। এখন এতটা ঠান্ডাও নেই, তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না কে হতে পারে।
…….
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here