সেই_মেয়েটি❤,পার্টঃ4
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
আচ্ছা শুন তারপর কি হয়েছে, সুলেখার মৃত্যূদেহ পোষ্ট মটার্ম করে দেখলো সুলেখা তিন মাসের গর্ভপতী । সবাই অনুমান করলো জহিরুলের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো । আর সুলেখা গর্ভপতী জেনে জহিরুল তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে । আর সুলেখা নিবরে আত্মহনন দিয়েছে ।
তানহাঃ- আমার না সব গুলিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা বিষয়টা আরেকটু খোলাসা করে বল তো সুলেখার আর জহিরুলের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিলো ।
মাধুরিঃ- তুই এখনো বুজিস নি আচ্ছা শুন বাবা এইবার কিন্তু শেষ পরে কিন্তু আর না বুজলে আর বলবো না,
সুলেখা তো অন্ধ মেয়ে, বিয়ের বয়স উৎরে যাচ্ছে, উচ্ছল যৌবন তাকে উন্মাতাল করে, এই সুযোগটি কাজে লাগায় ওই শয়তানটা, কবে থেকে কোথায় কতবার আকাম করেছে কেউ কিচ্ছুটি টের পায় নি । হঠাৎ জহিরুল টের পেয়ে যায় সুলেখার পেটে বাচ্ছা ধরেছে ।
তার মানে কি পরিবারের সবাই কি জেনে গেছে,
না, সুলেখার মুখ থেকে জহিরুল আর তার বউ মাহামুদা জেনে গেছে ,
– কী অবাক কান্ড.!!
আর জহিরুল আর তার বউ বিষয়টা গোপন রেখে রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে চলে যায় । তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার একদিন পরই তো সুলেখা আত্মহত্যা করে….
– ইসস মেয়েদের একটু অসহায় পেলে ছেলেরা কিভাবে ঝাপিয়ে পড়ে এটাই তার উদাহারণ, বেচারি সুলেখার জিবনটা শেষ । এটাই কি ছিলো তার ভাগ্য,
যদি বিষয়টি এমন হতো তাহলে না কত ভালো হত আজ বেচে
থাকলে সুলেখা আর তার পরিবার মিলে প্রতিবাদ করতো, এলাকাবাসি সবাই মানববন্ধন করতো, পুলিশ সাথে সাথে বিষয়টি তদন্ত করে জহিরুল কে আটক করতো । সুলেখা আদলতের মাধ্যমে ন্যায্য বিচার পেতো । নতুন করে আবার বাচতে শিখতো তাকে দেখে আরো অনেক অসহায় দুর্বল মেয়েরা পিছিয়ে যেতো না । এভাবেই চলতে থাকলে নারীদের কখনো এমন নিযার্তন বা কষ্ট সহ্য করতে হতো না ।
কথা গুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মাধুরি আচ্ছা শুন যে কাজে তোকে আসতে বললাম, আজকে ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে হবে মুখটা ব্যাকা করে কথাটা বললো মাধুরি ।
তানহা বললো, কোন ছেলের সাথে ওইদিন সুন্দর একটা ছেলে তোকে খুজছিলো সে নাকি, মাধুরি বললো হুম
– আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল গুলো আচড়ে বেধে নিলো মাধুরি , আগে আয়নার সামনে যেতো না, এখন টুকটাক আয়নার সামনে গিয়ে, এদিক ওদিক করে তাকিয়ে নিজেকে দেখে মাধুরি, ভাবে ইসস আরেকটু ফর্সা হলে আমি সব কিছু করতে পারলাম হইলে, আম্মু – আব্বু পাড়া প্রতিবেশী সবাই আমাকে আদর করতো । কিন্তু আফসোস অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন আমাকে চেনে না ।
একটু সেজে বোরখা পড়ে নিলো মাধুরি, আচ্ছা তুুই কি আমার সাথে যাবি নাকি মোবাইল চালাবি উফফ এতো কেমনে পারস ফোন টিপতে,
তানহা বললো, আরে কই চালাই নিজের একটা পিক ফেসবুকে পোষ্ট করলাম সেটা দেখছি কতজন লাইক কমেন্ট করেছে । এই এক ঘন্টায় কয়েকশ লাইক কমেন্ট পড়েছে জানছ তুই কিভাবে জানবি ??
সবাই কত সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করছে ।
মাধুরি একটু বিরক্ত হয়ে বললো , ওইই তর রুপ আছে মানুষ প্রসংশা করবে, এটা আর কি?? এখন নিজের রুপের ঢাক ঢোল না পিঠে আমার সাথে চলল, দেরি হয়ে যাচ্ছে ওনি মনে হয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
মেহেদি এক ঘন্টা আগে চলে এসেছে, পার্কেরচোয়ারে বসে পা ঢুলাচ্ছে আর ফোন টিপছে ফেসবুকিং করতে একটা মেয়ের ছবি সামনে এসেছে সে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলো নাইস, আপনি তো খুব সুন্দর, সাথে থ্যাংকস রিপ্লে চলে আসলো ।
মাধুরি আর তানহা প্রায় চলে আসলো । মাধুরি মেহেদির সামনে এসে বললো এই যে, মেহেদি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো কালো বোরখা পড়া একজন মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে , সে বললো হুম কে আপনি ??
মাধুরি ঢং করে বললো আমি মাধুরি !!
– কিহ তুমি মাধুরি ওই মাই গড আমি কি দেখছি তুমি তাহলে আসছো । ( খুব উত্তেজিত হয়ে বললো)
মেহেদি তানহার দিকে চোখে যেতেই তো অবাক একটু আগে এই মেয়েটাকে ফেসবুকে দেখেছে আর সে এখন তার সামনে দাড়িয়ে আছে তার মানে সে মাধুরির বান্ধবি ওইদিন বোরখা পড়া ছিলো তাই চিনতে পারিনি আজকে বোরখা পড়ে নি তাই চিনতে পারছে.
কিছুক্ষণ খোশ গল্প চললো
সবার থেকে বেশি বেশি বক বক করছে মাধুরি
মেহেদি মাধুরি কথা বলার স্টাইল দেখে অবাক এই মেয়ে এত কথা বলতে পারে সে যদি আজকে তাকে না আসতে বলতে তাহলে সে বুজতেই পারতো না ।
তানহাকে একটু দূরে রেখে মাধুরির সামনে দাড়িয়ে মেহেদি বললো, দেখো তোমাকে আমার ভালো লেগেছে, আমি তুমার সাথে প্রেম করতে চাই কিন্তু সেটি বিয়ের পর । এখন বলো আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কবে যাবো.
মাধুরি মেহেদির এই কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে গেলো, কি বলছেন আপনি আমাকে আপনার ভালো লেগেছে আবার বিয়েও করতে চান । আপনার কি মাথা ঠিক আছে আমার মতো মেয়েকে আপনার ভালো লেগেছে হুম, এই সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন আমার থেকে অনেক সুন্দর মেয়ে আপনি পাবেন!
মেহেদি বললো, দেখো আমার মনে হলো আমি কথা গুলো তুমাকে আগে জানাই তাই আমি তুমাকে জানিয়ে রাখলাম বুজছো !! এখন কি করতে হবে না করতে হবে আমিই করবো বাকিটা ।
মানে কি আপনি কি করবেন মাধুরি তোতলাতে তোতলাতে বললো , দেখুন আমি আবারও বলছি আমার থেকে অনেক সুন্দর এবং ভালো মেয়ে আপনি পাবেন । আর আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এখনি বাসায় যেতে হবে । মাধুরি তানহাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো ।
মেহেদি মনে মনে ভাবে এই মেয়েটা এমন কেনো, যতই তার দিকে এগুচ্ছি ততই সে পিছিয়ে যাবার চেষ্টা করছে । কি তার কাহিনি আমি তো তাকে রুপ দেখে ভালোবাসি না আমি তাকে ভালোবাসি তার ওই সুন্দর মনটাকে যেটা কাউকে ভালোবাসার জন্য পাগল হয়ে অপেক্ষা করছে ।
রাতে খাওয়ার সময় বাবার সাথে মাধুরির ব্যাপারটা শেয়ার করবে ভাবছে সে,
বাবা তুমি কিছু কথা বলার ছিলো তুমি আমার রুমে আসবা প্লিজ, মেহেদির বাবা তার দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথাটা নেড়ে হ্যা সৃচক জবাব দিলো । মেহেদি তার সব কথা বাবার সাথে শেয়ার করে, কারণ তার সব বিষয়ে বাবা খুব সার্পোট করে আর মা তেমন করে না বিধায় তার সাথে তেমন আলাপ করে না সে ,
এইদিকে আরেক বিপত্তি ঘটে গেলো, মেহেদিকে দেখে তানহার একটু একটু ভালো লেগে গেছে । বাসায় আসার পর থেকে তার মাথায় শুধু মেহেদির কথা ভাবছে, ছেলেটা দেখেতে সুন্দর আর আচারণ খুবই ভালো, মনে হয় কেনো ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে হবে
এখন তার কি করা উচিত, ছেলেটি তো মাধুরিকে ভালোবাসে । তবে এমনও তো হতে পারে ছেলেটি তাকে দেখার জন্য মাধুরিকে ডাক দিয়েছে বা ছেলেটির মনে অন্য কিছু আছে । এখন আমার কি করা উচিত. ?? কেউ একবার মনে গেথে গেলে সহজে তাকে মুছা যায় নাকি.. একবার ভাবলো মেহেদির সাথে কথা বলবে ?
এই রকম অনেক চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ।
মেহেদির সাথে তার বাবার অনেকক্ষণ কথা হলো, তার বাবা রাজি আছে!! কিন্তু তার মা রাজি হবে কিনা সেটাই তো আসল বিষয়??
দেখ বাবা মেহেদি তোকে একটি কথা বলি, এই যুগে প্রত্যেক মাইই চায় তার ছেলের বউ সুন্দর হবে,সবাই প্রশংসা করে বলবে অমুকের ছেলের বউ অনেক সুন্দরী এই সেই । আমি তো তার সাথে রাজি আছি, তুইইই তর মাকে বলে রাজি করায় । মেহেদি খুব চিন্তায় পড়ে গেলো তার মা রাজি হবে কিনা এই বিষয় নিয়ে তবে যত যাইইই হক মাকে রাজি করাতে হবে তবে অন্যভাবে ।
বাবা দেখো কে কেমন তা কিন্তু ফ্যাক্ট না । দেখো তুমার ওই সুন্দরী মেয়েটার অবস্থা যবে থেকে বিয়ে হয়েছে তবে থেকে এই বাসায়, একটি দিনের জন্য সে শুশুর বাসায় গিয়েছে সারাক্ষণ টোই টোই করে ঘুরে বেড়ায় তাকে কিছু বলতে গেলেই মা আমার সাথে ঝগড়া লেগে যায় । আর সে তো তার বান্ধবির মেয়ে দেখে রেখেছে আমার জন্য তাহলে
এখন এই বাসায় আমাকে বুজার মতো তুমি আছো। তুমি মাকে বুজিয়ে বলো, আমি তার বান্ধবির মেয়েকে বিয়ে করবো না ।
আর কালকেই আমরা মেয়ে দেখতে যাবো মা না গেলে তুমি আর আমি যামু ।
মাধুরি বাসায় এসে বোরখাটা খুলে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিচ্ছে , এরই মধ্যে তার মা এসে বললো, কিরে কোথায় গিয়েছিলি !!
ওই একটু তানহাদের বাসায় গিয়েছিলাম !!
– কেন, তোকে না বলছিলাম আমার অনুমতি ছাড়া বাসার বাহিরে বের হবি না ??
মাধুরি বললো, তুমি তখন ঘুমিয়ে ছিলে তাই জাগাই নি, আমার ভুল হয়ে গেছে মা ।
– হুম, আর কখনো যদি এমন ভুল করিস তাহলে তর সেদিনের খাবার খাওয়া বন্ধ কথাটা মনে রাখিস ।
– হুম আচ্ছা ঠিক আছে মা ।
আর শুন কালকে খুব ভোরে উঠে ঘরদোর পরিষ্কার করে ফেলবি কোথাও যেনো একটু ময়লা না থাকে । মেহমান আসবে কালকে আর তুই যেনো হুট করে তাদের সামনে যাবি না । আড়াল থেকে সব কাজ কর্ম করে দিবি ।
ওকে মা ঠিক আছে আমি সব করে দিবো ।
মাধুরির কেমন জানি অস্থিরতা লাগছে, তার মায়ের মুখ থেকে শুনে যে কালকে মেহমান আসবে । তার মানে কি মেহেদিরা কি আসবে ।
একটু ভয় করছে আবার ভালো লাগছে, সে একটু কল্পনা করে তারও কি অন্য মেয়েদের মতো বর থাকবে । বর তাকে খুব আদর করে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবো, উফফ কি লজ্জা পাবো তখন ।
কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে মাধুরি বলে, আমি শুধু শুধু এই গুলো ভাবছি আমার কপালে এমন কেনো কিছু নেই ।
আমি বরং কালকে কি সিন হয় সেইটার জন্য অপেক্ষা করি
( আসলে কি রুপই কি আসল….কেউ কি তার ভিতরটা দেখে না, মাধুরি কেনো আড়াল হচ্ছে এতো, এটা কি তার নিয়ম নাকি সমাজ তাকে এই পথে যেতে বাধ্য করছে…??? ) সমাজটা কেমন বিচ্ছির তাহলে ??
চলবে