সেই_রাতে,পর্ব_11,12

0
1024

#সেই_রাতে,পর্ব_11,12
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_11
.
-” মাথা ব্যাথা কমছে তোর?”
-” হ্যাঁ আম্মু কমছে। ওষুধ খেয়েছি।”
-” গোসল দিয়ে খেতে আয়।”
প্রিতমের বাবা কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” তুমিও গোসল দেও। অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমায় ।”
-” এই বয়সে এত দায়- দায়িত্ব মাথায় চেপে থাকলে ক্লান্ত তো লাগবেই।ছেলে হলো একটা অকর্ম।”
-” কয়েক দিন অফিসে যেতে যেতে কাজের দিকে মনোযোগ এমনিই আসবে। আমি ওকে বুঝিয়ে বলল।”
নিঝুম খুব টেনশনে আছে। জ্বরের ঘোরে কি বলছে কে জানে কিছুই মনে করতে পারছে না। ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারির পিকচার গুলো দেখে দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এমন টা কে হলো? এটা তো হওয়া ছিল না।
প্রিতম রুমে রুমে বসে বসে ভাবছে কোথায় বাসা ভাড়া ওর জন্য? একা একটা মেয়ে মানুষ কত প্রোবলেম ই তো হতে পারে । মেয়ে টার শরীরে একটুও ভয় নেই। সকালের পাগলামীর কথা ভেবে নিজে একা একা হাসছে। মেয়ে টা পারেও বটে। বেলকুনিতে বসে আছে নিঝুম। চুল গুলো খোলা। বেশ ভালোই লাগছে! হয়ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। মেয়ে টাকে দেখলে মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ,কষ্ট, বিষন্নতা ওর উপর ভর করছে। কি করে নিঝুম আনমনে বসে বসে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই মেয়ে টা জানার আগ্রহ বাড়ছে।
-” এই যে কি করনে আপনি?
প্রিতমের ডাকে পিছন ফিরে তাকালো নিঝুম।
চোখের কোনে জমে থাকা পানি টুকু মুছে মুচকি হেসে বলল,
-” ফ্যামিলি প্লানিং করি।”
প্রিতমের ফিক করে হেসে দিল।
-” বিয়ের আগেই ফ্যামিলি প্লানিং?”
-” হু সব কিছু আগে থেকে চিন্তা করা ভালে।”
-” হুম সব কিছুতে এডব্যান্স তো দেখছি । সব কিছু আগে থেকে চিন্তা করা ভালো এটা বুঝেন আর আর থেকে বেড়িয়ে কোথায় যাবেন এই চিন্তা করেন না?”
-” দেখুন মানুষের দূর্বল পয়েন্ট নিয়ে কথা বলবেন না। ”
-” ওকে বললাম না।”
দরজার কাছ থেকে প্রিতমের মায়ের ডাক পড়ল,
-” কার সাথে কথা বলছিস?”
প্রিতম মোবাইল কানে নিয়ে কথা বলার ভান করে বলল,
-” আম্মু ফোনে কথা বলি।”
নিঝুম জড়োসড়ো হয়ে বেলকুনির এক কোনায় বসে রইল। ইস! এখন যদি উনি আমায় দেখে ফেলে কি যে বাজে পরিস্থিতি হবে।
.
প্রিতমও চিন্তায় পড়ে গেল। আম্মু এখন বেলকুনিতে গেলে কি যে হবে। আম্মু কি আমায় সন্দেহ করে? ধুর! কি সব ভাবছি।
-” আম্মু ভাত দেও,ক্ষুদা লাগছে খুব।”
-” তোকে তো সেই কখন গোসল দিতে বল্লাম,গোসল না দিয়ে খাবি নাকি? তুই গোসল দিয়ে খেতে আয়।”
যাক এবারের মত বাঁচা গেল।নিঝুমের খুব হাসি পাচ্ছে । কি উটকো জামেলায় পরছে লোক টা আমার জন্য।উনার আম্মুর সামনে উনার মুখ টা দেখার মত ছিল।
-” কি ভয় পেয়েছিলেন খুব?”
-” ভয় পাবো না তো কি? এমন সিচুয়েশনে থাকলে আপনি কি ভয় পেতেন না?”
-” আমি এমন সিচুয়েশনে থাকতে যাব কেন।”
নিঝুম খিলখিল করে হেসে দিল। ও বিষয় টা খুব উপভোগ করছে। প্রিতমেরও খুব হাসি পাচ্ছে ওর হাসি দেখে। দুজন ই হেসে দিল। নিঝুম খেয়াল করে দেখল প্রিতমের হাসি টা খুব সুন্দর । হাসলে গালে টোল পরে।
-” জানেন হাসলে যাদের গালে টোল পরে তাঁরা কি?”
-“জানব না কেন? ছোট বেলা থেকে এটা জানতে জানতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।”
-” হুম মেয়ে দের গালে টোল ভালো লাগে, ছেলে দের কেন যেন ভালো লাগে না।”
-” হয়েছে আমার টোল নিয়ে আপনার রাজনীতি করতে হবে না।”
মেয়ে টার জন্য এত কিছুর ফেস করার পরও কেন জানি মেয়ে টার প্রতি একটুও বিরক্ত হচ্ছে না প্রিতম । বরং মায়া কাজ করছে।
-” এই যে অফ হয়ে গেলেন কেন? জানেন আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি।”
-” কি বিষয়?”
-” আপনি আর আমার উপর আগের মত বিরক্ত হচ্ছেন না।”
ইস রে! মেয়ে টা মনোবিজ্ঞান নিয়ে তো আবার লেখাপড়া করে না? বুঝলো কিভাবে?”
-” দেখুন আপনি আমার অতিথি। আপনার উপর বিরক্ত হওয়া প্রশ্নেই আসে না।”
-” হয়েছে দেখছি তা।কত বাজে বিহেভ করছেন আমার সাথে।”
প্রিতম মনে মনে ভাবছে মেয়ে টার সাথে কি খুব বেশী বাজে বিহেভ করে ফেলছি?
নিঝুম আবার বলতে শুরু করল,
-” বাজে বিহেভ করছেন ওটা কোন ম্যাটার না,উপকার করছেন এতেই অনেক।”
-” খুব বেশী বাজে বিহেভ করে ফেলছি ?”
-” না একটু একটু।”
-” শুনেন আর একটু পর আম্মু খেতে ডাকবে,আপনি গোসল দিবেন না?”
-” হুম দিবো।”
-” আবার জ্বর আসে যদি? ”
-” খুব তো দেখছি কেয়ার করছেন। না আসবে না জ্বর।”
-” বাব্বাহ খারাপ বিহেভ করলেও দোষ,ভালো বিহেভ করলেও দোষ।”
নিঝুম কি মনে করে যেন খিলখিল করে হেসে দিলো। প্রিতম কিছু টা অস্বস্তৃি বোধ করল। কেউ যদি সামনে বসে কারন ছাড়া হাসে সবারই অস্বস্তৃি বোধ করে।
-” হাসেন কেন?”
-” কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত তাই হাসছি। আর কাঁদব না অযথা কারো জন্য চোখের পানি না ফেলাই ভালো।”
-” কার জন্য চোখে ফেলছেন?”
-” ফ্যামিলির সবার জন্য। হাসছি কিসের জন্য জানেন?”
-” না বললে জানব কিভাবে? ”
-” হাসছি আপনার অবস্থা দেখে। কত জামেলায় পরছেন আমার জন্য।দুপুরে কি আমার জন্য ভাত চুরি করে আনবেন?”
-” আমি কি ঠেকছি আপনার জন্য ভাত আনতে যাবো?”
-” সেটাই তো । আপনি ভাত না এনে দিনে আমি এনে খাবো।”
-” ব্লাক-মেইল?”
-” জ্বী।”
-“আপনি গোসল দেন ।তারপর আমি গোসল দিব।”
নিঝুম খাটের নিচ থেকে ব্যাগ বের করে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। যাক শেষ পর্যন্ত একজন ভালো মানুষের দেখা পেলাম। কত টা ভালো লোক টা! এত ভালো মানুষ কি করে হয়?
উনার হয়ত আমার উপর মায়া পড়ে গেছে তাছাড়াও এমনিতেই উনি খুব ভালো।নিঝুম গোসল শেষে ওয়াশরুমের দরজা দিয়ে একটু উঁকি দিয়ে দেখল প্রিতম কোথায় আছে? উনি সোফায় শুয়ে আছে। লোকটা খাটেও শোয় না আমার জন্য। বাহ! ভালোই। কি যেন বই পড়ছে উনি।
রুমের দরজা জানালা সব আটকানো কেউ দেখে ফেলার ভয় নেই । নিঝুম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসল।
প্রিতম বইয়ের থেকে চোখ টা সরিয়ে নিঝুমের দিকে তাকালো। প্রিতমের দৃষ্টি আটকে গেল। মেয়ে টা কে এত সুন্দর লাগছে কেন? ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। বেশ লম্বা চুল। মেয়ে দের সব থেকে ভেজা চুলে বেশী সুন্দর লাগে। প্রিতম ইচ্ছা করলেও চোখ ফিরাতে পারছে না। মেয়ে টা এত মায়াবতী কেন? চোখ গুলো কি টানাটানা! যে কোন মানুষ কে মায়ায় জড়াতে পারে চোখের চাহনি তে। ভেজা চুলে মেয়ে দের খুব বেশী স্নিগ্ধ,মায়াবী লাগে।
নিঝুম অস্বস্তৃি বোধ করছে। লোক টা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকই ফেলছেন না।
-” এই যে কি দেখছেন?”
নিঝুমের ডাকে চোখ ফিরিয়ে নিলো প্রিতম । ধুর! মেয়ে টার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়ে টা হয়ত মনে মনে খুব অস্বস্তৃি বোধ করছে । কি মনে করছে কেন জানে?
প্রিতম নিঝুমের কথা জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গেল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অনেকক্ষন পর জিঙ্গেস করল,
-” আপনার গোসল দেওয়া শেষ?”
-” না দেই নি গোসল ।”
-” আমি তো দেখলাম দিছেন।”
-” দেখে আবার জিঙ্গেস করেন কেন?”
প্রিতম এবার লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনি হয়ে গেল।
এবারও নিঝুমের কথার জবাব না দিয়ে বলল,
-” আপনি বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি গোসল দিয়ে আসছি।”
-” হুম।”
প্রিতম মনে মনে খুব লজ্জা পাচ্ছে ।ধুর! মেয়ে টা আবার খারাপ ভাবলো না তো । প্রিতমের জীবন থেকে বর্ষা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম কোন মেয়ে কে এত ভালো লাগল।
মেয়ে টা বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। বেশ ভালোই লাগছে । প্রিতম লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাপার টা উপভোগ করছে।
-” ক্ষুধা লাগেনি?”
প্রিতমের কথায় পিছনে ফিরে তাকাল নিঝুম।
-” আপনি নাকি খাবার এনে দিবেন না। না খেয়েই থাকতে হবে ক্ষুধা লাগলেই কি?”
-” রাগ করলেন?”
-” বিপদে পড়লে রাগ করতে নেই।”
আপনি ওয়েট করেন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
-” ধরা খেয়েন না আবার।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” দোয়া করেন ।”
আগে দেখতে হবে আম্মু কি করে?
-” আম্মু কোথায় তুমি? ”
প্রিতমের মা ওয়াশরুম থেকে বলল,
-” গোসল দেই,তুই একটু ওয়েট কর আসছি।
এটাই তো উত্তম সুযোগ। প্রিতম ডাইনিং রুম থেকে খাবার নিয়ে সোজা রুমে চলে গেল।
-” এই নিন।”
-” মনে মনে বকছেন আমায়?”
-” মোটেও না।”
-” এগুলো তে আবার এলার্জি নেই তো? পানি লবন সব আছে। ভাতও বেশী করে আনছি।”
নিঝুম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” কথায় কথায় খোঁটা দেন কেন?”
প্রিতম হেসে দিল।
-” সরি আর খোঁটা দিব না। ফ্লোরে বসে খাওয়া যাবে না একদম। টেবিলে বসে খেতে হবে।”
-” আপনার আম্মু আসে যদি।”
-” আমি তো আছি পাহারা দেওয়ার জন্য।”
নিঝুমের খুব হাসি পেল। হাসি চেপে বলল,
-” আচ্ছা।”
-” হাসি চাপিয়ে রাখতে হবে না প্রান খুলে হাসুন।”
প্রিতম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিঝুম টেবিলে বসে খাচ্ছে । সকাল বেলা মেয়ে টা কি পাগলামী ই না করল! খুব হাসি পাচ্ছে প্রিতমের।
-” একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন কেন?”
-” আপনার সকালের পাগলামীর কথা ভেবে।”
নিঝুম অনুনয়ের সুরে বলল,
-” কি পাগলামী করছি বলেন না?”
-” না কিছু না।”
জ্বরের ঘোরে কি সব করছি কে জানে! ধুর! এসব নিয়ে না ভাবাই ভালো। নিঝুম আবার খেতে শুরু করল।”
প্রিতম উদগ্রীব হয়ে বলল,
-” নিঝুম ভাত নিয়ে বেলকুনিতে যাও। আম্মু আসছে।”
চলবে….

#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_12
.
নিঝুম ভাত নিয়ে বেলকুনিতে দৌড় দিলো। এমন লুকোচুরি বিষয় গুলো কেন জানি খুব ভালো লাগছে। অন্য রকম একটা অনুভূতি।
প্রিতমের আম্মু রুমের কাছে আসতেই প্রিতম বলল,
-” আম্মু খুব ক্ষুধা লাগছে,চলো ডাইনিং রুমে চলো।”
-” আরে তোর প্রোবলেম কি হল তো? সেই কখন থেকে ডাকছি কোন সাড়া নেই।খুব অদ্ভুধ আচরন করছিস।”
-” উফ! আম্মু তুমি সব কিছু তে প্রোবলেম খুঁজো কেন বলো তো? আমি টিভি দেখতে ছিলাম তাই ডাক শুনি নি।
প্রিতম ওর মাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল।
-” বাবা কই?”
-” এই যে আমি হাজির।”
প্রিতম ভাত খেতে খেতে ওর বাবা কে জিঙ্গেস করল,
-” বাবা কবে যেন বলছিলা,অফিস একজন মানুষ লাগবে।”
প্রিতমের বাবা ব্যঙ্গ সুরে বলল,
-” আজকাল অফিসের জন্য মানুষও খুঁজিস?”
-” বাবা সব সময় আমায় নিয়ে ব্যঙ্গ করো কেন? আমার এক পরিচিত বড় ভাই বলল উনার এর রিলেটিভস এর চাকরির ব্যাপারে তাই জিঙ্গেস করলাম। সব কিছু কে আমায় নিয়ে মজা কর ধুর!”
-” প্রিতমের আব্বু তুমি সব সময় ওর কথা নিয়ে মজা কর। কখনো সিরিয়াস ভাবে নেও না। আমার ছেলে টা কে তোমার কি মনে হয় বলো তো?”
-” কি আর মনে হবে? অকর্মর ঠেকি মনে হয়। ”
-” আম্মু তুমি আব্বু কে কিছু বলবা?”
-” সকাল বেলা বাপ-ছেলে মিলে আমায় কি সব বলছো,আমি কি ভুলে গেছি?
প্রিতমের বাবা হেসে দিলো।
-” আচ্ছা চাকরির কথা যে বলছিস লেখাপড়া কতদূর। কাজে কেমন স্কিল তা জানিস?”
ইস রে! মেয়ে টার ঠিকানা ,লেখাপড়া এসব কিছুই জানা হলো না।
-” বাবা আমি তোমায় বিকালে জানাবো।”
-” এজন্যই তোমার ছেলের কথা নিয়ে ব্যঙ্গ করি। কিছু না জেনে চাকরির জন্য বলছে।”
-” জানে নি তো কি হয়েছে জেনে নিবে।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” আম্মু তুমি কিন্তু আমার পক্ষে কথা বলে ফেলছো।”
প্রিতমের মা-বাবা দুজন ই হেসে দিল।
-” তোর হয়ে কথা বলা তোর আম্মুর স্বভাব। তাই হয়তো মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে।”
খাওয়া শেষ করে প্রিতম রুমে গেল। মেয়ে টা বেলকুনিতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।
চেহেরার ভয়ের ছাপ।
-” কি ভয় পেয়েছেন?”
নিঝুম মাথা নিচুঁ করে বলল,
-” হুম । আপনার আম্মু যদি দেখে যেত আপনার অবস্থা খুব খারাপ হতো।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার মত পাহারাদার থাকতে ভয়ের কোন কারন নেই।আম্মু দেখলে আমার অবস্থা খারাপ হত কিন্তু আপনায় ছেলের বউ ভেবে নিয়ে খুব আদর করত। আম্মুর আবার ছেলের বউয়ের মুখ দেখার খুব শখ।
নিঝুম হেসে দিল। প্রিতম বলল,
-” হাসলে আপনায় ভালো লাগে। কাঁদলে পেত্নির মত লাগে। কখনো কাঁদবেন না আর। আচ্ছা কিছু প্রশ্ন করার ছিল?”
-” কি?”
-” প্রশ্নের কথা শুনে ভয় পেলেন মন হয়। তেমন কিছু না জিঙ্গেস করব না। আপনার চাকরির ব্যাপারে বাবার কাছে বলছিলাম ,বাবা আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে বলছে।”
-” আপনার বাবা জিঙ্গেস করে নি কার জন্য চাকরির কথা বলছেন?”
-” হুম জিঙ্গেস তো করছেই। বলছি আমার এক পরিচিত ভাইয়ের রিলেটিভস। জানেন আপনার জন্য এই কয় দিনে যত মিথ্যা কথা বলছি । আমার পুরো লাইফেও এত মিথ্যা বলি নি।”
নিঝুম মুচকি হেসে বলল,
-” তা তো বুঝছি। কি প্রশ্ন বলেন?”
-” আপনি কিসে পড়েন? ঠিকানা?”
-” আমি তো মোটেও লেখাপড়া করি নি। স্কুলের মুখ ই দেখি নি। ঠিকানা বরিশাল।”
-” জোক্সস করেন না বলেন কিসে পড়েন?”
-” আরে সত্যি আমি লেখাপড়া করি নি।”
-” তাহলে চাকরিও নেই।”
-” আপনার সাথে শর্ত ছিল চাকরি দিবেন। আমার এডুকাটেড হতে হবে এটা তো শর্তে ছিল না।”
-” লেখাপড়া ছাড়া চাকরি যুক্তিহীন কথা বললে তো চাকরি জুটবে না।”
-” লেখাপড়া জানি না কিন্তু চাকরি আপনার দিতে হবে।”
-” আচ্ছা আপনি বরিশাল থেকে ঢাকা আসছেন অত রাতে একা?”
-” হুম।”
-” বাহ! খুব সাহস তো দেখছি। ঢং না করে বলুন কিসে পড়েন।”
-” বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে অনার্স করছি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।”
-” দ্যাট’স গ্রেট। আমি অনেক চেষ্টা করছি বাট পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাই নি। শেষে বাপের টাকায় লাল বাতি জ্বালিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।”
-” আপনার লেখাপড়া কমপ্লিট?”
-” হুম। একটা সত্যি কথা কি জানেন?”
-” না বললে জানবো কিভাবে? ”
-” আমি ভাবছি আপনি হয়ত নাইন-টেন এ পড়েন।”
নিঝুম ফিক করে হেসে দিল।
-” হু ,সবাই ই আমায় দেখে তাই ভাবে ।”
-” জ্বী,আমিও ব্যতিক্রম না।”
-” আপনার একটা খারাপ অভ্যাস আছে জানেন?”
-” না বললে জানব কিভাবে? ”
-” আমার কথা আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছেন?”
-” হয়ত।”
-” আমি আপনার অনেক জুনিয়র তাও আপনি বলে সম্বোধন করছেন। আমায় কেউ আপনি করে বললে নিজের কাছে নিজেকে বুড়ি মনে হয়।”
প্রিতম ভেবে দেখল আসলেই তো এটা খারাপ অভ্যাস ।
-“আচ্ছা এখন থেকে তুমি বলব।”
-” আচ্ছা বলেন।”
-” তোমার আজকে ভাতে পেট ভরছে। লবন,পানি,এলার্জি সব ঠিক ছিল তো।”
দুজন ই হেসে দিল। প্রিতম বলল,
-” দেখুন,প্রিতম বার তুমি বলছি তো তাই আনইজি লাগছে ।”
-” আবার আপনি?”
-“ও সরি! তুমি।”
-” আচ্ছা আপনার লেখাপড়া তো কমপ্লিট,কি করছেন এখন?”
-” কি আর করব? বাবার বিশাল বড় ব্যবসা ,মাঝে মাঝে একটু অফিসে যাই। চাকরি বাকরি ওসব আমায় দিয়ে হবে না।”
-” আচ্ছা আমার চাকরি টা না হয় হলো,থাকবো কোথায়?”
-” আজকে 25 তারিখ,এক তারিখ বাসা খোঁজ করতে হবে।”
-” এত দিন থাকবো কোথায়?”
-” রাস্তায় থাকবেন।”
-” বললাম না রাস্তায় থাকতে আমার ভালো লাগে না।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” এই কয় দিন আমিই পাহারা দিয়ে রাখব। টেনশন করেন না।
প্রিতমের ফোন বেজে উঠল, নিঝুম কে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলল।
-” হ্যালো খালু কেমন আছেন?”
প্রিতমের খালু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-” ভালো আর কিভাবে থাকি তোর খালা আবার অসুস্থ হয়ে গেছে।তোর আম্মু ফোনে কতবার ফোন দিলাম রিসিভ করল না। তোর আম্মুর কাছে ফোন টা দে তো।”
-” আচ্ছা দিচ্ছি। খালামনি এখন কোথায়?”
-” হসপিটালে।”
প্রিতম ওর মায়ের কাছে ফোন টা দিয়ে আবার রুমে চলে আসল। নিঝুমের কাছে গিয়েই বলল,
-” আমার খালামনি অসুস্থ তাই খালু ফোন দিয়েছে ।”
নিঝুম হেসে দিয়ে বলল,
-” আমি কি জিঙ্গেস করেছি কে ফোন দিছে?”
প্রিতম সত্যিই লজ্জা পেল সত্যিই তো নিঝুম তো আমায় কিছু জিঙ্গেস করে নি হুদাই বলতে কেন গেলাম?
নিঝুম আবার বলল,
-” কি থেমে গেলেন কেন?”
-” আপনি তো কিছু জিঙ্গেস করেন নি কি বলল তো?”
-” আপনি বার বার আমার কথা আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছেন।”
-” কি হয়েছে আপনার খালামনির?”
-” আমার খালাতো ভাই এক বছর আগে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছে। একটাই ছেলে। শোক কাটিয়ে উঠতে পারে নি এখনো ।সেই থেকে বার বার অসুস্থ হয়ে যায়।”
নিঝুম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-” হুম বুঝছি। সন্তান হারানোর শোক কখনো কাটিয়ে উঠা যায় না।”
প্রিতমের আম্মুর ডাক আসল আবার। প্রিতম ওর মায়ের রুমে গেল।
প্রিতমের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
-” তোর খালা আবার খুব অসুস্থ হয়ে গেছে আমি আর তোর বাবা সেখানে যাচ্ছি ।”
-” আম্মু তুমি কেঁদো না তো। খালামনি সুস্থ হয়ে যাবে। আমি কালকে অফিস শেষে গিয়ে খালামনি কে দেখে আসব।”
-” হুম যাস। আর শোন আমি দুই-চার দিন থাকবো।”
-” তা না হয় থেকো।”
প্রিতমের মা-বাবা হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো। প্রিতম রুমে বসে মন খারাপ করে বসে আছে। ওর খালাতো ভাই ওর বয়সি ছিলো। খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ছিলো। আল্লাহ্ কখন কাকে নিয়ে যায় কেউ জানে না।প্রিতমের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
-” আপনার মা-বাবা আপনার খালার বাসায় গেছে?”
-” খালার বাসায় না হসপিটালে গেছে।”
-“ও। মন খারাপ আপনার?”
-” হুম। আমার কোন ভাই-বোন নেই। আমিই একা। খালারও আর কোন সন্তান নেই। আমরা দুই জন আপন ভাইয়ের মতই ছিলাম। হঠাৎ করে সব শেষ হয়ে গেল।”
-” হুম প্রিয়জন হারানোর শোক টা সহজে ভুলা যায় না।”
-” মা-বাবা তো বাসায় নেই।তুমি পাশের রুমে থেকো। আর খুব বন্দি অবস্থায় ছিলে তাই না? ছাদে যাও মন ভালো হয়ে যাবে। আমার শখের বাগান আছে ছাদে । ”
-” আমার লুকোচুরি খেলা টা মজাই লাগছে।”
প্রিতম কষ্টের মাঝেও হেসে দিলো । হুম সব কিছুতে ভিন্ন রকম ভালোলাগা আছে। শুধু খুঁজে নিতে হয়।
নিঝুম ছাদে গিয়ে দেখে সত্যিই অনেক সুন্দর। নিঝুম বিস্ময় চোখে জিঙ্গেস করল,
-” এত্ত ফুল?”
-” হুম। আরও ফুল ছিল। আব্বু ফুল গাছ কেটে সবজির চাষ করছে। আব্বুর সবজি আমার ফুল। আমিও মাঝে মাঝে আব্বুর সবজি গাছ কেটে ফুলের চারা লাগাই।এ নিয়ে তো তুমুল বেঁধে যায়।”
নিঝুম হেসে দিয়ে বলল,
-” ফুলের চেয়ে সবজিই ভালো।”
-” খবরদার আমার ফুল গাছ নিয়ে রাজনীতি কর না। আমার মন খারাপ থাকলে এখানে আসলে মন ভালো হয়ে যায়। আমার মন খারাপের সঙ্গী এরা।”
সত্যি অনেক সুন্দর! লোকটা সৌখিনও বটে। এত ফুল গাছ নিঝুম ঠিক করে নামও জানে না।”
-” জানো এই ফুল চারা আমি কত জায়গা থেকে কত ভাবে সংগ্রহ করেছি?”
নিঝুম হেসে বলল,
-” আমি তো নামও জানি না ঠিক ভাবে।”
প্রিতম বলল,
-“ও,তোমার জন্য একটা সুখবর আছে।”
নিঝুম অবাক হয়ে বলল,
-” আমার জন্য আবার কি সুখবর?”
-“তোমার চাকরি হয়ে গেছে। কাল থেকে অফিসে যেয়ো।”
-” এটা তো আপনার জন্য সুখবর ।”
প্রিতম ভ্রুকুচকে জিঙ্গেস করল ,
-” মানে? ”
-” মানে হলো আপনি দুইটা শর্ত পূর্ন করতে পারলে আমি আপনার বাসা থেকে চলে যাবো ,একটা পূর্ন হয়েছে এটা তো আপনার জন্যই সুখবর।”
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here