#সেই_রাতে,পর্ব_1,2
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_1
.
“এই যে শুনছেন?’ প্লীজ আমায় একটু হেল্প করেন!”
মেয়েলি কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালো প্রিতম। রাত 2 টা বাজে। এত রাতে একটা মেয়ে তাও আবার কালো বোরকা ,কালো হিজাব,হাত মোজা ,পা মোজা পরা। হাতে বড়সড়ো একটা ব্যাগ। কিছু টা বিগড়ে গেল প্রিতম।
-“কি হেল্প করব আপনায়?’ আর এত রাতে একটা মেয়ে মানুষ রাস্তায় কেন এই বেশে?”
-“আমি অনেক বিপদে পরছি প্লীজ কোথাও আজকে রাত টা থাকার ব্যবস্থা করে দেন?”
কান্না ভেজা কন্ঠে বলল ।
-“প্লীজ কান্না থামান মানুষ দেখলে বাজে ভাব্বে। এত রাতে একটা ছেলের কাছে হেল্প চাচ্ছেন আজব মেয়ে আপনি!”
-“বিপদে পরলে মানুষ আজব ই হয়ে যায়।”
-” আজব হন আর যা ই হন আমি আপনাকে কোথায় থাকার ব্যবস্থা করে দিব বলেন?’
-“আপনার বাসায় আজ রাত টা থাকা যাবে?বিশ্বাস করেন সকালে চলে যাব।”
-“এই মেয়ে তোমার কমন সেন্স আছে। এত রাতে মেয়ে নিয়ে বাসায় গেলে আব্বু- আম্মু আমায় কুইট্টা লবন দিবে।”
-” আমায় কোন ভাবে হেল্প করা যায় না?”
-“হেল্প হেল্প করতেছেন এত রাতে বাসা থেকে বের হইছেন কেন?’ ঠিকানা কোথায় আপনার। বাসার ঠিকানা দেন আমি বাসায় পৌঁছে দেই।”
-” বাসায় যাওয়ার হলে আর এত রাতে রাস্তায় থাকতাম না! আমার পরিবারে আপন কেউ নেই। সৎ মা ,বাবা নেই। ”
-” তাহলে আমি হেল্প করতে পারনা না।”
হাটতে শুরু করল প্রিতম। মনের ভেতর খচখচ করতে লাগল। মেয়ে টা হয়তো খুব বিপদে পরছে। নয়তো কি অপরিচিত কারো কাছে এত অনুরোধ করে? এখন তো রাস্তায় বখাটে দের অভাব হবে না যদি মেয়ে টার কিছু হয় ।
এই ভেবে আবার পিছেন হাটতে লাগল।
“আরে এখানেই তো ছিল মেয়ে টা কই গেল? আশে-পাশে খুজতে লাগল। দেখে মেয়ে টা দেয়ালের আড়ালে বসে আছে।
-” এই যে শুনছেন?”
আমচকা কারো ডাক শুনে হকচকিয়ে উঠে মেয়ে টা। দেখে ওই ছেলে টা আবার আসছে।
-“আপনি আবার কেন আসছেন?”
-“আপনায় নিতে আসলাম। ইচ্ছা হলে আমার সাথে চলেন । রাত টা থেকে সকালে চলে এসেন”
মেয়ে টা কেদেঁই চলছে।
-“প্লীজ কান্না থামান চলেন আমার সাথে! ”
-“বিশ্বাস করেন আমার মনে কোন কু-মতলব নেই। আমি সকালে ই চলে আসব!”
-“আমি কি বলছি আপনার মনে কু-মতলব আছে।”
হাটতে শুরু করল দুজন।
-“আমার ব্যাগ টা একটু আপনার হাতে নিবেন?”
-” কেন? কেন? আজব মেয়ে তো আপনি,আপনার ব্যাগ টানাবেন আমায় দিয়ে!”
-” এভাবে বলছেন কেন?”থাক লাগবে না!”
-“হইছে,দেন আমার আছে।
ওরে বাবা,এত্ত ওজন কেন ব্যাগ। এই আপনি কি বাসা থেকে পালিয়ে আসছেন?”
-“হুম!”
মাথা নিচুঁ করে।
-” কেন পালিয়েছেন?” সেই কখন থেকে কেদেন যাচ্ছেন প্লীজ কান্না থামান!”
-“আমার মতো বিপদে থাকলে আপনিও কাদতেন। আমার সৎ মা আমার ঠিক করছে একজন বুড়ো মানুষের সাথে। উনার চার টা বাচ্চা আছে। বউ আছে দুই টা। পালিয়ে না আসলে ওই বুড়ো মানুষ টার সাথে বিয়ে হয়ে যেত!”
-“পালিয়ে আসলেন থাকবেন কোথায় সেটা ভাবেন নি? আত্মীয়- স্বজন কেউ আছে এখানে?”
-“আত্মীয়-স্বজন থাকলে কি নিলর্জের মতো আপনার হেল্প চাইতাম।”
-“আজব মেয়ে তো আপনি থাকা- খাওয়ার জায়গা নেই অথচ বাসা থেকে পালিয়ে এসছেন?” যাই হোক সেটা আপনার ব্যাপার। নাম কি আপনার?
-” উম্মে আয়শা নিঝুম!” আপনার?
-“সাদমান প্রিতম।”
-“আচ্ছা আমি কি আপনার বাসায় থাকব আজকে রাতে?”
-“বাসায় না তো জঙ্গলে থাকবেন? আমায় বিশ্বাস না হলে রাস্তা মাপেন।”
-” বিশ্বাস না হলে কি হেল্প চাইতাম?” আপনার বাবা-মা যদি কিছু বলে?”
-” বাবা-মা এখন মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। যে ভাবে হোক ম্যানেজ করব আপনার ভাবতে হবে না।”
-” আমি আর হাটতে পারছি না। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে গাড়ি ডাকলে ভালো হত!”
-“বাসার সামনে এসে গাড়ি খুজেঁন? ”
-“মানে?”
-“মানে ,আপনি এখন আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছেন। আপনি একটু আড়ালে দাড়ান আমি দেখে আসি বাবা-মা ঘুমাইছে কিনা ।”
-“আচ্ছা।”
বাসার ভিতরে ঢুকল প্রিতম। বাবা-মা ঘুমিয়ে গেছে। যাক আল্লাহ রহমত করছে।
-“এই আসেন,আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে হাটবেন কোন শব্দ যেন না হয়।”
-“আচ্ছা।”
-“এই আপনার পায়ে কি পায়েল পরছেন? ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে।”
-“হ্যা মোজার নিচে পায়েল। আমি খুলে ফেলছি ওয়েট।”
-” বাব্বাহ,মোজার নিচে পায়েল!”
.
চলবে…….
#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_2
.
প্রিতম আর নিঝুম আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে বাসার ভেতর প্রবেশ করল। যাতে কেউ টের না পায় । প্রিতম রুমের ভেতর ঢুকে দরজায় ছিটকানি লাগিয়ে দিল। হাফ ছেড়ে বাচল । মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করছে।
প্রিতম ফিসফিস করে নিঝুমের উদ্দেশ্যে বলল,
-“কোন রকম শব্দ করবেন না।আর এটা আমার রুম।আজকে রাতে এখানে ই থাকবেন ।
নিঝুম কান্না ভেজা ফাপা ফাপা কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আপনি কোথায় থাকবেন?”
-“আমি কোথায় থাকব মানে? আমিও রুমে থাকব। আপনি খাটে ঘুমাবেন আর আমি সোফায়। হাজার হোক আপনি আমার অতিথি,অপ্রত্যাশিত অতিথিও বলতে পারেন। অতিথির আপ্যায়ন না করলে আল্লাহ আমায় পাপ দিবে।”
-“না,না আপনি খাটে ঘুমান । আমি সোফায় ঘুামাবো। এমনিতেই আপনায় অনেক বিরক্ত করছি।”
-” বিরক্ত করেন নি ঝামেলায় জড়াইছেন। বাবা-মা টের পেলে কি হবে সেটা আল্লাহ ই জানে। আচ্ছা আপনি সেই কখন থেকে কেদেই যাচ্ছেন ,প্লীজ কান্না থামান।”
-” হুম।”
-“কি হুম?” আপনি মনে হয় অনেক ক্লান্ত। আপনি কি পর্দা করেন? পর্দা করলে বোকরা হিজাব এসব চেঞ্জ করার দরকার নেই ।”
-” না চেঞ্জ করব। অনেক ক্লান্ত লাগছে ।”
-” আচ্ছা আপনি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন । আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি সোফায় শুয়ে পরছি। আপনি খাটে শুয়ে পরেন ফ্রেশ হয়ে।
-“হুম।”
-” আর শুনেন সকালে কেউ দরজা নক করলে দরজা খুলবেন না। দরজা নক করলে আপনি ওয়াশরুমে চলে যাবেন। আর আপনার ব্যাগ টাও খাটের নিচে রাখেন।
-“আচ্ছা ।”
-” কোন মেয়েলি জিনিস পত্র রুমে রাখবেন না ভুলেও। সব ব্যাগে গুছিয়ে রাখেন। কালকে সকালে চলে যাবেন কিন্তু। দেখতে ই তো পাচ্ছেন কত্ত রিস্ক ।”
-“হুম চলে যাব।”
-” আমার বউ তার বাপের বাড়ি গেছে। কালকে দুপুরে চলে আসবে। এসে যদি আপনায় এই রুমে দেখে তাহলে একদম খুন করবে।”
-” কি আপনার বউ আছে??”
-“কেন আমার বউ থাকা কি অস্বাভাবিক কিছু?”
-“না,সেটা বলি নি?”
-“যা ই বলেন । যান ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরেন আমার খুব ক্লান্ত লাগছে এখন ঘুমাবো। রাত প্রায় 3টা বেজে গেছে। সকালে উঠে আবার অফিসে যেতে হবে!”
নিঝুম ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেল । প্রিতম সোফায় শুয়ে পরল।
লোক টা কত ভালো! আমার জন্য কত রিস্ক নিল । এমন ভালো মানুষও এই যুগে আছে? লোক টার ভেতরে খারাপ কোন দৃষ্টিভঙ্গি নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে জামা- কাপড় বের করে বোরকা ,হিজাব,হাত মোজা- পা মোজা সব খুলে ব্যাগের ভেতর রেখে ওয়াশ রুমে চলে গেল!
ওয়াশ রুমে ডুকে তাড়াহুড়া করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। খুব ক্ষুদা পেয়েছে। কালকে দুপুরে ভাত খেয়েছে এখন পর্যন্ত এক ফোটা পানিও মুখে দেই নি। আবার খুব কান্না পাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কান্না করলে বুকের ভেতর টা হালকা হত।
এমন টা হবে নিঝুম কখনো ভাবতেও পারে নি। আজকের এই রাত টা হয়তো কখনও ভুলতে পারবে না। বুকের ভেতর দাগ কেটে থাকবে । লোক টার কালকে বউ দুপুরে সকালে চলে আসবে। সকালে ই চলে যেতে হবে কিন্তু কোথায় যাবে? তার জন্য যে সব দুয়ার বন্ধ। মাথার ভেতর প্রচন্ড পেইন হচ্ছে। ক্ষুদার জ্বালা সহ্য হচ্ছে না। এখন কি লোক টা কে ডাকা ঠিক হবে?
অনেক বিরক্ত করছি উনাকে। খাটের উপর বসে রইল। ব্যাগেও খাবার কিছু নেই । লোক টা মাত্র শুইলো। খুব ক্লান্ত বোধহয় উনি। এখন ডাকলে কি রকম রিয়েক্ট করবে কে জানে?
যে রকম রিয়েক্ট করার করুক। বিপদে পরলে সব রকম সব রকম রিয়েক্ট সহ্য করতে হয়। বিপদ টা নিজের ভুলের কারনে হয়েছে তাই সব রকম পরিস্থিতি নিজের ই ফেস করতে হবে!
প্রিতমের কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
-“এই যে শুনছেন?”
বেশী জোরেও কথা বলা যাবে না। আবার বলল,
-“এই যে শুনছেন একটু উঠেন প্লীজ! ”
ধুর! উনি উঠছে না। এইটুকু সময়ের ভেতর এত গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল? না এভাবে উঠবে না উনি। অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
প্রিতমের পায়ের কাছে গিয়ে পায়ের তলায় হালকা করে সুড়সুড়ি দিলো। প্রিতম সাথে সাথে হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠল।
-“এই কে,কে?”
-” চুপ! আমি নিঝুম।”
কিছুটা বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল,
-” ও আপনি! এতক্ষন তো বোরকা,হিজাব পরা ছিলেন তাই চিনতে পারি নি।”
-” খুব বিরক্ত হচ্ছেন তাই না? জানেন আমি কালকে রাতে ভাত খেয়েছি,এখন পর্যন্ত একটু পানিও মুখে দেই নি। ক্ষুধার জ্বালায় ঘুমাতে পারছি না। যদি কিছু খেতে দিতেন?”
মেয়ে টার মুখ টা একদম শুকিয়ে আছে। চোখ গুলো ফুলে গেছে। নাকের ডগায় ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু। কি মায়া মেয়ে টার ভেতর? এত মায়াবী মানুষ কি করে হয়? খুব মায়া হলো মেয়ে টার প্রতি।
-” আচ্ছা আপনি বসুন ,আমি ডাইনিং রুম থেকে খাবার নিয়ে আসছি।”
হাফ ছেড়ে বাচল নিঝুম । না লোক টা খুব বেশী ভালো। কি ধৈর্য্য!! জগৎ টা এত বেশী বৈচিত্রময় কেন?
কিছু কিছু মানুষ নর্দমায় ময়লা আবর্জনার চেয়েও খারাপ। আর কিছু কিছু মানুষ খুব বেশী ভালো ।
.
চলবে…..