#সেই_রাতে,পর্ব_13,14
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_13
.
জ্যোৎস্নার আলো তে ছাদের পরিবেশটা আরো মনোরম লাগছে। জ্যোৎস্না নিঝুমের প্রিয় আর জ্যোৎস্নার আলোয় আলোকিত ফুল গাছ প্রিতমের ভালো লাগে।
– “আপনার জ্যোৎস্না রাত ভালো লাগে না?”
-” হুম জ্যোৎস্না যখন আমার ফুল গাছের পড়ে তখন ভালো লাগে।”
-” এছাড়া ভালো লাগে না?”
-” কখনো জ্যোৎস্নার আলো তে ভালোলাগা খুঁজি নি তাই হয়ত ভালোলাগা খুঁজে পাই না। তোমার তো জ্যোৎস্না রাত খুব প্রিয় তাই না?”
-” শুধু প্রিয় না অনেক অনেক প্রিয়। গায়ে জ্যোৎস্নার আলো মাখাতে আমার খুব ভালো লাগে ।”
জ্যোৎস্নার আলোতে মেয়েটা কে খুব বেশী মায়াবী লাগছে। চুল গুলো খোলা। বাতাসে উড়ছে। ওর চোখের চাহনিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।এত অল্প সময়ের ভেতর একটা মানুষ কে এত বেশী ভালো লাগতে পারে কিভাবে? একদম জ্যোৎস্না পরী মনে হয়।
-” হুম তুমিও জ্যোৎস্না কে ভালোবাসো জ্যোৎস্নাও তোমায় ভালোবাসে।”
নিঝুম অবাক হয়ে জিঙ্গেস করল ,
-“জ্যোৎস্না আবার মানুষ কে ভালোবাসে কিভাবে? ”
-” তোমায় তো চাঁদের আলোতে জ্যোৎস্না পরী মনে হচ্ছে। ভালো না বাসলে কি এত সুন্দর লাগতো?”
নিঝুম খানিকটা লজ্জা পেল। কেউ যদি সামনে বসে প্রশংসা করে তখন নিঝুমের সব চেয়ে বেশী অস্বস্তৃি লাগে । প্রসংশার বদলে সৌজন্যমূলক ধন্যবাদ জানাতে ওর ভালো লাগে না ।
-” কি হলো থেমে গেলে কেন? ”
নিঝুম মুচকি হেসে বলল,
-” জ্যোৎস্নার আলোতে আপনায় ভুত এর মত লাগছে।”
-” আমি তো আর জ্যোৎস্না কে ভালোবাসি না যে আমায় পরীর মত লাগবে ।”
নিঝুম খিলখিল করে হেসে দিল।
-” আপনি জ্যোৎস্না পরী হতে যাবেন কেন আপনি জ্যোৎস্না জ্বীন।”
প্রিতম এবার না হেসে পারল না ।
-” তুমি তো বেশ মজা করতে পারো।”
-” জানেন আমার ইচ্ছা আমার এমন একটা ঘরে বিয়ে হবে যেখানে ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্নার আলো আসবে ।”
-” তোমার ইচ্ছা গুলো তো অদ্ভুধ । ওই যে একটা গান আছে না,”আমার ভাঙ্গা ঘরে , ভাঙ্গা চালা ,ভাঙ্গা বেড়ার ফাকে অবাক জোসনা ঢুইকা পরে হাত বাড়াইয়া ডাকে ।”
-” জ্বী গান টা আমার ভালো লাগে। আপনি তো বেশ ভালোই গান করতে পারেন।”
-“দেখুন আমার সামনে বসে আমার প্রসংশা করলে ঘুষি মেরে টার নাক ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে।”
নিঝুম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” আমারও তাই ইচ্ছা করে যখন কেউ বলে,” আমায় নাকি জ্যোৎস্না পরীর মত লাগে।”
দুই জনই হেসে দিল। এত ভালো লাগে কেন ওর কথা গুলো?
প্রিতম বলল,
-“তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে ওই রাতে চলে গেলেই পারতা। রাস্তায় থাকার কি দরকার ছিল ।”
নিঝুম বুঝতে পারলো প্রিতম সিস্টেম করে ওর বয়ফ্রেন্ডের কথা জানতে চাইছে।
-” বয়ফ্রেন্ড থাকলে তো যাবো।”
প্রিতম অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-” কি বলো তোমার মত সুন্দরী মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই?”
-” আবার সুন্দরী বললেন? নাক ফাটিয়ে দিব ঘুষি মেরে।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” সরি,তোমার মত পেত্নি মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই?”
-” পেত্নি দেখে ভয় পেয়ে চলে গেছে।”
-” আরে বাবা ফ্রেন্ড হিসেবে শেয়ার করতে পারো।”
-” ছিল এখন নেই। কোন এক অজানা কারনে সে চলে গেছে ।”
-” কি কারন?”
-” তা আমিও জানি না । আই মিন জানার মত সুযোগ হয় নি। আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই?”
-” তোমার মত অবস্থা। ছিল এখন নেই। সেও চলে গেছে। শুধু বলে গেছে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। কারন টা জানার সুযোগ হয় নি।”
-” দুই জনই ছ্যাকা খেয়েছি তাই না?”
প্রিতম হেসে বলল,
-” হুম খাইছি তো। প্রচন্ড রকমের ভালোবাসতাম। এখন আর মনেও পড়ে না। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। মনে করতেও চাই না। প্রতারক কোথাকার।”
প্রিতম খেয়াল করে দেখল নিঝুমের চোখে পানি টলমল করছে । চোখে পলক পড়লেই পানি ফোটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরবে।
-” এই কি হলো নিঝুম? তোমার চোখে পানি কেন? কান্না করতে না করছি না তোমায়, একদম পেত্নির মত লাগে কান্না করলে। যে তোমায় ছাড়া ভালো আছে তুমি কেন তাঁর জন্য চোখের পানি ফেলবে। চোখের পানির দাম দিতে শিখো।”
চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই নিঝুম মুছে ফেলল।
-” ঘুমাবেন না? অনেক রাত হয়েছে।”
প্রিতম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে 12 টা বেজে গেছে।
-” ইস 12 টা বেজে গেছে খেয়ালই নেই। তোমার সাথে কথা বললে কিভাবে যে টাইম কেটে যায়।”
প্রিতম রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। নিঝুম পাশের রুমে শুয়ে আছে। চোখে ঘুম নেই ।প্রিতম শুয়ে শুয়ে ভাবছে এত ভালো লাগে কেন মেয়ে টারে? ওর সবকিছু ভালো লাগে । বিশেষ করে কথা বলার ভঙ্গি টা।
.
সকাল ৪টা বেজে গেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা এক টুকরো রোদের আলোতে ঘুম ভেঙে গেছে প্রিতমের । নিঝুম এখনো ঘুম থেকে উঠে নি? ফ্রেশ হয়ে নিঝুমের রুমে গেল। ওর মুখে সকালের মিষ্টি রোদের আলো পরছে। জ্যোৎস্নার আলো,সকালের মিষ্টি রোদে সব কিছুতেই মেয়ে টা কে ভালো লাগে। জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। মুখে বার বার চুল পড়ছে।প্রিতমের ইচ্ছা করছে চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে। মেয়ে টা খারাপ ভাব্বে। নিজেকে সামলে নিলো প্রিতম ।
-” নিঝুম উঠো সকাল হয়ে গেছে। অফিসে যাবা না? ”
কোন সাড়া নেই। এই মেয়ে টা একদম মরার মত ঘুমায়। প্রিতম ওর পায়ের তলার সুড়সুড়ি দিলো। তাড়াতাড়ি উঠে বসল নিঝুম ।
-” কি ভয় পেয়েছো?অফিসে যাবা না?”
নিঝুম ঘুম জড়ানো চোখে বলল,
-” ইস! ভুলেই গেছি।”
-” এই নেও তোমার কফি।”
নিঝুম বিস্মিত হয়ে জিঙ্গেস করল,
-” কফি কে বানিয়েছে?
-” অবাক হওয়ার কি আছে? তুমি আমার অতিথি ,তোমার যত্ন তো করতেই হবে। ”
নিঝুম মুচকি হেসে বলল,
-” বাব্বাহ! কি যত্ন।”
-” হুম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও অফিসে যেতে হবে।”
দুজন ফ্রেশ হয়ে খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
-” আমি কি আপনার সাথে যাব?”
-” তো কার সাথে যাবা?”
-” আপনি অফিসের বস আপনার সাথে গেলে লোকে কি ভাব্বে? আমি অন্য গাড়ি তে করে যাবো আপনি যান।”
-” উফ নিঝুম! এত বেশী বুঝতে নেই উঠো তো।”
শেষ পর্যন্ত প্রিতমের জোড়াজুড়ি তে গাড়ি উঠতে হলো।
নিঝুম বারবার এদিক- সেদিক তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাউকে তাঁর চোখ দুটি হন্য হয়ে খুঁজে ফিরছে। কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা না পেয়ে চোখ দুটি ক্লান্ত।
-” এদিক -সেদিক করছো কেন? কাউকে খুঁজছো মনে হচ্ছে।”
নিঝুম মুচকি হেসে বলল,
-” না কাকে আর খুঁজব।এমনিই দেখছিলাম।
দুজনেই আনমনে কি যেন ভাবছে। নিরবতা ভেঙে প্রিতম বলল,
-” নিঝুম ফুসকা খাবে? ”
-” কেউ আমায় ফুসকা সাধলে না করি না।”
প্রিতম গাড়ি থামিয়ে বলল,
-” তুমি গাড়িতে বসো। আমি ফুসকা নিয়ে আসছি।”
-” না,না আমিও যাব। আমি ওখানেই বসেই ফুসকা খাবো । গাড়িয়ে আমার ভালো লাগে না। ”
নিঝুম 5 প্লেট ফুসকা খেয়ে ফেলছে। প্রিতম হা করে তাকিয়ে আছে। ও এখন পর্যন্ত এক প্লেটই শেষ করতে পারে নি।
-” কি ভয় পেলেন নাকি? আমি কিন্তুু আরও খাবো ।”
-“যত ইচ্ছা খাও তা নিয়ে ভয় পাচ্ছি না। ভয় তো পাচ্ছি তোমার খাওয়া দেখে।”
নিঝুম ফিক করে হেসে দিলো ।
-” আর খাবো না চলেন।
গাড়ির কাছে গিয়ে নিঝুম বলল,
-” এখন আমি ড্রাইভ করব।”
প্রিতম হেসে দিলো।
-” হাসেন কেন? আমার ড্রাইভ করতে ভালো লাগে।”
-” ফাজলামি কর?”
-” ধুর! ফাজলামি না সিরিয়াস ।”
প্রিতম অবাক হয়ে জিঙ্গেস করল,
-” সত্যি তুমি ড্রাইভ করতে পারো?”
-” অবার হওয়ার কি আছে ড্রাইব করা কি অসাধ্য কিছু নাকি?”
-” এই টুকু মেয়ে নাকি ড্রাইভ করতে পারে। ”
-” আমি সবই পারি।”
প্রিতমের বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়ে টা তো আসলেই ট্যালেন্ট।
-” নিঝুম তুমি আমার থেকে ভালো ড্রাইভ জানো ।”
নিঝুম একটু হেসে বলল,
-” ড্রাইভিং এর সময় কথা বলতে নেই। মাইন্ড অন্য দিকে চলে গেলে প্রোবলেম ।”
বাহ! ড্রাইভিং বিষয়ে ভালোই সিরিয়াস । কিছুক্ষন নিরাবতা বিরাজ করল। নিঝুম একদম ড্রাইভার দের ভার নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল।
প্রিতম একটু মজা করে বলল,
-” যদি অনুমতি দেন একটা কথা বলতাম।”
নিঝুম মুচকি হেসে বলল ,
-” বলুন।”
-” অফিসের কাছে এসে গেছি গাড়ি কি থামাবেন না?”
নিঝুম এবার খিলখিল করে হেসে দিলো । প্রিতমও হেসে দিল ।
নিঝুম বলল,
-” আপনি পারেনও বটে।”
চলবে…
#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_14
.
প্রতিদিন অফিসে গিয়ে খুব ভালোই সময় কাটছে নিঝুমের। নিঝুম আর প্রিতমের বিষয় টা নিয়ে অফিসের সবাই সন্দেহ করছে। করলে করুক তাতে প্রিতমের কিছু এসে যায় না! নিঝুমের প্রতি ওর অন্যরকম টান,মায়া কাজ করে। খুব বেশী আপন মনে হয় মেয়ে টাকে । নিঝুম প্রতিদিন লেট করে ঘুম থেকে উঠে। প্রিতমেরও অবশ্য ওর ঘুম ভাঙাতে বিরক্ত লাগে না।পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিলেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে পরে। সারা দিন ডাকলেও উঠে না।
প্রতিদিন রাতে অনেক রাত অব্দি দুজনে গল্প করা অভ্যাস হয়ে গেছে। নামহীন কি সুন্দর সম্পর্ক।
-” তুমি অত বেলা পর্যন্ত ঘুমাও কেন?”
-” ঘুমাতে ভালো লাগে তাই। কালকে ভোরে যদি আপনি আমার পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দেন তাহলে কিন্তু কান্না করব।”
-” সুড়সুড়ি থেরাপি ছাড়া তো আপনার ঘুম ভাঙে না। ”
দুই জনই হেসে দিলো । নিঝুম বলল,
-” সুড়সুড়ি থেরাপির আবিষ্কারক কে বলেন তো? ”
-” কে আবার আমি।”
-” ইস! মোটেও না।যেদিন রাতে প্রথম আপনার বাসায় আসছি ওইদিন আপনার ঘুম ভাঙাইছি পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিয়ে ।
সেদিন রাতের কথা মনে পরতেই দুজন হেসে দিল।
-” সুড়সুড়ি থেরাপির আবিষ্কারক তাহলে নিঝুম।”
-” প্রতিদিন আপনি আমায় খোঁটা দেন ঘুম ভাঙানো কালকে আমি আপনার ঘুম ভাঙাবো দেখেন।”
-” অনেক রাত হয়েছে এবার শুয়ে পড়ো।”
সময় গুলো বেধে রাখতে ইচ্ছে করছে প্রিতমের । এত টা মায়ায় জড়িয়ে যাবে প্রিতম কখনও ভাবে নি। নিঝুম কি আমায় ফিল করে না?
এসব ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল প্রিতম । নিঝুম সেই চিরচেনা নম্বর টি তে ফোন দিচ্ছে বারবার। ওপাশ থেকে শুধু মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে,’আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বর টি তে এই মুহূর্তে সংযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না’
ফোনটা অফ জেনেও প্রতিদিন কল দিয়ে যায় নিঝুম। একবার না অসংখ্য বার। এতই কি ঠুকনো ছিলো আমার ভালোবাসা? এভাবে ঠকাতে হলো।
রাত 2 টার সময় ঘুম ভেঙে যায় প্রিতমের। নিঝুম কে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে খুব বেশী ভালো লাগে। একদম নিষ্পাপ লাগে।ওর এলোমেলো চুল গুলো যখন মুখে লেপ্টে থাকে তখন আরও ভালো লাগে।
প্রিতম আস্তে আস্তে নিঝুমের রুমের কাছে গিয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। একদম ঘুমন্ত পরী। কিছুক্ষন পর আবার রুমে চলে গেল। আজকাল আনমনে নিঝুম কে নিয়ে ভাবতে খুব বেশী ভালো লাগে। প্রতিদিন নিঝুমের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় প্রিতম ।
সকাল 8 টা বাজে। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা রোদের আলো চোখে পড়লেই ঘুম ভেঙে যায় প্রিতমের। নিঝুম এখনও ঘুম থেকে উঠে নি? নিঝুমের রুমে গিয়ে দেখে এখনও ঘুমাচ্ছে।
-” নিঝুম উঠো।”
হাজার বার ডাকলেও উনি উঠবে না। শেষ পর্যন্ত পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিতেই ঘুম থেকে উঠে যায় নিঝুম ।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
-” আর একটু ঘুমাই?”
-” কেউ একজন বলছিলো আজকে আমার ঘুম ভাঙাবে নাকি ।”
প্রিতমের কথা শুনে ফোনের স্কিনের দিকে তাকায় নিঝুম । 6 টার এলার্ম দেওয়া ছিলো এলার্ম বাজলো না কেন?
-” আমি তো এলার্ম দিয়ে রাখছিলাম রাতে।”
প্রিতম ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফোন সাইলেন্ট করা। প্রিতম হাসতে হাসতে খুন। নিঝুম কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে প্রিতমের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে উনি হাসছে কেন?
-” এই আপনি হাসছেন কেন বলেন না?”
-” এলার্ম দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রাখছো।”
নিঝুম ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই ফোন সাইলেন্ট করা। একটুও খেয়াল ছিলো না। নিঝুম নিজেও হেসে দেয়।
প্রিতম বলল,
-” ব্যাপার টা খুব ভালো লাগছে।”
নিঝুম গাল ফুলিয়ে বলল,
-” এটা নিয়ে কিন্তুু একদম আমায় পচাতে পারবেন না।”
-” ফরমালিন মেখে রাখো গায়ে তাহলে আর পচবে না।”
ধুর! লোক টার সাথে কথা বলে পারা যায় না।
-” আপনার দরকার হলে আপনি মাখেন। আগে আপনার খালার কি অবস্থা?”
-” একটু ভালো। যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও।”
নিঝুম কিছুক্ষন পরে দুই মগ কফি নিয়ে প্রিতমের রুমে গেল।
-” প্রতিদিন তো আপনি কফি বানান আজকে আমি বানালাম।”
প্রিতম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক চুমুক খেয়ে দেখল, সত্যিই অনেক ভালো হয়েছে কফি টা। মেয়েটা সব কিছুতেই এক্সপার্ট।
-” সত্যি নিঝুম অনেক ভালো হয়েছে কফি টা। আমার লাইফের বেষ্ট কফি।”
-” একটু বলে ফেলছেন। আমি জানি আমি ভালো কফি বানাই তার জন্য এত টা না ।”
-” হুম এর চেয়েও বেশী সিরিয়াস ।”
-” সামনে বসে প্রসংশা করলে যেন কি করতে হয়?”
প্রিতম হেসে বলল,
-” নাকের উপর ঘুষি দিতে হয়। দিবা?”
-” ইস! চলেন ছাদে যাই আপনার ফুল গাছের পরিচর্যা করতে।”
-” হুম চলো।”
সকাল সকাল দুজন এক সাথে কফি খেতে খেতে এমন একটা জায়গায় অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে প্রিতমের।
-” আপনার ছাদ টা আসলেই অনেক সুন্দর।”
প্রিতম হাসতে হাসতে বলে,
-” আমার ছাদ মানে?”
-” আপনার বাড়ির ছাদ। কথায় কথায় ভুল ধরেন শুধু।”
-” তুমি ভুল বললে আমি ভুল ধরবো না?”
-” এবার কিন্তুু আমার নাক ফাটাতে পারবেন না।আমি আপনার প্রসংশা করি নি আপনার বাসার ছাদের প্রসংশা করছি।
দুইজন এক সাথে হেসে উঠে। প্রিতমের খুব ইচ্ছা করছে সময় টা বেঁধে রাখতে।
-” চলেন নাস্তা বানাবো।”
-” কি নাস্তা বানাবে?”
-“পরোটা আর ভাজি এর থেকে বেশী কিছু পারবো না।”
-” এগুলো হলেই হবে ।”
নিঝুম পরোটা বানানো শুরু করল প্রিতম হেল্প করছে। পরোটা দেখে প্রিতম হাসতে হাসতে শেষ।
-” এটা কি নিঝুম পরোটা নাকি বাংলাদেশের মানচিত্র?”
নিঝুম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” একটা হলেই হবে। আপনি সুন্দর পরোটা বানান পারলে।”
-” সুন্দর পরোটা বানাতে পারলে কি আর মানচিত্র খেতাম।”
-” আমি রাগ করব কিন্তুু ।”
প্রিতম হেসে দিলো। দুজন এক সাথে অফিসে গেল। রাস্তায় দাড়িয়ে ফুসকা,আইসক্রীম কখনো চটপটি খাওয়া যেন ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে।
প্রিতম অফিস থেকে এসে ভাবছে কোথায় ওর জন্য বাসা ভাড়া করা যায়?
পাশের বিল্ডিং টায় খোঁজ করে দেখতে হবে। কালকে বাবা-মা
আসবে আজকের ভিতরই বাসা ঠিক করতে হবে।
মেয়েটা চলে গেলে খুব শূন্যতা কাজ করবে। সারাজীবন এভাবে লুকোচুরি করে এক সাথে থাকলে খুব বেশী ভালো হত। বুঝতেই পারি নি ওর জন্য এতটা খারাপ লাগবে ।কখন যে ওর মায়ায় জড়াই গেছি নিজেও টের পাই নি।
একা একটা মেয়ে থাকবে যে কোন সময় যে কোন বিপদ হতে পারে। খুব বেশী টেনশন হয় । ওর কি আমার জন্য শূন্যতা কাজ করবে না?
প্রতিদিন ওর হাতের মিষ্টি এক মগ কফি খেয়ে জীবনটা কাটালে পারলে মন্দ হত না।
বর্ষা চলে যাওয়ার পর নিঝুমই একমাত্র মেয়ে যার চোখে মায়া খুঁজে পেয়েছি ।
.
মেয়েটা একা একা রুমে কি করে? প্রিতম নিঝুমের রুমে গেল। কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। প্রিতমের বুকের ভেতর কেন জানি মোচড় দিয়ে উঠল। কার সাথে কথা বলছে ও?
প্রিতম আস্তে আস্তে দরজার পাশে গিয়ে দাড়ালো। লুকিয়ে লুকিয়ে কারো কথা শুনা যদিও একদম খারাপ অভ্যাস । কিন্তুু কেন জানি প্রিতম আজকে নিজেকে দমাতে পারছে না। ওপাশের কথা গুলো বুঝা যাচ্ছে না,কিন্তুু নিঝুমের কথা গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ।
-” ভুল তো মানুষই করে আম্মু। আমায় মাফ করে দেও,তোমাদের খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি ।”
প্রিতম হাফ ছেড়ে বাঁচল।ওর মায়ের সাথে কথা বলছে। ও কি ওর ফ্যামিলির কাছে ফিরে যেতে চায়?
আবারও নিঝুমের কন্ঠ প্রিতমের কানে এলো।
-” মানছি আমি অন্যায় করছি।তার কি ক্ষমা নেই? তোমরা কি আমার সাথে অন্যায় করো নি? তোমরাও তো আমার মতামতের মূল্য দেও নি।”
এটা আবার অন্যায়ের কি আছে। ওর মত একটা পিচ্ছি মেয়ে কে চার-পাঁচ টা সন্তানের বাপের সাথে বিয়ে দিতে চায়। এদের কি মাথায় কোন কমন সেন্স নেই? আবার উল্টো রাগ দেখায়। নিঝুমেরও বা কি দরকার উনাদের সাথে যোগাযোগ করার? ও তো এখানে ভালোই আছে ভাবতেই মেজাজ বিগড়ে যায় প্রিতমের ।মেয়েটা আসলেই বেশী বুঝে।
এখন আর নিঝুমের ভয়েস শুনা যাচ্ছে না। প্রিতম জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে ফোন ওর হাতে।তার মানে ফোন কেটে দিছে।নিঝুমের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
প্রিতম দরজা নক করল । নিঝুম চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে দিলো ।
-” নিঝুম তুমি আবার কান্না করো কেন?”
-” কই না তো? চোখে যেন কি পড়ছে।”
-” মিথ্যা বলছ আমার সাথে? বাসা থেকে ফোন দিয়েছে নাকি তুমি দিছো?”
নিঝুম মাথা নিঁচু করে বলল,
-” আমি দিছি ফোন।”
-” কেন?”
নিঝুম কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না । উনি কি সব কথা শুনে ফেলছে?
-” নিঝুম কিছু জিঙ্গেস করছি আমি?”
-” না,মানে এমনি।”
-” আমার কাছে বলা যাবে না তাই তো? ওই রাতে আসার কি দরকার ছিলো? বুড়ো মানুষের সাথে সংসার করার শখ হয়েছে নাকি?’
-“আমি কি বলছি আপনার কাছে বলা যাবে না? বাসার সবার খোঁজ নিতে।”
-” বাসায় ফিরে যেতে চাও? ”
-” না,না আমি কি তা বলছি।”
-” ভয় পেয়ো না ,বাসায় যেতে চাইলে বলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসব।”
-” সত্যি আমি যেতে চাই না।”
-” যেতে চাইলে আমায় বলো। এখন এসব বাদ দেও । খেতে আসো।”
চলবে….