#সেই_রাতে,পর্ব_17,18
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_17
.
প্রিতম কে দেখে নিঝুম মুচকি হেসে দিলো। বাহ! মুচকি হাসলেও নিঝুমকে অনেক ভালো লাগে। আসলে যাকে ভালো লাগে তাঁর সব কিছুই ভালো লাগে ইভেন তার খারাপ দিক গুলোও।যদিও নিঝুমের কোন খারাপ দির ওর চোখে পড়ে নি।
নিঝুম বলল,
-” চেয়ে আছেন কেন?”
প্রিতম লজ্জায় পড়ে গেল। ওর দিকে এতক্ষন চেয়ে ছিল খেয়ালই ছিল না। প্রিতম চোখ সরিয়ে বলল,
-“কই চেয়ে আছি? এখন কি আমি চোখ বুজে থাকব নাকি?”
নিঝুম হেসে বলল,
-” না থাক চোখ মেলেই থাকেন। আপনার বাবা যাবে না অফিসে?”
-” না,বাবা কে বলছি তুমি রেস্ট করো। আমি একাই অফিস সামলাবো।”
-” কেন বলছেন?”
-” এটা না বললে তো আমি তোমাকে সাথে নিয়ে অফিসে যেতে পারতাম না।তোমার একা যেতে হত,আর আমার বাবার সাথে যেতে হত।”
-” তো আপনার বাবার সাথে যেতে আপনার প্রোবলেম কি? ”
-” প্রোবলেম হলো তোমার একা যেতে হবে।”
-” তো আমি একা গেলে আপনার প্রোবলেম কি?”
প্রতি এবার আর কথায় প্যাঁচ কাটিয়ে উঠতে পারল না। মেয়ে মানুষ পারেও বটে।কথা যে এত কিভাবে প্যাঁচায় কে জানে। প্রিতম কথা ঘুরিয়ে বলল,
-” নিঝুম বেশী কথা বলো না তো গাড়িতে উঠো।”
নিঝুমও বাধ্য মেয়ের মতো তাই করল।প্রিতম বলল,
-” ড্রাইভ কে করবে?”
নিঝুম মুচকি হেসে দিয়ে বলল,
-” অর্ধেক রাস্তা আপনি ড্রাইভ করবেন,অর্ধেক রাস্তা আমি।”
-“ওকে ডান। নিঝুম গাড়িতে উঠলে একটা বিষয় খেয়াল করি তুমি বার বার এদিক সেদিক তাকাও। মনে হয় কাউকে খুঁজছো।”
-” আরে কাকে আর খুঁজব। চারপাশটা একটু দেখি।”
-” চারপাশে তো বিল্ডিং আর মানুষ ছাড়া তো কিছুই নেই, কি দেখো?”
নিঝুম কথা ঘুরিয়ে বলল,
-” ড্রাইভ করার সময় কথা বলতে নেই। মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়।”
প্রিতম আর কিছু বলল না। মেয়েটার মাঝে কি অন্য কোন রহস্য আছে?রহস্য থাকলে তো এখানে পড়ে থাকত না। প্রিতমের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে ।
দুইজনের মাঝে নিরাবতা বিরাজ করছে। নিঝুম নিরাবতা ভেঙে বলল,
-” আমি এখন ড্রাইভ করব।”
লোকটা মনে হয় কোন বিষয় নিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন। একদম উদাস লাগছে।
প্রিতম কে নিরুত্তর দেখে আবার বলল,
-” কি হলো?”
প্রিতমের এবার হুঁস হলো। হেসে বলল,
-“ড্রাইভ করবেন আপনি?”
নিঝুম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” জ্বী। আর আপনি এত কি ভাবেন ডাকলেও সাড়া দেন না?”
-” আসলে নিঝুম আমার একটা রোগ হয়েছে। কেউ ডাকলে শুনি না সহজে,কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও টের পাই না।”
-” এত গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকলে পৃথিবী উল্টিয়ে গেলেও টের পাবেন না। প্রেমে পড়ছেন কারো তাই এমন হয় বুঝছেন?”
-” নিঝুম তুমি কি psychologist নাকি? ”
-” তার মানে আপনি সত্যি কারো প্রেমে পড়ছেন?”
প্রিতম এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
-” নিঝুম ড্রাইভ করার সময় কথা বলতে নেই তুমি ভুলে যাচ্ছে কিন্তুু ।”
প্রিতমের কথায় উত্তরে শুধু মুচকি হেসে দিলো ।এখন আর কোন কথা বলবে না সেটা প্রিতম জানে।
.
অফিস শেষে প্রিতম বলল,
-” নিঝুম আজকে কোথায়ও ঘুরতে যাবে?”
কোন সংকোচ ছাড়াই প্রিতম কথা টা বলল। নিঝুম হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল।
নিঝুমের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে প্রিতম বলল,
-” আরে চুপ করে আছো কেন? তোমার ইচ্ছা না হলে যেতে হবে না।এত ভাবার কিছু নেই।”
নিঝুম কেন জানি প্রিতম কে কোন কিছুতে না বলতে পারে না। নিঝুম চায় না দ্বিতীয় বারের মত কারো মায়ায় জড়াতে। কিন্তুু যে মানুষ টা কোন রকম স্বার্থ ছাড়াই এত কিছু করে যাচ্ছে তার বেলায় এত সব ভাবা ঠিক না।
নিঝুম বলল,
-” চলেন। তো কোথায় যাবেন? ”
-” যেখানে কোন মানুষ জন নেই,নেই কোন কোলাহল। নিড়িবিলি একটা জাগয়া । নদীর পাড় হলে ভালো হয়। শীতল- স্নিগ্ধ বাতাস বইবে এমন একটা জাগয়া হলে ভালো হয়।”
-” হুম এমন জায়গা আমারও খুব ভালো লাগে । কিন্তুু এমন জায়গা কি এই শহরে পাওয়া সম্ভব।”
প্রিতম হেসে বলল,
-” কি যে বলো তুমি।খুঁজলেই পাওয়া যাবে।”
প্রিতম কে যত দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে নিঝুম। ওর সব কিছু ভালো লাগে নিঝুমের। একটা মানুষ সব দিক থেকে এত ভালো হয় কি করে?
অবশেষে প্রিতম পৌঁছল কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। এই জায়গা টা ওর অনেক প্রিয়। নিঝুম খেয়াল করে দেখলো সত্যিই জায়গাটা অনেক সুন্দর।
দুইজনে একটা বেঞ্চে বসল।নিঝুমের চুল গুলো আজ খোঁপা করা। চুল গুলো খোলা থাকলে ভালো হত। বাতাসে উড়ত। ইস! ওর চুল গুলো খোলার অধিকার যদি থাকত।
ওকে এখন এটা বললে বড্ড বেমানান হয়ে যাবে। নিঝুম চোখে হালকা করে কাজল দিছে। এই প্রথম ওর চোখে কাজল দেখলো প্রিতম। সত্যি খুব বেশী সুন্দর।দুই জনেই চুপ-চাপ বসে আছে।নিঝুম নদীর দিকে তাকিয়ে আছ উদাস মনে,আর প্রিতম নিঝুমের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিঝুম যদি এখন ওর কাঁধে মাথা রাখত। নিঝুমের চুল গুলো খোলা থাকত! এমনটা কি হওয়া সম্ভব? নিঝুম চাইলেই সম্ভব ।
নিঝুম একদম আনমনে বসে আছে। প্রিতম বলল,
-” এত উদাস হয়ে কি ভাবছো?”
-” কিছু ভাবছি না। নদী দেখলে এমনিই কেমন উদসতা কাজ করে।তাছাড়া জায়গাটা অনেক সুন্দর। তাই প্রাকৃতির সৌন্দর্যটা উপভোগ করছি ।”
-” বুঝতে হবে । আমার পছন্দ আছে।”
-” এই বাসায় যাবেন না? অনেক টাইম হয়ে গেছে তো।”
প্রিতম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই অনেক বেজে গেছে। ওর সাথে থাকলে সময়েরও বুঝি হিংসে হয়।কত তাড়াতাড়ি চলে যায়!
-” হুম বাসায় চলো। বিকেলে ছাদে এসো পারলে দুই মগ কফি নিয়ে এসো ।”
-” আচ্ছা ।আপনায় তো আজকে বাসায় গিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।”
-” তা তো জানোই। আম্মুর সাথেই পারা যায় না। আব্বু তত জেরা করে না। আম্মু মিথ্যা বললেও বুঝে যায়।”
নিঝুম ছলছল চোখে বলল,
-” মায়েরা এমনই হয়।”
-” আচ্ছা নিঝুম তোমায় যে আমি ছাদে আসতে বলি,তুমি কি তাতে বিরক্ত হও? নাকি দায়সাড়া আসো।”
নিঝুম হেসে বলল,
-” কি যে বলেন আপনি। আপনার সাথে সময় কাটালেই আমারই সুবিধা।একা থাকলে খুব বোরিং লাগে মন খারাপ করে ।”
.
প্রিতম বাসায় আসতেই ওর মায়ের হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো ।
-” আব্বু তুমি তো জানো অফিসে কত কাজ তাও একটু লেট হয়েছে বলে আম্মু কত জেরা করছে ।”
প্রিতমের মা বলল,
-” একটু লেট না। তোর দুই ঘন্টা লেট হয়েছে।”
-” আম্মু রাস্তায় জ্যাম ছিলো । আর তোমরা এমন করছো মনে হয় যেন আমি এখনো পিচ্ছি ।”
-” না, তুই তো বুড়ো হয়েছিস এখনো পারলি না একটা বিয়ে করে আমাদের বউয়ের মুখ দেখাতে। আর কয়েক দিন পর মেয়ের বাবা বলবে ওই বুড়ো ছেলের কাছে মেয়ে দিবো না ।”
-” আম্মু তুমি এটা বলতে পারলা? কথা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেলা?আব্বু তুমিই বলো আমার মত এমন হ্যান্ডসাম,ভদ্র-নম্র ছেলে এই যুগে পাওয়া দুর্লভ তাই না?”
-” হুম বাবা তুই তো ভদ্র-নম্র, শান্ত-শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট প্রানী।”
-” আব্বু তুমিও আমায় নিয়ে মজা করো? শুনো আমি যদি চাই ডেইলি 10 টা প্রেম করতে পারি, 5 টা করে বিয়ে করতে পারি। কত মেয়ে লাইন লেগে আছে আমার পিছনে। সে খবর কি তোমরা রাখো? কিন্তুু আমি ওসব একদম কেয়ার করি না,আমি চাই তোমাদের মনের মত একটা মেয়েকে বউ করতে । যে তোমাদের সম্মান করবে,মা-বাবার মত ভালোবাসবে।”
প্রিতমের মা বলল,
-” হয়েছে লেকচার বন্ধ করেন। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসেন ।”
.
প্রিতম বিকালে ছাদে পায়চারি করছে । এখনও নিঝুম আসছে না। ওর রুমের জানালা টা খুলে রাখলে কি হয়?
নিঝুম দুই হাতে দুই মগ কফি নিয়ে ছাদে হাজির।প্রিতম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” এই যে।”
এর ভেতর প্রিতমের বাবা ছাদে আসল তার সবজি গাছ দেখতে। ডাক শুনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে ওই ছাদ থেকে ডাকছে। প্রিতমের বাবা আর প্রিতম দুইজনই দুইজনের মুখের দিকে চাওয়া- চাওয়ি করল।
ইস! বাবা আসার আর টাইম পেলো না। এখন কি করব? নিঝুম ডাক দিলো আর সাথে সাথে বাবা ছাদে আসল।ও হয়ত বাবা কে দেখে নেই।
প্রিতমের বাবা বলল,
-“কিরে কাহিনী কি ওই মেয়ে টা তোকে ডাকছে কেন? ”
প্রিতম কি বলবে বুঝতে পারছে না। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-” আরে আমায় ডাকবে কেন? তোমায় ডাকছে হয়ত।”
প্রিতমের বাবা বলল,
-” আমায় ডাকবে কেন?”
-” দেখো বাবা দুজনের কেউই জানি না কাকে ডাকছে। তাই এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো ।”
প্রিতমের বাবা ওই ছাদের কাছে গিয়ে বলল,
-” কাছে ডাকছো মা মনি?”
প্রিতম ফুল গাছের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে আছে। নিঝুম বাবার কাছে কি বলে কে জানে? কি করব এখন?
নিঝুম বলল,
-” জ্বী আংকেল আপনায় ডাকছি।”
-” কেন? ”
-” আপনায় মাঝে মাঝে ছাদে দেখি ,আপনার ফুলের বাগান টা খুব সুন্দর।”
-” আমি তো কখনো তোমায় দেখি নি।”
-” হয়ত খেয়াল করেন নি।আংকেল কফি খাবেন?”
প্রিতমের বাবা থতমত খেয়ে গেল। কি আজব! মেয়েটা তাকে কফি সাধে।
উত্তর না পেয়ে নিঝুম আবার বলল,
-” কি হলো আংকেল খাবেন না?”
প্রিতমের বাবা কফি নিলো। মুখে দিয়ে দেখে কফির টেষ্ট টা অনেক সুন্দর।
-” বাহ! তুমি তো অনেক সুন্দর কফি বানাও। তা ছাদে কার জন্য কফি নিয়ে আসলে?”
-” আসলে আংকেল আমার পাশের বাসার ভাবি ছাদে ছিল তাই আমার আর উনার জন্য দুই মগ কফি নিয়ে আসলাম। ছাদে এসে দেখি উনি উধাও। আপনার সাথে আলাপ হলো তাই আপনায় দিলাম আর কি!”
প্রিতম তো রীতিমত অবাক। নিঝুম আব্বুর সাথে এত কি কথা বলছে? আবার আমার ভাগের কফি টা আব্বু কে দিয়ে দিলো। ওর খুব আফসোস হতে লাগল। এখন ওখানে যাওয়ারই দরকার নেই। আল্লাহ্ বাঁচালো আমায়। প্রিতম নিঝুমের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে রুমে চলে গেল ।
খুব ভালোই আলাপ জমছে প্রিতমের বাবার সাথে।
-” আংকেল আমায় কিছু ফুল গাছ দিবেন ওখান থেকে?”
-” তোমার লাগলে তুমি সব নিয়ে যাও। ওসব আগাছা দিয়ে কি হবে বলো? সবজি গাছ লাগিয়ে তরতাজা সবজি খেতে পারব। আমার একটা ছেলে আছে ঘারত্যাড়া ওর কাজ এগুলো । তুমি বিকালে বাসায় এসে নিয়ে যেয়ো।”
নিঝুম মনে মনে বলল আমি জানতাম আপনি এটাই বলবেন। প্রিতমের বাবাও খুব ভালো মনের মানুষ। এইটুকু সময়ের মধ্যে বুঝে ফেলল নিঝুম।
-” আচ্ছা আংকেল আমি আসি এখন। বিকালে যাবো আপনাদের বাসায়।”
প্রিতমের বাবার নিঝুমকে খুব ভালো লাগল । কেমন মিশুক একটা মেয়ে।
প্রিতমের বাবা বাসায় আসতেই দেখে প্রিতমের মা তাঁর দিকে চোখে অগ্নিবর্ন করে চেয়ে আছে।
-” আরে কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
-” তাকিয়ে আছো কেন তাইনা? এই বুড়ো বয়সে ছাদে তোমার জন্য কফি নিয়ে আসে। কত আলাপ!”
-” ছিঃ কি বলছো এগুলো?আমার সন্তানের বয়সী একটা মেয়ে । আর তুমি কিনা!”
-” হয়েছে চুপ করো! আমি তো কত ছাদে যাই কেউ তো আমায় কফি সাধে না।”
প্রিতম রুমে বসে মুখ টিপে হাসছে। যাক ঝড়টা বাবার উপর দিয়েই যাচ্ছে । এবার বুঝো আমার ভাগের কফি খাওয়ার মজা।
চলবে..
#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_18
.
-” আচ্ছা ছাদে বসে আব্বুর সাথে তুমি কি কি বলছো?”
নিঝুম ভাব নিয়ে বলল,
-” তা জেনে আপনার লাভ?”
-” নিঝুম দেখো ভাব নিবে না একদম,বলো তো কি বলছো?”
-” দেখেন আপনার বাবার সাথে আমার কতই পার্সোনাল কথা থাকতে পারে সব কি আপনার বলা ঠিক?”
প্রিতম হাসি চাপিয়ে বলল,
-” আমার বাবার সাথে পার্সোনাল তাই না? এই কথা যদি আমার আম্মুর কাছে বলি আম্মু তোমায় কি করবে জানো? ”
-” কি করবে গিরিল নাকি চিকেন ফ্রাই?”
-” নিঝুম এত ফাজলামি কর না তো ,বলো কি কথা হয়েছে?”
-” এটা জানার জন্য আপনি এত ইন্টারস্টেড কেন? তবে একটা কথা বলতে পারি।”
প্রিতম উদগ্রীব হয়ে জিঙ্গেস করল,
-” কি?”
-“আপনার বাবা প্রতিদিন বিকালে ছাদে কফি নিয়ে যেতে বলছে। তাহলে উনি আমায় একটা জিনিস দিবে।”
-” ফাজলামি করো? বাবা তোমায় কফি নিয়ে ছাদে আসতে বলছে প্রতিদিন? ”
-” বলে নাই ,মানে আমিই প্রতিদিন যাবো উনার জন্য কফি নিয়ে।”
-” আচ্ছা ।আমি তাহলে আজকেও আম্মুর কাছে বলে দিবো।”
নিঝুম ভ্রু কুঁচকে জিঙ্গেস করে,
-” কি বলে দিবেন?”
-” তা জেনে তোমার লাভ? ”
-” বলবেন না?”
-” তুমি আমায় বলছিলা?”
-” আচ্ছা বলল, আগে আপনি বলুন।”
-” কালকে আম্মুর কাছে গিয়ে বলছি পাশের বিল্ডিং এর এক মহিলা আব্বুর জন্য ছাদে কফি নিয়ে আসছে।”
নিঝুম হাসি আটকে রাখতে পারছে না। কতক্ষন হেসে তারপর হাসি বন্ধ করে গম্ভীর মুখে জিঙ্গেস করল,
-” আমি মহিলা? ”
-” তো কি তুমি পুরুষ?”
-” আমি পুরুষ না কিন্তুু সে জন্য আমি মহিলা?”
-” তুমি পুরুষও না তুমি মহিলাও না।”
এই টুকু বলে প্রিতম হেসে দিলো। নিঝুম লজ্জা পেয়ে বলল,
-” সব কিছু সহজ ভাবে নিতে পারেন না? হুদাই হাসেন কেন?”
প্রিতম হাসি থামিয়ে বলল,
-” আমি কঠিন ভাবে কই নিলাম?”
-” তাহলে হাসলেন কেন?”
-” একটা কথা মনে পড়ছে তাই হাসছি।”
নিঝুম ভারী গলায় বলল,
-“কি কথা?”
-” তাওহীদ আফ্রিদি কে চিনো? ওর একটা ফানি ভিডিও আছে ‘বরিশাইল্লা মনু এখন নন্দনপার্কে’ ওই টার ভিতর বলে,’ও পুরুষও না মহিলাও না।’তায় কি?পরী?”
নিঝুম এবার হাসি চাপিয়ে রাখতে পারল না। হাসতে হাসতে বলল,
-” আপনি তো সেই নিডি।”
-” নিডি আমি না নিডি তুমি।”
-” আপনি আপনি আপনি নিডি। আর কথাটা ওভাবে বলে না।বলে,’ আরে নিডি ও মাইয়াও না পোলাও না। নিডি কয় ,’অয় পরী পরী ।”
নিঝুমের কথার ভঙ্গি দেখে প্রিতম হাসতে হাসতে শেষ । হাসি থামিয়ে বলল,
-” নিঝুম তুমি যে বরিশাইল্লা আমি ভুলেই গেছি।”
-” জ্বী সব সময় মনে রাখবেন আমি বরিশাইল্লা।”
.
বিকাল বেলা নিঝুম প্রিতমের বাসায় হাজির।প্রিতম নিঝুম কে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।ও বাড়িতে আসছে কেন? প্রিতম চুপ-চাপ বসে আছে।
প্রিতমের মা বলল,
-” কে তুমি মা?”
-” আন্টি আংকেল আমায় আসতে বলছে।”
প্রিতমের মা অবাক হয়ে বলল,
-” কেন আসতে বলছে? আর তোমার বাসা কোথায়?”
-” আমি পাশের বিল্ডিং এ থাকি।”
নিঝুম প্রিতমের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। প্রিতম খুব ইন্নোসেন্ট ভাব নিয়ে বসে আছে। মনে হয় নিঝুম কে কখনো দেখেই নি।
প্রিতমের মা প্রিতম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” তোর বাবা কে ডাক দে তো।”
প্রিতমের মা নিঝুমকে বলল,
-” বসো তুমি।”
নিঝুম বাধ্য মেয়ের মত বসল। প্রিতমের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। নিঝুম বাবার সাথে কি কথা বলবে?
প্রিতমের বাবা নিঝুম কে দেখে হেসে দিলো।
-” আরে মিষ্টি মা মনি তুমি। কখন আসলে?”
-” এই তো আংকেল মাত্র।”
প্রিতম ওর মায়ের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আম্মু ছাদের সেই মহিলা।”
প্রিতমের আম্মু চোখ রাঙিয়ে প্রিতমের দিকে তাকালো। কান টেনে বলল,
-” এই মেয়েটার কথা বলছিস মহিলা।”
প্রিতম মুখ টিপে টিপে হাসছে।
প্রিতমের বাবা বলল,
-” প্রিতম ওকে ছাদে নিয়ে যা ত। ও কয়েক টা ফুলের চারা নিবে।”
ফুলের কথা শুনে প্রিতম টাস্কি খেয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমার ফুলের উপর হামলা! প্রিতম রাগে কটমট করে বলল,
-” এই মেয়ে তুমি ফুলের চারা দিয়ে কি করবে? তুমি কিছু সবজি নিয়ে যাও।”
প্রিতমের বাবা বলল,
-” প্রিতম ও সবজি নিতে আসে নি। ও ফুল নিতে আসছে।”
প্রিতমের মা বলল,
-” আরে তোমরা কি শুরু করছো? প্রিতম ওকে ছাদে নিয়ে যা।”
প্রিতম নিঝুমকে নিয়ে ছাদে আসল। নিঝুমের দিকে মূর্তির মত এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
-” নিঝুম শেষ পর্যন্ত তুমি আমার ফুলের সাথে শত্রুতা করলে? ”
-” আরে আগে আপনি আমার কথা শুনেন । আমি যদি আপনার বাবার সাথে এসব কথা না বলতাম তাহলে আপনার বাবা ভাবত আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি। আপনায় ডাকছি। আর ফুল নেওয়ার কথা বললে আপনার বাবা আরও খুশি হবে তা তো আমি জানি। ফুল এখন নিয়ে যাই আবার পরে দিয়ে দিবো আপনায়।”
প্রিতম কিছুক্ষন নিঝুমের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” তোমার তো দেখছি খুব বুদ্ধি !”
প্রিতমের বাবা মা বসে বসে কথা বলছে । প্রিতমের বাবা বলল,
-” তোমার ছেলে কত ফাজিল এবার বুঝলা তো?”
-” হুম তোমার মত!”
-” আমার মত মানে?”
-” মানে আবার কি।ছেলে কি বিয়ে করাতে হবে না? নাকি সারা জীবন এভাবে ই থাকবে?”
প্রিতমের বাবা বলল,
-” আমার বোনের মেয়ে তো আছে। তোমার ছেলে তো ওর কথা শুনতেই পারে না।”
প্রিতমের মা রেগে বলল,
-” ওই মেয়ের কথা আর কখনো বলো না ।”
-” কেন মেয়েটা খারাপ নাকি? ”
-” খারাপ ভালোর কোন প্রশ্ন না। ওই মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনব না এটাই ফাইনাল। ছেলের জন্য অন্য মেয়ে দেখো।”
-” আমি তোমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে যাব কেন? তুমিই দেখো ।”
-” কথায় কথায় আমার ছেলে, আমার ছেলে এটা আবার কেমন কথা ।”
প্রিতম আর নিঝুম ছাদ থেকে নেমে আসল। নিঝুমের হাতে ফুলের চারা। প্রিতমের মা বলল,
-” এই মেয়ে বসো চা খেয়ে যাও।”
-” আন্টি অন্য সময় খাবো ।”
উনাদের ফ্যামিলির সবার বিহেভ খুব ভালো । খুব সুন্দর একটা ফ্যামিলি । নিঝুম চেয়ারে বসে বসে এসব ভাবছে।
প্রিতমের মা আর বাবা বসে আছে। প্রিতমের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে ।
প্রিতমের মা প্রিতম কে বলল,
-” তোর ফুফুর মেয়ে শৈলী কে তোর কেমন লাগে? ”
প্রিতম রাগে গজগজ করে বলল,
-” নিশ্চই বাবা তোমার মাথায় এই ভূত চাপাইছে। মা আমি এখন বিয়ে করব না। বাদ দেও তোমরা এসব ।”
প্রিতম আর কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
খুব ভালোই যাচ্ছে নিঝুমের দিন। অফিসর ব্যস্ততা ,মন খারাপের সময় প্রিতমের সঙ্গ। প্রিতমের মা-বাবার সাথেও খুব জমে উঠেছে ওর। মাঝে মাঝে উনাদের সাথে ছাদে বসে গল্প করে,আবার কখনো বাসায় যায়।প্রিতমের মা-বাবা মেয়ের মত ভালোবাসে নিঝুমকে। নিঝুম অল্প সময়ে সবার সাথে মিশে যেতে পারে।
চলবে…