#সেই_রাতে,পর্ব_19,20
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_19
.
প্রিতম দরজা,জানালা বন্ধ করে চুপ-চাপ রুমে বসে আছে। যে মেয়েটা কে একদম সহ্য করতে পারে না,সেই মেয়েটার মুখই বার বার দেখতে হয়। প্রিতমের ফুফু আজ প্রিতমদের বাসায় বেড়াতে আসছে । ফুফাতো বোন শৈলীও আসছে। প্রিতমের বিরক্তির কারন এই মেয়েটা। প্রিতমের বাবার প্রচন্ড ইচ্ছা এই মেয়ে কে তার ছেলের বউ করে আনবে। গায়ে পড়া মেয়ে দের একদম সহ্য হয় না প্রিতমের । মেয়েটা এত বেহায়া কেন ভেবে পায় না। ঘন্টায় ঘন্টায় বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করে এমন একটা মেয়ের সাথে বাবা বিয়ে দিতে চায়। বাবা কে কিভাবে বুঝাই এগুলো?
সব চেয়ে বড় কথা হলো এই চার মাসে নিঝুম কে প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছে।নিঝুম ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারে না এখন। আর শৈলীর গায়ে পড়ে প্রীত সব চেয়ে বেশী বিরক্ত লাগে। এসব ভাবতেই মেজাজ বিগড়ে যায় প্রিতমের ।
শৈলী প্রিতমের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” মামি প্রিতমকে যে দেখছি না।”
প্রিতমের মা মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” প্রিতম তোর পাঁচ বছরের বড়। ভাইয়া বলতে পারিস না?”
-” ওই তো একটা বললেই হলো।”
প্রিতমের মায়েরও এই মেয়েটা কে একদম সহ্য হয় না। কেমন চটাং চটাং কথা বলে। মেয়ে মানুষ যদি স্নিগ্ধ-কোমল ,লজ্জাবতী না হয়? এই মেয়ে কোন লেভেলের বেহায়া কে জানে?
-” একটা বললেই হলো মানে? বড় দের সম্মান দিতে শেখ।”
শৈলী এসবে কান না দিয়ে বলল,
-” প্রিতম কোথায় সেটা তো বলেন? ”
প্রিতমের মায়ের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।
চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ।
-” তুই খুঁজে দেখ কোথায় ।”
প্রিতমের মা রাগে গজগজিয়ে চলে গেল। প্রিতমের বাবা শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। হাত দেখে রিমোট টান দিয়ে নিয়ে টিভি বন্ধ করে প্রিতমের বাবার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে । প্রিতমের বাবা কিছু বুঝতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
-” আরে কি হয়েছে এমন কেন করছো?”
-” তোমার ভাগ্নিকে কে বলো আমার ছেলের ধারে কাছেও যেন না ঘেঁষে।”
-” কি করছে আমার ভাগ্নি?”
-” কিছু করে নি। এত বেহায়া মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।”
-” তোমার আর তোমার ছেলের ওকে পছন্দ না,এ আর নতুন কি?”
প্রিতমের মা আর কোন কথা না বলে রুম থেকে চলে গেল । কেমন বেয়াদব মেয়ে কথা শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
প্রিতম রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। ছাদে গিয়ে একটু নিঝুমের সাথে কথা বলবে তাও শৈলী পিছনে পিছনে যাবে। রুমের দরজায় কে যেন নক করছে। প্রিতম গিয়ে দরজা খুলে। শৈলী দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। বলল,
-” তুমি এই বদ্ধ রুমে? আর আমি তোমাকে পুরো বাড়ি খুঁজছি।”
-” কেন খুঁজছিস? কোন জরুরী কথা আছে? থাকলে বল না থাকলে যা অযথা ডিস্টার্ব করিস না।”
-” এভাবে বলছো কেন? তোমার সাথে গল্প করতে আসছি।”
প্রিতম কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো শৈলী। রুমে গিয়েই এটা দেখছে,ওটা দেখছে।
-” তুই আমার রুম থেকে যা আমি ঘুমাবো।”
-” তুমি ঘুমাও।আমি তোমার রুমটা গুছিয়ে দেই। ”
-” রুম গুছানোর জন্য কাজের মানুষ আছে তুই যা প্লীজ।”
শৈলী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
-” আচ্ছা আমায় নিয়ে এত বিরক্ত কেন তুমি বলো তো? তোমায় আমি ভালোবাসি এটাই অপরাধ?”
এই ন্যাকা কান্না একদম সহ্য হয় না প্রিতমের । শৈলী রুম থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেল। প্রিতম মনে মনে ভাবলো যাক বাঁচা গেলো।
নিঝুম কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে । নিঝুম কে ফোন দিলো ছাদে আসার জন্য। প্রিতম ছাদে যেতেই শৈলীও প্রিতমের পিছনে পিছনে ছাদে হাজির। নিঝুম তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । শৈলী সাথে থাকার কারনে কোন কথাও বলতে পারছে না। নিঝুমের মেজাজ টা ই খাবার হয়ে যাচ্ছে । ওকে ছাদে আসতে বলে এখন এমন ভাব করছে যেন চিনেই না। মেয়েটা বা কে? উনার আত্মীয় হবে হয়ত। থাক এসব নিয়ে আমার না ভাবলেএ চলবে। নিঝুম এক প্রকার চাপা অভিমান নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলো। প্রিতম বুঝতে পারলো নিঝুম হয়ত মন খারাপ করছে। মন খারাপ করারই তো কথা।
নিঝুম রুমে গিয়ে সোফায় বসে আছে। মন টা খুব খারাপ করছে। এখানে ওর আপন বলতে কেউ নেই । সব সময় প্রিতম ওকে সাপোর্ট,ভরসা দিছে। না,কারো উপর এত নির্ভর হওয়া ঠিক নেই। চোখের কোনে জল জমছে নিঝুমের। একাকি সময় টা প্রিতমের সাথে কাটাতে কাটাতে কেমন যেন অজানা মায়ায় জড়িয়ে গেছে। সেটা এই মুহূর্তে অনুভব করতে পারছে নিঝুম। এমন মায়ায় কখনো জড়াতে চাই নি।
.
প্রিতম অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। মন-মেজাজ একদম ভালো নেই। শৈলী বলল,
-” আমিও তোমার সাথে অফিসে যাব।”
প্রিতম চেঁচিয়ে বলে,
-” তোকে অফিসে নিয়ে কি করব? ওটা কোন ন্যাকামির জায়গা না।”
প্রিতমের বাবা বলল,
-” কিরে চেঁচাচ্ছিস কেন? ”
-” মামা আমি ওর সাথে অফিসে যেতে চাইছি বলে দেখো কেমন খারাপ বিহেভ করে।”
-” প্রিতম তোর সমস্যা কি বল তো? মেয়েটা খারাপ কি বললো? তুই ওকে অফিসে নিয়ে যা।”
-” বাবা কি বলছো এসব? ও অফিসে যাবে কি করতে?”
প্রিতমের চিল্লাপাল্লা শুনে প্রিতমের ফুফু আর মা আসল।
প্রিতমের ফুফু বলল,
-” তুই সব সময় আমার মেয়ের সাথে এমন করিস,ওকে সহ্য করতে পারিস না। ও তোর কি ক্ষতি করছে?”
প্রিতমের মা কিছু না বলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনে যাচ্ছে।
-” ফুফু ও অফিসে গিয়ে কি করবে বলো তো?”
প্রিতমের ফুফু কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-” ছোট বেলায় ওর বাবা মারা যায়। তারপর থেকে ভাই-ভাবীই আমাদের যাবতীয় খরচ বহন করে। তোদের দয়ায় আমরা বেঁচে আছি। তাই বলে এমন টা করছিস।”
ফুফুর কান্না দেখে প্রিতমের নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে।
শৈলী কে ও ছোট বেলা থেকে বোনের মত জানে। কিন্তুু মেয়েটার আচরন এখন একদম সহ্য হয় না । তার উপর বাবা আর ফুফু মিলে ওই মেয়েকে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
প্রিতম বাধ্য হয়ে বলল,
-” আচ্ছা চল আমার সাথে।”
প্রিতমের ফুফু চোখ মুছতে মুছতে বলল,
-” না শৈলী যাস না।”
-” ফুফু রাগ করছো কেন? বুঝো তো অফিসে অনেক কাজ। তাছাড়া শৈলী বা অফিসে গিয়ে কি করবে। তাই না করছি ।
শৈলী বলল,
-” তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট কর। আমি রেডি হয়ে আসছি।”
প্রিতমের মা প্রিতমের বাবার কানে কানে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
-” ছেলেটা অফিসে যাচ্ছে কাজ করতে। তোমার ভাগ্নির ফালতু ন্যাকামো সহ্য করতে না। যতই ন্যাকামো করুক আমার ছেলের বউ হওয়ার আশা পূরন হবে না।”
প্রিতম আর শৈলী অফিসের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো । গেটের কাছে যেতেই দেখে নিঝুমও গেট থেকে বের হচ্ছে । প্রিতম নিঝুম কে ডাক দিলো,
-” নিঝুম?”
নিঝুম শুনেও না শুনার ভান করল। শৈলী বলল,
-” আরে ওই মেয়ে কে ডাকছো কেন?”
প্রিতম শৈলীর কথার কোন জবাব না দিয়ে নিঝুম হাত ধরে টেনে গাড়িতে তুলল।
-” কি করছেন হাত ছাড়েন?”
প্রিতম চোখ লাল করে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম সত্যি ভয় পেয়ে গেল। অযথা রাগ দেখাচ্ছে!
-” আমি একা অন্য গাড়িতে যেতে পারব । প্লীজ এখানে সিন ক্রিয়েট করেন না।”
-” আর একটা কথা না বলে চুপ-চাপ বসো।”
শৈলী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে ।
-” প্রিতম মেয়ে টা কে? আর ও যখন যেতে চাচ্ছে না তখন জোর করছো কেন?”
-” এসব তোর না জানলেও চলবো। তুই গাড়িতে উঠ।”
-” উঠবো আগে বলো মেয়ে টা কে? ”
নিঝুম বলে উঠল,
-” আমি উনাদের অফিসে কাজ করি।”
শৈলী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
-” অফিসের সামান্য একটা কর্মচারির সাথে এত প্রীত।”
প্রিতম নিঝুম কে বলল,
-” সব সময় একটু কম কথা বললে হয় না।”
-” যেটা সত্যি..
নিঝুমের কথা শেষ না হতেই থামিয়ে দিলো প্রিতম।
শৈলী কে বলল,
-” তোর ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই তোর অবস্থান এর কথা চিন্তা কর।”
চলবে…
#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_20
.
সারা অফিসে একটুও কথা বলে নি নিঝুম। গম্ভীর ভাবে কাজ করে যাচ্ছে । নিঝুমের এই নিরাবতা খুব কষ্ট দেয় প্রিতম। প্রিতম সব সময় ওর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছে। অফিস শেষে প্রিতমের চোখ ফাঁকি দিয়ে একাই বাসায় চলে আসছে নিঝুম। প্রচন্ড রকমের মাথা ব্যাথা করে ওর। অফিস থেকে এসেই মাথায় উপর বালিশ চেপে শুয়ে পড়েছে। প্রিতমের উপর এমন অভিমান কেন কাজ করছে ওর? খুব কি মায়ায় পড়ে গেছে? প্রিতম অন্য মেয়েদের সাথে থাকলে ওর তো খারাপ লাগার কথা না। ও তো প্রিতম কে ভালোবাসে না,ওর ভালোবাসা তো ওকে ঠকিয়ে চলে গেছে। আর কোন মায়ায় জড়াতে চায় নি। কিন্তু কিভাবে যে কি হয়ে গেলো ভেবে পাচ্ছে না নিঝুম ।
উনার উপর যদি এভাবে রাগ করি উনি তো অন্য কিছু ভাববে।না,স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে হবে। কিন্তু মন টা কেন জানি সায় দেয় না নিঝুমের। প্রিতমের সঙ্গ চায়।ওর যত্ন ,শাসন ,চোখ রাঙানো পেতে চায়। কিন্তু নিঝুম সত্যি এমন টা চায় নি। যে ভাবে হোক এই মায়া কাটাতে হবে। গাল বেয়ে টপটপ করে জল গড়াচ্ছে। মাথার ভেতর অসহ্য রকমের পেইন হচ্ছে। ফোনটা অফ করে ওভাবেই শুয়ে আছে নিঝুম।
প্রিতমের সাথে সেই রাতে দেখা হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত সব স্মৃতি চোখের সামনে পর্দার মতো ভেসে আসতে লাগলো।
জীবন টা কি থেকে কি হয়ে গেলো? এগুলো সবই নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত।
অফিস শেষে নিঝুম কে না দেখে মনের ভেতর অজানা ভয় কাজ করছে প্রিতমের । তার উপর শৈলীর আজাইরা প্যাঁচাল বিষের মত লাগছে । মনে চাচ্ছে কষিয়ে একটা চড় দিতে। এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল প্রিতম । অবশেষে জানতে পারল নিঝুম নাকি একটু আগে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছে। নিঝুমের উপর খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কত সাহস না বলে বাসায় চলে গেছে! ইচ্ছে হচ্ছে থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলিয়ে দিতে। শৈলী বলল,
-” ওই মেয়ে তো বাসায় চলে গেছে।আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে? আর অফিসের সামান্য একটা কর্মচারির সাথে কিসের এত দরদ বলো তো?”
প্রিতম রাগে কটমট করে বলল,
-” সেটা দিয়ে তোর দরকার কি? ফালতু বকবক বন্ধ কর।”
-” আমি খারাপ কি বললাম?”
প্রিতম আর কোন কথা বলল না। সবচেয়ে বেশী মেজাজ খারাপ হচ্ছে নিঝুমের উপর। বাসায় এসে ফোন দিয়ে দেখে নিঝুমের ফোনটাও অফ। ছাদে গিয়ে দেখলো নিঝুমের রুমের জানালা খোলা। খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। প্রিতম ওদের ছাদ থেকে পাশের বিল্ডিং এর ছাদে গেলো। চুপিচুপি নিঝুমের রুমে গেল। কেউ দেখলে বদনাম হবে তা জানে । কিন্তু আপতত এসব চিন্তা প্রিতমের মাথায় নেই।
ঘুম থেকে টেনে তুললো নিঝুম কে।ঘুম ঘুম চোখে কিছুই বুঝতে পারছে না নিঝুম। এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রিতম বলল,
-” অফিস থেকে একা আসলে কেন?”
-” আপনার অফিসে যারা কাজ করে সবাইকে আপনি বাড়ি পৌঁছাই দেন নাকি? আপনি আমার বস,আমি আপনার অফিসে কাজ করি। আশা করি আপনি আর পাঁচ টা কর্মচারির মতই আপনি আমায় ট্রিট করবেন।”
নিঝুমের কথা শুনে প্রিতম অবাক হয়েছে নাকি রাগ হচ্ছে নিজেই বুঝতে পারছে না। প্রিতমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ লাল হয়ে গেছে। ভয়ংকর রকমের রাগ। এমন রাগ প্রিতমের চোখে কখনো দেখে নি নিঝুম । নিঝুম দমে গেলো ভয়ে। প্রিতম হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিঝুমকে ওর কাছে নিয়ে রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
-” তোকে আমি কি হিসেবে ট্রিট করব সেটা আমার ব্যাপার। আর আমার সাথে শৈলী কে দেখে এক কষ্ট পাচ্ছিস কেন? ভালোবাসিস আমায় তাই না? ফোন অন কর যখন ফোন দিবো ছাদে আসিস। ”
প্রিতম কে এত কাছ থেকে কখনো দেখে নি নিঝুম । এখনও ঘোরের মধ্যে আছে । প্রিতম রুম থেকে চলে গেলো। প্রিতমের শেষ কথা গুলো বার বার কানে বাজছে নিঝুমের। আসলেই তো আমার এত চাপা অভিমানের কারন নি?
প্রিতমের সাথে থাকতে থাকতে কখন যে এত মায়ায় জড়াই গেছে অনুভবই করতে পারে নি। না,এসব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উনার সাথে স্বাভাবিক আচারন করতে হবে। একটা মানুষের সাথে এত সময় কাটালে তাঁর মায়ায় জড়ানো তো অসম্ভব কিছু না। আর মায়া কাটানোও অসাধ্য কিছু না।
প্রিতমের খুব হাসি পাচ্ছে । শৈলীকে নিয়ে কত হিংসে করছে নিঝুম। শৈলী কে একটা থ্যাংক্স দেওয়া উচিত। ওর জন্যই নিঝুমের অভিমান, ভালোবাস প্রকাশ পেলো।
.
বাসায় গিয়ে শৈলী কে ওর রুমে দেখে আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে প্রিতমের ।
-” আচ্ছা তোর প্রোবলেম কি বল তো,কারো রুমে ঢুকতে হলে তার পারমিশন নেওয়া উচিত এই সেন্স টুকুও নেই?”
-” কারো রুমে ঢুকলাম কই? আমি তো তোমার আর আমার রুমে ঢুকলাম।”
-” তোর শখ দেখে আমার আফসোস হয়। আমার লাইফে তোর মত বেহায়া মেয়ে দেখি নি। তোর বেহায়াপানার কোন লিমিট নেই ।”
-” ওই মেয়ের রাগ ভাঙাতে গেছিলা বুঝি? মামার কাছে গিয়ে বলব।”
প্রিতমের মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে । শৈলীর হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দিলো। ওর ফুফুর একটাই ইচ্ছা, প্রিতম ওর বাবার একমাত্র ছেলে। প্রিতমের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হলে এত সম্পত্তি,টাকা-পয়সা সব পাবে। তাই উঠে পড়ে লেগেছে।
.
নিঝুম কে এই নিয়ে সতের বার ফোন দিচ্ছে প্রিতম। ফোন টাই রিসিভ করছে না। এই মেয়ে টাও মেজাজ খারাপ করে রাখে।
ওপাশ থেকে আস্তে করে নিঝুম বলল,
-” গায়ে জ্বর আসছে। শরীর খারাপ লাগছে আসতে পারব না ।”
প্রিতমের বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো। সাথে সাথে নিঝুমের বাসায় চলে আসল। জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে নিঝুম। মুখটা শুকিয়ে গেছে।প্রিতম আস্তে করে কপালে হাত দিলো গায়ে তেমন জ্বর নেই।
কপালে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ মেলে দেখে প্রিতম ওর মাথায় কাছে বসা। প্রিতম ছাড়া আর কে ই বা ওকে দেখতে আসবে।
-” নিঝুম শরীর খারাপ লাগে খুব?”
-” না অনিশ্চিত জীবন টা নিয়ে মন খারাপ । এই ধরুন আমি আজকে মারা গেলাম, আমার লাশ টা দাফন দেওয়ার মত কেউ নেই।কেউ কান্নাও করবে না,কেউ আফসোসও করবে না। ”
কথা গুলো প্রিতমের বুকে আঘাত করল। এভাবে বললে কার ই বা খারাপ না লাগে?
-” নিঝুম আমি আছি তো। কিছু হবে না তোমার । ওষুধ খেয়েছো?”
-” না।”
-” লিকুয়েড ওষুধ নেই বুঝি?”
নিঝুম ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলল,
-” আছে।”
-” তাহলে খাও নি কেন?”
-” ইচ্ছা হয় নি।”
-” তাড়াতাড়ি ওষুধ খাও।”
-” উহু না।”
-” আর একটা কথাও বলো না।”
প্রিতমের জোড়াজুড়িতে ওষুধ খেতে হলো । জীবনের প্রতি বড্ড অনীহা কাজ করছে।
-” এখন চুপ-চাপ ঘুমাও । ঘুম থেকে উঠে দেখবে শরীর ঠিক হয়ে গেছে। আর আমার সাথে যে মেয়েটা দেখছো না? আমার লাইফের সব চেয়ে বোরিং পার্সন বুঝলা? নিঝুম পাগলী টা যেন ওসব নিয়ে কষ্ট না পায়।”
নিঝুমের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। উনাকে কি একবারও ওসব বলছি?
-” ফালতু কথা বলবেন না। আমি এসব নিয়ে কষ্ট পেতে যাবো কেন?”
-” তোমরা মেয়ে মানুষ যে বড্ড বেশী হিংসুক তাই। ”
-” দেখুন একদম আজাইরা কথা বলেন না। আমি এসব নিয়ে হিংসা করতে যাবো কেন?”
-” আমার সাথে অফিসে যেতে না চাওয়া,সারা অফিস গম্ভীর মুখে থাকা,একা একা অফিস থেকে আসা,ফোন অফ করে রাখা এসব কেন করছো? তুমি নিজের কাজ দ্বারাই প্রমান করে দিছো।”
নিঝুম এটা কেন করল ও নিজে জানে না । আপনা-আপনি এমন টা হয়ে গেছে। ও ইচ্ছা করে এমন করে নি।
.
রাত 1টা প্রিতমের ঘম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই নিঝুমের কথা মনে পড়ে। নিঝুম অসুস্থ এত রাতে কি ওকে ছাদে আসতে বলা টা ঠিক হবে? নিঝুমের কথা গুলো খুব মনে পড়ছে। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো । অনেকক্ষন চোখ বুজে শুয়ে রইল কিন্তু ঘুম আসার কোন লক্ষনই নেই। প্রিতম ছাদে গেলো। গিয়ে দেখে নিঝুম ছাদে দাঁড়ানো। এত রাতে নিঝুম একা ছাদে নাকি অন্য কেউ? প্রিমত নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফোনের ফ্লাশ লাইট মেরে দেখলো সত্যি নিঝুম দাঁড়িয়ে। প্রিতম ওই ছাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিঙ্গেস করল,
-” নিঝুম তুমি এত রাতে এখানে একা?”
প্রিতমকে দেখে চমকে যায়। চোখের জল মুছে বলে,
-” ভালো লাগছিলো না তাই আসছি ।”
-” আমায় একবার আসতে বললেও তো হত।”
-” আপনায় এত রাতে ডিস্টার্ব করতে চাই নি।”
-” কখনো কি বলছি আমি ডিস্টার্ব ফিল করি?”
প্রিতম নিঝুমের কাছে গেল। নিঝুমের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে বলে,
-” এই নিঝুম কান্না থামাও।”
নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-” জীবনে খুব বড় ভুল করছি তার শাস্তি পাচ্ছি।”
প্রিতম ওর কান্না দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। কোন কিছু না ভেবে নিঝুমের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমো এঁকে দেয়।
নিঝুম থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কারো ডাক শুনে দু জন পিছনে ফিরে তাকায়। প্রিতম চমকে যায়। এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
চলবে..