সেই_রাতে,পর্ব_9,10

0
1010

#সেই_রাতে,পর্ব_9,10
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_9
.
-“এই তোমার উঠতে হবে না। আমি ওয়াশরুম থেকে পানি নিয়ে আসছি।”
নিঝুম চোখ বুজে শুয়ে রইল। মাথা টা ঝিনঝিন করছ । হাত-পা কাঁপছে। খুব অশান্তি লাগছে।
প্রিতম ওয়াশরুম থেকে পানি নিয়ে আসল। নিঝুম প্রিতমের উপস্থিতি বুঝতে পারল। চোখ না মেলেই বলল,
-” ব্রাশ কোথায়? আমি দাত ব্রাশ না করে খাবো কিভাবে? ”
জ্বরে বিছানা থেকে উঠতে পারে না আবার উনি দাত ব্রাশ করে।
-” তোমার ব্যাগে ব্রাশ আছে?”
-” আমার ব্যাগে ব্রাশ থাকতে হবে কেন? তোমার বাসায় কি ব্রাশ নেই? বাসায় ব্রাশ থাকুক বা না থাকুক তোমার ব্রাশ তো আছে । ওটা তে ই দুজনের হবে।”
এ মেয়ে মাথা তো পুরাই গেছে । জ্বর কমার পর ও যদি এমন আবল-তাবল বলে তাহলে পাগলা গারদে রেখে আসব।
-” ব্রাশ করা লাগবে না। মুখ ধুয়ে নাস্তা খাও।”
-” বললাম না ব্রাশ না করে খাবো না। তোমার ব্রাশ দেও। তুমি এত নোংরা কেন? ব্রাশ না করে খাওয়া যায় বুঝি।”
-” নিজে অন্যের ব্রাশ ইউস করে চাচ্ছে । আর আমায় নোংরা বলছে। আরও কত কি যে শুনতে হবে ।”
আবার ঠোট বাঁকিয়ে কেঁদে দিল নিঝুম,
-” তুমি আজ কাল এমন হয়ে গেছ কেন? তুমিই তো বলছে বিয়ের পর দুজন এক ব্রাশ ইউস করব।”
প্রিতম অস্পষ্ট সুরে বলল,
-“ওয়াক! থু! কি বলে এই মেয়ে টা! আরে বইন আমি তোর বয়ফ্রেন্ড না।একটু বুঝার চেষ্টা কর।”
-” কিছু বললে?”
-” না কিছু বলি নি। দেও ব্রাশ দেও । ব্রাশ না দিলে চিল্লাবো কিন্তু ।”
প্রিতম ওর মুখ চেপে ধরল,
-” প্লীজ, চিৎকার কর না। দিচ্ছি ব্রাশ।”
মেয়ে টা ভালো ই ব্লাক-মেইল শুরু করছে। ধুর! রাস্তা থেকে নিয়ে আসাই উচিত হয় নি।
-” এই ব্রাশ।”
-” শুধু ব্রাশ? টুথপেস্ট কোথায়?”
-ও সরি! ওয়েট আনছি!
প্রিতম রুমে গিয়ে আবার টুথপেস্ট নিয়ে আসল।
-” এবার হয়েছে। ব্রাশ করে খেয়ে নেও।”
-” দেখছ তো আমি উঠতে পারছি না। হাত-পা কাঁপছে। ব্রাশ কিভাবে করব?”
-” আরে আজব তো! আপনি ব্রাশ কিভাবে করেন আমি জানি নাকি।”
-” তুমি আমায় আপনি করে বলছো কেন?”
প্রিতম ঠোটের কোনে একটু হাসি টেনে বলল,
-” একটু ভালোবেসে বলছি আর কি! এটাও বুঝো না পাগলী?”
-” বুঝি,বুঝি সব বুঝি। আমায় যে এখন আর ভালোবাস না তাও বুঝি ।”
-” অনেক ভালোবাসি তোমায় ,কে বলল ভালোবাসি না?”
-” নিজের চোখেই তো দেখতে পাচ্ছি ভালোবাসো না। আমি কত অসুস্থ তাও আমায় একা একা ব্রাশ করতে বলছো। তুমিই বলো অসুস্থ মানুষ কি কোন কাজ করতে পারে? ”
-” সেটাই তো আমার মাথায় ছিল না। আসো ব্রাশ করিয়ে দেই।”
এমন মেয়েলি জামেলা কার সহ্য হয়। প্রিতম নিঝুমের হাত ধরে ব্রাশ করিয়ে দিলো।
-” এই নেও পানি কুলি কর।”
-” তুমি কুলি কর।”
-” ব্রাশ করছো তুমি আর কুলি করব আমি? ”
-” দুজন কে তো কখনও আলাদা করে দেখি নি।”
-” ও তাই নাকি?”
-” হ্যাঁ তাই।”
-” নিঝুম আমার অফিসে যেতে হবে দ্রুত করো তো।”
-” এই তুমি কথায় কথায় চোখ রাঙাও কেন? আমি ভয় পাই না বুঝি।”
এবার আর প্রিতম হাসি আটকে রাখতে পারল না। ফিক করে হেসে দিল।
-” নিঝুম তুমি কি খেতে পিছন্দ কর?”
-” তুমি জানো না বুঝি আমি কি খেতে পছন্দ করি? ”
-” আরে পাগলি জানি তো। কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে ভালো লাগে।”
-” আইসক্রীম,মিষ্টি,ফুসকা।”
-” আজকে অফিস থেকে আসার সময় তোমার জন্য সব নিয়ে আসব। যদি তুমি এখন কুলি কর ।”
নিঝুম তাড়াতাড়ি কুলি করে নিলো। প্রিতম মনে মনে ভাবল যাক বুদ্ধি টা তাহলে কাজে দিয়েছে।
-” এবার খেয়ে নেও। ”
-” খাবো তো। তুমি খেয়েছ?
-” না একসাথে খাব।”
-” তুমি আমায় খাইয়ে দেও। এটা নিয়ে কোন জামেলা করবা না। দেখতেই তো পাচ্ছো আমার হাত-পা কাঁপছে।”
-” আচ্ছা হা কর।”
প্রিতম নিঝুম কে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।
-” সবই তো আমায় খাওয়াচ্ছো। তুমি তো মোটেও খাচ্ছো না। দেও আমি তোমায় খাইয়ে দেই।
নিঝুম কাঁপা কাঁপা হাতে প্রিতম মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। অর্ধেক মুখে আর অর্ধেক প্রিতমের শার্টে লাগছে।
-“নতুন শার্ট টাই নষ্ট করে দিলে।”
-” সামান্য একটা শার্ট ই তো। এটার জন্য এভাবে বলতে হয়?”
-” কই আমি তো কিছু বলি নি। পানি খেয়ে নেও।”
প্রিতম গ্লাসে করে ওর মুখে পানি তুলে দিচ্ছে।
-” পানি এত বিশ্রী স্বাদ কেন?”
-” তোমার গায়ে জ্বর তাই এমন লাগছে। এখন জ্বরের ওষুধ খেয়ে নেও সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-” এই তুমি জানো না আমি ট্যাবলেট খেতে পারি না। আমার গলায় আটকায়। আমি তো লিকুয়েড ওষুধ খাই।”
-” লিকুয়েড ওষুধ নেই। তুমি ট্যাবলেটই খাও কষ্ট করে।”
-” উফ!এমন করছো কেন? জানো না ট্যাবলেট খেতে পারি না।”
-” বাসায় তো জ্বরের লিকুয়েড ওষুধ নেই। ”
-” না থাকলে আর কি! তুমি ট্যাবলেট একদম গুড়ো করে । পানি মিলিয়ে দেও তাহলে তো লিকুয়েড হয়ে যাবে।”
-” এত বুদ্ধি তুমি কোথায় রাখো?”
-” এত জেনে কাজ নেই।”
-” ও আচ্ছা। এই ওষুধ খাও।”
-” হুম আমি হা কি,তুমি মুখে দিয়ে দেও।”
ওর কথা না শুনে উপায় নেই। প্রিতম ও তাই করল।
-” নিঝুম এখন তুমি এখানে শুয়ে থাকো। কোন প্রকার চিৎকার করবা না। আমি রেডি হয়ে অফিসে যাব।”
নিঝুম মাথা নিঁচু করে অভিমানের সুরে বলল,
-“আচ্ছা । আমি অসুস্থ তাও তোমার অফিসে যেতে হবে ।আমার থেকে অফিসে যাওয়া জরুরী।”
-” রাগ করো না । অফিসে জরুরী আজ আছে নয়তো যেতাম না।”
নিঝুম গাল ফুলিয়ে বলল,
-” যাও,যাও।
“প্রিতম তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিল। রুমের দরজায় লক করে রেখে গেল। আম্মু যদি কোন কারনে রুমে আসে। প্রিতমের মা প্রিতম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“এতক্ষন লাগে খেতে আর রেডি হতে?”
-” আরে আম্মু অফিসের ফাইল রেডি করছি তো।”
প্রিতমের বাবা ওর মাকে বলল,
-” তুমিও বা কম কিসে? কোথায়ও যাওয়ার জন্য রেডি হতে বললে দুই ঘন্টা লাগে।”
-” তোমরা বাপ-ছেলে সকাল থেকে আমার পিছে লেগে আছো কেন বল তো?”
-” সত্যি কথা বললেই…”
-” হয়েছে রাখো তোমার সত্যি কথা । যাও অফিস যাও।”
প্রিতম অফিসের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো। বাসার গেট পর্যন্ত গিয়ে প্রিতম থেমে গেল।
প্রিতমের বাবা ওকে বলল,
-” কিরে কি হয়েছে থামলি কেন?”
-” বাবা তুমি গাড়ি তে গিয়ে বসো আমি আসতেছি।”
প্রিতম আবার রুমে গেল। মেয়ে টা যদি জ্বরের ঘোরে চিল্লাপাল্লা করে ? সামান্য একটু ঘুমের ওষুধ খাওয়ালে অফিস থেকে আসার আগে পর্যন্ত সুন্দর মত ঘুমাবে। আমিও টেনশম মুক্ত থাকব। তাছাড়া মেয়ে টা সারা রাত ঘুমায় নি। হয়তো ডিপ্রেসনের কারনে ঘুমাতে পারছে না।
-” আপনি অফিসে যান নি?”
-” এই তো যাব এখন। নিঝুম তুমি এই ওষুধ টা খেয়ে নেও তাহলে তোমার মাথা ব্যাথা কমে যাবে।”
-” ওষুধ তো একটু আগে খেয়েছি।”
-” আরে ওটা তো জ্বরের ওষুধ। এটা মাথা ব্যাথার ওষুধ এটা খেলে সুন্দর ঘুম হবে।”
-” আচ্ছা । তাহলে ওষুধ টা গুড়ো করে দেন।”
প্রিতম দ্রুত ওষুধ গুড়ো করে পানি মিলিয়ে নিলো। ওকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বের হলো।
-” কিরে আবার বাসায় আসলি কেন?”
-“আম্মু অফিসের একটা ফাইল রুমে ভুলে রেখে গেছি,ওটা নিতে আসলাম।”
-” পেয়েছিস?”
-” হুম পেয়েছি?”
-” কোথায় ফাইল? তোর হাতে তো কোন ফাইল নেই?”
প্রিতম এবার থতমত খেয়ে গেল।
-” আসলে আম্মু ফাইল আমি কালকে অফিসে রেখে আসছি যে সেটা মনে হয়। ভাবছি রুমে আছে এখনও।”
-” কি উল্টা-পাল্টা কি বকছিস? একবার বলছিস রুমে আর একবার বলছিস অফিসে ।”
-” আম্মু এত কথা প্যাঁচাও কেন বলো তো। আব্বু আমার জন্য গাড়িতে ওয়েট করছে আমি গেলাম ।”
প্রিতম আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করল। প্রিতমের বাবা ওকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” এতক্ষন লাগে আসতে? তাড়াতাড়ি আয়।”
.
চলবে…

#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_10
.
প্রিতম আবার থেমে গেল। ইস শিট! রুমের দরজা লক করতে মনে নেই। লক না করে যাওয়া যাবে না ।
-” আব্বু,আমার আবার একটু রুমে যেতে হবে।”
প্রিতমের বাবা মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল,
-“আজকে তোর হয়েছে কি বল তো? পাগলের মতো করছিস কেন?”
-” না,বাবা কিছু না। এক মিনিট ওয়েট কর।
প্রিতম রুম লক করল। ইস! আবার আম্মুর সাথে দেখা। কত প্রশ্ন করে আবার কে জানে?
-” এই তুই আবার এসেছিস কেন?”
-” আম্মু ,আমার মোবাইল টা রুমে রেখে গেছি। মোবাইল নিতে আসছি।”
-” তখন তো তোর হাতে মোবাইল দেখলাম।”
-” আরে আম্মু এত প্রশ্ন করো কেন?”
প্রিতম কথা এড়িয়ে চলে গেল।
-” আব্বু, এসে গেছি চলো।”
-” হুম চল।”
প্রিতমের মাথায় শুধু নিঝুমের চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে।মেয়ে টা জ্বরের ঘোরে কি সব বলছে। হয়তো কোন ছেলে কে খুব ভালোবাসত। ছেলে টা কি ওকে ঠকিয়েছে?
জ্বরের ঘোরে বললেও কথা গুলো হয়ত সত্যি। কারো কাছ থেকে হয়ত খুব বেশী আঘাত পেয়েছে। ও তো বলছে ফ্যামিলি তে সৎ মা,বাবা নেই আবার আজকে বলল ফ্যামিলির প্রত্যেক টা মানুষ কে কষ্ট দিছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। মেয়ে টা কি আমায় মিথ্যা বলছে?
-” এই প্রিতম,গাড়ি থেকে নামবি না নাকি?”
কারো ডাকে প্রিতম ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।
-” অফিসে এসে গেছি আব্বু? ”
-“এই তোর হয়েছে কি বল তো? সেই কখন থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে কি ভাবছিস?”
তুই কি অফিসে নতুন এসেছিস? অফিস চিনিস না নাকি?”
-” আব্বু এই বয়সে এত বেশী কথা বললে ভোকাল কর্ডে প্রোবলেম হবে তোমার ।”
-” কথা বললে আবার ভোকাল কর্ডে প্রোবলেম হয়?”
-” আব্বু তুমিও তো দেখছি আম্মুর মত কথা প্যাঁচাও।”
প্রিতমের বাবা রাগান্বিত কন্ঠ বলল,
-” কি আমি কথা প্যাঁচাই?”
-” আব্বু রাগ করলে তোমায় একদম বাপ্পারাজের মত লাগে । কথা না বাড়িয়ে হাঁটো তো।”
.
টাইম যাচ্ছে না। মন বাসায় পড়ে আছে প্রিতমের । মেয়ে টা কি করছে কে জানে। শুধু নিঝুমের কথাই মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে । মেয়ে টার বিষয় ওকে এত ভাবাবে বুঝতে পারে নি। মিটিং শেষ করে ওর বাবার কাছে গেল প্রিতম।
-” বাবা ডাকছো আমায়?”
-” হুম বস।দেখ বাবা,আমার তো বয়স হয়েছে অফিসের দায়-দায়িত্ব আর নিতে পারছি না। এই বয়সে নামাজ পড়ব,আল্লাহ কে ডাকব,ঘুরব-ফিরব। আমার অফিসের চেয়ারে বসে থাকতে আর ভালো লাগে না। তুই তোর দায়িত্ব বুঝে নে।”
-” বাবা, তুমি আর এগুলো বলার টাইম পাইলা না? আচ্ছা সব দায়িত্ব নিবো তো। আমি তো সব কাজেই তোমায় হেল্প করি দায়িত্ব নেওয়ার কি আছে ।”
-” আমায় হেল্প করলে হবে না। তোর দায়িত্ব তুই বুঝে নে। কাজের প্রতি সিরিয়াস হ।”
-” বাবা কাজ-কর্ম আমার ভালো লাগে না। আমি এখন বাসায় যাব মাথা ব্যাথা করে। তুমি একটু অফিসে সামলিয়ে এসো ।”
-” শুরু হলো তোর ওজুহাত? অফিসে আসলেই তোর পেট ব্যাথা,মাথা ব্যাথা।”
প্রিতম এসবের উত্তর না দিয়ে বলল,
-” বাবা আমি গেলাম।”
এই ছেলে কে নিয়ে আর পারি না । কাজ-কর্ম মোটেও করতে চায় না। এই বুড়ো বয়সে অফিসের চেয়ারে বসে থাকতে হয় এসব ভাবতেই মেজাজ বিগড়ে যায় প্রিতমের বাবার।
.
প্রিতম অফিস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো ।মেয়ে টা ট্যাবলেট খেতে পারে না লিকুয়েড ওষুধ নিতে হবে। জ্বর কমছে নাকি কে জানে।
পরিচিত এক ফার্মেসি দোকানে গেল প্রিতম ।
-“আসসালামু আলাইকুম আংকেল।কেমন আছেন?”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।আলহাদু‌লিল্লাহ্ ভা‌লো,তুমি কেমন আছো?”
-” জ্বী আংকেল ভালো। আংকেল জ্বরের লিকুয়েড ওষুধ দেন।”
-” রোগীর বয়স কত?”
মেয়ে টার বয়স তো জানি না। দেখতে তো পিচ্ছি পিচ্ছি মনে হয়।
-” আংকেল সতের-আঠারো হবে।”
ডাক্তার কিছু টা অবাক হয়ে গলে।
-” সতের-আঠারো বয়সের রোগীর জন্য লিকুয়েড ওষুধ?”
-” হ্যা আংকেল ট্যাবলেট খেতে পারে না।”
আংকেল জ্বরের ঘোরে উল্টা-পাল্টা বকে।”
-” অনেক জ্বর বা অতিরিক্ত ডিপ্রেসনের কারনে এমন টা হয়। টেনশন কর না ঠিক হয়ে যাবে।
প্রিতম ওষুধ কিনে হাঁটা শুরু করল। মেয়ে টা আমার ব্রাশ ইউস করল সকালে। ব্রাশও কিনতে হবে । দুই টা ব্রাশ কিনে নিলো।
মেয়ে টা যেন কি খেতে পছন্দ করে? আইসক্রীম,মিষ্টি আর ফুসকা। ইস! আম্মু যদি এগুলো হাতে দেখে তাহলে শেষ।
প্রিতম বাসায় পৌঁছে দেখলো আম্মু তার রুমে ঘুমাচ্ছে। যাক বাঁচা গেল।
.
প্রিতম রুমে ডুকে দেখে নিঝুম এখনও ঘুমাচ্ছে। নি নিষ্পাপ মুখ টা! কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর একদম কমে গেছে। মেয়ে টা এখনও উল্টা-পাল্টা বলবে সকালের মত? নাকি সকালের কথা ওর মনেই নেই? সকালে মেয়ে টার পাগলামি গুলো কেন যেন বেশ ভালোই লেগেছে প্রিতমের কাছে। কানের কাছে গিয়ে ডাক দিলো।
-” নিঝুম।”
ঘুমের ওষুধে কাজ হয়েছে বেশ! এখনও ঘুমাচ্ছে। প্রিতম নিঝুমের পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিলো।নিঝুম লাফিয়ে উঠে বসল। প্রিতমের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
-” সকাল হয়ে গেছে?”
প্রিতম অবাক হয়ে গেল। সারা-সকাল কি পাগলামী করে এখন জিঙ্গেস করছে সকাল হয়েছে কিনা।
-” না সকাল হয় নি দুপুর হয়েছ? দুপুর 12 টা বাজে।”
-” আমি তো খাটে ছিলাম এখানে কিভাবে আসলাম?”
-” আমি নিয়ে আসছি!”
নিঝুম হতভম্ব হয়ে জিঙ্গেস করল,
-” আপনি আমায় কোলে করে এখানে আনছেন?”
শুধু এখানে এনেছি? খাটের নিচে ডুকালাম,সেখান থেকে বের করলাম। আমার ব্রাশ ইউস করলে। খাইয়ে দিলাম আরও কত কি!
উনি এখন জিঙ্গেস করছে কোলে নিয়েছি কিনা! নিঝুমের প্রশ্নের কি জবাব দেওয়া উচিত প্রিতম বুঝতে পারল না।
-” রুমে আম্মু আসছে,তাই এখানে নিয়ে আসছি। আচ্ছা আপনি ই বলেন আপনায় কি এখানে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসা উচিত ছিল?”
-” না তা বলি না।”
একটু দমে গেল নিঝুম। প্রিতম আবার বলতে শুরু করল ,
-” আপনি তো জ্বরের ঘোরে বেহুশ হয়ে ছিলেন। কি সব আবল-তাবল বকছেন।”
নিঝুম এবার ভয় পেয়ে গেল, খুব বেশী উল্টা-পাল্টা বলে ফেলে নি তো?
-” কি বলছি আমি? আসলে জ্বর আসলে অনেক আবল-তাবল বলি। কিন্তু পরে মনে থাকে না।”
-” সত্যি ই কি আপনার মনে নেই?”
-” সত্যি আমার মনে নেই। ”
-” এই আপনার ব্রাশ,ওষুধ, আর পছন্দের খাবার।”
-” মানে?”
-” মানে সকালে তো আপনি আমার ব্রাশ ইউস করলেন। ট্যাবলেট খেতে পারেন না তাই লিকুয়েড ওষুধ নিয়ে আসছি। আর আইসক্রীম, ফুসকা,মিষ্টি খেয়ে চেয়েছেন তাই এসব নিয়ে আসছি।”
নিঝুম ভয় জড়িত কন্ঠে বলল,
-” আর কি কি বলছি আমি?”
-” আমি কি সব মুখস্থ করে রেখেছি নাকি।”
-” ছিঃ আমি আপনার ব্রাশ ইউস করছি। আর আপনিও বা কেমন আপনার ব্রাশ আমায় দিলেন?”
-” আজব! আপনি ই তো জিদ ধরে বসে ছিলেন।”
নিঝুম এবার অনুরোধের সুরে বলল,
-” প্লীজ বলুন না উল্টা-পাল্টা কিছু বলছি?”
মেয়ে টা ওসব বলে লাভ নেই । লজ্জা পাবে। আনইজি ফিল করবে।
-” না কেমন কিছু বলেন নি। একটা সত্যি কথা বলুন তো আপনি বাসা থেকে কেন আসছেন?”
-” আজব! আপনার মিথ্যা বলে কি আমার কোন বেনেফিট আছে?”
প্রিতম একটু ভেবে বলল,
-” না তো। কিন্তু আপনি কিছু একটা লুকাচ্ছেন।”
-” আজব,আমি আপনার কাছ থেকে কি লুকাবো কেন? আমার কি কোন সুবিধা আছে তাতে?”
-” তা তো নেই। আমার বউ বিকেলে চলে আসবে আপনি কখন যাবেন?”
-” আপনার বউ না দুপুরে আসে?”
-” আপনি জ্বরে বেহুশ হয়ে ছিলেন। তাই বিকালে আসতে বলছি?”
-” আপনি অযথা মিথ্যা কেন বলছেন? আপনার তো বউ ই নেই। আমায় তাড়ানোর জন্য মিথ্যা বলতে হবে না।”
-” আজব! আপনায় কে বলল আমার বউ নেই?”
-” আমায় কি বোকা ভাবেন? আপনার রুমে একটাও মেয়েলি জিনিস নেই।”
প্রিতম এবার দমে গেল।
-” বুঝে যখন গেছেন তখন আর মিথ্যা বলে লাভ নেই। তো আপনি যাচ্ছেন কখন?”
নিঝুম একটু ভাব নিয়ে বলল,
-” যেতে পারি একটা শর্ত আছে?”
মেয়ে টা খুব ভালো সুবিধাবাদী। যাওয়ার জন্য আমায় শর্ত দিচ্ছে।
-” শর্ত না মানলে যাব না । আমি না গেলে আপনি কিছু করতে পারবেন না। বেশী বুঝলে আপনার বাবা-মা কে বলল ,’ আপনি আমায় বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসছেন।”
প্রিতম মেয়ে টার বুদ্ধি দেখে বিস্মিত হয়ে গেল ।
-” কি শর্ত বলেন?”
-” আমায় একটা চাকরি আর বাসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।”
-” চাকরি না হয় আমার অফিসে দিলাম,বাসা কোথায় পাবো?”
-” কোথায় পান সেটা আপনার ব্যাপার। আর সুবিধাবাদী বললেন না? বিপদে পড়ে এমন টা হয়েছি। আর ভাবেন না বাসা ভাড়া আপনার দিতে হবে,বাসা ভাড়া আমিই দিব।”
-” টাকা কোথায় পাবেন?”
-” গহনা বিক্রি করব।”
-” শুনেন বাসা যোগাড় করা আমার জন্য কোন ব্যাপার না। কিন্তুু আপনি একা একটা মেয়ে থাকবেন ব্যাপার হলো সেটা। সবার তো আর নজর ভালো না।”
-” সবার নজর আপনার মত হলে ভালো হত।”
-” প্রসংশা করলেম?”
-” প্রসংশার যোগ্য হলে প্রসংশা তো করতেই হবে।”
শুনেন আপনি এখানেই থাকুন কথা বলেন না। বাবা আসছে বাসায়।
প্রিতমের বাবা প্রিতমের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” রেনু,এখনো ঘুমাচ্ছো?”
ডাক শুনে ঘুম ভেঙে যায়।
-” হুম ঘুমাচ্ছিলাম।”
-” কখন আসলে অফিস থেকে?”
-” এই তো মাত্র।”
-” প্রিতম আসে নি?”
-” আপনার গুনোধর ছেলের কথা আর বলেন না। সে অনেক আগেই চলে আসছে। তার নাকি মাথা ব্যাথা করে।”
-” ছেলে যখন ভালো কাজ করে তখম তোমার ছেলে,আর এখন আমার ছেলে তাই না? ও তো এখনও বাসায় আসে নি।”
-” এখনো বাসায় আসে নি?”
দরজার কাছ থেকে প্রিতম বলে,
-” আব্বু আমি অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে আসছি। এসে দেখি আম্মু ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডাকি নি।”
-” আগে তো কোন জায়গা থেকে বাসায় আসলে পুরো বাসার মানুষ চিল্লাপাল্লা করে এক করতি।”
-” আজব! আমি মাথা ব্যাথা নিয়ে চিল্লাবো নাকি? ”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here