সেদিনও_ছিলে_তুমি❤,০৬,০৭

0
908

#সেদিনও_ছিলে_তুমি❤,০৬,০৭
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৬

১৬.
ভিসি স্যার আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। ভিসি স্যার শক্ত গলায় বললেন, ‘তোমরা এখানে কি করছো?’

আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।

ভিসি স্যার আদ্রে’র উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আদ্র’ আমি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করছি। ফাঁকা ক্লাসরুমে একা কি করছো এই অসময়ে?’

আদ্র বললেন, ‘আসলে স্যার আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছু নয়।’

—“আমি যা ভাবছি সেটার কথা বলিনি, তোমরা দুজন কি করছিলে সেটা তো আমি দেখেছি। নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারবো না।”

—“তেমন কিছুই নয় স্যার।”

—“তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি?”

—“না স্যার।”

ভিসি স্যার রেগে গেলেন। বললেন, ‘ডোন্ট টক টু মাচ আদ্র! তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি।’

আদ্র স্যারকে বুঝানোর চেষ্টায় রত যে আমাদের মধ্যে এমন কিছু হয়নি। কিন্তু ভিসি স্যার কিছুতেই কথা শুনছেন না। তিনি নিজের চোখে আমার সঙ্গে আদ্রকে দেখেছেন ফাঁকা ক্লাসে, আমার এই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। নিরবে চোখের পানি ফেলছি। আদ্রে’র দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালাম। ওনার জন্যই সব হচ্ছে, ওনার কারণে আমার লাইফটা হেল হয়ে গিয়েছে। মান-সম্মানটুকু পর্যন্ত ধুলোয় মিশিয়ে দিলো৷ ভার্সিটির দারোয়ান, আয়া-বুয়া, এমনকি অন্যান্য প্রফেসররা পর্যন্ত এই ঘটনার শামিল। কেউ কেউ বলছে যে আদ্র এমন কিছুই করতে পারেনা, কিন্তু ভিসি স্যারের কথার জোরে সে কথাটাও টিকলো না। আমাকে দুজন আয়া সান্ত্বনা দিচ্ছে। আমি ওদের বললাম, ‘আন্টি আমার সাথে ওনার কোনো সম্পর্ক নেই। ওনারা ভুল বুঝছেন!’

ওনারা শুনলে বা বিশ্বাস করলেও এসবে ওরা কিছু করতে পারবে না। যেখানে ভিসি স্যার উপস্থিত সেখানে কারো কিছু বলার নেই। সবার চিন্তিত মুখ। ভিসি স্যার খুব কড়া, কারো কথা শুনতে ওনি রাজি নন। একসময় ওনি বললেন, ‘আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি!’

আদ্র জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ডিসিশন স্যার?’

ভিসি স্যার ওনাকে বললেন, ‘তুমি মেয়েদের সম্মান করো?’

আদ্র বললো, ‘অবশ্যই স্যার।’

আমি এদিকে ওনার কথা শুনে মনে মনে রেগে গেলাম। অসভ্য, ইতর একটা লোকের জন্য সবার সামনে আমি অসম্মানিত হচ্ছি আর ওনি বলে মেয়েদের নাকি ওনি সম্মান করে। মিথ্যাবাদী লোক একটা। ভিসি স্যারের কথা শুনে আমি আবারও ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।

ভিসি স্যার আমার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমার নাম কি?’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘আরশি স্যার!’

—“তোমার প্যারেন্টস’দের মোবাইল নাম্বার দাও!”

আমি থমকে গেলাম। কি বলবো এখন? আমার প্যারেন্টস বলতে তো কেউ নেই। আমি বললাম, ‘স্যার আমার প্যারেন্টস বলতে কেউ নেই।’

স্যার অবাক হয়ে বললেন, ‘মানে?’

—“মানে স্যার আমার অভিভাবক নেই। আমার মা নেই, বাবা আমাকে ফেলে অন্যত্র বিয়ে করে চলে গিয়েছেন। আমি জানিনা ওনি এখন কোথায়। আমি অনাথ আশ্রমে থেকে বড় হয়েছি…”

বলতে বলতে কেঁদে দিলাম। আমি চাইতাম না আমার এই সিক্রেট কেউ জানুক। কিন্তু আজ শুধুমাত্র পরিস্থিতির চাপে আদ্রে’র জন্য সবার সামনে আমাকে এই কঠিন সত্যটা বলতে হলো। আবারও মনে করিয়ে দিলো আমি এতিম, অনাথ।

১৭.
ক্লাসরুমে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হলো। আদ্র আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হয়তো তার খারাপ লাগছে, নাহ ওনার কেন খারাপ লাগবে? ওনি তো আমার কষ্টগুলোতে আঘাত দিতে পারলে শান্তি পাবেন।

ভিসি স্যার একটু কি যেন চিন্তা করলেন। তারপর আদ্রে’র উদ্দেশ্যে বললেন, ‘স্যারকে ফোন দাও।’

আদ্র অবাক হয়ে বললো, ‘কোন স্যার?’

—“তোমার বাবা। আই মিন টু সে আমাদের সাবেক ভিসি স্যার।”

আদ্র আবারও অবাক হলো। বললো, ‘বাবাকে কি দরকার স্যার?’

—“সেটা আমি ওনাকেই বলবো। বলো এখানে আসতে। আর কোনো প্রশ্ন নয়।”

আদ্র কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। ভিসি স্যারকে যথেষ্ট সম্মান করে। তাও বাবাকে ডাকাতে আদ্র বেশ কনফিউজড! করতে চেয়েছিলো একটা হয়ে গেলো আরেক ঝামেলা। ভিসি স্যার কি আরশিকে ভার্সিটি থেকে বের করে দিবেন? কিন্তু আদ্রে’র ভুলের শাস্তি আরশিকে কেন দেবে? আদ্র’ সাবেক ভিসি স্যারের পুত্র আর আরশি অনাথ বলে? এদিকে আরশিও কেমন ব্যবহার করছে আদ্রে’র সাথে, কিন্তু কেন? আদ্র আর ভাবতে পারলো না। ফোন লাগালো বাবাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওপাশ থেকে আনিস সাহেবের গলা শোনা গেলো। আদ্র বললো, ‘আব্বু!’

আনিস সাহেব বললেন, ‘বলো। কি ঝামেলা ওখানে?’

—“তুমি জানো?”

—“হুম।”

—“কে বলেছে?”

—“দারোয়ান ফোন দিয়েছিলো। একটা মেয়ের সাথে নাকি তোমাকে ফাঁকা ক্লাসরুমে দেখা গিয়েছে?”

আদ্র অপরাধী গলায় বললো, ‘হুম। কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি, আমার ওর সাথে কিছু কথা ছিলো… ”

—“আমি বুঝতে পারছি।”

—“স্যার তোমাকে আসতে বলছে এখানে!”

—“আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?”

—“আমি জানিনা আব্বু। ভিসি স্যার তোমার সাথে কথা বলতে চান, বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছেন ওনি!”

আনিস সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, ‘আমি আসছি।’

আদ্র বিষন্ন গলায় বললো, ‘আচ্ছা।’

১৮.
ভিসি সাহেবের কথা শুনে আমি হতবাক। আদ্র’ ও
অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ভিসি স্যার বলেছেন, ‘ওনি এই মুহূর্তে আমার আর আদ্রে’র বিবাহ দেবেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।’ ওনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আদ্রে’র বাবা। ওনিও সহমত ভিসি স্যারের সাথে। আদ্র বললো, ‘কি বলছেন স্যার? বিয়ে মানে?’

—“মানে তোমাদের দুজনের বিয়ে দেবো আমরা।”

—“কিন্তু কেন স্যার?”

আদ্রে’র বাবা ধমকে ওঠে বললেন, ‘আমরা যা ডিসাইড করেছি তা-ই হবে। তুমি নিশ্চয়ই তোমার বাবার কথার অমান্য করবেনা?’

—“কিন্তু বাবা….!”

—“আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাচ্ছিনা। ভিসি স্যার নিজের চোখে তোমাদের বিভ্রান্তিকর অবস্থায় দেখেছে, তুমি কি আমার মানসম্মান নষ্ট কর‍তে চাও?”

আদ্র রেগে গেলেও চুপ করে গেলো। বাবার কথা অমান্য করার বা বাবার মুখে তর্ক করার সাহস কোনোদিনও করেনা, যতই ক্ষমতাবান পলিটিক্যাল লিড্যার হোক না কেন। বাবার সম্মানের বিষয়ে সর্বদাই সচেতন। তাও দোষটা ওর নিজেরই, এই ভর সন্ধ্যায় একটা মেয়ের সাথে এভাবে দেখলে যে কেউওই বাজে মাইন্ডে নিবে। কিন্তু আমি? আমি এখন কি করবো? সবাই সবার মতামত জানিয়ে দিলো, কিন্তু আমি এখন কি করবো? বড় বড় স্যাররা আমার সামনে, ওদের বিরুদ্ধে আমি এখন কি বলবো? আমাকে কি তাহলে ওই আদ্রে’র সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে ওরা? এই মুহূর্তে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার যদি অভিভাবক থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতো। আমি কাঁদছি! সে কান্না কেউ দেখতে পেলো না। এই কান্না দেখার কেউ নেই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া!

কাজি এলো। একটা কাগজে দুটো সাইন করে কাগজের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেলাম আমি আদ্রে’র সাথে। যাকে এই মুহূর্তে আমি সহ্য করতে পারছিনা, খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে। আদ্র আমার দিকে আড়চোখে তাকালো, আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম ঘৃণায়। ওর চোখদুটোর দিকে তাকালেই ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠছে। ভিসি স্যার কড়া জানতাম, কিন্তু এমন কড়া হতে পারেন সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।

আদ্র সবার আড়ালে আমার হাতে হাত রাখলো, আমি এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলাম। লোকটার স্পর্শ আমার কাছে বিষের মতো মনে হচ্ছে, কিন্তু খুব যেন চেনা একটা স্পর্শ! মনে হচ্ছেনা কিছুতেই এই স্পর্শটা। মনে হচ্ছে মরে যাই এক্ষুনি। এ লোকটার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাই।

হলদে রঙের সেই শাড়িটা আমার পরণে, আদ্রে’র পরণেও সেই হলুদ পাঞ্জাবি। কাগজের বিয়ে আর ওনার সেই কীর্তির কথা মনে পড়তেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। সবকিছু অন্ধকার, আমার কথা শোনার কেউ নেই, মাথা হেলিয়ে পরে গেলাম আদ্রে’র কাঁধে।

?”ভেঙ্গে পড়োনা, নিরাশ হয়োনা, সাহায্য আসবেই , এটা আল্লাহর ওয়াদা । জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”

~ [ সূরা বাকারা , আয়াত- 214 ]

চলবে…..ইনশাআল্লাহ!

#সেদিনও_ছিলে_তুমি❤
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭

১৯.
—“এই মেয়ে? এই আরশি! চোখ খুলো প্লিজ!”

আদ্রে’র গলা শুনে আমার সেন্স ফিরলো। পাশে বসে থাকা আদ্র’কে দেখতে পেলাম। চোখমুখ অন্যরকম হয়ে আছে, নাকের ডগা টকটকে লাল। কেন লাল এসব আমি ভাবতে চাইলাম না। ভেবে কি হবে?
আমি বিরক্তি নিয়ে চেয়ে রইলাম আদ্রে’র দিকে।

কিন্তু এ কী? আমি কোথায়? রুমটা আলোয় ঝলমল করছে, আমি বেশ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আশপাশটা দেখে নিশ্চিত হলাম যে, এটা আদ্র’দের বাসা। আর কাল রাতে জ্ঞান হারানোর পরে আমার এক্ষুনি জ্ঞান ফিরলো। এখন বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে!

আমি চমকালাম না। ওঠে বসার চেষ্টা করতে করতেই বললাম, ‘আমি এখানে কেন?’

আদ্র সোফায় গিয়ে বসলো। গালে হাত রেখে বললো, ‘হুটহাট অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটা কি তোমার কোনো মস্তবড় সমস্যা? নাকি ইচ্ছে করেই এমন ভং ধরো?’

আমি রেগে তাকালাম ওনার দিকে। কি সুন্দর করে কথা বলছেন যেন কিছু হয়ইনি, বিয়েটা হওয়ার ছিলো তাই হয়ে গিয়েছে। আমি রাগী গলায় বললাম, ‘আমি এখানে কেন?’

ওনি ঝটপট মোবাইল হাতে নিলেন। আমার কথা যেন শুনতেই পাননি। আমি চিৎকার করে আবারও জিজ্ঞেস করলাম, ‘শুনতে পাচ্ছেন না কি বলছি? নাকি অকালেই কালা হয়ে গিয়েছেন?’

ওনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন, ‘বিয়ের পর যেখানে থাকার কথা, সেখানেই আছো।’

আমার প্রচন্ড রাগ হলো। সবটা ঘটনা একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চিন্তা করতেই আমার মাথায় কিছু একটা খেলে গেলো। গলায় জোর এনে বললাম, ‘আমার সাথে আপনি এটা কি করেছিলেন কাল?’

ওনি ভ্রু কুঁচকে বললেন, “কখন?”

—“কাল রাতে!”

—“কি করেছি প্লিজ ক্লিয়ার করে বলবে?”

আমি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললাম, ‘কাল রাতে ভিসি স্যার যেটা দেখেছিলো, সেটা আপনি কেন করেছিলেন!”

—“কি দেখেছিলো স্যার?”

আমি বললাম, “আপনি কি ন্যাকা নাকি বোকা? ইচ্ছে করে এরকম করছেন।”

ওনি এবার একটু রেগেই তাকালেন। গম্ভীরমুখে বললেন, ‘দয়া করে বলবে কি করেছি আমি মেয়ে?’

—“এই যে! আমার কপালে চুমু দিয়েছিলেন কেন?”

ওনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন এমন একটা ভাব করে আমার দিকে তাকালেন। প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে আমাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে ইচ্ছা করে বলে ওঠলেন, ‘নতুন বিয়ে করেছি তো, কেমন একটা বউ বউ ফিল হচ্ছে, খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে!’

আমি বড়বড় চোখ করে অভদ্র, অসহ্য লোকটার দিকে তাকালাম।

২০.
কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকলাম। কি করবো, কাকে বলবো ভেবে পেলাম না। আদ্র বোধহয় আমার অবস্থা বুঝতে পারলো, গমগমে গলায় বললো, ‘ওদিকে ওয়াশরুম ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও।’

আমি রাগী চোখে তাকালাম। ভেংচি কেটে বললাম, ‘আপনাকে কেউ বলতে বলেনি।’

—“তাই?”

—“হুম।”

—“তো এদিকসেদিক তাকিয়ে কি করছিলে? নাকি চুরি টুরির মতলব করছো?”

—“আপনি কিন্তু বেশ বাড়াবাড়ি করছেন!”

ওনি আরাম করে বসলেন। মাথা দুলিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এক এক করে বলে ফেলো তো আমি কি কি বাড়াবাড়ি করেছি। মে ইট’ নো হ্যাপেন, তুমি যদি আমাকে রাগাও তাহলে কি করবো নিজেও জানিনা। নাও স্টার্ট!

আমি রেগে বললাম, ‘হু দ্যা হেল আর ইউ? আপনাকে রাগালে আপনি কি করবেন?’

—“আমি? আমি তোমার প্রাণোতোষ মিস আরশি! ওহহ স্যরি, মিসেস আব্রাহাম আদ্র!”

—“হুহ। আমার বয়েই গিয়েছে আপনার মিসেস হতে!”

—“কিন্তু হয়ে তো গিয়েছো মেয়ে! আর জিজ্ঞেস করলে না রাগলে কি করবো? রাগলে তোমার সাথে বাসর করবো।”

আমি বড়বড় চোখ করে বললাম, ‘বাসর করবেন মানে?’

—“It’s easier than easy.”

—“আপনি কি বলতে চাইছেন?”

ওনি একটা হাসি দিলেন। আমার ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিই। বললেন, ‘তুমি তো আমার বউ, বাসর করবো মানে আমি তোমার কাছাকাছি আসবো!’

—“আপনি তো আমার কাছাকাছিই আছেন।”

আদ্র অবাক হয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যে আমি এই বিরক্তিকর মুহূর্তটাতেও হেসে দিলাম। আর ওনি রেগে বললেন, ‘ ডোন্ট ব্রাস্ট ইন টু আ গিগেল!’

—“হাসবো, ইচ্ছেমতো হাসবো। হাসতে হাসতে দাঁত খুলে পড়ে গেলেও হাসবো!”

—“হাসাহাসি পরে করো। এখন চলো রোম্যান্স করি। কাল রাতটা তো অজ্ঞান হয়ে পরে ছিলে!”

আমি বললাম, ‘আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে আপনার কি? আপনি তো চান-ই যে আমি কষ্ট পাই।’

২১.
ওনি আমার কথা হাত দিয়ে যেন উড়িয়ে দিলেন, এমন একটা ভাব করে আদুরে গলায় বললেন,

–“স্যরি ফর বি ইং লেইট। কাম টু দ্যা পয়েন্ট, আমার কাছে আসো।”

বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে আদ্র আমাকে ধরতে এলেই আমি বিছানা থেকে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আপনি যান তো এখান থেকে। অভদ্র লোক কোথাকার। জোর করে বিয়ে করে এখন আসছে বাসর করতে!’

ওনি আগের মতোই। বেহায়ার মতো বললেন, ‘যত যা-ই বলো৷ আমি শুনছিনা। উই উইল হ্যাভ টু হারি। ইউ আ’র মাই ওয়াইফ!’

আমি রেগে বললাম, ‘তাড়াতাড়ি করতে হবে মানে? আপনি ছিহ। কি খারাপ! এতদিন কত্ত ঢং করে বলতেন আমি মেয়েদের গায়ে হাত দিইনা, আর এখন? যেই একটু সুযোগ পেলেন অমনি আসল রুপ দেখিয়ে দিলেন। অবশ্য এখন কেন, আপনি তো সেদিনই আপনার আসল রুপ দেখিয়ে দিয়েছিলেন।’

আদ্র কপাল কুঁচকে বিছানা থেকে নেমে বললো, ‘কোনদিন?’

আমি আবারও বিছানায় বসে পড়লাম। মুখ ঝামটা মেরে বললাম, ‘জানিনা।’

ওনি পায়ের উপর পা তুলে সোফায় শুয়ে পড়লেন। আমার রাগে গা জ্বলছিলো। ওনি বললেন, ‘ কাম হোয়াট মে, আ’ম ফন্ড অফ ইউ। আর ইউ গ্রিটিং মি?’

আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। মিস্টার আদ্র? এই লোকে বলে কিনা আমাকে ওনার ভালো লাগে? যত্তসব মিথ্যাবাদী। কুত্তা, বিলাই, ছাগল, গুন্ডা, ধ্বংসকারী বলে মনে মনে গালি দিতে লাগলাম। বাট আই এম এট এ লস্ট!’

ওনি ঘর কাঁপিয়ে আমাকে ধমকে উঠলেন, ‘হুয়াই ইউ কল মি নেইমস? আন্সার মি ড্যাম ইট!’

খোদা! আমি যে ওনাকে গালি দিচ্ছি ওনি বুঝলো কিভাবে? তাও নিজেকে সামলে নিলাম। চোখ গরম করে বললাম, ‘আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ইউ আর সেইং? আই উইল বি গ্ল্যাড ইফ ইউ কাম এগেইন!’

২২.
ওনি হনহন করে ওঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি হাফ ছাড়লাম। রাগের বিপরীতে রাগ দেখিয়ে লোকটাকে জব্দ করা গেলো তাহলে। কিন্তু এ বাসার মানুষ কই, কাউকে তো দেখলাম না। বাড়িতে নতুন বউ, আর কারো দেখা নেই। আমার এখন ফ্রেশ হওয়া উচিত, কিন্তু কাপড় চোপড় কি পরবো? এখনো গায়ে সেই বিয়ের শাড়ি, আই মিন হলুদ রঙের শাড়িটাই। এসব ভাবছি আর বিরক্ত হচ্ছি এমন সময় আমার মুখের উপর আদ্র কি যেন একটা ছুঁড়ে মারলো। আমি হাতে নিয়ে দেখি একটা শার্ট আর জিন্স প্যান্ট। আমি ওনার দিকে তাকাতেই বললেন, ‘নাও এগুলো পরতে পারো।’

আমি বললাম, ‘ইয়াক ছি। এসব কে পরে! আমি ছেলেদের কাপড় পরিনা। আমি অমন মেয়ে নই। আর তাছাড়া এসব কার?’

আদ্র বললো, ‘আমার। মানে তোমার প্রাণোতোষের সুইটহার্ট!’

‘সুইটহার্ট? হে খোদা এ ছেলে এসব কি বলছে? এ যে তলে তলে টেম্পু চালাতে পারে এতদিন সেটা বুঝতেই পারিনি। বাইরে থেকে নেতা নেতা গম্ভীর ভাব। মেয়েদের আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সবসময় যার মুখে সর্বদা ড্যাম কেয়ার ভাব থাকে সেই আদ্র আমাকে বলছে কিনা সুইটহার্ট! আই কান্ট বিলিভ। শেফা একবার বলেছিলো, আব্রাহাম আদ্র হাজারো মেয়ের ক্রাশ, কিন্তু কাউকেই ওনি পাত্তা দেয়নি। অথচ আজ, সে লোকের এমন অদ্ভুত রুপ দেখে আমি নিজেই হতবাক, অবাক। আমি ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলাম।

—“ডোন্ট লাফ লাইক দিস! ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।”

—“আপনার এসব উল্টোপাল্টা কাপড় চোপড় আমি পরবোনা।”

ওনি আহ্লাদী ভাব করে বললেন, ‘পরতে হয় সুইটহার্ট। বরের কাপড় বউ পরলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়না।’

আমি রেগে বললাম, ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট, গট ইট!’

ওনিও গলায় আদুরে ভাব এনে বললেন, ‘পরতে হবে।’

আমি বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বললাম, ‘ হুয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? আমি এসবে অভ্যস্ত নই। আমি সাধারণ মেয়ে, আপনার ফারিনের মতো নই। আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান।
I can’t folerate you any more. Please leave ma alone.’

ওনিও রাগী গলায় বললেন, ‘ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু ওয়্যার ইট! তোমার পানিশমেন্ট এখনো বাকি আছে, বউ হয়েছো বলে ভেবোনা ছাড় পেয়ে যাবে।’

আমি ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই ওনি পেছন থেকে আমার আঁচল ধরে ফেলেন। আমি কাঠ হয়ে ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছি। রাগগুলো আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আমার সবদিকে টেনশন! কে প্রতিনিয়ত আমার পিছু নিচ্ছিলো এটা না জানতে পারলে আমার মনে হচ্ছে আমি দম আটকে মরে যাবো। তার উপর আবার বিয়ের মতো একটা ঝামেলা হয়ে গেলো, আদ্রটাকে সহ্যই হচ্ছেনা। আসছে এখানে আমাকে জ্বালাতে। শাড়ির আঁচল ধরে আদ্র একটু পেছন দিকে টান দিতেই আমি টাল সামলাতে না পেরে আদ্রে’র একেবারে কাছাকাছি চলে এলাম। ওনি কেমন নেশাধরা গলায় বললেন, ‘তোমার গলার তিলটার প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি, can’t you stay a little longer! kisses please?’

ওনি আমার ঠোঁটের দিকে এগুতেই আমি সর্বশক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা মারলাম। ওনি গিয়ে বিছানায় পড়লেন, আর আমি ততক্ষণে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে গিয়েছি। বড়বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে রাগে গজগজ করতে লাগলাম। লোকটা কি ভয়ানক, আমার নাকি পানিশমেন্ট এখনো বাকি আছে। নতুন বউ আমি, তাও বউকে ছাড় দিলো না অভদ্রটা, জোঁকের মতো পিছু লেগে একটার পর একটা কান্ড ঘটাচ্ছে। আরেকটু হলে দম আটকে মরে যেতাম।

?’কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দা’র আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না।
যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অন্যের সাথে অশোভন আচরণ করে,
তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘৃণা করেন।
আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তাঁর ব্যবহারের কারণে নফল রোযা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে।’

~ [সুনানে তিরমিযী]

চলবে….ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here