সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ২)

0
324

#সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ২)

সকালে সবাই নাশতা করতে বসেছে। এত লোকের জায়গা হচ্ছিল না বলে শর্মী পরে বসতে চাইল কিন্তু সাদের মা জোর করে বসিয়ে দিলেন। সৈকত তখন বলল-

-ফুপি, রাতে কী ঘরে বিড়াল ঢুকেছিল রান্নাঘর থেকে কিছু পড়ে যাবার শব্দ পেলাম?

কথাটা শুনেই শর্মী বিষম খেল। সে কাশতে লাগল।

সৈকত বলল- তোমার আবার কাশি পাচ্ছে কেন হঠাৎ? পানি খাও।

শর্মী চোখ পাকিয়ে সৈকতের দিকে তাকাল দেখল সে মুচকি হাসছে।

ফুপি বলল- কী জানি কে ঢুকেছিল। দেখলাম রান্নাঘরে একটা এঁটো প্লেট রাখা। রাতে কেউ কিছু খেয়েছে মনে হচ্ছে। কার খিদে পেয়েছিলরে রাত দুপুরে?

কেউ বলতে পারল না কে খেয়েছে। শর্মী তো মাথা নিচু করে বসে ভাবছে, “সৈকতটা এত পাজি কেন?” সবাই তখন অবাক যে কেউ কিছু খায়নি তাহলে শব্দ কেন হল আর এঁটো প্লেটই বা কোথা থেকে এলো?

সুপ্তি বলল, ফুপি আমিও রান্নাঘরে কিছু একটা পড়ে যাবার শব্দটা পেয়েছিলাম কিন্তু বের হয়ে দেখিনি।

সৈকত বলল- ভালো করেছিস বের হসনি। নিশ্চই ভূতটুত কিছু একটা ছিল তোর ঘাড় মটকে দিতে পারত।

সাদ তখন বলল- শব্দটা আমিও শুনেছিলাম। ঘুম ভাঙতেই মনে হল দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে! আবার সাথে সাথেই হাওয়া হয়ে গেল। মাত্র এক পলকের জন্য দেখেছি। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, সত্যিই ভূত এসেছিল কিনা কে জানে?

সৈকত বলল- দেখতে কেমন ছিল দেখেছিস কিছু? ইয়া লম্বা নাকি আমাদের মতই হাইট? পুরুষ নাকি মহিলা ভূত?

সৈকতকে থামাতে শর্মী তখন টেবিলের নিচ দিয়ে সৈকতের পায়ে জোরে পারা মারল।

আর সাদ “আহ” বলে চেঁচিয়ে উঠল। সবাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকাল, বলল- কি হল?

সে চোখ গোল গোল করে বলল- কে যেন পায়ে পারা মেরেছে! শর্মী লজ্জায় শেষ… উফফ সব কিছুই তার বিপরীতে যাচ্ছে কেন? ইয়া আল্লাহ্‌ কী হবে এখন?

সৈকত চট করে শর্মীর দিকে তাকাল আর বুঝে গেল কি হয়েছে। সে হাসতে হাসতে বলল- রাতে দেখা তোর ভূতটার মনেহয় তাকে নিয়ে আমাদের আলোচনা করাটা পছন্দ করছে না তাই সে ক্ষেপে গিয়ে তোকে মেরে বসেছে।

সাদ ঢোক গিলে মিনমিন করে বলল- এসব কী বলছ? ভূত বলতে কিছু নেই তো!

সৈকত বলল- ভূতটা মনেহয় জেনে গেছে যে তুই ভূত ভয় পাস তাই তোর ঘরে ঢুকেছিল। বলে সে উঠে যাচ্ছিল। সাদের মা বলল-

-কিরে উঠছিস যে?

-খাওয়া শেষ।

-কিছুই তো খেলি না! তোর শরীর ঠিক আছে তো? মুখটা কেমন শুকনো দেখাচ্ছে?

-আমি ঠিক আছি। বিয়ে নামক যে প্যারায় তোমরা আমাকে হুট করে ফেলে দিয়েছ এর চেয়ে ভালো থাকব কীভাবে? বলে সে তার ঘরে চলে যায়। ভোররাত থেকে জ্বরটা ছিল না এখন আবার আসছে মনে হচ্ছে।

শর্মী বুঝতে পারল সৈকতের শরীর আবার খারাপ করতে শুরু করেছে… আশ্চর্য ফুপিকে সেটা বলতে পারল না? সমস্যাটা কী? তা বলতে পারবে কেন? আমাকে পচানোর বেলায় তো ১৬আনা। শর্মীও তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড়ল। সে ঘরের দিকে পা বাড়াতেই ডাইনিং টেবিলে হাসির রোল পড়ে গেল… সুপ্তি বলল-

-আহা ভাবি যেন ভাইয়াকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারছে না।

সাদ বলল- ভাইয়াকে নিয়ে ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়াবার দিন শেষ! সেই দুঃখে এখন আমারও বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে…

সাদের মা বলল- টো টো করে ঘুরে বেড়ানো বাদরের আবার বিয়ের সখ হয়েছে। এই তোর বয়স হয়েছে কত, হ্যাঁ? ঝাড়ু চিনিস? মেরে ঠ্যাং ঝুলিয়ে দিব একেবারে।

সবাই হাসাহাসি করছিল শর্মী লজ্জায় লাল নীল হয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। সৈকত ওকে দেখেই বলল-

-এই মেয়ে এইভাবে সারাক্ষণ আমার আগে পিছে লেগে থাকো কেন? প্রেম ট্রেম হয়ে যায়নি তো?

-শর্মী দাঁতে দাঁত চেপে বলল- আপনি অসুস্থ সেটা কাউকে জানাচ্ছেন না কেন?

-আমার জন্য দেখি তোমার মহা টেনশন হচ্ছে! এটা কিন্তু প্রেমের লক্ষণ।

-শর্মী বুঝল এর সাথে সে পেরে উঠবে না। সে ঘর থেকে বের হয়ে সুপ্তির খোঁজে চলে গেল। সুপ্তিকে ড্রইং রুমে সাদের সাথে পেয়ে গেল। তারপর সবাই মিলে আড্ডা দিতে লাগল। আড্ডা দিলেও শর্মীর মন পড়ে রইল সৈকতের কাছে। জ্বরের এখন কী অবস্থা কে জানে! কোনো সাড়াশব্দও নেই… সুপ্তি এক ফাঁকে চা করে নিয়ে এলো। এনে বলল-

-ভাবি তোমার আর ভাইয়ার চা তোমাদের ঘরে নিয়ে যাও। তোমরা এক সাথে খাও। শর্মী মনে মনে খুশি হল। সে চা নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখল সৈকত ঘুমিয়ে গেছে। সে চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে সৈকতের পাশে গিয়ে বসল। কপালে হাত রেখে জ্বর আছে কিনা সেটা দেখবে কিনা ভাবছে। কিন্তু হাত রাখলে যদি জেগে যায়? যা অসভ্য ছেলে জেগে গেলে কী রেখে কী বলবে আল্লাহ্‌ জানে! মুখে তো লাগাম বলতে কিচ্ছু নেই। সে সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে… সে মনেহয় সত্যিই সৈকতের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে! সৈকত তখন চোখ মেলে বলল-

-তোমার মতলব কী বলো তো? চা দেবে নাকি এভাবেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে?

-শর্মী চমকে উঠে অবাক হবার ভান করে বলল- আমি কোথায় তাকিয়ে ছিলাম? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন আপনি।

-কে ঘুমিয়েছিল? একটু আগে ঘুম থেকে জেগে কেউ আবার ঘুমায় নাকি?

শর্মী মনে মনে বলল- সব তুলে রাখছি সময় আমারও আসবে। তখন দেখবে “কত ধানে কত চাল”। তারপর চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল- স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা কী কেউ আপনাকে শেখায়নি?

-শিখিয়েছে। কিন্তু তোমার সাথে তার প্রয়োজন দেখছি না।

-কেন?

-কারণ তুমি স্পেশাল কেউ।

শর্মী লজ্জা পেয়ে গেল। সৈকত শর্মীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল- স্পেশালের আরেক নাম কী জানো?

শর্মী সরু চোখে তাকিয়ে বলল- কী?

-“প্রতিবন্ধী” হা হা হা…

-আপনি আসলে একটা অসভ্য।

-হা হা হা… আচ্ছা সরি। শোনো, আমার জ্বরটা মনেহয় বাড়ছে। একটু দেখ তো?

-না। পরে বলবেন “ছোঁয়ার বাহানা”।

-আচ্ছা বলব না।

শর্মী ওর কপালে হাত রেখে দেখল জ্বর আছে। সে একটা প্যারাসিটামল এনে দিল। তারপর বলল- আমি ফুপিকে গিয়ে বলছি আপনার জ্বর। সৈকত বলল-

-আহা আমাদের মাঝে ফুপিকে ডাকবে কেন? সে একবার জেনে গেলে এমন লালটুকটুক বউটাকে আর এভাবে কাছে পাবো?

-আপনি আসলে কী চাইছেন বলুন তো?

শর্মীর হাত ধরে বলল- তুমি আমার কাছে কাছে থাকবে সেটাই চাইছি।

সৈকতের জ্বর হয়েছে সেটা আর লুকিয়ে রাখতে পারেনি সে। জ্বর নিয়েই শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে। ৪দিন পর জ্বর পুরো সেরে গেলে ঢাকায় ব্যাক করেছে বউ নিয়ে। এখানে সৈকতের মা, বাবা, সুপ্তি আর দাদী থাকেন। বাড়ির সবাই মোটামুটি মিশুক ধরনের। শর্মীর খারাপ লাগছে না। শুধু দাদী একটু ভিন্ন। খুব কঠিন মেজাজের মানুষ। সারাক্ষণ সকলের ভুল ধরা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। শর্মী নিজেও বেশ কয়েকবার ঝাড়ি খেয়ে ফেলেছে। আসলে তিনি পুরনো আমলের ধ্যানধারণা নিয়ে থাকেন তাই সবাইকে একটু মেজাজ দেখিয়ে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে ভালোবাসেন। সৈকতের মা শর্মীকে এ ব্যাপারে আগেই সাবধান করে দিয়েছেন। শর্মী যেন তার কোনো কথায় কষ্ট না পায়।

সৈকত তার অফিসের পোস্টিং এর কারণে চট্টগ্রাম থাকে। ওখানে আরও দুইজন কলিগ মিলে এক ফ্ল্যাটে থাকে। তার ছুটি শেষ, আগামীকাল রাতে চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে। এই নিয়ে শর্মী ভেতরে ভেতরে একটু কাহিল।

রাতে খেতে বসে সৈকতের চলে যাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। সৈকতের মা বলল-

-এবার ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকা চলে আয়?

-সেটা সম্ভব হলে তো আগেই করা যেত। ট্রান্সফার এপ্লিকেশন আরও ৬মাস পরে দিতে পারব। দিলেও ঢাকায় হয়ত আসা সম্ভব হবে না। এখানে আসতে আমাকে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও যাবার চেয়ে চট্টগ্রামেই ভালো আছি।

-তাহলে শর্মী কোথায় থাকবে?

-সৈকত একবার শর্মীর দিকে তাকাল দেখল ওর চেহারা অলরেডি মলিন হয়ে গেছে! বলল- শর্মী এখানেই থাকবে। তোমরা সবাই আছ না।

সৈকতের দাদী বললেন- নাত-বউ আবার কই যাবে? সে এইখানেই থাকবে। সংসারের কাজ কর্ম শিখুক। কিছুই তো শেখে নাই। পুরা একটা দিন চইলা গেল এখনো তারে কোনো কাজ করতে দেখলাম না!

সৈকতের মা বলল- মা, শর্মী নতুন বউ। এত তাড়াতাড়ি তাকে সংসারের কাজ চাপিয়ে দেয়াটা ঠিক হবে না। আস্তে ধীরে করবে সব। আর সৈকত কাল চলে যাবে ওরা নিজেরা একটু সময় কাটাক। বিয়েটা যেভাবে হল ওদের নিজেদের মধ্যে একটু খোলামেলা হবার সুযোগ তো দিতে হবে।

-হ, আমার সোনার টুকরা নাতি পাইয়া তারা ধইরা বাইন্ধা মেয়েটারে ঝুলায় দিছে। বাপরে তর সইল না আর!

দাদীর এই কথাটায় কেউ কিছু বলল না। শর্মীর কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগল না। সে মাথা নিচু করে খাবার নাড়াচাড়া করতে লাগল। বিয়েটা তো কেউ জোর করে দেয়নি। উভয় পক্ষের সম্মতিতে দেয়া হয়েছে। তাহলে এমন কথা কেন?

সৈকতের বাবা শর্মীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন বেচারা দাদীর কথায় মন খারাপ করে ফেলেছে তাই মাকে উদ্দশ্য করে বললেন- মা, এইভাবে বলাটা ঠিক হল না। শর্মীর সম্পর্কে জেনেই আমরা এগিয়েছিলাম। ওকে আমাদের আগে থেকেই ভালো লেগেছিল। আমরা কিন্তু মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়েই গিয়েছিলাম।

-তোরা তো বিয়ে পাকা করার জন্য গেছিলি, বিয়ে করাইতে তো যাস নাই। ধুমধাম কইরা বিয়ে দিমু আর এখন কী হইল?

-সব আল্লাহ্‌র ইচ্ছে মা। আমরা নাহয় সুপ্তির বিয়েটা ঘটা করে দেব। তারপর আর কোনো কথা হল না। সবাই চুপচাপ খেতে লাগল। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে এলে দাদী তখন ঘোষণা করলেন-

-কাল সৈকত চলে যাবে তাই কালকের দুপুরের খাবার নাতবউ রান্না করবে।

আচমকা এই কথা শুনে শর্মীর কাশি উঠে গেল। সে তো এক চা বানানো ছাড়া রান্নার র’ও জানে না! সৈকত শর্মীর খাবি খাওয়া দেখে ইশারা করে বলল “কী হয়েছে?”

-শর্মী আস্তে করে মাথা ঝুলিয়ে দেখাল সে রান্না পারে না।

সৈকত সেটা দেখে মুচকি হেসে বলল- দাদী এখনই আমাকে মা ছেড়ে বউয়ের হাতের রান্না খেতে বলছ? পরে আবার বলে বসবে “বউ পাগলা হয়েছিস”। ওসব হবে না।

-এ আবার কী কথা? তো তোর বউ কী রান্না করে খাওয়াবে না তোকে?

-আলবৎ খাওয়াবে কিন্তু সময় তো চলে যাচ্ছে না। সে আগে আম্মুর কাছ থেকে রান্না শিখে নিক। এখনই কিছু করতে হবে না।

-বউয়ের জন্য দেখি তোর বেসম্ভব দরদরে?

-দরদ তো তোমার জন্যওগো দাদী। একটু আকটু দরদ অন্য কাউকে দেখালে কিছু হয় না।

-চুপ থাক। বিয়া না হইতেই বউর জন্য পাগল হয়ে গেছস।

সৈকত সেটা শুনে মুচকি হাসল।

খাওয়া শেষ হলে শর্মী সৈকতের ঘরে এসে দেখে সৈকত ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। তাকে দেখেই বলে উঠল-

-তুমি তাহলে কোনো কাজেরই না, জীবনে আদৌ কিছু শিখেছ নাকি শুধু আমার আগেপিছেই ঘুরতে পারো?

-শর্মী বুঝল সৈকত এখন ইচ্ছে মত তাকে লেগ পুলিং করবে। তাই সে কিছু না বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। তাছাড়া সৈকতের সামনে থাকলে ও ঠিক ধরে ফেলবে শর্মী ওর চলে যাওয়াতে কষ্ট পাচ্ছে। সেটা আরও লজ্জাকর হবে। শর্মী আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল শুক্লপক্ষের চাঁদ তার স্পষ্ট অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে ভাবল আচ্ছা, এত অল্প সময়ে কারো জন্য এত মায়া অনুভূতি কাজ করতে পারে? অদ্ভুত! এই অনুভূতির নাম কী আসলে? ঘর থেকে সৈকত তখন চেঁচিয়ে বলল-

-এই বুশ এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও তো।

শর্মী চোখ পাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল আর তখনই সৈকতের ফোন আসে। সে ফোন রিসিভ করেই বলতে থাকে “হ্যাঁ তিথি বলো… না, তেমন কিছু করছি না, আপাতত এক্স প্রেসিডেন্ট বুশকে দিয়ে পানি আনাচ্ছি। বুঝুক হোয়াইট হাউস ছাড়লে কেমন লাগে?” ওপাশ থেকে কী বলল তা তো আর শর্মীর শোনার উপায় নেই কিন্তু কথাটা বলার পর ভীষণ হা হা হি হি চলছিল সেটা দেখতে পাচ্ছিল। এত আহ্লাদ করে “হ্যাঁ তিথি বলো” বলার মানেটাই বা কী সে বুঝতে পারল না, যত্তসব। সে পানি এনে সৈকতকে দিয়ে সরে যেতে নিলে সৈকত ফোন রেখে ওর হাত ধরে বলল-

-যাচ্ছ কোথায়? বসো এখানে। শর্মী বসল। সৈকত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- কী হল হঠাৎ এমন রাগ রাগ চুপচাপ?

-কিছু হয়নি…

-আমি কাল চলে যাচ্ছি দেখে মন খারাপ হচ্ছে নাকি আবার?

-আপনার মত বাদর ছেলে চলে গেলে কারো মন খারাপ হয় না, শান্তি শান্তি ফিল হয়।

-হা হা হা… আমার অনুপস্থিতিও তাহলে কম কিছু নয়, বলো? তবে তুমি মুখে যা-ই বলো তোমার চেহারা কিন্তু অন্য কিছু বলছে।

-আমার চেহারা এখন ঘুমের কথা বলছে। সরুন তো, বলেই শর্মী উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। শর্মী আজ মেরুন রঙের একটা শাড়ি পরেছে। শাড়ির ফাঁকে তার ফর্সা কোমর দেখা যাচ্ছিল। সৈকত সেটা দেখে বলল-

-এই তোমার মতলবটা কী এভাবে কোমর দেখিয়ে ঘুমাচ্ছ?

শর্মী তাড়াতাড়ি সৈকতের দিকে ফিরে আঁচল টেনেটুনে চোখ বন্ধ করে পরে রইল।

সৈকত হেসে কাজে মন দিল, যাক এখন মন চাইলেই মন ভরে এর দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে। কাল তো চলেই যাচ্ছে কিছুদিন পর আবার এই চাঁদমুখ দেখার সুযোগ হবে। সৈকত নিজেও বুঝতে পারছে ওকে ও যতই লেগ পুলিং করুক আসলে সে নিজেও এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। গত ৫ দিনেই এর প্রতি যা অনুভূতি হয়েছে তাতে একে ছেড়ে থাকতে ওর কষ্ট হবে। কিন্তু কিছু তো করারও নেই… ভালো হত একে সাথে করে নিয়ে যেতে পারলে কিন্তু সেটা এখনই করা সম্ভব নয়। সে কিছুক্ষণ কাজ রেখে শর্মীর দিকে তাকিয়ে রইল…

সৈকত ঘুমিয়ে যেতেই শর্মী জেগে উঠল। জানালা গলে চাঁদের আলো এসে পড়েছে ঘরে। সেই আলোয় দেখল সৈকতের মুখটা ওর খুব কাছেই… যেন ওকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেছে। ওর ইচ্ছে হল ওকে ছুঁয়ে দিতে কিন্তু যা পাজি ছেলে ঘুম ভেঙে গেলেই এমন কিছু বলে বসবে যে ওর মুখ লুকোবার জায়গা থাকবে না। সারাক্ষণ মজা নেয় অথচ তিথি না ফিতি ওর সাথে তো ঠিকই কত সুন্দর করে কথা বলল! কাল চলে যাচ্ছে আবার কতদিন পর দেখা হবে একটু কী পারত না এক সাথে রোমান্টিক কিছু মুহূর্ত কাটাতে? পাজি কোথাকার। ঘুমিয়েছ না, এবার দেখাচ্ছি মজা… সৈকতের ফোনটা ওর মাথার পাশেই ছিল… আস্তে করে উঠে ফোনটা নিয়ে খুব সাবধানে ওর হাত নিয়ে ফিঙ্গার লক খুলে ফেলল। তারপর উঠে বসে প্রথমে ওর কল হিস্ট্রি দেখল। সেখানে তিথি, শেলী, তুলি আর আফসানা নামের ৪টা মেয়েদের নাম্বার পেল যেগুলোতে রেগুলারই কথা হয়। শর্মী সেই নাম ৪ টা পাল্টে শাঁকচুন্নি, পেত্নী, ভূতনি আর ডাইনি দিয়ে দিল। তারপর যেটা অফিস বস লিখা সেটা “হিটলার” নাম দিয়ে সেভ করে দিল। তারপর যে নাম্বার গুলোতে রেগুলার কথা হয় আর যত মেয়ের নাম্বার আছে সব কটাই কাশেম, কসাই, গোয়ালা, বেক্কল, বলদ, গরু, ছাগল, মুরগি, পাঙ্গাস, ট্যাংরা, টেম্পু, বিচ্ছু, তেলাপোকা, টিকটিকি, ভাল্লুক দিয়ে সেভ করে দিল। নিজের নাম্বারটা দেখল “বুশ” দিয়ে সেভ করা, সেটা পাল্টে “হার্টবিট ?” লিখে দিল। তারপর মুচকি হেসে গ্যালারীতে ঢুকল। সেখানে শর্মীর বেশ কিছু ছবি দেখল যা বিভিন্ন সময়ে লুকিয়ে তোলা হয়েছে! ব্যাপারটা শর্মীর কাছে খুব ভালো লাগল। ইসস এমন লুকিয়ে ছবি তোলার কী মানে? তখন নিজের ফোনের টর্চ জ্বেলে হালকা আলো করে পটাপট দুজনার কয়েকটা সুইট সেল্ফি নিয়ে নিল। তারপর নিজের ফোনেও তুলল। ছবি তোলা শেষ করে ফোনটা আস্তে করে রেখে দিল। কাল থেকে নাম্বার নিয়ে সৈকত কী বিড়ম্বনায় পরবে সেটা ভেবে তার খুব হাসি পাচ্ছিল। কাল ওকে ফোনটা বেশি হাতে নিতে দেয়া যাবে না। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার পর সব দেখুক, তার আগে দেখলে কী হবে কে জানে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here