#সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ৩)
সন্ধ্যায় সৈকতের বাসের টিকিট কাটা সেই উদ্দেশ্যে শর্মীর সারাদিন ব্যস্ততায় কেটে গেল। আর সৈকত সারাদিন শর্মীর সাথে কথা বলার চান্স খুঁজে গেছে শুধু। সৈকতের আজ কোনো ফোন আসেনি তাই শর্মীর কোনো ঝামেলা হল না। কিন্তু সারাদিনে একটাও ফোন এলো না এটা কেমন কথা! বিকেলে সৈকত শর্মীকে অনেক্ষণ না দেখে সুপ্তিকে বলল-
-কিরে ঘরের কোনো কাজ করিস টরিস না কিছু, না? আজ বাদে কাল বিয়ে হবে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তো আমাদের সবার নাক কাটিয়ে ফেলবি। আম্মুকে সাহায্য করতে পারিস না?
-ও বাবা! হঠাৎ করে এসব বলছ? ঘটনা কী?
-ঘটনা আবার কী হবে? সন্ধ্যায় চলে যাচ্ছি আর তোর ভাবির সাথে এখন পর্যন্ত একটু ভালো করে কথাই বলতে পারলাম না। বিয়ে করে লাভটা কী হলো?
-হা হা হা… ও বুঝেছি। আগে বলবি তো? আচ্ছা তুই ছাদে যা আমি ভাবিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-সাথে চা নিয়ে আসতে বলিস।
-বলব। বলে সে হাত পেতে রইল…
-কী?
-তোর এত কাজ করে দিব আমাকে একটু খুশি করবি না?
-মাইর চিনিস? কোনো টাকা পাবি না, যা ভাগ। এই তোর বয়ফ্রেন্ডের কী যেন নাম? দিব সব বাবাকে বলে?
-আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই। এসব বলে তুই কথা ঘুরাবি না। টাকা দে নইলে আমি ভাগলাম।
-আচ্ছা পরে নিস এখন শর্মীকে ডেকে দে।
-উহু, বাকির কাজ ফাঁকি। তুই এই করে করে আমার কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছিস আজ আর তা হবে না।
-কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছি!!! আমার সেলারির অর্ধেক যায় তোর ঘুষের পেছনে আর আমাকে এসব বলছিস?
-দিবি নাকি চলে যাব?
-আচ্ছা ঠিক আছে নে ৫০০ দিলাম এবার যা।
-আরও ১০০০
-কিসের ১০০০?
-আগের পাওনা। তুই ঘুষ দিবি বলে আমাকে দিয়ে শুধু কাজ করাস আর কাজ শেষ হলেই “যা ভাগ” বলে বিদায় করে দিস। আরও ১০০০দিবি তারপর কাজ হবে নয়ত টাটা বাই বাই…
-আর এক পয়সাও পাবি না। ৫০০ দিয়েছি এইটার হিসাব লিখে রাখবি। যা শর্মীকে পাঠিয়ে দে।
-ঠিক আছে দিতে হবে না। আমার আবার এত টাকা খাওয়ার সখ নাই। যাই নিচ তলার আন্টি বলেছিল ভাবিকে নিয়ে চা খেতে যেতে, আজ নাহয় সেখানেই চা খেয়ে আসি।
-আচ্ছা আচ্ছা নে। আর শোন মনে রাখিস “এক মাঘে শীত যায় না”।
-আমি পড়াই মনে রাখতে পারি না এসব মনে রাখার টাইম কই? থ্যাংকইউ ভাইয়া।
-শোন আমি যে ওর জন্য অপেক্ষা করছি ওকে ডেকে পাঠিয়েছি এসব আবার বলে দিস না।
-ঠিক আছে তাহলে আর ২০০দে?
-সৈকত ওর কান ধরে বলল- নিবি আরও ২০০?
-নিব না নিব না, ছাড়…
-যা তাহলে, বলে সৈকত রাগে গজ গজ করতে করতে ছাদে চলে গেল।
সুপ্তি শর্মীকে দাদীর ঘরে পেয়ে গেল। বুঝল শর্মীকে ভাইয়া খুঁজে কেন পাচ্ছে না। সে গিয়ে শর্মীকে কাজ আছে বলে টেনে রান্না ঘরে নিয়ে এল। বলল-
-ভাবি চা বানাতে পারো?
– হুম, পারি।
-তাহলে জলদি দু’কাপ বানিয়ে ফেল।
-ঠিক আছে। ইয়ে… সুপ্তি, তোমার ভাইয়া কোথায় বলতে পারো?
-সুপ্তি চট করে ব্যাপারটা বুঝে নিল। বলল- বলব তার আগে আমাকে ২০০ টাকা দিতে হবে।
-শর্মী অবাক গলায় বলল- তুমি কী ঘুষ চাইছ?
-বাহ্, তুমি তো স্মার্ট আছ, ঠিক ধরে ফেলেছ! আসলে ভাইয়ার কাছে চাইলে তো পাওয়া যায় না। আর আমি তোমার কাছ থেকে নিলে তুমি সেটা ভাইয়ার কাছ থেকে খসাবে, সিম্পল।
-আমি কীভাবে টাকা খসাব?
-সে তুমি আস্তে আস্তে শিখে যাবে, আমি আছি না? এসব ব্যাপারে আমি ওস্তাদ লোক। এখন ভাইয়ার কাছে যেতে চাও কিনা বলো তাহলে জলদি টাকাটা দাও।
শর্মী ঘরে গিয়ে তার পার্স থেকে ৫০০টাকার একটা নোট এনে ওকে দিয়ে বলল- পুরোটা রাখো।
-সুপ্তি খুশি হয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে বলল- জিও ভাবি। জানো ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা খসাতে কত কষ্ট হয় পাওনা টাকাটাই দেয় না আর তুমি কিনা এত্ত বেশি দিচ্ছ! যাও যাও ভাইয়া তোমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে। চা নিয়ে সোজা ছাদে চলে যাও।
-দাঁড়াও দাঁড়াও তার মানে তুমি তোমার ভাইয়ের নির্দেশেই এখানে এসেছ?
-হ্যাঁ।
-তার কাছ থেকেও নিশ্চই খসিয়েছ?
-সে আর বলতে? তবে ভাইয়ার কাছ থেকে খসাতে অনেক ঝামেলা করতে হয়েছে।
-তুমি তো ডেঞ্জারাস মেয়ে! এক কাজের জন্য দুই পক্ষের কাছ থেকে টাকা খাচ্ছ?
-ডেঞ্জারাস না ভাবি, এটাকে বলে “ট্যালেন্ট”।
-হুম, ভালো ট্যালেন্ট আছ।
সুপ্তি হেসে চলে গেল।
সৈকত ছাদে গিয়ে আধঘণ্টার উপর বসে আছে অথচ শর্মীর দেখা নেই। মোবাইলটাও নিয়ে আসেনি যে সময় কাটাতে কিছু করবে। ফাজিল সুপ্তিটার উপর ভরসা করাটা একদম ঠিক হয়নি। উফফ এতগুলো টাকা পানির মত হাতছাড়া হয়ে গেল… সব দোষ বুশের। নতুন বিয়ে হয়েছে কোথায় স্বামী সেবায় ব্যস্ত থাকবে তা নয় সংসার উদ্ধার করে ফেলছে! বেচারা আমিটা যে চলে যাব তার কোনো খেয়াল রাখবে না? এসব ভাবতে ভাবতে আরও মিনিট ১০ চলে গেলে তারপর শর্মী ছাদে এলো। ওকে দেখেই বলল-
-পৃথিবী উল্টে ফেলা শেষ হলো তাহলে?
-মানে?
-মানে সংসার ধর্ম কী একদিনেই শিখে ফেলবে? এত ব্যস্ত!
শর্মী মুচকি হেসে বলল- আহা আপনি আমার জন্য এভাবে অধীর হয়ে অপেক্ষা করবেন সেটা আগে বললেই হতো?
-অপেক্ষা!!! তোমার জন্য? হুহ আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যেন। আমি বাসায় থাকলে প্রতিদিনই বিকেলে ছাদে আসি।
-অপেক্ষা করেননি তাহলে? কিন্তু সুপ্তি যে বলল…
সৈকত চোখ সরু করে বলল- কী বলেছে সুপ্তি?
-এই… ঘুষ নিয়ে কে নাকি ওকে দিয়ে কী কাজ করে দিতে বলেছে সেগুলো আর কী…
-সৈকত দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল- “সুপ্তি আজকে তুই শেষ…”
-কিছু বললেন?
-বললাম, চা কী ঠান্ডা হলে দিবে?
শর্মী হেসে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে রেলিঙ এ হ্যালান দিয়ে দাঁড়াল।
সৈকত ওর পাশেই এক হাত পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে চা পান করতে লাগল। দুজনেই নিরব, বলার জন্য কেউ কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না… তাদের নিরবতার হাত ধরে সন্ধ্যা নেমে এলো। সৈকত বলল-
-চলো নিচে যাই। আমার যাবার সময় হয়ে এলো…
শর্মী নড়ল না, সে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে গভীর মনোযোগে ছাদের মেঝেতে আঁকিবুঁকির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে…
সৈকত এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল- কী হলো নিচে যাবে না?
শর্মী অস্ফুট স্বরে “হু” বলে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।
তখন প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে। সৈকত শর্মীর হাত ধরে কাছে টেনে নিল। শর্মী আরও একটু ঘনিষ্ঠ হল… সৈকত তখন ওকে জড়িয়ে ধরল। কেউ কোনো কথা বলল না অথচ মনে মনে শত কথা আর অনুভূতির প্রকাশ করা হয়ে গেল।
বাসে জানালার পাশের সিটে বসেছে সৈকত। আকাশে বাঁকা চাঁদ, রাতের নিস্তব্ধতায় সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে দূরপাল্লার যত গাড়ি। সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে শর্মীর কথা ভাবতে লাগল। প্রতি মুহূর্ত একটু একটু করে পথের দূরত্ব বেড়ে চলেছে দুজনার মাঝে। অথচ মন পড়ে আছে একে অপরের কাছে। সন্ধ্যায় ছাদে দাঁড়িয়ে শর্মীর আবেগী হয়ে যাওয়াটা মনে নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল তার… আচ্ছা শর্মীও কী এই মুহূর্তে ওর কথাই ভাবছে? সে ফোন বের করল শর্মীকে কল করতে। চলে আসবে বলে আজ সারাদিন সে ফোন বন্ধ রেখেছিল। নয়ত অফিস থেকে সারাক্ষণই ফোন আসে আর ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। চেয়েছিল আজকের দিনটা শুধুই ফ্যামিলি টাইম হবে। সে ফোন ওপেন করে শর্মীর নাম্বারটা খুঁজল। কী আশ্চর্য বুশ নামের কোনো নাম্বার নেই কেন? সে শর্মী দিয়ে খুঁজল তাও পেল না। তার স্পষ্ট মনে আছে সে বুশ দিয়ে নাম্বার সেভ করেছিল। তাহলে গেল কোথায়? আজব তো! এখন শর্মীর সাথে কথা বলবে কী করে? সে সুপ্তিকে ফোন করল, ওর কাছ থেকে নাম্বার পাওয়া যাবে। সুপ্তি ফোন ধরে বলল-
-হ্যাঁ ভাইয়া বল…
-তোর ভাবির নাম্বারটা দে তো?
-ভাবির নাম্বার নেই তোর কাছে?
-আছে, কোনো কাজ পাচ্ছি না তো তাই চাচ্ছি তোর কাছে। নাম্বার থাকলে কেউ নাম্বার চায়?
-আশ্চর্য তো! এত দিনেও তোর কাছে ভাবির নাম্বার নাই আর আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছিস? আমার অনেক পড়া আছে বসে বসে তোর ঝাড়ি খেতে পারব না। বলে ফোন কেটে দিল।
সৈকতের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে আবার ফোন করল। সুপ্তি ফোন ধরে বলল-
-বললাম না পড়তে বসেছি, শুনতে পাস না?
-পড়ে একেবারে উদ্ধার করে ফেলছিস! পাস তো করিস নকল করে। নাম্বারটা আগে ম্যাসেজ কর তারপর যা খুশি কর। বলে সৈকত ফোন রেখে দিল।
১ মিনিট পর সুপ্তির ম্যাসেজ এলো “বিকাশ থেকে ১০০ টাকা আমার নাম্বারে রিচার্জ করে দে, ম্যাসেজ পাঠানোর পর্যাপ্ত টাকা নেই”
সৈকত রাগে চিড়বিড় করে উঠল কিন্তু করার কিছু নেই। বাসায় ফিরে এসে এর মজা টের পাওয়াতে হবে। দিন দিন ওর বাড় বেড়েই চলেছে। টাকা চেয়ে এত বড় ম্যাসেজ পাঠাতে পারছে আর একটা নাম্বার সেন্ড করতে পারছে না! থাপ্রায় সোজা করা দরকার। সে ১০০ টাকা পাঠিয়ে দিল সুপ্তির নাম্বারে। ৫ মিনিট পর ম্যাসেজ এলো। নাম্বার দেখে ডায়াল করার জন্য নাম্বার তুলতেই দেখল সেটা তো সেভ করা, তাও আবার “হার্টবিট?” দিয়ে! এটা সে কখন করল? সে তো করেনি। কে করল এই কাজ? কী করে হল? কিছুই বুঝতে পারল না। তবে যেভাবেই হোক নামটা কিন্তু জোস হয়েছে। তাই বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে সে কল দিল…
শর্মী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল। আকাশের ঐ চাঁদের মতই নিজেকে একলা একা লাগছিল… সৈকতকে সে ভীষণভাবে মিস করছে। সৈকতের বাড়ি, সৈকতের ঘর, সমস্ত ঘরে সৈকতের ছায়া… অথচ সৈকত নেই! তাই ঘরের ভেতর তার ভালো লাগছিল না। সে বারান্দায় অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এতটা সময় চলে গেল অথচ সৈকত তো এখনো তাকে একটা ফোন করল না! সে মন খারাপ করে ঘরে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোন হাতে নিল। তারপর গ্যালারী থেকে গতরাতে তোলা ছবিটা দেখতে লাগল… ছবিটা সে সৈকতের নাম্বারে সেট করে দিল। আচ্ছা সে কী একটা ফোন করবে সৈকতকে? না, ও কেন করবে? সৈকত দিক। ও দিলেই তো হাজারটা কথা বলে পচানো শুরু করবে। সে মনমরা হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে গিয়ে ওয়ারড্রব থেকে সৈকতের একটা টি-শার্ট নিয়ে বিছানায় বসল। সেটা গালে চেপে ধরে সৈকতের স্পর্শ পেতে চাইল… তারপর সেটার সাথে কথা বলতে লাগল… তার একটু পরই সৈকতের ফোন এলো। মুহুর্তেই শর্মী খুশি হয়ে গেল। সে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই সৈকত বলল-
-কী ব্যাপার ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলে মনে হচ্ছে? এত অপেক্ষা?
-আপনার অপেক্ষা কে করছিল? আমি তো ফেসবুক দেখছিলাম…
-ও আচ্ছা… তুমি তো তাহলে ব্যস্ত, ফোন রেখে দিচ্ছি।
-এতটাও ব্যস্ত নই যে কথা বলা যাবে না।
-কথা বলার যদি এতই সখ তাহলে ফোন দিচ্ছিলে না কেন?
-ফোন দিলেই তো বলতেন “শুধু কথা বলার বাহানা”
-বাহ্ আমাকে এত ভালো পড়তে পারো? সারাক্ষণ আমার কথাই ভাবো নাকি?
-এই… শুরু হয়ে গেল তো?
-হা হা হা… আচ্ছা শোনো একজন মেয়ে আমার জন্য বিরহে পুড়ে যাচ্ছে কী করা যায় বলো তো?
-কোন শাঁকচুন্নি, না মানে কোন মেয়ে বিরহে পুড়ছে?
-হা হা হা “শাঁকচুন্নি” এবার তো মনে হচ্ছে কারো হৃদয় পুড়ে যাচ্ছে… ওহ কী ভীষণ পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে…
-কথা না ঘুরিয়ে আগে বলুন আপনার জন্য কার এত বিরহ হচ্ছে?
-আয়নার সামনে দাঁড়াও তাহলেই দেখতে পাবে।
-শর্মীর গাল ঈষৎ লাল হয়ে গেল, বলল- আমি আয়না দেখি না।
-তাহলে কী দেখ? রাত বিরাতে লুকিয়ে লুকিয়ে জামাইর চেহারা দেখো?
-রাত বিরাতে ওসব আপনি করে বেড়ান।
-ওসব আমি করে বেড়াই সেটা তুমি কী করে বুঝলে? ঘুমিয়ে থেকে?
-আচ্ছা আপনি কী ঝগড়া করতেই ফোন করেছেন?
-না, প্রেম করতে।
-প্রেমের নমুনা দেখে আমি শিহরিত!
-আমার প্রেম এমনই রবি ঠাকুরের ভাষায়-
“রোগের মতন বাঁধিব তোমারে দারুণ আলিঙ্গনে-
মোর যাতনায় হইবি অধীর,
আমারি অনলে দহিবে শরীর,
অবিরাম শুধু আমি ছাড়া আর কিছু না রহিবে মনে।।”
-বাহ্ কবিতাও পড়েন!
-পড়ি না কিন্তু ২/১ টা মুখস্ত রাখতে হয় মানুষকে মাঝে মাঝে তাক লাগিয়ে দেবার জন্য। তুমি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে এখন।
-কী?
-তুমি আমাকে “আপনি” বলা ছাড়বে কবে?
-ছাড়ব না।
-তাহলে আমিও ঝগড়া ছাড়ব না।
-ইস আপনি একেবারে মহিলাদের মত ঝগড়ুটে!
-তুমিই তো এমন থাকতে বলছ।
-আমি কখন বললাম? আজব!
-তুমিই তো বললে “আপনি” বলা ছাড়বে না। তো আমি কী করব?
-সেজন্য আপনি ঝগড়া করবেন?
-করব। এটা আমার প্রতিবাদের ভাষা।
-অভিনব ভাষা!
-এবার অভিনব ভাষায় আমাকে “I love u” বলে ফেল।
-“I hate u”
-এই তোমার তো লজ্জাশরম নেই! বললাম আর অমনি “I love u” বলে দিলে?
-আমি কখন সেটা বললাম! আমি তো “I hate u” বললাম।
-দুটোর বাংলা অর্থ যে একই সেটা তামাম দুনিয়া জানে। “I love u” হল প্রত্যক্ষভাবে বলা আর “I hate u” হল পরোক্ষভাবে “I love u” বলা, কথা তো একই। মানে একটা আরেকটার মিরর ভার্সন।
-এর উপর PHD করেছেন মনে হচ্ছে?
-এটা সাধারণ জ্ঞান। ভালো কথা আমাকে যখন এতই মিস করছ তখন ঘুমাবার সময় আমার একটা টি-শার্ট পরে ঘুমিও, তোমার তো আবার যত্রতত্র আমাকে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস।
-উহ… ভুল করেছি আপনার গলা চেপে ধরা উচিত ছিল তখন। আর আপনার টি-শার্ট পরব আমি? হুহ, পচা গন্ধে সারা রাত ঘুমই হবে না আমার।
-তাহলে গোসল করে ফ্রেস হয়ে এসে পরবে।
-গন্ধ আপনার টি-শার্টে, বুঝেছেন?
-হুম বুঝেছি, তোমাকে ভালো একজন নাকের ডাক্তার দেখাতে হবে। তোমার স্মেল সিস্টেম ঠিক মত কাজ করছে না।
শর্মী রেগে ফোন কেটে দিল। সৈকত ফোন রেখে হাসতে লাগল। মেয়েটাকে খোঁচাতে তার সেই লাগে। তারপর শর্মীকে একটা ম্যাসেজ পাঠাল
“নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।”
ম্যাসেজ পড়ে শর্মীর মন ভালো হয়ে গেল। সে সৈকতের টি-শার্ট পরে শুয়ে পড়ল।