সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ৪)

0
241

#সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ৪)

সৈকত চট্টগ্রাম আসার পরপরই পড়ল মহা ঝামেলায়। তার এক কলিগকে ফোন করতে গিয়ে দেখে নাম্বার নেই। আশ্চর্য, সেভ করা নাম্বার সব কী হয়ে যাচ্ছে? আর কল লিস্টে অদ্ভুত সব নাম ষেটে আছে! কী করে হল এসব? তার ফ্ল্যাটে ঢোকার পর ফোন বাজতে শুরু করে, বের করে দেখে শাঁকচুন্নির নাম্বার থেকে কল এসেছে! কে শাঁকচুন্নি, কোন শাঁকচুন্নি আল্লাহ জানে। ফোন রিসিভ করে কথা বলতেই দেখল সেটা তিথি! তিথি কী করে শাঁকচুন্নি হয়ে গেল? কথা শেষ করে সে কল লিস্ট পুরোটা চেক করল, দেখল অদ্ভুত সব নাম দিয়ে কল বুক ভর্তি! কিন্তু এগুলো করল কে? এগুলো একা একা চেঞ্জ হওয়া তো আর সম্ভব না। নিশ্চই সুপ্তির কাজ এটা। ফাজিলটা তো দিন দিন ভয়ংকর বদমাইশ হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু সুপ্তি কখন করল এসব? তার চেয়েও বড় কথা ও তো আমার ফোনের পাসওয়ার্ড জানে না। এত কথা না ভেবে ওকে ফোন দিলেই তো ক্লিয়ার হয়ে যাবে, ওয়েট ফোন দিয়ে দেখাচ্ছি তোকে… সে সুপ্তিকে কল দিল…

সুপ্তি তখন ঘুমাচ্ছিল, ফোনটাও সাইলেন্ট করা। আর এদিকে সৈকত ফোন দিয়েই যাচ্ছিল… ফোন রিসিভ না হওয়ায় সৈকত ইচ্ছে মত বকাবকি করল সুপ্তিকে সেই সাথে ওর বিশ্বাসটাও গাঢ় হয়ে গেল যে, এই কাজ সুপ্তিই করেছে। সে ফোন রেখে দিয়ে ভাবল পরে আবার ফোন দেয়া যাবে।

সৈকত ওর বিয়ের কথাটা এখনো অফিসের কাউকে জানায়নি। আসলে হুট করে যেভাবে বিয়েটা হল আর জ্বর গেল তাতে বলার সময়টাই বা হল কখন? সে ঠিক করল এই সপ্তাহ পর ঢাকা থেকে ঘুরে এসে তারপর সবাইকে জানাবে। সে অফিসে গিয়ে তার কেবিনে ঢুকে দেখল তার জন্য একগাদা কাজ জমে আছে। সে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে চেয়ারে বসল। শর্মীকে একটা ফোন দিবে কিনা ভাবল… নাহ দরকার নেই, পৌছে তো ফোন দিয়েছিলই। মিনিটে মিনিটে ফোন দিলে বুঝে ফেলবে তার সাথে কথা বলার জন্য আমি মরে যাচ্ছি। তার চেয়ে লাঞ্চ আওয়ারে ফ্রি হয়ে কথা বলা যাবে, এখন কাজ করি।

সৈকত টানা কাজ করে যাচ্ছে কখন যে লাঞ্চ আওয়ার হয়ে গেছে খবর নেই। মাঝে একবার সুপ্তি ফোন করেছিল, তাকে ইচ্ছে মত ঝাড়া হয়েছে। অথচ সুপ্তি অবাক হয়ে বার বার একই কথা বলেছে যে, এই অকাজটা সে করেনি। সৈকত তবু ওকেই দোষারোপ করায় সুপ্তি রাগে দুঃখে ফোন কেটে দিয়েছে। ফোন রেখে সৈকত আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। এমন সময় কেউ বলল-

-আসব?

সৈকত ফাইল থেকে মুখ তুলে দেখল তিথি দরজায় দাঁড়িয়ে। বলল- আরে আসো আসো তোমার আবার অনুমতি লাগে নাকি?

-তা হয়ত লাগে না তবে অফিয়াল বিহেভিয়ার বলে একটা ব্যাপার আছে না?

-সেটা সবার জন্য না। তুমি তো শুধু আমার কলিগ নও একজন বন্ধুও।

-বন্ধু…! আচ্ছা তারপর বলো তোমার কী খবর টবর? এসেই তো কাজে ডুবে গেছ মনে হচ্ছে।

-আমার আর কী খবর জানোইত এতদিন জ্বরে ভুগেছি।

-হুম, কিন্তু তারপরও তোমার চেহারায় কেমন অন্যরকম একটা ব্যাপার দেখা যাচ্ছে…

সৈকত কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করল- কী রকম?

-ঠিক বোঝাতে পারব না তবে তোমাকে বেশ চাঙ্গা মনে হচ্ছে।

-এতদিন জ্বরে ভুগেও চেহারায় চাঙ্গা ভাব! ভালোই তো।

-সৈকত তোমাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল…

-কী কথা, বলো?

-অফিসের পর চলো বাইরে কোথাও বসি? আজ নাহয় একসাথে ডিনার করলাম?

-জরুরী কিছু?

-হ্যাঁ।

-ঠিক আছে, আমি সময় মত চলে আসব। সৈকতের তখন ফোন বেজে উঠল, তাকিয়ে দেখে “হার্টবিট”। নামটা দেখেই ওর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। তিথিকে বলল- তোমার কী আর কিছু বলার আছে?

তিথি বুঝল সৈকত চাইছে সে উঠে যাক। ” আর কিছু বলার নেই এখন” বলে উঠে চলে গেল। তিথি চলে যেতেই সৈকত শর্মীর ফোন পিক করে বলল-

-হ্যালো হ্যান্ডসাম জামাইর বউ…

-ইসস “গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল”! নিজেকে একেবারে উড়োজাহাজ মনে করে।

-মনে করলে উড়োজাহাজই তো মনে করব, টেম্পু মনে করার তো কোনো কারণ দেখি না। আর “গাঁ” মানুক চাই না মানুক তুমি নিশ্চই মানো যে, তুমি হ্যান্ডসাম জামাইর বউ? আচ্ছা তোমার টেনশন হয় না?

-কিসের টেনশন?

-এই যে, হ্যান্ডসাম, গুডলুকিং, স্মার্ট জামাইটা একা তোমাকে ছেড়ে এত দূরে আছে যদি কোনো মেয়ের নজরে বিদ্ধ হয়ে যায়?

-আপনার মত ত্যাদড় ছেলে কারো নজরে এসে মরবে নাকি?

-হ্যাঁ মরবেই তো, এমন ছেলে দেখলে প্রেমে ডুবে না মরে উপায় আছে?

-তাই নাকি? তা আফসানা, তিথি, শেলী, তুলি এরা কী তাদেরই দলের?

-মাই গড! তুমি এর মধ্যে এদের চিনেও রেখেছ? ওয়েট ওয়েট, আমি তো এদের সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলিনি তুমি এদের নাম জানলে কী করে?

-শর্মী নিজের জিভ কেটে চোখ বন্ধ করে ফেলল… ইসসস কী বোকামীটাই না করে ফেলল! এত গাধা কেন ও? ধরা পড়ে গেল, কী বলবে এখন? সে চুপ করে রইল… সৈকত বলল-

-তার মানে সকাল থেকে সুপ্তি অযথাই বিনাদোষে বকা খেল। কল লিস্টের ১২টা তো আসলে বুশ বাজিয়ে রেখেছে! বুশ নামের মানুষ গুলো তো দেখছি আসলেই বিরাট ভ্যাজাইলা!

-আপনি সুপ্তিকে বকেছেন? সেজন্যই তো বেচারা সকাল থেকে মুড অফ করে বসে আছে। আম্মুর সাথেও চোটপাট করেছে!

-হুম, আর আসল কালপ্রিট তো বহাল তবিয়াতেই আছে! কিন্তু কাজটা করলে কখন? আমার ফোনের পাসওয়ার্ড জানলে কী করে? কল লিস্ট এলোমেলো করা ছাড়া আর কী কী ক্রাইম করেছ তাড়াতাড়ি বলো?

-এটা ছাড়া আর কিছু করিনি। আর আপনার পাসওয়ার্ড কোথা থেকে জানব? আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন ফিঙ্গার লক খুলে নিয়েছি।

-আমার আসলে আগেই বোঝা উচিত ছিল যে কাজটা তুমি করেছ কারণ সব নাম উল্টা পাল্টা হলেও শুধু তোমার নামটাই উল্টো থেকে ঠিক হয়ে গেছে। তুমি তো সুপ্তির চেয়ে কোনো অংশে কম ডেঞ্জারাস না! এসব কেন করেছ?

-আপনি সারাক্ষণ আমার পেছনে লাগেন কেন? তাই একটু পাল্টা জবাব দিলাম।

-হুম… তোমাকে যতটা আলাভোলা ভেবেছিলাম তুমি আসলে ততটা না। তুমি তো আলাভোলা শয়তানের খালা!

-আর লাগবেন আমার পেছনে?

-নাহ। ভাবছি এখন থেকে তিথি, আফসানা, শেলী, তুলি এদের পেছনে লাগব।

-ঘাড় মটকে দেব একদম।

-হা হা হা… এত জেলাস কেন তুমি?

-এটা মোটেও জেলাসি না।

-সরাসরি বললেই তো হয় তুমি আমার প্রেমে পড়েছ?

-প্রেমে তো আপনি পড়েছেন সে কারণেই “বুশ” পাল্টে “হার্টবিট” হয়ে যাওয়াটাকে উল্টো থেকে সোজা মনে হচ্ছে।

-বাহ্ আমার সাথে থেকে থেকে তোমার ভালো ইম্প্রুভ হয়েছে তো! সারাক্ষণ আমায় ভাবা ছাড়া আর কিছু করো তো?

আপনাকে ভেবে ওয়েস্ট করার মত সময় কোথায় আমার এত?

– ও আচ্ছা… ভালো কথা তোমার সাথে অনেক কথা বলে ফেলেছি ওরা সবাই ওয়েট করছে এবার ওদেরকে সময় দিতে হবে।

-ওরা কারা?

-তিথি, শেলী, তুলি, আফসানা… আরও অনেকে, সবার নাম এখনই মনে পড়ছে না।

“যা ভাগ” বলে শর্মী কট করে ফোন কেটে দিল। সৈকত হাসতে হাসতে লাঞ্চ করতে চলে গেল। যেতে যেতে ভাবল- কী আশ্চর্য, যে অকাজের জন্য রাগে সুপ্তিকে এত এত বকা দিয়েছিল সেই কাজ শর্মী করেছে জেনে ওর ভালো লাগছে! স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সব কিছু কেমন মুহুর্তেই পাল্টে যায়! তবে সুপ্তিকে একটু বেশিই বকা দিয়ে ফেলেছে, বেচারা বোনটা… ওর রাগ ভাঙ্গাতে কিছু করতে হবে এখন।

অনেকটা সময় চলে গেছে দুজন রেস্টুরেন্টে বসে আছে। খাবারও এসে গেছে কিন্তু জরুরী যে কথাটা বলার জন্য তিথি সৈকতকে বসিয়ে রেখেছে সেটা এখনো বলছে না। শুধু এ কথা সে কথা বলে চলেছে। রাত বাড়ছে… ঘরে ফিরতে হবে তো? সৈকত অধৈর্য হয়ে বলল-

-আমরা আর কতক্ষণ বসব? কী বলতে ডেকেছ সেটা তো কিছু বলছ না?

-ডেকেছি যখন বলব তো…

-তো বলো?

-তুমি বিয়ে করবে কবে?

-হঠাৎ এই প্রশ্ন?

-বাসা থেকে আমার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে… আমি এত দিন এটা সেটা বলে কাটিয়ে নিয়েছি কিন্তু এবার আর কাটাতে পারছি না… ছেলে সব দিক থেকে ভালো…

-এটা তো ভালো খবর! আমার জানা মতে তোমার তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তাহলে তুমি রাজি হচ্ছ না কেন?

তিথি সৈকতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তারপর বলল- রাজি হয়ে যাব?

-ছেলে সব দিক থেকে ভালো হলে অবশ্যই রাজি হয়ে যাবে!

-তাহলে আমাদের সম্পর্কটা!?

দৈকত সরু চোখে বলল- আমাদের কিসের সম্পর্ক! এখানে আমাদের সম্পর্ক কোথা থেকে আসছে???

-আসছে কারণ আমাদের সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের ছিল না। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের সম্পর্ক কখনো ভালো বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, সেটা আরও বেশি কিছু হয়। আমাদের মধ্যে এত শেয়ারিং কেয়ারিং এগুলোর কী মানে?

সৈকত অবাক হচ্ছে তিথির কথায়, কী বলছে ও এসব? সৈকত তো খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন বন্ধুর মত চলত ওর সাথে, বন্ধুত্বের সীমারেখা মেনেই চলত। সে খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল- কে বলেছে তোমাকে ছেলে আর মেয়ের সম্পর্ক বন্ধুত্বের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না? আর বন্ধুর সাথে শেয়ারিং কেয়ারিং হবে না তো কার সাথে হবে? এসব করলেই সেটা বন্ধুত্বের বেশি কিছু হয়ে গেল?

-একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে যখন আলাদা করে বন্ধুত্বটা গাঢ় হয় সেটা কেন হয়? বেশি কিছু হয় বলেই তো হয়?

তিথি তুমি একটা ভুলের ভেতর বাস করছ। বন্ধুত্ব আর তার থেকে বেশি কিছু হয়ে যাবার যে সীমারেখা সেটা সম্পর্কে তোমার নিজেরই সঠিক ধারণা নেই। যে কারণে আমাকে এসব বলতে পারছ। ভেবে বলো তো, আমি কখনো এমন কিছু বলেছি যেটাতে প্রেম ভালোবাসা প্রকাশ পায়?

-সব কথা কী শুধু মুখে বললেই হয়?

-তা হয়ত সব সময় হয় না। কিন্তু আমি জানি আমি কখনোই এমন কিছু করিনি যেটাতে তোমার এসব মনে হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা, মনের ধারণার উপর ডিপেন্ড করে এধরণের কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না। এটা শ্রেফ বোকামো।

-সবটাই তাহলে আমার বোকামো?

-বোকামো নয়? এলোমেলো যা খুশি ভেবে নিলেই তো হবে না।

-ঠিক আছে আমি নাহয় ভুলের ভেতর ছিলাম। এখন যেহেতু বিষয়টা উঠেই গেল তুমি তো বুঝেই গিয়েছ আমি তোমাকে কী চোখে দেখছি। আমাদের মাঝে যেহেতু ভালো একটা সম্পর্ক আছেই তাহলে এখন কী তুমি আমাকে নিয়ে ভাবতে পারো না?

-না, পারি না। এটা অসম্ভব।

-অসম্ভব! কেন অসম্ভব??? কী সমস্যা?

-সমস্যা এটাই যে, বন্ধু আর কলিগ ছাড়া তোমাকে আমি কখনো কিছু ভাবিনি। আমাদের এত দিনের পরিচয়, তোমাকে নিয়ে তেমন কোনো অনুভূতি তৈরি হবার থাকলে এতদিনে নিশ্চই তা হয়ে যেত।

তিথি মরিয়া হয়ে বলল- কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!

-তোমার প্রতি আমার এমন কোনো ফিলিংস নেই, বুঝতে পারছ না কেন?

-ঠিক আছে, আমি তো বুঝলাম সেভাবে আমাকে নিয়ে কখনো ভাবোনি, তাহলে এখন ভাবো? একবার ভেবে দেখতে তো পারো? আমার ধারণা তখন তোমার ধারণা পাল্টাবে।

-আমি তো বললাম এটা সম্ভব নয়, কখনোই না।

-“কখনোই না” বলছ কেন? তুমি প্রয়োজনে সময় নাও?

-এখানে সময় নেয়ার কোন প্রয়োজন দেখছি না। তারপর নরম হয়ে বলল- তিথি, আমরা দুজন ম্যাচিউরড মানুষ, ছেলেমানুষি আমাদের মানায় না।ভালোবাসা ব্যাপারটা মন থেকে আপনিই তৈরি হয়ে যায়। এটা বলে কয়ে ভেবেচিন্তে হয় না কখনোই। তোমার ব্যাপারে এমন ফিলিংস আমার কখনোই আসেনি আর আসবেও না। তুমি একটা স্মার্ট মেয়ে তোমার কাছ থেকে এমনটা আমি আশাও করি না। বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভালো করে সব কিছু বুঝতে চেষ্টা করো। তারপর নিজেই সিদ্ধান্তে আসতে পারবে যে, এসব ছেলেমানুষি রেখে তোমার জন্য দেখা পাত্রকে বিয়ে করাটাই উত্তম হবে। আমার কথা শেষ। আমি এখন উঠব।

-তিথি চুপ করে বসে রইল… তার চোখে পানি চলে এসেছে। সে আর কিছুই বলল না। তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদে… সে মনে মনে সৈকতকে কত ভালোবেসেছিল… কত স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলেছিল… সবই বালির ঘরের মত একটা ঢেউয়ে বিলিন হয়ে গেল!

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সৈকত তিথিকে রিকশা ঠিক করে দিল। তিথি বলল-

-তুমি আসবে না?

-না।

তিথি কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। পুরো ব্যাপারটায় সৈকত হকচকিয়ে গেছে। সে চাইলেই তার বিয়ে হয়ে গেছে বলে দিতে পারত। কিন্তু সেটা করেনি, কারণ সে চেয়েছে তিথি এটা বুঝুক যে সৈকত কোনো ভাবেই তিথিকে প্রেম ভালোবাসার মত ব্যাপারে চায়নি এবং চায়ও না। বিয়ের ব্যাপারটা বললে তিথি হয়ত ভাবত সৈকত বেটার অপশন পেয়ে ওকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে। তাই বিয়ের কথা সে সময়মত সবাইকে একসাথে জানাবে। তবে তিথির জন্য তার মন খারাপ লাগতে লাগল। তিথির সাথে তার হয়ত ভালো বন্ধুত্বে জড়ানোটা ঠিক হয়নি। মেয়েটা এত বোকা কেন? সে তো সবার সাথেই এভাবে মেশে, তাহলে ও কেন এমন ভাবনা ভাববে?

এরপর থেকে সৈকত তিথিকে এড়িয়ে চলতে লাগল। সেই সাথে অফিসের অন্য সব মেয়ে স্টাফদেরও এড়িয়ে চলতে লাগল। তিথি ওর বিয়ের কী করল সেটাও জানতে চাইল না। অফিসের কাজ নিয়ে নিজের ব্যস্ততা দেখাল। সবাই দেখল সৈকত আজকাল কাজ আর ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

আজ মঙ্গলবার, সৈকত অপেক্ষায় আছে বৃহষ্পতিবার অফিস করে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবে। তবে শর্মীকে জানাবে না। সৈকতকে হুট করে দেখতে পেয়ে শর্মীর কী অনুভূতি হয় সেটা দেখতে চায় সে। তারপর সে আম্মুকে ফোন দেয়। ওর আম্মু ফোন পিক করতেই সালাম দিল। ওর আম্মু সালামের জবাব দিয়ে বলল-

-কী করছিস?

-এই একটু কাজ আছে শেষ করে ঘুমিয়ে পরব। তুমি কি করছ?

-এই তো শুতে যাব এখন। শর্মীর সাথে কি কথা টথা বলিস ঠিক মত?

-বলি তো।

-ভালোভাবে কথা বলবি। একদম জ্বালাবি না ওকে।

-আমি তো ওকে জ্বালাই না। কিন্তু কথা হলো আমি নেই আর সেই সুযোগে দাদীর প্রযোজনায় তোমরা বউ শ্বাশুড়ি মিলে বাংলা সিনেমা নাকি হিন্দি সিরিয়াল বানাচ্ছ প্রশ্ন তো সেটা?

-এগুলো আবার কি কথা? ফাজিল ছেলে।

-হা হা হা…

-তুই এবার আসলে ওকে নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসিস। কয়েকদিন তো হয়ে গেল এসেছে। বাড়ির কথা ভাবে মনেহয়।

-আমাকেই কেন নিয়ে যেতে হবে? এ সপ্তাহে ঢাকা আসতে পারব কিনা তাই তো জানি না। আমি বরং শিহাবকে বলে দিচ্ছি ও এসে নিয়ে যাক।

-ঠিক আছে। তারপর মা ছেলে আরও কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয়।

সৈকত এরপর শর্মীকে কল দিল, শর্মী ফোন পিক করে বলল-

-হ্যালো…

-এমন শুকনো শুকনো হ্যালো বলছ কেন?

-তাহলে কীভাবে বলব?

-“কীভাবে বলব” মানে? তোমার হ্যান্ডসাম জামাই এত রাতে ফোন করেছে গলায় ১০০০ ওয়াটের ঝলকানি দিয়ে বলবা “হ্যালো জান… আই মিস ইউ বেবি… উম্মাহ”

শর্মী নিঃশব্দে হেসে বলল- আমি এসব ন্যাকামো পারি না।

-তাহলে কোন সব ন্যাকামো পারো?

-শর্মী চুপ করে রইল।

-তোমার কি মন খারাপ?

-না।

-তাহলে এমন চুপচাপ? বাড়ির কথা মনে পড়ছে?

শর্মী মনে মনে বলল- আপনাকে মনে পড়ছে… ভীষণভাবে মনে পড়ছে…

-কথা না বললে হবে? ঠিক আছে আমি শিহাবকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও এসে তোমাকে নিয়ে যাক। ওখানে কিছুদিন থেকে আসো ভালো লাগবে।

-শর্মী এটা শুনে খুশি হল। বলল- ঠিক আছে বলে দিন। আর…

-আর?

-আপনি কবে আসবেন? মানে আমাকে নিতে আসবেন কবে?

-সেটা এখনো বলতে পারছি না। অফিসে কাজের চাপ আছে। এই সপ্তাহে ঢাকা আসতে পারব কিনা জানি না।

-ও… খেয়েছেন আপনি?

-হুম। তুমি?

-না।

-না কেন?

-ইচ্ছে করছিল না।

-ফোন রাখলাম।

-কেন?

-কী করব?

-আপনি কী রাগ করলেন?

-তুমি শুধু হু হা করে যাচ্ছ আমি একা কী কথা বলব?

-আপনি বলুন আমি তো শুনছি।

-আমার ঘুম পাচ্ছে, রাখি? পরে আবার কথা হবে।

সৈকত ফোন রেখে দিল। শর্মীর ইচ্ছে হচ্ছে সৈকতের কলার চেপে ধরে বলে- “আমার হ্যান্ডসাম জামাই, এমনিই দূরে থাকো এখন আবার ফোন কেটে দেয়া হচ্ছে? এমন পানিশমেন্ট দিব যে আমাকে ছেড়ে থাকার কথা মনেও আনতে পারবে না।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here