সেদিন ছিল পূর্ণিমা
পর্ব:- ০৫ প্রথম অংশ
অবন্তী কর দিয়ে বললো,
” সাজু ভাই, টগর ভাই নাকি মা-রা গেছে। একটু আগে বাড়ির মালিকের স্ত্রী এসে বলে গেল! ”
সাজু স্বাভাবিক ভাবে বললো,
” টগর মারা যায়নি, বেঁচে আছে। আপনি টগরকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার স্বামীর একটা ছবি পাঠান তো আমাকে। ”
অবন্তী অবাক হয়ে গেল। তামান্না তার সামনে বসে অবন্তীর চেহারায় বিস্মিত ভাব দেখতে পেল। তবু চুপ করে রইল অবন্তী।
” সাজু ভাই আপনি কি নিশ্চিত? ”
” হ্যাঁ নিশ্চিত, যা কিছু ঘটুক আপনি বাসা থেকে বের হবেন না। আমি আপনার বান্ধবীর বাসায় এসেছি। এখান থেকে বের হয়ে থানায় খবর দিয়ে দেবো। ”
” সোহাগের ছবি পাঠাবো? ”
” হ্যাঁ পাঠিয়ে দেন। ”
মোবাইল রেখে সাজু আবারও রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রাবেয়া মাথা নিচু করে আছে। তার শশুর বিরক্তি প্রকাশ করতে চাইছে। ভদ্রলোক নিজে হয়তো বেশি কিছু জানেন না, তার চেহারার মধ্যে একটা জিজ্ঞেসু দৃষ্টি আছে।
সাজু বললো,
” টগর নাকি খু-ন হয়ে গেছে। মিসেস রাবেয়া আপনি বুঝতে পারছেন ঝামেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আকার ধারণ করেছে? ”
রাবেয়া জবাব দিল না। দরজার সামনে আবারও রাবেয়ার শাশুড়ীকে দেখা যাচ্ছে। সাজু সেদিকে তাকিয়ে আবারও রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাজু বললো,
” আপনি কিছু না বললে আমি পুলিশের কাছে আপনাদের পরিবারের নামগুলো উল্লেখ করবো। অপরাধীকে সাহায্য করার অপরাধে আপনারা খানিকটা দোষী হবেন। ”
” বৌমা, সবকিছু বলে দাও। ”
বিরক্তি নিয়ে বললেন রাবেয়ার শশুর।
রাবেয়া বললো,
” কি বলবো বলেন? ”
” অবন্তীর বিষয় অপরিচিত কারা খোঁজখবর নিয়েছে এবং সেটা কবে নিয়েছে? ”
” আমি যেদিন সন্ধ্যা বেলা অবন্তীকে নিয়ে টগর ভাইয়ের কাছে গেছি সেদিন সকালে দুজন লোক এর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়। ”
” অবন্তী তখন কোথায় ছিল? ”
” বাসায় ছিল। আমি আর আম্মা দুজন মিলে একটু বাজারে গেছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে দুজন লোকের সঙ্গে দেখা হয়। ”
” তারা কি বলে? ”
” অবন্তীর পরিচয় জানতে চায়। আমি তখন ভয়ে সবকিছু বলে দেই। তারপর তারা অবন্তীর স্বামীর নাম্বার চায়। আমার কাছে নাম্বার ছিল না। কিন্তু বিকেলে বাসায় ফিরে অবন্তীর কাছ থেকে নাম্বার কৌশলে নিয়ে নি। ”
” লোকগুলো কে আগে চিনতেন? ”
” না, তাছাড়া মাস্ক পরে ছিল। ”
” তারপর বলেন! ”
” বাসায় ফেরার সময় আমার শাশুড়ী অনেক কথা বলে। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে অবন্তীকে টগর ভাইয়ের কাছে তুলে দিব। অবন্তী যে বিপদে পড়েছে বুঝতে পারি তাই সেখান থেকে বাঁচানোর জন্য টগর ভাইকে স্মরণ করি। তার সঙ্গে দেখা করে চাকরি কথা বলি। ”
সাজু উঠে দাঁড়াল।
” আমরা যে খোঁজ খবর নিতে এসেছি এগুলো ওই লোকগুলোকে বলার দরকার নেই। তাহলে আপনারা বিপদে পড়বেন। ”
” টগর ভাইর কি হয়েছে? ”
” জানি না। আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে কথা বলবেন সবসময়। তাকে সাপোর্ট দিবেন কারণ তিনি মানসিক চাপ আছেন। ”
বাসা থেকে বের হয়ে গেল দুজনেই। রাস্তায় নেমে বাইক নিয়ে রওনা দিল অবন্তী যেখানে থেকে সেদিকে। বাইকে ওঠার আগেই সোহাগের ছবি দেখে নিল।
কিবরিয়া বললো,
” তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে টগর বেঁচে আছে। ”
” সম্ভবত এটা ভুল খবর। টগরকে তারা কিছুই করবে না বন্ধু , কারণ টগরকে খু-ন করলে বিপদ আরো বাড়বে! ”
” কিন্তু কেন? ”
” এখানে খুব বেশি টাকার বিষয় নয় তাই এদের দলটা হবে ছোট। ছোট দল হলেও এরা খুবই সতর্ক এবং বুদ্ধিমান তো বটে। এখন যদি টগরকে খুন করে তাহলে পুলিশ সেটা তদন্ত করবে। আর তদন্ত শুরু হলে এদের বিপদ বাড়বে এবং অবন্তী চলে যাবে পুলিশ হেফাজতে। ”
সাজুর মোবাইল আবারও রিং হচ্ছে। কিবরিয়া মোবাইল রিসিভ সাজুর কানের কাছে ধরলো। সাজু সেভাবেই কথা বলতে লাগলো।
” আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন সাজু ভাই? শরীর সুস্থ তো? ”
কন্ঠটা পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু বাইক চলছে তাই ঠিক বুঝতে পারলো না সাজু। সে বললো,
” ভালো আছি, কিন্তু কে আপনি? ”
” চিনতে পারছেন না আমাকে? ভালো করে স্মরণ করার চেষ্টা করেন ঠিকই চিনতে পারবেন। সাজু ভাই আমি জানি আপনি চিনতে পারবেন। কারণ আপনি বুদ্ধিমান, আমাকে না চেনার কোনো কারণ তো নেই সাজু ভাই। ”
কলটা কেটে গেল। বাইক দাঁড় করালো সাজু।
কিবরিয়া বললো,
” কি হয়েছে? কে কল দিয়েছে? ”
সাজু সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” রবিউল ইসলাম…! ”
★★★
সোহাগ যে লোকটার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে তিনি সোহাগের উপর প্রচুর বিরক্ত। দুপুর থেকে আধা ঘণ্টা পরপর শুধু চা খাচ্ছে সোহাগ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আর কিছুক্ষণ পর পর শুধু বলে,
” ভাইজান চলেন একটু চা খেয়ে আসি। ”
আজকে দুপুর থেকে এই রাত পর্যন্ত যে পরিমাণ চা সোহাগ খেয়েছে। সেই পরিমাণ চা তার সঙ্গের লোকটা দুই বছরেও খায়নি। সে মনে মনে তাদের দলের বসকে গালি দিচ্ছে। এই ধরনের লোকজন সচারাচর সবসময় মুখে গালি ব্যবহার করে। তবে সামনাসামনি গালি দিতে পারে না কিন্তু মনে মনে ঠিকই দেয়।
টগরের মৃত্যুর সংবাদ ইতিমধ্যে ভালো কার্যক্রম শুরু করেছে। আশেপাশের মানুষের মুখে টুকটাক শুনতে পাওয়া যাচ্ছে টগরের কথা। একটু পর পর কল দিয়ে আপডেট জানাতে হচ্ছে তাকে।
সোহাগ বললো,
” ভাই আমি রাতে কোথায় ঘুমাবো? ”
” কোনো ঘুম নাই। সারাদিন পেরিয়ে গেল নিজের বউকে বাসা থেকে বের করতে পারলেন না। ঘুমের কথা চিন্তা করেন কীভাবে? ”
” ঠিকমতো না ঘুমালে আমার শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, তখন তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর আপনি যাকে আমার স্ত্রী বলছেন সে আমার স্ত্রী আগে ছিল। এখন নাই, আমাদের তালাক হয়ে গেছে, ডিভোর্স। ”
মহা ঝামেলা হয়ে গেল। সোহাগকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেল তার সঙ্গী। সঙ্গের লোকটার দিকে তাকিয়ে সে বললো,
” আপনার সঙ্গে বারো ঘন্টা ধরে আছি এখনো আপনার নাম জানি না। নাম কি ভাই? ”
” জালাল। ”
” জালাল ভাই আমার ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। পেটে খুব ক্ষুধা লেগেছে, একটু ব্যবস্থা হবে? ”
জালাল আবারও বিরক্ত হয়ে গেল। সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। সোহাগের কথা সে শুনতে পায়নি এরকম একটা অভিনয় করার প্রাণপণ চেষ্টা করলো।
|
|
সাজুর মোবাইলে অবন্তীর নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। কল করেছে তামান্না। সাজু ভাই কথা বলার আগেই তামান্না বললো,
” সাজু ভাই আমি তামান্না, অবন্তীর রুমমেট। আপনি এখন কোথায় আছেন? ”
” আমরা আপনাদের বাসার কাছাকাছি। ”
ওপাশ থেকে আর কোনো কথা শোনা গেল না। মনে হচ্ছে কল না কেটেই মোবাইল রেখে ব্যস্ত হয়ে গেছে। সাজু মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য কান সজাগ করে নিল। অস্পষ্ট উচ্চারণে অবন্তীর গোঙানির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অবন্তীর কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছে,
” আপু আমি বাঁচতে চাই। আমার পরিবারে আমি না থাকলে সবার কি অবস্থা হবে? মা-বাবা সবাই না খেয়ে মারা যাবে আপু। ”
.
.
চলবে….
মোঃ সাইফুল ইসলাম