#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১১
#আয়েশা_আক্তার
🍁
এরপর থেকে শুভ আর কখনো তিথির দিকে চোখ তুলে তাকায়নি।কখনো সামনাসামনি হয়ে গেলেও শুভ তিথির সাথে কথা বলে না। বরং মাথা নিচু করে পাশ কেটে চলে যায়। ধীরে ধীরে তিথিদের এইচএসসি এক্সামের তারিখ ঘনিয়ে এলো। বিদায় অনুষ্ঠানে তিথি আর নীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। যদি ভাগ্যক্রমে তারা আলাদা হয়ে যায় তার জন্য মাফ ও চাইলো একে। কলেজ লাইফে নীরাই একমাত্র বান্ধবী তিথির।
_______
তিথি ফজরের আজানের শব্দে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে। সকাল দশটা থেকে এক্সাম। পড়তে পড়তে কখন আট টা বেজে গেছে খেয়াল ই করেনি তিথি। হঠাৎ করেই ঘড়িতে চোখ যেতেই দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় গোসল করতে। গোসল করে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে তিথি। চুল আঁচড়ে, মাথায় স্কার্ফ জড়িয়ে বই হাতে নেয় ও। কয়েকটা লাইন জোরে জোরে শব্দ তুলে রিভাইসড দিতেই তানভীর এসে বোনের সামনে ভাতের প্লেট নিয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
“জলদি, হা কর।”
“উহু, সময় নেই, খাবো না।” ( ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বইয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে কথা টা বলে তিথি)
“তুই হা কর, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”
তিথি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে আর পড়া রিভাইস দিচ্ছে। তারপর খাওয়া শেষ করে, আশেপাশের সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ের সাথে এক্সাম দিতে চলে যায় তিথি। গেইটের সামনে গিয়ে তানভীর বোনের হাত পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,
“একদম টেনশন নিবি না। প্রশ্ন পেয়ে আগে ভালো করে পড়ে তারপর ঠান্ডা মাথায় এক্সাম দিবি।”
তিথি হেসে মাথা নাড়িয়ে ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে এক্সাম হলে চলে যায়।
_____________________
দেখতে সবগুলো পরীক্ষা চলে গেলো। আজকে শেষ পরীক্ষা ছিলো তিথি দের। তাই আজকে তানভীরকে আসতে না করেছে তিথি। নীরা আর ও একাই গল্প করতে করতে চলে যাবে। কিন্তু এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ তিথিদের পথ আটকে দাঁড়ায় শুভ। তারপর তিথির হাতে একটা চিরকুট ধরে দিয়ে শুভ বলে,
” আজকের পর থেকে আর আমাদের দেখা হবে কি না জানি না। যদি কোন ভুল করে থাকি মাফ করে দিও।”
“এভাবে বলছো কেন? আর তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই। তোমার আমায় ভালো লাগতেই পারে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমি পারবো না। কারণ ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।” (তিথি না জেনেও মিথ্যা বললো)
“হুম, আমি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। ওখানেই বাকি পড়াশোনা শেষ করবো।”
তিথি আর নীরা একে অপরের দিকে তাকায়। কেউ কিছু বলে না।শুভ আবারো বলে উঠে,
” যদি কখনো আমায় প্রয়োজন হয় তবে এই নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো। আমি সর্বদা তোমায় সাহায্য করার চেষ্টা করবো। ভালো থেকো।”
এই বলে পকেট থেকে আরেকটা কাগজ বের করে তিথির হাতে দিয়ে শুভ চলে যায়। তিথি কিছুক্ষণ শুভর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করে,
“প্রিয় তিথি,
প্রিয় বলে সম্বোধন করায় কি খুব বেশি রেগে গিয়েছো তুমি? কি করবো বলো? কলেজের সেই প্রথম দিন থেকেই তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে সেই ভালো লাগা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। কতশত বার তোমাকে বলতে চেয়েছি ভালোবাসার কথা। কিন্তু মনে ভয় ছিলো যদি তুমি রিজেক্ট করে দাও। সেই ভয়টাই সত্যি হলো। তুমি আমায় রিজেক্ট করে দিলে। তোমার সাথে একই শহরে থেকে তোমাকে ভোলা যে সম্ভব নয়। তাই তো পাড়ি জমাচ্ছি সুদূর বিদেশে। ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও। আর দোয়া করো তোমায় যেন ভুলে যেতে পারি।
ইতি
তোমার না হওয়া ভালোবাসা।”
লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিথি চিরকুট এবং শুভর নাম্বার লেখা কাগজটা ছিড়ে ফেলে।
🍁
চলবে….
আসসালামু আলাইকুম। দুইদিন গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখীত। আসলে দুইদিন ধরে কেমন একটা খারাপ যে লাগছে বোঝানোর মতো না। লিখতে পারছি না, পড়তে পারছি না। কান্না পেলে কাঁদতেও পারছি না। অদ্ভুত রকমের মুড সুয়িং এ ভুগছি আমি🙂