#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১৪
#আয়েশা_আক্তার
🍁
তিথি চোখ খুলতেই দেখলো, ওর পেছন থেকে আসা একটা হাত খুব শক্ত করে ঐ বিশ্রী ছেলেটার হাত ধরে আছে। হাতের মালিক কে দেখার জন্য পেছন তাকাতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দেখা পেলো। আবিরের চোখে রাগ স্পষ্ট। চোখ ও নাক লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে যেন এখুনি আগুন বের হবে। তিথির সামনে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হচ্ছে আজ। আগন্তুক ছেলেটি বিশ্রী ভাবে বলে উঠলো,
স্যার বুঝছি মাল টারে আপনার ও ভালো লাগছে। আর আমাদের ও ভালো লাগছে। তো আমরা শত্রুতা করে কি করবো স্যার। চলেন বন্ধু হয়ে ভাগাভাগি করে নেই।
এই বিশ্রী কথা শুনে তিথির কান্না পাচ্ছে। কিন্তু তিথি কাদলো না, শুধু প্রিয় মানুষটির দিকে তাকালো। আবির প্রেয়সীর চোখের ভাষা বুঝলো। আবিরের রাগ তীর তীর করে বাড়ছে। তারপরও শান্ত কন্ঠে তিথির দিকে আইসক্রিম বক্স টা এগিয়ে দিয়ে ওকে সাইডে দাঁড়াতে বললো। তিথি ও বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে দাঁড়ালো। আবির শার্ট এর হাতা ফোল্ড করে,
কি বলছিলি? এবার বল। (নাকের উপর একটা ঘুসি দিয়ে) ও মাল তাই না? তাহলে তোর বাসায় যে তোর মা ও বোন আছে তারাও তো মাল। তাদেরকেই হাত বাড়া।
আগন্তুকঃ ভুল হয়ে গেছে স্যার। বুঝতে পারি নাই।
আবিরঃ তোর ভুলের সমাধান ই তো করছি আমি। তুই নিজেও জানিস না তুই কার দিকে হাত বাড়িয়েছিস? আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছিস তুই। যাকে আমি কখনো অপবিত্রতার স্পর্শ ছুঁতে দিব না।
আবির মারছে তো মারছেই ছাড়ার নামই নিচ্ছে না।এদিকে বিশ্রী লোকটার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিথি ভয়ে আবিরকে কিছু বলতেও পারছে না আর লোকটাকে বাঁচাতে ও পারছে না। মনেপ্রাণে কেবল দোয়া করছে কোনো অঘটন না ঘটে যায়। অবশেষে তিথি ই পা বাড়ালো আবিরকে থামাতে। এরমধ্যেই তানভীর এসে আবিরকে থামালো। যদিও আবির থামতে চায় নি।একপ্রকার জোর করেই থামিয়েছে তানভীর। আবির থেমেই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তানভীরের গালে দিলো এক থাপ্পড়। ততক্ষণে আগন্তুক বিশ্রী দেখতে ছেলেটি ছোটে পালিয়েছে।
তানভীরঃ কি করছিলি তোর কোনো ধারণা আছে? আরেকটু হলেই ছেলেটা মরে যেতো। তখন কি অবস্থা হতো তোর কেরিয়ারের সেটা না ভেবেই মারছিলি ওকে?
আবিরঃ তুই নিজেও জানিস ও কি করতে চাইছিলো। আমার কলিজাতে হাত দেয় ও কত্তো বড় সাহস? তুই না আসলে আমি ওকে মেরেই ফেলতাম।
তানভীরঃ বুঝলাম ও অন্যায় করেছে তাই বলে এভাবে মারবি? আচ্ছা বাদ দে যা হবার হয়ে গেছে।
আবিরঃ হুম সরি। তোকে এভাবে চড় মারা আমার ঠিক হয়নি। আসলে অনেক রাগ উঠে গেছিলো তো তাই আরকি।
তানভীরঃ হুম বুঝতে পারছি। আর আমি রাগ কেন করবো? বন্ধুত্বে রাগ করতে আছে নাকি? ( হাসার চেষ্টা করে)
আবির আর তানভীর দুজনেই তিথির দিকে তাকালো। তিথির যেন সবটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি সব হয়ে গেলো ওকে কেন্দ্র করে। অথচ কেউ ওর দোষ না দিয়ে নিজেদের দোষারোপ করে চলেছে আবির তানভীর দুজনেই। তানভীর বোনের কাছে এসে,
সরি বোন। আমারই দোষ, আমি অফিসের কল পেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ছিলাম। আমার উচিত ছিলো তোকে নিয়ে সতর্ক থাকা। কিন্তু আমি তা করিনি।রাগ করিস না প্লিজ।
তিথিঃ আমি রাগ করিনি ভাইয়া।
————————————————————–
ওরা তিনজন মিলে প্রানের শহর নরসিংদীতে আসলো।ট্রেনে আসার সময় তানভীর আর আবির দুজনেই আগলে রেখেছে তিথিকে। তিথি অনেকবার করুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছে আবিরের দিকে কিন্তু আবির একবারের জন্য ও তাকায়নি ঐ ঘটনার পর থেকে। এতে তিথির ভেতর টা কেমন জলছে। ট্রেন থেকে নেমেও আবির তানভীরের সাথে টুকটাক কথা বলে তিথির দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো। তিথি কষ্ট পেলেও কিছু বুঝতে দিলো না ভাইকে। ভাইয়ের সাথে টুকটাক দুষ্টুমি করতে করতে বাসায় এসে পৌছালো। তিথি ফ্রেশ হয়ে এসে ছাঁদে গেলো চাঁদ দেখবে বলে।তানভীর রাতের খাবার রান্না শেষ করে ছাঁদে চলে এলো বোনকে সঙ্গ দিবে বলে।
তানভীরঃ আরে বাহ!! বোনটা আমার বড় হয়ে গেছে দেখছি। আগের মতো ভুতে ভয় পায় না আর।
তিথিঃ ভাইয়া আমি ভার্সিটি তে পড়ি। সেই ছোট্ট টি নেই এখন। ( মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে)
তানভীরঃ হুম, তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
এরপর ভাইবোন কিছুক্ষণ গল্প করে নিচে চলে আসলো। তানভীর নিজ হাতে বোনকে খাইয়ে দিলো। এদিকে আবির এতো দিন পর নিজ দেশে এসেও কিছুই খেতে পারছে না। তার রাগ গুলো যেন কিছুতেই কমছে না। তাও বাবা-মা এর মন রাখতে একটু করে খেয়ে নিলো। তিথি ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে ভাবছে। আবিরকে কল দিবে কি না। ভাবতে ভাবতে কল করেই ফেললো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না। উপায় না পেয়ে ছোট্ট একটা মেসেজ সেন্ট করলো,
আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? যদি রাগ করে থাকেন তো সরি।
মেসেজ দেওয়ার আধঘন্টা পরও কোনো রিপ্লাই এলো না। তিথি বুঝলো মানুষ টা তার উপর অভিমান করেছে। সারারাত আর ঘুম হলো না ওর। এপাশ-ওপাশ করেই একপ্রকার রাতটা পার করলো তিথি।ফজরের আযান দিতেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। এরপর একটু শুয়ে থেকে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো ভাইয়ার জন্য আর নিজের জন্য নাস্তা রেডি করতে।
🍁
চলবে…
হেপি রিডিং অল। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।