#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১৫
#আয়েশা_আক্তার
🍁
তিথি রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। এরমধ্যেই তানভীর নিচে নামলো।
তানভীরঃ তুই আবার রান্না ঘরে যেতে গেলি কেন শুধু শুধু কষ্ট করে? আমাকেই ডাকতে পারতি আমিই করে দিতাম।
তিথিঃ ভাইয়া রান্না করতে কষ্ট কিসের? তুমি সেই ছোট থেকেই রান্না করে খাওয়াচ্ছো, তার বেলা তোমার কষ্ট হয় না। তো এখন আমার কষ্ট হবে কেন? আর আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি ভাইয়া। এখন আর ছোট্ট টি নেই আমি ভার্সিটিতে পড়ি।
তানভীরঃ তুই বুড়ী হয়ে গেলেও আমার কাছে সেই ছোট্ট টিই থাকবি।বুঝলি এবার খেতে বোস। ( বোনের মাথায় আলতো করে চাটি মেরে)
দুই ভাইবোন মিলে খাওয়া শেষ করলো। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তানভীর বোনের গালে হাত রেখে করুন সুরে বললো,
সাবধানে থাকিস কেমন? আর অসুস্থ কিংবা খারাপ লাগলে আমাকে কল করিস।
তিথি কিছু না বলে ভাইকে হালকা জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে তিথি ভাইয়ার সামনে দাড়ালো। দাড়িয়ে বললো, তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি সাবধানেই থাকবো।
তানভীর বুঝতে পারলো বোনের মন খারাপ। তাই বোন কে উদ্দেশ্য করে বললো, চল তোকে আবিরদের বাসায় দিয়ে আসি। এখানে থেকে একা একা বোর হবি। তার থেকে বরং ওখানে সবার সাথে কিছুক্ষন থাকলে তোর মনটা ভালো হয়ে যাবে। পরে না হয় আবির এসে দিয়ে যাবে তোকে।
তিথি মনে মনে এটাই চাইছিলো যেনো। মনে মনে খুশি হলেও ভাইয়ের সামনে প্রকাশ করলো না। মাথা নুইয়ে ভাইয়ের সামনে একটু ভাব নিয়ে, না ভাইয়া আমি এখানেই ঠিক আছি।
তানভীর বোনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে, ধুর পাগলি চলতো।
এই বলে বোনের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আসলো। ভাইবোন রাস্তায় খুনসুটি করতে করতে আবিরের বাসায় আসলো। তিথি এসেই রাফসান সাহেবের সাথে গল্পে মেতে উঠলো। আড়চোখে প্রিয় মানুষ টিকে খুঁজে চলেছে অনবরত। কিন্তু পাত্তাই পাচ্ছে না মানুষটার। এমন সময় রাহেলা বেগম তিথি আর রাফসান সাহেব কে চা দিয়ে পা বাড়ালেন আবিরের রুমের দিকে। তখন রাফসান সাহেব তার অর্ধাঙ্গিনী কে ডেকে বললেন,
কোথায় যাচ্ছো? বাইরে অনেক রোদ পড়ে যাবে একটুপর। এখন বাজারে যাওয়া দরকার ছিল তুমি কি কি লাগবে একটু বলে যাও।
আবিরের মা রাহেলা বেগম তিথির দিকে তাকাতেই তিথি অনুনয় সুরে বললো, আন্টি আপনি বরং আঙ্কেল কে বাজারের জিনিসপত্রে কি কি লাগবে বলে দিন আমি না হয় চা টা নিয়ে যাই।
রাহেলা বেগম মিষ্টি হেসে তিথির হাতে চায়ের কাপ টা ধরিয়ে দিলো। তিথি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আবিরের কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। আর রাহেলা বেগম বাজারের জিনিসপত্রের বর্ণনা দিতে লাগলো তার স্বামীকে। তিথি আবিরের কক্ষে আসতেই দেখলো আবির জানালা দিয়ে বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। তিথি চা বাড়িয়ে দিয়ে চা নিতে বললে, আবির নেয় ঠিকই কিন্তু একবারও তিথির দিকে তাকালো না। তিথি ভীষণ কষ্ট অনুভব করলো। সে করুন দৃষ্টি নিয়ে একপলকে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে কিন্তু আবির ফিরে ও দেখছে না তা। তিথি প্রিয় মানুষটির এ অবহেলা মেনে নিতে পারছে না। কান্না পাচ্ছে তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আবির আড় চোখে দেখলো, তার প্রেয়সীর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরছে। আবির মূর্তি নেয় থাকলেও তার ভেতর টা পুড়ছে। কিন্তু তা তিথিকে বুঝতে দিচ্ছে না।তিথি এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটার দিকে কিন্তু মানুষ টি একবারের জন্য ভুল করে হলেও তাকাচ্ছে না। তিথির এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। সে হুট করেই আবিরের হাত থেকে চায়ের কাপটা ছিনিয়ে নিলো। তারপরও আবির তিথির দিকে তাকালো না। বরং অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তিথি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আবির যখন আবার মুখ ঘোরাতে প্রস্তুত হয় ঠিক তখনই তিথি আবিরের শার্টের কলার ধরে বলে,
কি সমস্যা আপনার?
আবির কিছু বললো না। সে মূলত কিছু বলতেই চাইছে না। তিথির দিকে তাকিয়ে নতুন এক তিথিকে দেখতে পেলো আবির। তাই কপাল কুঁচকে সবটা শুধু দেখছে আর তিথি কে বলতে দিচ্ছে। তিথির কিশোরী মন আজকে যেন অবহেলার সমাপ্তি ঘটিয়ই ছাড়বে। সে আরও কাছে গিয়ে প্রিয় মানুষটির শার্ট আরও জোরে খামচে ধরে বলতে লাগলো,
সেই ছোট্ট থেকে আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু আপনি কেন বুঝেও বুঝতে চান না? আসলে সবটাই বুঝেন। বুঝেও আমাকে ইচ্ছে করে কস্ট দিচ্ছেন। কেন? আমার দোষ টা কোথায়? আপনাকে ভালোবাসি এটাই দোষ আমার নাকি বিদেশে গিয়ে অন্য কাউকে পেয়ে গেছেন???
আবির আর কিছু না ভেবেই তিথির ঠোঁটে আঙুল ছোয়ালো। তিথি শিউরে উঠলো কথা বলাও থেমে গেলো। আবির হেঁচকা টানে তিথিকে বুকের মধ্যে জরিয়ে নিলো। একটু সময় নিয়ে আবির তিথির দিকে মুখ নামিয়ে বলতে লাগলো,
🍁
চলবে….