#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১৬
#আয়েশা_আক্তার
🍁
তিথি আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে আবিরের বুক। আবির একটু সময় নিয়ে তিথির দিকে মুখ নামিয়ে বলতে লাগলো,
এইটুকু অবহেলাতেই পাখিটার এই অবস্থা? তাহলে আমর দিকটা ভাবো এবার। কালকে তোমার দিকে যখন ওরা হাত বাড়িয়েছিলো তখন আমার কেমন লেগেছে জানো? মনে হয়েছে বুকের মধ্য খান থেকে কলিজা টা কেউ ছিড়ে নিতে চাইছে।
তিথি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছে, এতে আমার দোষ টা কোথায়? আপনি আমাকে কেন ইগনোর করছেন? কালকে আপনাকে কতো গুলো কল দিলাম কিন্তু কল তুললেন ই না। টেক্সট এর রিপ্লাই ও দিলেন না। বলেই আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আবির আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ তিথিকে কাঁদতে দিলো। এরপর নিজহাতে তিথির চোখের পানি মুছে দিয়ে দুগালের উপর হাত রেখে কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে দিলো। তিথি লজ্জা পেয়ে আবিরের বুকে মুখ লোকালো। কিন্তু এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। এবার আবির কঠোর গলায় বললো,
এটা কিন্তু বারাবাড়ি হয়ে যাচ্ছে জান পাখি। আর কেঁদো না কষ্ট হচ্ছে আমার। চলো বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবো।
তিথি কান্না থামিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে, আমি আপনার সাথে যাবো না।
এতে আবির কপাল কুঁচকে তিথির দিকে তাকালো। তিথি ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নার সুরে বলে, আপনি আমায় ভালোবাসেন না।
আবির কপাল আরও খানিকটা কুঁচকে জবাব দেয় , কে বললো বাসি না?
তিথিঃ তো বলেছেন নাকি ভালোবাসেন সেটা?
আবিরঃ ওহ, তাই তো। আমি তো বলি নি ভালোবাসি। ওকে বলছি, ভালোবাসি পাগলি ভীষণ রকম ভালোবাসি। বলে আবারও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তুমি হলে আমার প্রথম ও শেষ প্রেম যা কোনো এক বর্ষায় কদম ফুলের ন্যায় উড়ে এসেছে আমার জীবনে। যা আমি আগলে রাখতে জানি। খুব যত্নে আগলে রাখবো তোমায়। জানো মা-বাবা সবাই জানে আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু তুমি ছাড়া সবাই জানে।
তিথি হাত দুটো আবিরের গলার উপর উঠিয়ে দিয়ে, আমি তো ভাবতাম আপনি আমায় ভালোবাসেন তো দুরের কথা সহ্য ও করতে পারেন না।
আবির তিথির ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো, হুশ এমন বলে না। প্রথম দেখেই ভালো লেগে যায় তোমাকে। তখন যানতাম না তুমি তানভীরের বোন। তানভীর আর আমি দুদিন তোমায় খুঁজেছি। তারপর তোমার দেখা পেলাম তাও তুমি এলে তানভীরের বোন হয়ে আমি ভেবেছিলাম তানভীর সিনক্রিয়েট করবে।আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিবে। কিন্তু না, তানভীর বুঝতে পেরেছিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই তো মেনে নেয় আমার ভালোবাসা কে।
তিথি অবাক হয়ে, কি!! ভাইয়া জানে? আর মেনেও নিছে?
আবির ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে, হুম সেই প্রথম দিকেই মেনে নিছে।
তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতোক্ষণ। হঠাৎ কি মনে করেই আবিরের মুখের দিকে এগোতে লাগলো।আবির কপাল কুঁচকে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার গালে তিথি চুমু দিয়ে দৌড় দিলো। আবির গালে হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে তিথিকে ধরতে চেয়েও পারলোনা। তাই হেসে দিয়ে গালে হাত রেখেই বলে উঠলো, সাবধানে যাও পড়ে যাবা। ভালোবাসি তোমাকে।
তিথি থেমে পেছনে তাকিয়ে হেসে বলে, আপনি হলেন মিস্টার বজ্জাত।আমি কিন্তু একটুও ভালোবাসি না আপনাকে।
আবির উচ্ছল হেসে, ওকে। এই বজ্জাত জানে কি করে বজ্জাত গিরী করে ভালোবাসা আদায় করে নিতে হয়। বরং তুমি এই বজ্জাতের বজ্জাত গীরি গুলো সহ্য কারার জন্য প্রস্তুত হও।
তিথি হেসে, আমি প্রস্তুত।
আবির এক চোখ টিপে, ওকে নিচে গিয়ে বসো আমি আসছি বাহিরে যাবো।
তিথি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে নিচে চলে গেলো।
——————————————–
তিথি পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা ভার্সিটিতে ইংরেজি প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছে। সেই ছোট্ট তিথি বড় হয়ে গেছে। যে সারাক্ষণ ভাইয়ের সাথে ঝগড়া খুনসুটি না করে দিনই পার করতে পারতো না। আজ সেই ভাইকে ছেড়েই চলে যেতে হবে। যদিও তিথি যখন ইচ্ছে তখনই ভাইয়ার কাছে চলে আসতে পারে। কিন্তু তারপরও কষ্ট হচ্ছে। সব মেয়েরই কষ্ট হয় এই সময়। আজকে অবশ্য তানভীরের ও বিয়ে। তানভীর বিয়ে টা করতে চায়নি তিথির জেদ বিয়ে হলে ভাইবোন দুজনের বিয়ে একসাথে হতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে তানভীর ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তিথির ভাইয়ের কাছে বিদায় নেওয়ার পর থেকে কেঁদেই চলেছে। গাড়িতে বসেও কাঁদছে। সবাই আলাদা গাড়িতে আর তিথি আর আবির আালাদা গাড়িতে। তিথির কান্না সহ্য করতে না পেরে আবির তিথি কে হেঁচকা টানে নিজের কুলে বসিয়ে দিলো।এতে তিথি হতভম্ব হয়ে কান্না থামিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। আবির দু’হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে,
হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। আমার বউ পাখিটা কে সবসময় উচ্ছল প্রানবন্ত চঞ্চলতামী তেই মানায়। সো নো কান্নাকাটি।
তিথি ফুপিয়ে উঠে, ভাইয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।
আবির আদুরে কন্ঠে বলে, আমি আছি তো সব কষ্ট দুর করে দিবো ভালোবাসা দিয়ে।
🍁
চলবে…
বিদ্র… আসসালামু আলাইকুম। আরেকটা পার্টেই গল্পটা শেষ করবো ইংশাআল্লাহ। সবাই গঠন মূলক মতামত দিয়ে যাবেন। হেপি রিডিং 🖤