সেদিন_বর্ষায় #পর্বঃ৪ #আয়েশা_আক্তার

0
689

#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ৪
#আয়েশা_আক্তার

🍁

আবির, তানভীর, তিথি হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ছোটে এসেছে। আবির তার বাবা রাফসান সাহেব কে ফোন করে জানালো সবটা। রাফসান সাহেবের বন্ধুর হসপিটাল এটা।উনার বন্ধু কে বলে ডক্টর দেরকে সব থেকে বেস্ট চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দিয়েছে। অনেক বেশি ই ইনজুরি হয়েছে আফজাল সাহেবের। অপারেশন থিয়েটারে জীবন মরণ যুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি। তানভীর অপারেশন থিয়েটারের সামনে সমানতালে পায়চারি করছে। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। হাত-পা কেমন অবশ হয়ে গেছে। হাঁটতেই পারছে না। তারপরও বসতে পারছে, অস্থির অস্থির করছে। আবির তানভীর কে ধরে নিয়ে বসালো।তানভীর আবিরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল জোরে। আবির তানভীরের মাথায় হাত রেখে তিথির দিকে তাকালো,মেয়েটা সেই কখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। এই পর্যন্ত দুবার জ্ঞ্যান হারিয়েছে মেয়েটা। মুখ টা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। রাফসান সাহেব হাজার চেষ্টা করে ও মেয়েটার কান্না থামাতে পারছে না। এসব দেখে আবিরের ভেতর টাও পুড়ছে। তার প্রিয় দুজন মানুষের চরম কষ্টে তার কষ্ট হবার ই কথা। একদিকে প্রিয় বন্ধু আরেকদিকে ভালোবাসা। কাকে সামলাবে আবির?? কিভাবে সামলাবে? নাহ আর ভাবতে পারছে না আবির। তানভীরের মাথায় হাত রেখে আবির বলতে লাগলো,

“তানভীর তুই যদি এভাবে ভেঙে পরিস তাহলে তিথির কি হবে??? ”

তানভির কিছু বলে না। চুপচাপ চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। আবির আবারো বলে উঠে,

“প্লিজ আর কাঁদিস না?? এখন সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কিছু করার নেই। ”

তানভীর ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিথি টলে পড়লো রাফসান সাহেবের কোলে।তানভীর কিছু না বলে বোনকে গিয়ে কোলে তুলে নিল।আবির গিয়ে তিথির জন্য আরেকটা সিট বুকিং করে তিথিকে হসপিটালাইজড করলো।ডক্টর জানালেন ভয়ের কিছু নেই, সারাদিন কিছু না খাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পরেছে। আর দুর্বলতার কারণেই এমনটা হয়েছে। স্যালাইন দিলেই ঢিক হয়ে যাবে। তিথির ক্যাবিন থেকে বেরুতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বের হলেন। তানভীর আবির দুজনেই ডক্টরের সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ডক্টর মাথা নিচু করে নিলেন।

তানভীর ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। আবির জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে ডক্টর চুপ করে আছেন কেন??”

ডক্টর করুন সুরে উত্তর দিল,

“আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা দুঃখিত। উনার শরীরে প্রতিটি হাড় অনেক খারাপ ভাবে ভেঙে গিয়েছে। আর অনেক ব্লিডিং হচ্ছিল উনার শরীর থেকে। আমরা কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না।অবশেষে থামলো তবে উনাকে বাঁচা তে পারিনি আমরা।”

তানভীর রেগে ডক্টরের কলার ধরলো।ওর চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। আবির কোনো রকমে তানভীর কে ছাড়িয়ে নিয়ে অনুরোধের সুরে ডক্টরকে বললো,

“ওর আচরণে কিছু মনে করবেন না ডক্টর। ”

ডক্টর দুঃখিত কন্ঠে,

“না, আমি কিছু মনে করিনি। উনার পক্ষে এটা করাই স্বাভাবিক।”

তানভীর মেঝেতে বসে পড়লো। চিতকার করে কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,

মা!! তুমি এতো স্বার্থপর কেন মা?? ছোট বেলায় আমাকে আর তিথি কে একলা করে চলে গেলে।কতটুকুই বা বয়স ছিল আমার। মাত্র ৫ বছর বয়স।আমার জন্য তোমার খারাপ নাই লাগলো। কিন্তু তিথি ও তো তোমার আদর যত্ন কিছুই পায়নি। ও পৃথিবীতে আশার সাথে সাথেই তুমি চলে গেলে।ওর তো অধিকার ছিল তোমাকে মা বলে ডাকার, তোমার হাতে গোসল করার, খাবার খাওয়ার। বাবা যে কিনা এতো টা বছর আমাদের আগলে রেখেছে, কখনো তোমার অভাব বুঝতে দেয় নি নিজেই রান্না করে আমাদের খাইয়েছ। মা আমি আর তিথি তো নিজের হাতে খেতে ও পারি না। বাবা একা হাতে এতো টা বছর অফিস যেমন সামলেছে তেমনি আমাকে তিথি কে সামলেছে। সেই বাবাও আজ তোমার কাছেই চলে গেলো। ও মা বলো না বাবাকে থেকে যেতে। জানো মা তিথি বোন টা আমার এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। কিভাবে সামলাবো আমি ওকে।

তানভীর নিজেও জানে না ও কি বলছে। হসপিটালের অনেক মানুষ অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে তানভীরের দিকে।

আবির ওর সামনে বসে ওকে টেনে ওঠালো,

তানভীর পাগলামি করিস না তিথির জন্য আমরা সবাই আছি। তুই নিজেকে সামলা।নয়তো তিথি কেও সামলানো যাবে না। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে কি জবাব দিব আমরা?? সবটা শুনে কেমন রিয়েক্ট করবে ও।

🍁

চলবে…..

আসসালামু আলাইকুম, আপনাদের জন্য একটা সুখবর আছে। সেটা হচ্ছে আমি কিছু দিন গল্প নিয়মিত পোস্ট করবো। মানে প্রতিদিন এক পর্ব করে পোস্ট করবো। আর এটা মাত্র কিছুদিন। কারণ ত্রিশ তারিখ থেকে আমার টেস্ট এক্সাম শুরু হবে তখন আবারো গল্প পোস্ট করতে পারবো না। তাই এই কিছুদিন আমি নিয়মিত গল্পে পোস্ট করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।হেপি রিডিং🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here