🍁
শয়/তান বান্ধবী গুলো আজকে একটাও আসেনি কলেজে। একা একা এতিমের মতো কোনোরকম ক্লাসগুলো কমপ্লিট করে কলেজ থেকে বেরিয়েছি। মন আজ ভীষণ খারাপ, তাই কোনো অটো বা মিশুকে না উঠে একা একা হেটে হেটেই বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ করেই আকাশ ঘন কালো মেঘেরা আর্তনাদ করে উঠলো।তারা যেন এখুনি একছোট্টে চলে আসবে আমার কাছে। ভিজিয়ে দিয়ে যাবে আমায়।মেঘেরা যেন চিতকার করে বলতে চাইছে, এই মেঘবতী আমরা আসছি তোমার কাছে। তোমাকে ভিজিয়ে দেওয়াই আমাদের একমাত্র কাজ।এসব ভাবনার মধ্যেই হুর মুর করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আমি ও ভীষণ খুশি হয়ে গেলাম। বৃষ্টি বিলাস করতে করতেই বাড়ি ফিরছি, হঠাৎ একটা কদম গাছের দিকে চোখ গিয়ে আটাকালো।ইশ, কি সুন্দর! গাছ থেকে কদম ফুল ছিড়ে কানে গুঁজতে ইচ্ছে হলো।যে-ই ভাবা সেই কাজ। গাছটির সাথেই ছোট্ট একটা দেয়াল ছিলো। দেয়ালে উঠে দুটো ফুল ছিড়তেই কে যেন ধমকের সুরে বলে উঠলো,
এই কেরে আমার গাছের কদম ফুল ছিড়ে??
সাথে সাথেই আমি থপাস করে নেমে দেই এক দৌড়। দৌড়ে একটু সামনে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। সামনে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম,ছাতা হাতে মধ্য বয়স্ক একজন আঙ্কেল আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।ভয়ে ভয়ে আঙ্কেল কে উদ্দেশ্য করে সালাম দিলাম,
আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল।
ভদ্রলোক মুখে হাসি ফুটিয়ে,
ওয়ালাইকুম সালাম, মা।এভাবে ভিজছো কেন ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না। তবে লোকটির কন্ঠে মা ডাক শুনে খুব ভালো লাগছে। বাবা ছাড়া আর কেউ আমায় কখনো মা বলে ডাকে নি।প্রাণ টা কেমন জুড়িয়ে যায় এমন মায়া ভরা ডাক শুনে।
কি হলো মা?? তুমি কি কোনো কারণে ভয় পেয়ছো? কেউ কি তোমায় ভয় দেখিয়েছে? আবারও ভদ্রলোকের সেই মায়াভরা কন্ঠস্বর।
আমি খানিকটা উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে মাথা নেড়ে জবাব দিলাম। যে কেউ আমায় ভয় দেখিয়েছে।
ভদ্রলোক রাগান্বিত হয়ে বললেন,
কে ভয় দেখিয়েছে তোমায়? কার এতো সাহস যে আমার মাকে ভয় দেখায়??
ঐ তো ঐ কদম গাছটা দেখছেন না ওখান থেকে দুটো কদম ফুল ছিড়ছিলাম, তখনি কেউ একজন ধমকে বলেছে, কেরে আমার গাছের কদম ফুল ছিড়ে? তার জন্যই ভয় পেয়ে দৌড়ে আসতে গিয়ে ফুল দুটো তো পড়েই গিয়েছে সেই সাথে আপনার সাথও ধাক্কা লেগে গেল। সরি, আমি দেখতে পায়নি। মখভার করে বললাম কথা গুলো।
ইটস ওকে,চলো তো দেখি কে আমার মা কে ধমক দেয়?? আর ফুল আমি তোমাকে দিচ্ছি এখুনি। চল,চল।
রাফসান সাহেব বাসায় ঢুকেই তাঁর ছোট ছেলে কে ডাকতে লাগলো,
আবির এদিকে আসো তো।কি হলো আবির কোথায় তুমি?
আবির রুম থেকে বারান্দায় এসে, কি হয়েছে…… পুরো কথা শেষ করবার আগেই আবির ১৬/১৭ বছরের কিশোরীর মধ্যে চোখ আটকে গেলো আবিরের।মেয়ে টা এতো সুন্দর কেন? যদিও দেখতে শ্যাম বর্ণের, তারপর ও এই শ্যামা রং টাই যেনো মেয়েটার জন্য পারফেক্ট। চোখ ই ফেরাতে পারছে না আবির।এর আগে আরো কতো সুন্দর মেয়ে দেখেছে আবির কই তখন তো এমন মেন হয় নি।আবিরের ভার্সিটির বান্ধবী গুলো তো আরো বেশি সুন্দর। কই তাদের প্রতি তো এরকম ফিলিংস কখনো হয়নি।রাফসান সাহেবের ডাকে আবিরের ঘোর কাটলো,
আবির কোথায় হারিয়ে গেলে?? দুটো কদম ফুল ছেঁড়ার অপরাধে তুমি নাকি ওকে ধমক দিয়ছো??বাচ্চা একটা মেয়ে দেখো তো তোমার ধমকে কেমন ভয় পেয়ে আছে?? দুটো কদম ফুল ই তো ছিড়ে ছে, আর তো কিছু করে নি।
আসলে বাবা আমি বুঝতে পারি নি,সরি।মাথা নিচু করে অপরাধীর ন্যায় কথা টা বললো আবির।
সরি টা আমাকে না বলে ওকে বলো।
না ভালো চাচ্চু আমাকে সরি বলতে হবে না। আমি বরং বাসায় চলে যাই বাবা হয়তো চিন্তা করছে আমার জন্য।
প্লিজ এভাবে চলে যেও না। আমার ভুল হয়ে গেছে সরি।আর তুমি সেই কখন থেকে ভিজে চলেছো অসুস্থ হয়ে যাবে তো। এই বলে আবির ঘর থেকে একটা ছাতা এনে দিল।আর একগুচ্ছ কদম ফুল ছিড়ে এনে দিয়ে বললো,
এই নাও তোমার কদম ফুল।
এতো গুলো কদম পেয়ে নিমিষেই আমার মন ভালো হয়ে গেলো। তাই খুশি হয়ে তার থেকে কদম গুচ্ছ নিয়ে নিলাম।
চলবে….
🍁
#সেদিন_বর্ষায়
#সূচনা_পর্ব
#আয়েশা_আক্তার
আসসালামু আলাইকুম। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। #তারার_মতো_জ্বলবো_না_হলে_জোনাকি গল্প কালকে পেয়ে যাবেন ইংশাআল্লাহ। হেপি রিডিং 🖤