সেম_এজ_রিলেশন_বিয়ে,part-07,8 last
লেখিকাঃ জিহান জারা
part-07
এদিকে মিরা খুব অসুস্থ হয়ে যায়। ওর ডাউট হতে থাকে আসলেই কি ও প্রেগন্যান্ট?? খাবার খেতে পারে না। বমি করে। চেহারা ভেঙে গেছে। এবার ওর বাবা কিছুটা বুঝে ওকে ডক্টর দেখায়। আর জানা গেল মিরা প্রেগন্যান্ট।
খুব ভোরে মিরার বোন মাহিনের মা কে ফোন দেয়…..
ইরাঃ আসসালামু আলাইকুম। আন্টি মাহিন ভাইয়াকে একটা ডাক দিয়ে দিবেন? ফোন ধরে না। কথা ছিল।
মাহিনের মাঃ আমাকে বলে নাও আগে।
ইরাঃ সরি আন্টি আমি ভাইয়াকে আগে বলে নেই।
মাহিনের মাঃ আমাকে না জানালে ওকে দিব না ফোন।
ফোন কেটে দেওয়ার দুই ঘন্টা পরে মিরা মাহিনকে কল দিয়ে বলে….
মিরাঃ মাহিন আমি সত্যি প্রেগন্যান্ট। তুমি মজা করেছিলা আর দেখছ সত্যি হয়ে গেছে।
মাহিনঃ চুপ কর। তুমি এবোরশন করাও। আমি টাকা ম্যানেজ করে ফোন দিতেছি।
মিরাঃ মাহিন কি বল এইসব? দুই মাস হয়ে গেছে। এইটা পাপ হবে।
মাহিন কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। মিরা খুব কান্না করে। মিরার বাবা বলে..
মিরার বাবাঃ তুমি যা চাও তাই হবে। কারণ জীবন তোমার। আমি কিছু বলে দিব না।
মিরাঃ আমি এত বড় পাপ করতে চাই না বাবা।
দুদিন পরে মাহিনের বোন ফোন দিয়ে….
জুইঃ মিরা তুই এবোরশন করা। আমি মেডিসিন দিমু খাইলেই হবে।
মিরাঃ না আপু আমি পারব না। দুই মাস হয়ে গেছে।
জুইঃ তাতে কি? মানুষ সাত মাসের বেবি এবোরশ্ন করে আর তোর মাত্র দুই মাস। যা বলেছি তাই কর। আমার বাবা মাকে কিছু জানাবি না। তোর ভাল হোক তাই চাই। এখন বাচ্চা পয়দা করার দরকার নাই। মাহিন কিছু করে না এখনো।
মিরাঃ তাতে কি? এখন করবে। ওরই তো বাচ্চা।
জুইঃ বেশি বুঝিস না ওকে।
বলেই কেটে দিল। মিরা আবার কাদতে শুরু করল।
সেদিন ছিল জুমার বার। মাহিনকে মিরা নামাযের আগে ফোন দিল।
মাহিনঃ মিরা আমাকে বার বার এক কথা বলে বিরক্ত করবা না। আমি এখন নামায পড়ে দুয়া করব যাতে পেটের ভিতরই মারা যায়।
মিরাঃ ছি,,কি বল এসব??? ও তোমার বেবি!!
মাহিনঃ আমি পরিচয় দিব না। অবৈধ এইটা।
মিরাঃ তুমি এতটা খারাপ ভাবি নাই।
মাহিন মিরাকে খুব প্রেশার দিতে থাকে আর মিরা ও রাগে বলেছিল মাহিন যা বলে ও তাই করবে। কিন্তু মিরার বাবা মিরাকে বলে বেবি থাকবে। যা হবে দেখা যাবে।
মাহিনঃ মিরা তুমি বেবি রাখলে আমাকে ছেড়ে দিতে হবে।
মিরাঃ আমি তাই করব। তাও খুনী হতে পারব না।
এদিকে মাহিন ওদের বিয়ের সব প্রমাণ নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। মিরার বাবা আগেই বুঝে কাবিন নামা উঠিয়ে নিয়ে আসে।
এক সপ্তাহ পরে মিরারা বাবা মাহিনের বাবাকে সব জানায় আননোন নাম্বার থেকে। কারণ মাহিন মিরাদের সব নাম্বার ব্লক দিয়ে রাখছিল। মাহিনের বাবা জাস্ট বলে বেবি থাক।মিরা খুব খুশি হয়।
মিরার খুব কষ্ট হয়। কিছু খেতে পারে না। ওর মা নেয় যে ওরে খেয়াল রাখবে। স্টেপ মা ও আর থাকে না ওদের সাথে। ওর বাবার ব্যাবসার অবস্থা খারাপ। টাকা নেই কোনো রকমে দিন চলে ওদের। প্রায় তিন মাস পরে মাহিনের বাবা ১০০০ টাকা দিল ডক্টর দেখাতে। তাও মাহিন বলে এইটাই শেষ। সব মিরার বাবা যাতে দেয়। মাহিনের কি ঠ্যাকা পড়েছে নাকি।
‘
‘
‘
মিরাকে শশুর বাড়ি থেকে কোনো খরচ দেয় না। মাহিন খুব খারাপ ব্যাবহার করে…
৬ মাস পরে মাহিন একদিন এসে মিরা ডক্টর দেখায়। জানতে পারে মেয়ে হবে। মাহিন ছেলে চাইত। যদিও কোন খবর যত্ন কিছুই নিত না।
৬ মাস পর জুই আবারও ফোন দিয়ে এবোরশন করতে বলে আর মাহিনের বাবা তো বলেছে কখনো ফোন দিবি না। তোর সব খরচ তোর বাবা দিব। সেই যে মাহিন ৬ মাস এ এসেছিল।
মিরা প্রতিদিন মাহিনকে বুঝায় যে মিরার বাবার কাছে টাকা নেই। বেবির পজিশন ভাল না। সিজার করতে হলে মাহিন যাতে টাকা দেয়। কারণ মাহিন এখন জব করে। কিন্তু মিরাকে মাসে মাসে টাকা দেয় না। বলে বেবি হবার টাইমে দিব। মাহিন আর আসেও না। কাজ নিয়ে নাকি বিজি। মিরার ৯ মাস হয়ে গেছে তাও মাহিন আসে না। মিরাকে খুব বাজে বাজে কথা বলে কাদায়।
মিরার ও খুব রাগ হয়ে যায়। সে মাহিনকে ঘেন্না করা শুরু করে।
আজ রাতেও মিরা আর মিরার বোন ঘুমিয়েছে। মিরার খুব পেট ব্যাথা করে। খুব কষ্ট হয়। বোনকে ডাকে না। সারা রাত এপাশ ওপাশ করে ব্যাথা সহ্য করে। রাতেও মিরা মাহিনের ঝগড়া হয়েছিল। মিরা তো জানে না এইটাঈ প্রসব ব্যাথা। ওর ডিউ ডেট তো নভেম্বর ২৩ কিন্তু আজ তো ১৪ তারিখ রাত তাই ভাবেনি কিছু।
সকালে…
মিরা ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় হাটতে বের হয়। তখনো ব্যাথা। ও শুধু ওর বোনকে জানায়। ওর বাবা বাজারে ছিল। বোকা মেয়ে আর কাওকে জানায় না। ইরা বাজারে যায় বাবাকে ডাক দিতে।
এতখনে মিরার ব্যাথা বেড়ে গেছে। তবু সে দাড়িয়ে আছে একা রাস্তায়। হাটার শক্তি নেই। ওর বাবা সি এন জি নিয়েই আসে। ইরা সব গুছিয়ে নেয়। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ও খুব কাদছিল। আল্ট্রা করার টাইমে মাহিনকে ফোন দেয়……..
চলবে..
#সেম_এজ_রিলেশন_বিয়ে
part -08(last part)
লেখিকাঃ জিহান জারা
আল্ট্রা করার টাইমে মাহিনকে মিরা ফোন দেয়…
মিরাঃ ওই মাহিন তুই কোথায়???
মাহিনঃ ঘুমাই আমি।
মিরাঃ আমি ব্যাথায় শেষ আর তুই ঘুম!!!
বলেই আয়ায়ায়ায়ায়া করে চিল্লিয়ে উঠে মিরা। মাহিনকে জানায় তার অবস্থা আর সে এখন কোথায়।
মাহিনঃ তোমার ডিউ ডেট দেরি আছে তাই ফাজলামি করবা না একদম।
মিরা কিছুর বলার আগেই ফোন কেটে যায় কারণ ফোনে চার্জ ছিল না।
।
।
।
।
মিরাকে বেড এ নিয়ে যাওয়া হয়। স্যালাইন লাগানো হয়। মিরা প্রায় দু ঘন্টা সেই ব্যাথা সহ্য করে। এই সময় তার মাহিনকে খুব দরকার ছিল। মাহিনের হাতটা খুব প্রয়োজন তার। বাট নেই মাহিন। সে আসতেছে বাট সে এখনো বিলিভ এ করে নাই
যাই হোক মিরাকে এবার ও,টি তে নিয়ে যাওয়া হয়। ওর বাবা আর বোন পাগলের মত করছে। মিরাকে নিয়ে অবশ করার একটু পরেই সে কান্নার আওয়াজ পায়। কিছু পরে নার্স তাকে এক প্রিন্সেস দেখিয়ে বলে আপনার মেয়ে হয়েছে। তার কপালে একটা চুমু খাইয়ে বাইরে নিয়ে যায়। তারপরে আর মিরার কিছু মনে নেই।
মিরার হুশ আসার পরে দেখল মাহিন তাকে ডাকছে কিন্তু সে কথা বলে নি।
মিরাকে তার শশুর শাশুরি কেও আজ আসেনি দেখতে। ফোন ও দেয় নি। ওর ফ্রেন্ড রা আসল। পরের দিন তারা আসে কিন্তু মিরার সাথে কথা বলে না তার শাশুরি। মিরা ও বলে না। তারা সেদনিই বেবির জন্য কিছু জামা আর লোশন তেল এইগুলা নিয়ে আসে। মাহিন তার মেয়েকে কিছুই দেয় না। সে তো জব করে। তার উচিত ছিল।
কষ্টের ব্যাপার হলো মিরার মেয়ে ল্যাক্টজেন খায়। কিছুই করার নাই
যাই হোক বাসায় আসার পরে বাবুর নাম রাখা হল #জিহান_আনজুম_জারা
প্রথমে মাহিনের বাবা মা জাস্ট ফোন দিয়ে খবর নিত। মাহিন এসেছিল বাবুর জন্য ল্যাক্টোজেন নিয়ে।
মিরা জানায় মেয়ের অনেক ল্যাক্টোজেন লাগে। বাট মাহিন জানায় যে দিবে দিবে ওয়েট করতে। মাহিনের বাবা মা মিরার মেয়ের যে কোনো খরচ লাগে ভুলেই গেছে। মাহিনের বোন জুই একবার এসেছিল…
জুইঃ দ্যাখেন চাচা(মিরার বাবাকে) মিরা আপনার মেয়ে তাই ওর সব খরচ আপনার। এই যে বেবি পয়দা করছে এখন ক্ব পালবে আপনি নাহলে আমার বাবা। ওর বা মাহিনের সেই যোগ্যতা নাই। আর ও নানান কথা বলে চলে যায়। বেবির জন্য একটা সুতা ও আনেনি সে এমনই ফুপি সে।
।
।
।
মিরা মাহিনকে খুব বুঝায় কোনো লাভ হয় না। মাহিন এরপর দুবার আসে একদম খালি হাতে। শুধু জানায় টাকা নেই।
জারার দুমাস হয়ে গেছে। মিরা ঠিক করে নিয়ে সে ডিভোর্স দেবে কারণ এমন রিলেশন রেখে কি হবে। তার ডিসিশন ফাইনাল হয়ে যায়। কারণ মাহিন নিজের মেয়ের খাবার এর টাকা নেয় জানায় আর সে ফ্রেন্ড নিয়ে কক্সেস বাজার ঘুরছে।
মিরা মাহিনকে ম্যাসেজ দেয়…
মিরাঃ নিজের নিষ্পাল বাবুর খাবারের টাকা হয়ে উঠে না আর ঘুরার টাকা হয়। বাবা হয়ে ও অবহেলা করেছ। কোনোদিন আর বাবা ডাক শুনবা না। সেই ভাগ্য যাতে আপনার না হয়। আমার মেয়ের ধারের কাছে আসবেন না। সেই হাত আমি ভেঙে দিব। এখন আমি মা। আমার শক্তি আপনার ধারনার বাইরে।
ব্লক দিয়ে দিল মিরা।
মিরা আজ টিউশনি করে। নিজের মেয়েকে নিয়েই থাকে। তার বাবা বাড়ি তাকে খুব সাপোর্ট করে। বাবু সবার চোখের মণি। বাবুর দিকে তাকালে মনে পড়ে মাহিনের নোংরা কথা গুলা। সে ঘেন্না করে মাহিনকে খুব ঘেন্না। যে ঘেন্নার কোনো শেষ নেই।
সমাপ্ত