সে_আদরের_অন্য_নাম ? #৫ম_পর্ব

0
815

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
#৫ম_পর্ব

পরেরদিন
ফজরের আযান দেবার কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙ্গে যায় হিয়ার,এখন শরীর টা একটু বেটার লাগছে__হিয়া উঠে নামাজ পড়ে নিলে সন্ধি আর রাইসাও উঠে নামাজটা পড়ে নেয়

সন্ধিঃ চল রিসোর্ট এর বাহির টা একবার ঘুরে আসি যাবি

রাইসাঃ এতো সকালে বের হবি,শীত তো বাহির এ খুব

সন্ধিঃ আরে শীত বলে কি বের হবো না নাকি,একটু হেটে আসি চল,হিয়া

হিয়াঃ হ্যা আপু

সন্ধিঃ যাবা বাহিরে

হিয়াঃ যাবো কিন্তু অবন্তী যে একা ওকে রেখে কি করে

রাইসাঃ আমি যাবো না রে সন্ধি,হিয়া তো যাচ্ছে আমি বরং অবন্তীর সাথে থাকি আমার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ

সন্ধিঃ ধুরো তোরা যে কেনো আসিস ঘুরতে কে জানে__হিয়া চলো আমি আর তুমি বরং হেটে আসি

হিয়াঃ চলুন

সন্ধি হিয়াকে নিয়ে বেরুতেই দেখতে পায় ওপাশ থেকে তিশা আর রাসেলো আসছে ওরাও হয়তো এখন এই মিষ্টি সকাল টা উপভোগ করবে বলে নিচে নামছিলো

সন্ধিঃ হাঁটতে বের হয়েছিস তো দুটোতে?? তাহলে আয় একসাথে হাটি,আমিও হিয়াকে নিয়ে একটু নিচ থেকে ঘুরে আসবো ভাবছিলাম

তিশাঃ রাইসা মহারানী কি ঘুম

সন্ধিঃ তাছাড়া কেনো যে আসে এরা ঘুরতে হুদায়__হিয়া আসো

চার জনে মিলে রিসোর্টের বাহির টা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করে কি সুন্দর চারপাশের পরিবেশ টা,চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ,এখান থেকে উপভোগ করা যায় সাদা মেঘের মনোরম দৃশ্য,ছুঁয়ে দেওয়া যায় নিমিষে,মুঠো বন্দি করে সেগুলো হজম করা যায় অকপটে,হুমমম কতো সুন্দর না আমাদের এ দেশ টা!!__কিন্তু সকালে খুব শীত আর ঘন কুয়াশা থাকায় এখন পর্যন্ত মোহিত হওয়ার মতো তেমন কিছু কারোরি চোখে পড়ছে না,তবে ওখানকার স্থানীয় যারা আছে তারা বলেছে বেলা বাড়ার সাথে পাহাড় তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেলে ধরতে সক্ষম হবে

তিশা আর রাসেল হাতে হাত গুটিয়ে হাটছে যেনো মনে হয় এরকম করে হাটতে দিলে ওরা সারাটাজীবন এভাবেই হাটতে পারবে কোনো ক্লান্তি আসবে না করো মাঝে,ওদের পেছনে হাটছে সন্ধি আর হিয়া,আছে আরো দু জন যাদেরকে ওরা চেনে না হয়তো কটেজে যে আর একটা ফ্যামিলি উঠেছে ওদের কেউ হবে__হুট করে তিশা খেয়াল করে উজান আর তুষার সামন থেকে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে,ওরা দুজন কটেজের বাহিরে একটা মসজিদে গিয়েছিলো নামাজ পড়তে,নামাজ শেষ করে এই পথ দিয়ে আসতেই দেখে সন্ধি হিয়া সবাই বাহিরে

তিশাঃ তোরা এতো সকালে উঠেছিস বাহ বা

তুষারঃ কেনো রে সকাল কি শুধু তোদের জন্য নাকি,যে আমরা উঠলে দোষ

তিশাঃ না দোষ না তবে জমিদারের নাতির তো আবার বেলা ১২টার আগে ঘুম ভাঙ্গে সে কি না এতো সকালে তাই বললাম আরকি

উজান ওর হাতের টুপিটা পকেটে ঢুকিয়ে হিয়ার কাছে এগিয়ে আসে

উজানঃ শরীর কেমন এখন তোমার

হিয়াঃ জ্বী এখন একটু ভালো

উজানঃ এই ঠান্ডায় এতো সকালে বের হয়েছে কেনো,অবন্তী কোথায়

হিয়াঃ না মানে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আর সন্ধি আপু বললো যে উনি আমাকে নিয়ে

সন্ধিঃ এতো প্রশ্ন কিসের হ্যা,হিয়া আমার সাথে এসেছে অন্য কোনো ছেলের সাথে না,নামায শেষ করে আমার আর হিয়ার কারোরি ঘুম আসছিলো না তাই আমি ওকে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম,আর তোর বোন কে নিয়ে ভাবতে হবে না অবন্তীর সাথে রাইসা আছে দুজনে এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে,হিয়া আসো তো আসো উজান টার খালি সবসময় বেশি বেশি

সন্ধি হিয়াকে নিয়ে আরো সামনে গিয়ে বাকি জায়গা গুলো দেখতে থাকে,ওদের পেছনে তিশা আর রাসেল হাতে হাত ধরে হাঁটছে আর ওদের পেছনে আসছে উজান আর তুষার,এদিকে তুষার এখন উজান কে রিকুয়েষ্ট করে কিছু একটা করে হোক যদি সন্ধির সাথে আলাদা করে কথা বলে দেওয়া যায় একচুয়ালি সে সন্ধিকে ভালোবাসে বাট কখনো বলতো পারি নি,যদি এই ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়ে ওদের বন্ধুত্বের মতো সুন্দর সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যায়,কিন্তু এতো সুন্দর পরিবেশে এসে-এই শান্ত সকালের বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে কি করে মনের মানুষ কে মনের কথা টা না বলে থাকা যায়,এটা কি আদৌও সম্ভব

উজান তুষারকে থামিয়ে দিয়ে সন্ধিকে ডেকে এনে বলে তুষারকে একটু সময় দিতে,সন্ধি বলে সে আর এমনকি ওকে তো রোজই সময় দেই নতুন কি এতে,এই বলে সন্ধি তুষারের কাছে চলে গেলে হিয়া একা হয়ে পড়ে,একদিকে তিশা-রাসেল অন্যদিকে তুষার-সন্ধি মাঝখানে দাঁড়িয়ে উজান-হিয়া,হিয়া কি করবো বুঝে উঠতে পারে না উজানের সাথে থাকলেই ওর এরকম ফিল হয় কেনো,অবন্তীর ফ্রেন্ড হিসাবে উজানো তো হিয়ার বড় ভাইয়া,তাহলে,এই কথা টা হিয়ার মন কিছুতেই কেনো মেনে নিতে পারে না,হিয়া পেছন ফিরে সামনে তাকিয়ে পা মাটিতে বারবার ঠেলা দিয়ে এপাশ ওপাশ দেখতে থাকে,কি রকম একটা নীরবতা না হিয়া আর উজানের মাঝে,দুজনের মাঝের এই নিরবতা টুকু ভেঙ্গে দিয়ে উজান নিজে থেকে হিয়াকে ডাক দেয়

উজানঃ হিয়া (অস্ফুটে)

হিয়াঃ আবার এভাবে ডাকছেন উনি___ভাইয়া আমাকে যখনি এরকম করে হিয়া বলে ডাকে তখন আমার হার্টবিট এরকম লাফালাফি কেনো শুরু করে,আজব তো,আরে এই হার্ট থাম না রে এতো বিট করলে তো আমি এ্যাটাক করে ফেলবো___আচ্ছা উনি এরকম নেশা ভরা কন্ঠে কেনো আমাকে ডাকেন??মনে হয় যেনো পৃথিবীর সব মদ,বিয়ার,ওয়াইন আর যা যা নেশাদ্রব্য আছে সব গিলে এসে উনি আমাকে হিয়া বলে ডাকছেন,এতো আদর দিয়ে তো কেউ আমাকে কখনো ডাকেনি,না এটা আদর না এটা নেশা__না আদর__আদর কি? না না নেশা!!

হিয়া নিজ মনে কথা গুলো বলতে থাকলে উজান এসে পেছন থেকে হিয়ার দু বাহু ধরে হিয়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে এক গাদা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,আর এদিকে হিয়া করুন চাহনি নিয়ে উজানের দিকে তাকিয়ে থাকে

উজানঃ কি হলো হিয়া ইটস ওল রাইট?কতো বার করে ডাকছি তোমাকে শুনতে পারো নি__কিছু বলছো না যে__শরীর খারাপ করছে আবার__দেখলা বললাম যে এই সকালে এতো শীতে না বেরুতে শরীর টা আবার খারাপ করবে কি মিললো তো__এই মেয়ে কি হলো ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো কথা বলো__শরীর বেশি খারাপ লাগলে বলো আমি রুপমকে বলে এখানে কোনো হসপিটালে ডক্টর দেখাবার ব্যবস্থা করি___হিয়া__হিয়া

হিয়া উজানের এরকম বিহেভে অনেকটা বিব্রতহয়ে পড়ে,কেনো উজান ওকে এতো প্রশ্ন করছে আর ওর শরীর খারাপ হলে উজানেরি বা কি__হিয়া কোনো উওর না দিয়ে সোজা উজানকে জড়িয়ে ধরে,একেই হয়তো বলে অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া আমরা না চাইতেও হুট করে যেটা করে বসি আর এখন সে রকমি এক ঘটনা ঘটলো হিয়ার সাথে,হিয়া চাই নি কিন্তু তার পরে কিসের টানে সে উজানকে জড়িয়ে নিলো এরকম শক্ত করে??

উজানঃ হিয়া__হিয়া তুমি ঠিক আছো__এই মেয়ে__হিয়া

হিয়ার সেন্স ফিরলে হিয়া আলতো করে মুখ তুলে কিছুক্ষন উজানের চোখে চোখ রাখে

হিয়াঃ এ-তো কেনো চিন্তা করেন আপনি আমার জন্য,কে হই আমি আপনার

নিজ মনে কথা টা বলে উজানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হিয়া এক দৌড়ে রিসোর্টের ভেতরে চলে যায়__কি হলো এটা, হিয়া এরকম দৌড়ে গেলো কেনো!!উজান এবার নিজেকে সামলে নিয়ে ওর মাথার চুল গুলো খামচে ধরে কি করছিলো ও এতোক্ষণ এটা!!হিয়াকে প্রশ্ন করবার কে ও,যে ছেলে কি না বাসে ওঠা অবধি দু বারের বেশি হিয়ার সাথে কথা বলেনি সে কি না একটু আগে হিয়াকে এতোগুলো প্রশ্ন করে ফেললো,কোন অধিকারে??

সকাল বাড়তেই সবাই উঠে পড়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা সেরে ফেলে,উদ্দেশ্য এখন পাহাড় ভ্রমন,মেঘ গুলোকে নিজেদের মতো করে নেড়েচেড়ে দেখার আলোড়ন,

সকালের ঘটনার পর থেকে উজান যতোটা পারছে হিয়াকে এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করছে,হিয়াও চেষ্টা করছে উজানের সামনে যেনো সে আর না পরে____সবাই যে যার মতো করে হাঁটছে রুপম তো সেই হিয়ার পেছন ধরেছে ছাড়াছাড়ির আর কোনো নাম নেই ওদিকে তো উজানকে একবার তাসফিয়া এসে জাপ্টে ধরছে তো কখনো সুযোগ পেলে নীলিমা, অবন্তী ব্যাস্ত সেলফি তোলা নিয়ে,সন্ধি একটু ইতস্তত হয়ে হাঁটছে কারণ সকালে তুষার ওকে ওভাবে ভালোবাসার কথা টা বলে দেবে এটা ছিলো ওর কাছে অকল্পনীয় তাই সে এখন লজ্জায় লাল হয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে আর এর মাঝে আড় চোখে তুষারকে দেখে নিচ্ছে

রাইসাঃ বেচারা আমাদের উজান বেবি কতোদিকে যে কতোজন কে সামলাবে

হেমাঃ সামলানোর আর কি আছে ওকে তো কিছু করতে হয় না তাসফি আর নীলিই তো নিজে থেকে সব টা করে

সন্ধিঃ একটা কথা বলি

রাইসাঃ বল

সন্ধিঃ তাসফিকে যে উজান দু চোখে সহ্য করতে পারে না সেটা আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি আর রইলো নীলিমা,তো আমার কি মনে হয় জানিস উজান যে তুটুকুই কথা বলে নীলিমার সাথে সেটা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কের খাতিরে অন্য কিছু ভেবে না,আর শুনেছি নীলিমা নাকি ওদের কি রকম রিলেটিভ

রাইসাঃ কিন্তু নীলিমা তো অন্য কিছু ভেবেই

সন্ধিঃ না নীলিমাও জানে উজান ওকে পছন্দ করে না তবু যে কেনো মেয়েটা___তবে তোরা খেয়াল করেছিস কি জানি না আমাদের ক্রাশবয় কিন্তু হিয়ার উপর অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে

হেমাঃ কার কথা বলছিস অবন্তীর ঔ বান্ধবী টা

সন্ধিঃ হুম

হেমাঃ যা কি বলিস এসে থেকে তো দেখছি রুপম যেভাবে মেয়েটার সাথে মেলামেশা করছে তোর মনে হয় ওদের মধ্যে এতোক্ষণে কিছু হয় নি

সন্ধিঃ মন তো বলে হয়নি, আর আমি যতোদূর বুঝেছি রুপম হিয়াকে লাইক করে আর হিয়াকে ভালোটা বাসে উজান!!লাইক আর লাভ এর মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে হেমা__কে জানে,আমি ভুল ও হতে পারি

সন্ধি আর রাইসারা মিলে গল্প করতে থাকে এদিকে হিয়া অবন্তী কে খুঁজতে ওদের পেছনে আসলে শুনতে পারে ওরা বলছে এতো কম টাকায় বান্দরবান ট্যুর কেউ করাবে না ভাগ্যিস রুপম ছিলো নাহলে তো এতো সুন্দর স্পর্ট দেখতে হয় বাড়িতে হাত পাততে হতো না হলে স্বামীকে নিয়ে একবারে হানিমুনে হা হা,ওদের কথা টা শুনেই হিয়া দৌড়ে এসে অবন্তীকে খুঁজে বের করে প্রশ্ন করে আপুরা ওসব কিসের টাকার কথা বলছে

হিয়াঃ বল না কিসের টাকা

অবন্তীঃ আরে ট্যুরে আসতে যে ১৫০০নিয়েছে সেই টাকা

হিয়াঃ ১৫০০নিয়েছে মানে

অবন্তীঃ তা তুই কি ভাবলি একদম ফ্রিতে তোকে এতো সুন্দর জায়গা দর্শন করাতে নিয়ে আসবে

হিয়াঃ তাহলে আমাকে কেনো বলিসনি টাকার কথা,আর আমার টাকা টাই বা কে দিলো

অবন্তীঃ আরে কে দিবে আবার,ভাইয়া আমার টাকা টা দেবার সময় তোর টাকা টাও দিয়ে দিয়েছে,এবার তো আমাকেএএএ ছাড় আমি ছবি তুলছি নাআআআ

হিয়াঃ আহা শোন না আগে__ তুই আমাকে আগে বলিসনি কেনো যে ভাইয়া আমার টাকা টা,আমার কিন্তু এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে অবো,তুই আমাকে একবারো বলবি না

অবন্তীঃ এবার বলে দিলাম এখন শান্তি,ছাড় নাআআআআ

হিয়াঃ অবো অবো শোন অবো__অব
______________
হিয়া কখনো কারো ঋণ রাখে না,রাখবেই বা কিভাবে কখনো ঋণ নামক বস্তু টা নেবার তার প্রয়োজনি হয় নি কারণ হিয়া মনে করে নিজের যা আছে তা দিয়েই তার হেব্বি চলে যাবে ওসব ঋণের জন্য হাত পাতা ওর পছন্দ নয়,তবে এদিক ওদিক যা একটু হয়ে যায় হিয়া চেষ্টা করে যতো দূত সম্ভব সেটা পরিশোধ করে দেবার__আর এখন এই ট্যুর নামক ঋণের টাকা পরিশোধ করবার জন্য হিয়া ব্যাকুল হয়ে আছে,হিয়া ওর ব্যাগ থেকে টাকা টা বের করে এদিক ওদিক খুঁজে উজানকে সামনে একটু দূরে দেখতে পেয়ে জোরে হাঁটা শুরু করে,উজান তখন ফোনে ভার্সিটির স্টুডেন্ট ফরামের ভোট নিয়ে কার সাথে জানি একটা কথা বলছিলো,হিয়ার গলার আওয়াজ পেতেই উজান ফোন টা কেটে দেয়

হিয়াঃ ভাইয়া(অস্ফুটে)

উজানের কাছে এই ভাইয়া ডাক টা ভীষণ চেনা,তাই হিয়া ভাইয়া ডাকতেই উজানের বুক টা কুক করে উঠে,যে মেয়ে সকালের ঔ জরিয়ে ধরবার ইন্সিডেন্টার পর থেকে ওকে এ্যাভয়েড করে চলছে তার হঠাৎ এরকম ডাক বুক টা ধক করে উঠারি কথা,উজান ভ্রূকুঁচকে পেছন ফিরে তাকিয়ে হিয়ার দিকে এগিয়ে যায়

উজানঃ হিয়া

হিয়াঃ ভাইয়া এই টাকা টা

উজানঃ কিসের টাকা

হিয়াঃ ইয়ে মানে আমি আসলে জানতাম না আপনি আমার ট্যুরের টাকা টা দিয়ে দিয়েছেন আসলে আমি তো এটাও জানতাম না যে ট্যুরে আসতে গেলে টাকা লাগে কখনো আসিনি তো তাই ধারণাও ছিলো না এ সম্পর্কে___টাকা টা

উজানঃ (একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) লাগবে না,টাকা টা তুমি তোমার কাছে রাখো

হিয়াঃ হ্যাএএ লাগবে না?কেনো?এটা তো আপনার টাকা মানে আপনি আমার হয়ে যেই টাকা টা দিয়েছিলেন আমি সেটা ফেরত দিচ্ছি আর আপনি বলছেন নেবেন না

উজানঃ হিয়া টাকা টা নিয়ে এখান থেকে যাও

হিয়াঃ আরে যাবো মানে__আপনি নিন তো টাকা টা

উজানঃ হিয়া বললাম না আমার টাকা লাগবে না তুমি ওগুলো নিয়ে যাও প্লিজ

হিয়াঃ আচ্ছা আগে আপনি টাকা টা তো নিন, তাহলে না আমি যাচ্ছি

উজানঃ হিয়া কথা শোনো

হিয়াঃ হিয়া হিয়া করে লাভ নেই আমি আপনাকে টাকা দিয়েই তবে যাবো,নিন তো ধরুন

উজানঃ হিয়া(ঝারি দিয়ে)____আর একটা কথা বললে কিন্তু

হিয়াঃ কিননন্তু

উজানঃ সে বার জানি কোন গালে কামড়ে দিয়েছিলাম তুমি কি চাইছো আমি আবার তোমার গালে

উজানের কথায় হিয়া চোখ বড় বড় করে দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়,হিয়ার ওরকম ছিঁচকে মার্কা দৌড় দেখে উজান আপন মনে হেসে উঠে

হিয়াঃ লোকটা এরকম কেনো,শুধু শুধু আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়,উফফ গলা টা ভয়ে শুকিয়ে একবারে কাট হয়ে গেলো,পানি পানি কোথায়

রুপমঃ এই নেও পানি,তা কি ব্যাপার এতো হাঁপাচ্ছ যে,পুলিশ পেছনে লেগেছে বুঝি

হিয়াঃ না না আমি ওজন্য দৌড় দেই নি আমি তো

রুপমঃ আমি তো

হিয়াঃ না মানে এমনি কিছু না__ধন্যবাদ পানি টা দেবার জন্য গলা টা শুকিয়ে পুরো

রুপমঃ আচ্ছা চলো সামনে একটা শপিংমল টাইপ কি যেনো আছে সবাই কে দেখলাম ওদিকে যাচ্ছে তুমি যাবে

হিয়াঃ অবন্তী ও গেছে

রুপমঃ না তোমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে তুমি গেলে তারপরি ও নড়বে

হিয়াঃ এই মেয়েটা,আচ্ছা চলুন

রুপম হিয়া আর অবন্তী কে নিয়ে মলটার ভেতরে গেলে দেখতে পায় সবাই যে যার মতো কেনা কেটা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে, ঘুরতে আসা আরো অনেক পর্যটকদের ভীড়ে পা ফেলার জায়গা নেই সেখানে যেনো__আদিবাসী দের তৈরি বিভিন্ন জিনিস যেমন ঘর সাজার বিভিন্ন সামগ্রী থেকে শুরু করে বাহারি ডিজাইনের কতো সুন্দর ওরনামেন্টস,মেয়েরা মেয়েদের দোকান গুলো তে ইচ্ছে মতো ভীড় করছে এদিকে ছেলেরা দেখছে আদিবাসীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন লেদারের জ্যাকেট,কোর্ট,জিংকস থেকে শুরু করে আরো কতো নাম না জানা আইটেম

রুপম ওর পছন্দের একটা জ্যাকেট কিনে নেয় টপাটপ,তুষার একটা জিংকস কিনে টাকা গুনতে শুরু করে,রাসেল ওদিকে তিশাকে সঙ্গে নিয়ে ওরনামেন্টস এর দোকানে দরকষাকষি নিয়ে ব্যাস্ত এদিকে আবার উজানের সব কিছু ছেড়ে একটা পান্জাবীতে গিয়ে তার চোখ দুটো আঁটকে যায়,পান্জাবী টা সম্পূর্ণ সাদা সুতি কাপড়ের শুধু গলা থেকে বুকের নিচ অবধি সামনে পিছনে দু পাশে রংধনুর মতো রঙের জলছাপ দিয়ে রাঙানো যদিও কমলা আর নীল রঙের ছড়াছড়ি টাই বেশি আর পুরো পাঞ্জাবি জুড়ে একদম ছোট ছোট গুটি গুটি স্টার শেপ এর অতি ক্ষুদ্র জল প্রিন্ট__উজান ওটা হাতে নিয়ে পাশে থাকা একটা আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয় মানে ওর পাঞ্জাবি টা পছন্দ হয়েছে কিন্তু দোকান টায় এতো ভীড় যে উজান যে লোকটার সাথে দুটো কথা বলবে সেই দাঁড়িয়ে থাকার ধর্য্য টুকু যেনো তার হচ্ছে না,উজান লোকটা কে দুবার ডাকার পরো যখন লোক টা শুনলো না উজান তখন পাঞ্জাবি টা ঠাস করে রেখে বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে,এতো ক্রাউড হলে কি করে হবে উফফ___হিয়া এতোক্ষণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে উজান কে ফলো করছিলো আর উজানের এই নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে হিয়া খানিকটা হেঁসে দিয়ে দোকানটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে,ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে ওটার দাম করতে শুরু করে

সবার কেনাকেটা শেষ হতে হতে প্রায় চারটে হয়ে আসে কখন যে সময় পেড়িয়ে গেলো এতো তাড়াতাড়ি!!মল টার বাহিরে একটা ছোট্ট হোটেলে সবাই একটু নাস্তা খেয়ে শরীর টা জিরিয়ে নেয় তারপর আবার রিসোর্টে পৌঁছে রিসোর্টের বাহিরের পরিবেশ টা উপভোগ করতে করতে রাত প্রায় আট টা বেজে যায়,সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে রাতের ডিনার টা করে নিয়ে যার যার রুমে চলে যায় কারণ এরকম হাড় কাপানো ঠান্ডায় বাহিরে থাকা অসম্ভব!!

হিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে অবন্তীর সাথে মিলে গায়ে গা তুলে সারাদিনের তোলা ছবি গুলো দেখছিলো,ছবি দেখতে দেখতে কখন যে হিয়া ঘুমিয়ে পড়ে খেয়ালি থাকে না,ঘুম ভাঙ্গে রাত প্রায় ১১টার কাছাকাছি সময়ে,অবন্তী তখনো দিব্যি একবার আপুদের সাথে তো একবার ফোনে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করতে থাকে,কোথা থেকে যে মেয়ে টা এতো এন্যার্জি পায় কে জানে___!!

এদিকে রুপম এসেই একটু ফ্রেশ হয়ে তুষারকে নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়েছিলো কারণ রিসোর্টের বাহিরে ওদের যে বাস দুটো পার্ক করা ছিলো ওগুলো নিয়ে কি জানি একটা ঝামেলা হয়েছে তাই

অবন্তীঃ এই ঘুম থেকে উঠেই কোথায় যাচ্ছিস আবার

হিয়াঃ তোর ভাইয়ার কাছে

অবন্তীঃ (লাফিয়ে উঠে)কেনো কেনো কেনো

হিয়াঃ প্রেম করতে,যাবি?

অবন্তীঃ শুধু কি প্রেম আর কিছু করবি না, কটেজে কিন্তু আরো অনেক রুম ফাঁকা আছে লাগবে নাকি

হিয়াঃ অবন্তীইইইই__মুখ টা বন্ধ কর আপুরা শুনে ফেলবে,তোকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো বলবি একটু,নিজের ভাইয়াকে নিয়ে আমার সাথে

অবন্তীঃ ন্যাকামি করিস না তো ঢং যতো?শোন আমি কিন্তু তোর আর ভাইয়ার বাসরে খাটের তলায় লুকিয়ে থাকবো আর নিচ থেকে বসে বসে সব ফিল করবো ইসস এখনি যা হচ্ছে না আমার

হিয়াঃ তুই না জাস্ট একটা ফালতু

অবন্তীঃ আরে আরো আছে তো শুনে যা মজা পাবি,হিয়া হিয়া হি__হে হে

হিয়া ওদের রুম থেকে বেড়িয়ে উজানদের রুমে গিয়ে গেট নক করলে ভেতর থেকে রাসেল ভাইয়া বলে উঠে উজান এখানে নেই সামনে পুল সাইডের দিকে বসে আছে হয়তো,হিয়া রাসেল কে একটা ধন্যবাদ দিয়ে পুল সাইডের দিকে গেলে দেখতে পারে উজান পুলের পানিতে এক পা ডুবিয়ে আর এক পা উপরে মেঝের উপর ফ্লোড করে সিগারেট টানছে,গায়ে সেদিনের মতো একটা চাদর জড়ানো,পাশে পড়ে আছে এক মগ কফি,হিয়া আলতো পায়ে উজানের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কি দিয়ে কথা শুরু করবে সেটা ভাবতে থাকে কিন্তু কিছুতেই মুখ দিয়ে যেনো কিচ্ছু বের হচ্ছে না উফফ কি জ্বালা

উজানঃ তোমার গায়ে গরম কাপড় নেই কেনো হিয়া??

উজানের প্রশ্নের জবাবে হিয়া থ মেরে যায়,নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলে হিয়া দেখতে পায় ও সত্যি গায়ে কোনো গরম কিছু না জড়িয়েই বেড়িয়ে পড়েছে

হিয়াঃ এমা সত্যি তো আমি কিছু না পড়ে এভাবে__কিন্তু এতো হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও আমার ঠান্ডা লাগছে না কেনো,আমার সব সেলেস গুলো ঠিক ঠাক মতো কাজ করছে তো,নাহলে তো এরকম হবার কথা না,নাকি ওনার কাছে আসবো বলে আমার সব অনুভূতি গুলো লোপ পেয়ে আছে!!___কিন্তু উনি পেছনে না তাকিয়েও কি করে জানলো আমি গায়ে গরম কিছু দেই নি??

উজানঃ তুমি যদি এখানে আবার টাকা টা দিতে আসো তো প্লিজ টাকা গুলো নিয়ে চলে যাও, নাহলে তখন হুমকি দিয়েছিলাম আর এবার আমি সত্যি সত্যি তোমার গালে

উজানের কথা শেষ হবার আগেই হিয়া গিয়ে পুলের উপর উজানের পাশে বসে যায়

হিয়াঃ আমি টাকা ফেরত দিতে আসি নি

উজানঃ গুড(ভ্রুকুচকে)

হিয়াঃ আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি তো সবার সাথে কতো হেসে খেলে কথা বলেন কিন্তু আমার সাথে কথা বলবার সময় এরকম গম্ভীর হয়ে কেনো থাকেন,আমাকে কি আপনার পছন্দ না তাই আপনি আমার সাথে

হিয়ার প্রশ্নে উজান ওর সিগারেট টা আর একবার টেনে পাশ ফিরে হিয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে,হিয়া এতোক্ষণ পাশে বসলেও উজান একবারো হিয়ার মুখ টার দিকে তাকায় নি,আর এবার তাকাতেই উজানের বুক টা শিউরে উঠে পলকে,উজান যেন যতো হিয়াকে দেখছে তোতো মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে রোজ__সবে ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে উজানের কাছে এসেছে হিয়া,চুল গুলো এলোমেলো হলেও বেশ গোছানোই লাগছে,হিয়ারা যে জায়গাটায় গিয়ে বসে আছে ওখান থেকে আকাশের চাঁদ টা অনেক বড়ো করে দেখা যায় হিয়া এখন সেই চাঁদ দেখায় ব্যাস্ত,চাদের আলো এসে পড়ছে হিয়ার পুরো মুখ জুড়ে আর সেই আলো যে কতো টা নিখুঁত ভাবে হিয়াকে মায়াবী করে তুলছে!!মানে সুন্দরের উপর সুন্দর তার উপর আরো সুন্দর সেই সুন্দর গুলোর উপর আরো একটা সুন্দর

হিয়াঃ কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছেন যে

উজানঃ তুমি কি ঘুমোচ্ছিলে রুমে

হিয়াঃ হ্যা আমি ঔ এসেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এই সবেমাত্র উঠলাম আর উঠেই দৌড়ে এখানে চলে আসলাম

উজানঃ আর কখনো ঘুম থেকে উঠে আমার কাছে আসবা না

হিয়াঃ কেনো

উজানঃ আমি বলেছি তাই,ইডিয়ট

হিয়াঃ আচ্ছা বেশ আসবো না,এখন বলুন না আমার আপনাকে পছন্দ না তাই জন্য কি আপনি আমার সাথে এতো গম্ভীর হয়ে কথা বলেন

উজানঃ আমি কখন তোমার সাথে গম্ভীর হয়ে কথা বললাম হিয়া

হিয়াঃ বললেন না ঔ তো তখন টাকা গুলে দেবার সময় কি রকম হিয়া বলে একটা ঝারি দিলেন

উজানঃ হ্যা তা তুমি উল্টোপাল্টা কাজ করবে আর আমি ঝারি দেবো না

হিয়াঃ তাই বলে ওভাবে,আর আমি তো আপনার টাকা টা দিতেই তখন__আচ্ছা ওসব বাদ দিন এটা ধরুন তো বলুন তো পছন্দ হয়েছে কি না

উজানঃ কার জন্য

হিয়াঃ আপনাকে দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনার জন্যেই হবে

উজানঃ কি আছে এতে

হিয়াঃ এতো প্রশ্ন না করে খুলে দেখলেই তো হচ্ছে

উজান হাতের সিগারেট টা পাশে রেখে প্যাকেট টা খুললে দেখতে পারে একটা পান্জাবি!!এটা সেই পাঞ্জাবি তখন যেটা ও পছন্দ করেছিলো

হিয়াঃ পছন্দ হয়েছে

উজানঃ তুমি কি করে জানলে

হিয়াঃ আমি ভাবলাম আপনাকে টাকা দিলে তো আপনি নিবেন না তাই আমি এটা কিনে

উজানঃ শোধ দিচ্ছ

হিয়াঃ না না তা নয় আপনি ভুল বুঝছেন আমি শোধ দেবো কেনো আমি তো জাস্ট আপনাকে ধন্যবাদ দিতে

উজানঃ হিয়া আমি বোকা না

হিয়াঃ আপনি আমায় সত্যি ভুল ভাবছেন___আমি মন থেকে এটা আপনার জন্য কিনেছি, আপনি এটা রাখলে আমি সত্যি খুব খুশি হবো

উজানঃ(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)দেও____তা কি করে বুঝলে এই পাঞ্জাবি টা আমার পছন্দ হয়েছিলো,আমায় ফলো করছিলে?

হিয়াঃ হ্যা ঔ একটু__আর তাতে কি আপনি আমায় ফলো করলে কোনো দোষ না আর আমি আপনাকে ফলো করলেই মহাদোষ

উজানঃ (ভ্রু কুঁচকে)আমি কে-নো মানে আমি কেনো তোমাকে ফলো করতে যাবো

হিয়াঃ আমাকে ফলো করেননি বলছেন

উজানঃ না করি নি

হিয়াঃ ওহ আচ্ছা হবে হয়তো আমারি ভুল

কথা টা বলেই হিয়া পাশ ফিরে ফিক করে হেসে দেয়,এদিকে উজানো মাথা নামিয়ে পুলের পানি গুলোর দিকে তাকিয়ে হালকা হেঁসে উঠে__কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করে দুজনের মাঝে হিয়া মনের ইচ্ছে মেটাতে নিজের পা গুলো পানিতে ডুবিয়ে দিতেই শিউরে উঠে কি ঠান্ডা পানি উফফ মনে হচ্ছে পা গুলো যেনো মুহুর্তে ররফের মতো জমে গেলো

উজানঃ হিয়া পা গুলো তুলো,পানি গুলো খুব ঠান্ডা আবার না হয় জ্বর আসবে তোমার

হিয়াঃ আপনিও তো একটা পা দিয়ে আছেন আপনার জ্বর আসবে না

উজানঃ আমি তোমাকে কিছু করতে বললে তুমি সবসময় আমাকে উল্টো প্রশ্ন কেনো করো হিয়া,একবারে আমার কথা টা শুনলে হয় না

হিয়াঃ (পা গুলো তুলে) না হয় না

কথা টা বলেই উজান কে একটা ভেংচি কেটে হিয়া উঠে চলে যেতে ধরলে উজান পেছন থেকে হিয়ার হাত টা ঘপ করে ধরে ফেলে

হিয়াঃ কি

উজানঃ এদিকে আসো

উজান হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে ওর পাশে বসিয়ে দেয়

উজানঃ সারাটাদিনে তো একবারো ফিরেও তাকাচ্ছিলে না আমার দিকে আর এখন রুপম নেই বলে আমার কাছে আসলা

হিয়াঃ রুপম ভাইয়া নেই মানে,কোথায় উনি,সিলেট ফিরে গেছেন

উজানঃ না

হিয়াঃ তাহলে যে আপনি বলছেন উনি নেই

উজানঃ তুমি জানতে না রুপম এই মুহুর্তে কটেজে নেই

হিয়াঃ না কি করে জানবো আমি তো আপনাকে বললামই যে আমি ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে এসেছি আর তাছাড়া রুপম ভাইয়া থাকলে যে আমি আপনার কাছে আসতে পারবো না এরকম কোনো রুলস তো কোথাও লেখা নেই আমার জানা মতে,আছে কি?

উজানঃ এখন নেই কিন্তু কখনো যদি রুপম তোমাকে এরকম কোনো নিয়ম দিয়ে দেয় তখন

হিয়াঃ এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড রুপম ভাইয়া কেনো আমাকে এরকম নিয়ম দিতে যাবেন আর আমি বা কেনো রুপম ভাইয়ার দেওয়া নিয়ম মানতে যাবো,why___শুনুন,আমার যদি মন চায় আমি আপনার কাছে আসবো তো আমি আসবো আর আমি অন্য কারো নিয়মে চলার মতো মেয়ে না কথা টা আপনি আপনার মাথায় ভালে করে ভরে রাখবেন,হুহ

হিয়া মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকালে উজান হালকা হেসে দেয়

উজানঃ রাগতেও পারো তাহলে তুমি দেখছি

হিয়াঃ হ্যা পারি,আর এতোক্ষণ আপনার এই বোকা বোকা কথা গুলো শুনে আমার রাগ আসছে,ভীষণ রাগ!!(মুখ ফুলিয়ে)

উজানঃ (হালকা হেঁসে দিয়ে) তা এই ভীষণ রাগ টা আমি কি দিয়ে ঠান্ডা করতে পারি

হিয়াঃ ঠান্ডা করতে চান,সত্যি

উজানঃ হুম

হিয়াঃ তাহলে আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসুন,কারণ আমার মেজাজ তো এখন হাই ডিগ্রি তে ঘোর পাক খাচ্ছে এখন এই আইসক্রিমের বরফই পারবে ওটাকে ঠান্ডা করতে

উজানঃ না হিয়া,তুমি কি পাগল হয়ে গেলে,কাল শরীর খারাপ ছিলো আর আজ তুমি এই রাতে এই শীতে আইসক্রিম মানে সিরিয়াসলি____আমি পারবো না অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে হলো বলো আমি এনে দিচ্ছি

হিয়াঃ অন্য কিছু না আমার আইসক্রিমই লাগবে ব্যাচ

উজানঃ আরে জেদ কেনো করছো

হিয়াঃ করলে করছি

উজানঃ ইডিয়ট

হিয়া মুখ গোমড়া করে গাল মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে চেয়ে থাকে,উজান সাব্বির নামের একটা ছেলেকে ফোন করে বলে যেখান থেকে পারে ওহ যেনো এই মুহুর্তে ওকে দুটো আইসক্রিম দিয়ে যায়,ভাই অডার করেছে আর সে হুকুম পালন না করলে কি চলে,সাব্বির টপাটপ নিচে নেমে আইসক্রিমের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে, সাব্বির আইসক্রিম নিয়ে আসা অবধি হিয়া উজান চুপ-চাপি বসে ছিলো,যেই উজান সাব্বির আসার শব্দ শুনতে পেলো ওমনি আচমকাই কিছু না বলে হিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে ওর বুকের-বা পাশে জাপ্টে ধরে চাদরের তলায় হিয়াকে নিজের ভেতর লুকিয়ে নিলো,হিয়া উজানের বুকে থ মেরে লুকিয়ে আছে কি হলো এটা উজান আচমকা ওকে এরকম করে কাছে টেনে লুকিয়ে নিলো কেনো!!

হিয়াঃ কি হলো

উজানঃ কিছু না,সাব্বির আসছে

হিয়াঃ কে সাব্বির

উজানঃ চিনবে না

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু উনি আসছে বলে আপনি আমাকে এরকম করে লুকিয়ে নিলেন কেনো

উজানঃ কারন আছে ওহ একটু বোকা তো এভাবে আমাদের একসঙ্গে দেখলে

হিয়াঃ একসঙ্গে দেখলে

উজানঃএতো প্রশ্ন কেনো তোমার

হিয়াঃ কোথায় আমি তো শুধু

হিয়া আর কিছু বলতে যাবে তার আগে উজান ওর ডান হাত চাদরের ভেতর দিয়ে হিয়ার গালে হাত রাখে

উজানঃ চুপ,আর একটা কথা না

হিয়া আবার থ হয়ে উজানের বুকে উজানের দুহাতের বেষ্টনে লেপ্টে যায়,হিমেল হাওয়া আসছে সাথে মনে হচ্ছে কুয়াশা যেনো গুঁড়ি গুঁড়ি আকাশ থেকে নামছে,চারিদিকে পাহাড়ের গন্ধ ভাসছে,সাথে আসছে কোথা থেকে কোনো এক ঝি ঝি পোকার ডাক,এমন একটা মাতাল করার মতো পরিবেশে কোনো ছেলের বুকে এরকম করে লুকিয়ে থাকলে গা টা তো শিউরে উঠবেই নাকি!!এখন হিয়ারো তাই হচ্ছে____

হিয়াঃ কি করি এই লোক টাকে নিয়ে আমি ওনার এই লুকোচুরি খেলার চক্করে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে__কেনো যে আইসক্রিম খাবার বাহানা করতে গেলাম__ওনার গায়ের এই গন্ধ টা কিন্তু অনেক মিষ্টি এটা কোন পারফিউমের ব্রান্ড নিশ্চয় বিদেশি কোনো ব্রান্ড হবে_____আচ্ছা ওনার হার্ট টা কি খুব জোরে বিট করছে,তাই তো মনে হচ্ছে,আর একটু কান পাতিয়ে শুনে দেখবো কি?হুম দেখি___এমা এ তো হাই স্পিডে ধুকপুক ধুকপুক করেই চলছে!!এতো জোরে বিট করলে তো উনি আমার মতো এ্যাটাক করে ফেলবে

উজানঃ হার্ট জোরে বিট করলে কেউ এ্যাটাক করে না হিয়া

হিয়াঃ (মুখ তুলে,চাদর থেকে বের করে,চোখ বড় বড় করে)আচ্ছা আপনি কি থট রিডার

উজানঃ তোমার এসব উল্টোপাল্টা জিনিস ভাবতে থট রিডার হতে হয় না

হিয়া একটা ভেংচি কেটে আবার উজানের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়,তোতোক্ষনে সাব্বির আইসক্রিম নিয়ে এসে হাজির

সাব্বিরঃ ভাই অনেক কষ্টে এগুলোই পাইছি এর চেয়ে ভালো এখানে আপাতত নেই,হবে না? আমি কি আর একটু খোঁজ করবো

উজানঃ না রাখ এগুলোই হবে

সাব্বিরঃআচ্ছা ভাই___(হিয়ার উপর চোখ পড়তে)ভাই এটা কোন ভাবী

উজানঃ একটা থাপ্পাড় লাগায় গাল লাল করে দেবো,আমি আবার কয়টা বিয়ে করেছি যে তুই এভাবে বলছিস এটা কোন ভাবী

সাব্বিরঃ না না ভাই আমি ঔ সেন্সে বলিনি,না মানে তাসফিয়া না নীলিমা এই দুইয়ের মধ্যকার কনফিউশানে আছি আর কি(মাথা চুলকে)

উজানঃ আবার তোর বাজে কথা,এটা তাসফিয়াও না এটা নীলিমাও না,না এটা তোর কোন ভাবী

সাব্বিরঃ তাহলে

উজানঃ এটা একটা পরী?

সাব্বিরঃ পরী মানে Angel টাইপ

উজানঃ হুম

সাব্বিরঃ আল্লাহ এই রিসোর্টে এসে আমাদের ভাইকে কি না জ্বিন পরী তে ধরলো,দাড়ান ভাই আমি এক্ষুনি স্থানীয় কারো সাথে কথা বলে ঝার ফুঁকের একটা ব্যবস্থা করছি,আপনি একদম টেনশন করবেন না

উজানঃ সাব্বিরররর

উজান চোখ রাঙালে সাব্বির দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে ওখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়,সাব্বিরের ওরকম অবস্থা দেখে উজান হিয়া দুজনে হেসে ফেলে,হিয়া আলতো করে চাদরের ভেতর থেকে মুখ তুলে উজানের দিকে তাকালে দেখতে পারে উজান ওর দিকে কেমন নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে,হিয়ার চোখে চোখ পড়তেই উজান হিয়াকে ছাড়িয়ে দিয়ে পাশ থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে হিয়ার হাতে দেয়

উজানঃ মেজাজ ঠান্ডা হলো,এরপর জ্বর আসুক খুব ভালো হবে

হিয়াঃ আরে আসবে না__আপনি খাবেন না

উজানঃ না আমার তোমার মতো এই শীতে এরকম ঠান্ডা খাবার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই

হিয়া আবার একটা ভেংচি কেটে মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে আইসক্রিম খেতে শুরু করে,গায়ে এমনিতে হিয়ার কিছু জড়ানো নেই তার উপর এরকম ঠান্ডা আইসক্রিম,হিয়া আইসক্রিমে এক কামড় দিচ্ছে আর ঠান্ডায় হিয়ার ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপছে আর উজান অবাক দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে___হিয়ার খাওয়ার মাঝপথে উজান ওর বা হাতে হিয়াকে হ্যাচকা টেনে কাছে নিয়ে এসে ডান হাত দিয়ে হিয়ার বা গালে হাত রেখে,আঙ্গুল দিয়ে হিয়ার ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁইয়ে দিতে থাকে,আর উজানের এই স্পর্শ হিয়ার পুরো গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিলো

হিয়াঃ ভাই-য়া কি কর-ছেন

উজান হিয়ার ঠোঁট থেকে ওর হাত সারিয়ে হিয়ার হাত থেকে আইসক্রিম টা কেঁড়ে নেয়

উজানঃ অনেক হয়েছে আর না__এখন সোজা রুমে যাবা,সন্ধি বললেও রুম থেকে বের হবা না

হিয়াঃ ঠি-ক আ-ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here