সে_আসবে_বলে(২য় পর্ব)

0
752

#সে_আসবে_বলে(২য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

আবিদ রাতে এসেও বাসায় মা কে কোথাও খুজে পেল না। মাকে খুজে না পেয়ে কিছুটা বিচলিত হয়ে কথার কাছে জিজ্ঞেস কর‍তে গেল ওর মায়ের ব্যাপারে।

– কথা, মা কোথায়?

– কি জানি। সেই সকালে বের হয়েছে আর বাসায় আসেনি তো।

– মানে? দুপুরের পরেও মা বাসায় ফিরেনি অথচ আমাকে একবারও ফোন করে বলার প্রয়োজন মনে করো নি?

– আরে আমি কি জানতাম নাকি যে রাতেও ফিরবে না? আমি তো ভেবেছিলাম যে হয়তো আশপাশেই কোথাও আছে। চলে আসবে।

আবিদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলতে লাগলো,

– এখন কোথায় খুজবো আমি আমার মাকে? কোথায় চলে গেলো? তুমি কি মা কে কিছু বলেছো? হয়তো কষ্ট পেয়ে কোথাও চলে গেছে। নাহলে আমার মা তো আমাকে না বলে কোথাও যায় না।

– আজব তো! আমি আবার কি বলতে যাবো তোমার মা কে? আর তাছাড়া এত টেনশন করার কি আছে বুঝিনা। এমন নয় যে তোমার মা কোন বাচ্চা মানুষ যে হারিয়ে যাবে। সে যথেষ্ট সচেতন এবং শিক্ষিত একজন মানুষ। তাই যদি কোথাও গিয়েও থাকে তাহলে সেটা তার নিজস্ব প্রয়োজনে ই গেছে। আর হয়তো তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করে নি বা বলতে চান নি।

– তুমি এসব কি বলছো? আমার মা আমার কাছে কোনো কিছুই গোপন করে না। আর আমাকে না বলে কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা ও করে না। সে জানে আমি যেখানেই থাকি না কেন বাসায় ফিরে তার মুখ না দেখলে অস্থির হয়ে যাই।

আবিদ এর কথাগুলো শুনে কথার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বেশ রাগ আর বিরক্তি নিয়ে বললো,

– তো মায়ের আচলের তলায় লুকিয়ে থাকার এতই যখন শখ তো যাও গিয়ে খুজে নিয়ে আসো নিজের মাকে। আমার কাছে এসে এত কথা কেন বলছো?

বলেই নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে ফেসবুকে ঢুকলো। এদিকে কথার ব্যবহারে আবিদ খুবই আহত হলো। ও বুঝতে পারে না কথা কেন ওর মাকে সহ্য করতে পারে না? মায়ের কথায় ও এত বেশি বিরক্ত কেন হয়ে যায়? সে তো দুজনকেই আলাদা আলাদা ভাবে ভালোবাসে। তার কাছে দুজন সম্পূর্ণ আলাদা। দুজনের স্থান আলাদা, সম্মান ও আলাদা। ও বুঝে না কথা কেন দুজনকে এক করে ফেলে আর ভাবে ওর ভালোবাসা সব মাকে দিচ্ছে?

এসব কথা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো আবিদ। তার এখন একটা ই কাজ। সেটা হলো মাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করা। কিন্তু কোথায় খুঁজবে?

সম্ভাব্য সব জায়গায় কল করে খোঁজ নিলো আবিদ। ওর মায়ের হাতে গোনা কয়েকজন এর সাথে পরিচয়। আর আবিদের দাদা বাড়ি বা নানা বাড়ির কারো কাছে তার মা যাবে না। তবুও সবার কাছে খোঁজ নিলো। বছরে একবার রমজান মাসে তারা তাদের গ্রামের বাড়ি যায়। সেখানে বাবার কবর আছে। ওখানেও খোঁজ নিলো। নাহ সেখানেও যায়নি।

সব জায়গা খোঁজ নিয়েও পেল না মাকে। সিদ্ধান্ত নিলো কাল সকালের মধ্যে না পেলে থানায় একটা মিসিং ডায়েরি লেখাবে।

অনেক রাত হয়ে গেছে। কথা বেশ কয়েকবার খেতে ডাকলো আবিদকে। কিন্তু আবিদ খেতে আসলো না। পরে কথা গিয়ে আবিদ এর কাঁধের উপর হাত রেখে আবিদকে জিগ্যেস করলো,

– আচ্ছা আবিদ, মা যদি আমাদের সাথে না থাকে তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে তোমার?

– মানে?

– মানে বললাম আর কিহ। আমরা কি পারিনা দুজনে ছোট একটা সুখের সংসার গড়ে তুলতে? যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব? আর আমাদের ছোট ছোট ইচ্ছে রা থাকবে? কোন ঝুম বর্ষার রাতে দুজনে ইচ্ছেমতো ভিজে বাসায় আসবো, তখন জ্বর হবে বলে শাসানোর জন্য কেউ থাকবে না। তোমার কি এমন ইচ্ছে হয়না?

– না। আমার মা ছাড়া আমার থাকার ইচ্ছে হয়না। আর তাছাড়া গভীর রাতে বৃষ্টি তে ভিজলে মা তো শুধু শুধু বকে না। তার কাছে আমরা দুজনই সন্তানের মতো। তাই আমাদের অসুস্থতা তার ভালো লাগবে না। এর মানে এটা না যে সে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করে। মা হিসেবে সে একটু শাসন করতেই পারে। আমরা সেটা কিছুক্ষেত্রে উপেক্ষা করলেও সে কিছু মনে করবে না।

– ও আচ্ছা তার মানে আমার কথা কিছুই তোমার মাথায় ঢুকছে না। তোমার কাছে মা ছাড়া আর কিছুই ইম্পর্ট্যান্ট না। আমি এটা বুঝতে পারছি না, মায়ের তো এখন বয়স হয়েছে, তাকে এখন আমাদের সাথে রাখার কি প্রয়োজন আছে? তাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেই তো পারো। একটা লোক রেখে দিব নাহয় কাজকর্ম করার জন্য। তার ও ভালো লাগবে।

– তার বয়স হয়েছে বলেই সে এখন একা থাকতে পারবে না। তার এখন ছেলে বউ আর নাতি নাতনী দের সাথে থাকার বয়স। আমি তো এটা বুঝতে পারছি না যে আমার মা এখানে থাকলে তোমার কিসের সমস্যা?

– আমার সমস্যা আছে। তার কারনে আমি আমার স্বাধীনতা পাই না।

– সে কখনো তোমার স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ করেছে?

– আমার এত কথা ভালো লাগে না আবিদ। মন চাইলে খাও আর মন না চাইলে যা ইচ্ছা করো। তুমি চুপ থাকো তো এত ঘ্যানঘ্যান করতে আমার ভালো লাগে না। দিনদিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো।

আবিদ একেবারে চুপচাপ হয়ে গেল। ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে মায়ের জন্য। চুপচাপ বসে ভাবল এখন কি করবে? এখন তো রাত সাড়ে এগারাওটা বেজে গেছে। কিন্তু মায়ের কোন হদিস পেলোনা। আর কিছুদিন আগে মায়ের ফোনটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর নতুন আর ফোন নিতে চায়নি মা। একটা ফোন যদি থাকতো তাহলে হয়তো মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারত আবিদ। কিন্তু এখন এমন একটা পরিস্থিতি যে মায়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আবিদ বসে মাথা নিচু করে চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। বুঝতে পারছে না এখন কি করা উচিত। আর কথা তো প্রচুর পরিমাণে ঝগড়াঝাটি করে। এবং মাকে অসম্মান করে। কখনো মা আবিদের কাছে কোন কিছু বলে না। কিন্তু আবিদ বুঝতে পারে যে মা কথার দ্বারা প্রচুর কষ্ট পায়। মাঝেমধ্যে যখন আবিদ হালকা-পাতলা কথার উপরে একটু রাগ দেখাত তখন মা থামিয়ে দিত। থামিয়ে দিয়ে বলতেন যে এরকম টুকটাক সংসারে এমন হয়। মা আবিদকে সবসময় বুঝাতেন। কিন্তু কথার আচরণ আবিদের একটুও ভালো লাগছে না।

কথা কিছু সময় পরে আবিদকে ডাক দিল। আবিদ কোনো রিপ্লাই করলো না। কথা আবিদের কাছে এসে বললো….

– কি ব্যাপার আবিদ? আমি তোমাকে কতবার ডাক দিলাম সাড়াশব্দ করলে না। কারণ কি? তুমি কেন আমার ডাকে সাড়া দিলে না?

– কি করতে হবে?

– আমি শাড়ি পড়েছি। তোমার হেল্প লাগবে। তুমি নিচ থেকে শাড়ির কুচি টা ধরো। অনেকদিন শাড়িটা পড়া হয় না ঠিকমত। আজকে শাড়ি পড়ে তোমাকে আমি চমকে দিব।

– রাতে শাড়ি পরতে হবে কেন বুঝলাম না। শাড়ি তো কালকেও পড়া যেতো।

– আমার এখন ইচ্ছা হয়েছে তাই আমি এখন শাড়ি পড়বো আমার তো এত কথা ভাল লাগেনা।

– আচ্ছা ঠিক আছে যা ইচ্ছা করো আমার সাথে। আমিও চলে যাব তোমার ইচ্ছামত থাকো। আমি নিতে পারছি না।

– এখন আমি তোমার কোন কথা শুনবো না। তুমি শাড়িটা ধরো আমি কুচি ঠিক করি।

আবিদ শাড়িটা ঠি করে খাটের এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। কথা পিছন থেকে এসে গলা ধরল। ধরে বললো…..

– আবির দেখতো আমাকে এখন কেমন লাগতেছে? ভালো লাগতেছ না?

– হুম খুব ভালো।

কথা পিছন থেকে আবিদকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে একটা একটা করে চুমু দিল। আবিদ অন্যদিকে প্রচন্ডভাবে বিরক্ত হচ্ছে। আবিদ শুধু কথার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে। ওর মাথায় একটাই চিন্তা তাহলো আবিদের মা। আবিদের মা এখনো বাসায় ফিরলো না। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখনতো বাসায় ফিরতে পারবে না। কোথায় আছে কি করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আবিদের মা কি কোন খাবার খেয়েছে নাকি খায়নি। এই ব্যাপারটা আবিদকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। কথা আবিদকে বলল।

– আমার দুই ঠোটের লিপস্টিক তোমার দুই গালে লাগিয়ে দিবো। তার পরে সেই ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিবো। এতদিন তো তোমার রোমান্টিক বউকে দেখতে পারোনি। আজ তোমার রোমান্টিক বউকে তোমার মন মত দেখবে।

আবিদ কোনো উত্তর দিলো না। আবিদের ইচ্ছা হলো কথার গালে দুইটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে আবিদ চুপচাপ করে আছে।

রাতটা পার হলো। বিছানা থেকে উঠে আবিদ ফ্রেশ হলো। সারারাত আবিদ ঘুমাতে পারেনি। কথা এখনো ঘুমিয়ে আছে। কথাকে ডাক দিয়ে বললো আমি বের হচ্ছি।

কথাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবিদ বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। থানার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে।

থানায় গিয়ে একটা মিসিং ডায়েরি লিখালো। প্রথমে ভাবলো কথার ব্যাপারগুলো আবিদ পুলিশ অফিসারের কাছে শেয়ার করবে। কিন্তু না তা করলো না। আরো দুইদিন যাক, যদি ওর মাকে খুঁজে না পায় তাহলে কথার নামে ডায়েরি লিখাবে। একটা গাড়ি নিয়ে এই শহরের সকল রিলেটিভদের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।

কিছুদূর যাওয়ার পরে আবিদের পাশের ফ্লাটের একলোক ফোন দিয়ে বললো..

“আপনি কোথায় আছেন? আপনার বাসায় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।”

[চলবে…….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here