#সোনাবৌ,৩য় পর্ব
মোর্শেদা খাতুন
**************
স্বর্ণা ঘনঘন চোখ মুছছে।সামনে ভাইয়া,বাবা-মা গম্ভীর মুখে বসে আছেন।ভাবী স্বর্ণার মাথায় হাত রেখে বলছেন-“যত যাই হোক,এভাবে না বলে চলে আসাটা তোর উচিত হয়নি রে স্বর্ণ….!”
স্বর্ণা কোন জবাব দিলোনা।বাবা হঠাৎ ধমকে বলে উঠলেন-“যা রেডী হ,চল্…আমি তোকে দিয়ে আসবো!”
ভাইয়া আপত্তির সুরে বলল-“সব মানা যায় বাবা,এসব বেশরীয়তি কাজে তো সে তার স্ত্রীকে জবরদস্তী করতে পারেনা।”
-“অত কথার দরকার নেই!বিয়ে হয়েছে…এখন এসব মেনেই ওকে থাকতে হবে!”
ভাইয়া কিছু বলতে গেলে স্বর্ণা বাধা দিয়ে বলে ওঠে-“থাক্,ভাইয়া…আমি চলে যাবো!কারন এটাই আমার ভাগ্য!”বলে স্বর্ণা উঠে চলে গেল।মা পুরোপুরি নির্বাক হয়ে বসে রইলেন।
……….
রাত প্রায় দশটা।এখনো মেরাজ বাড়ী ফেরেনি।স্বর্ণা কাজের লোকদের ডেকে জিজ্ঞেস করল সাহেব গতরাতে কখন বাড়ী ফিরেছে!তারা জানালো দেরী করেই ফিরেছে।স্বর্ণা ভাত নিয়ে বসে থাকতে থাকতে টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
হঠাৎ চোখেমুখে পানির বড় একটা ঝাপটা খেয়ে চমকে উঠে দেখল।মেরাজ গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে।তারমানে পানিটা ওই মেরেছিলো।মেরাজ পানির গ্লাস রেখে হাত নেড়ে বলল-কি হলো,বাপের বাড়ী ঠাঁই হলোনা?নাকি সম্পত্তি ছুচে যাবার ভয়ে তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠিয়েছে?
স্বর্ণা অনেক কথা সাজিয়ে রেখেছিল বলবে বলে।পণ করেছিলো মেরাজ যা’ই বলুক রাগ করবেনা।বেছে বেছে মেরাজের পছন্দের নীল শাড়ীটা পড়েছে ও,সুন্দর করে সেজেছে।কিন্তু মেরাজ এমন সব কথা বলা শুরু করেছে যে স্বর্ণার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।মেরাজ তখনো বলে চলছে-“তুমি তো কোনো কাজেরই না..না ঘরকা..না ঘাটকা..!আমার জন্য তুমি আনফিট বুঝেছো?তোমাকে দিয়ে আমার চলবেনা…বলে জড়ানো পায়ে বেডরুমে ঢুকে গেল মেরাজ।স্বর্ণার সন্দেহ হচ্ছে মেরাজ হয়ত ড্রাংক্ড।সে ভীরু পায়ে ঘরে উঁকি দিল।মেরাজ বাইরের কাপড়েই বিছানায় গড়িয়ে পড়েছে।স্বর্ণা ওকে ঠেলেঠুলে ঠিক করে দিল।পা থেকে জুতা মোজা খুলে দিল।তারপর শার্টের বোতামটা খুলে শার্টটা গা থেকে সরাতে যাবে তখনি ওর পকেটে স্বর্ণার হাত বাজল।স্বামীর অগোচরে তার পকেটে হাত দেয়া মানা তাই স্বর্ণা সংকোচ করছিল কিন্তু কৌতুহলের কাছে সংকোচ পরাজিত হলো কারন স্বর্ণার হাতে ধারালো কিছুর খোঁচা লাগায় সে পকেটটা ঝাঁকি দিতেই ছোট ছোট কানের দুটো ঝুমকো বেরিয়ে এলো।স্বর্ণা হাতের তালুতে ওগুলো নিয়ে চরম বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে রইল।মনে নানান চিন্তা উঁকি দিতে লাগল।হঠাৎ মনকে বোঝালো,না জেনে শুনে স্বামীকে সন্দেহ করা ঠিক না।দরকার হলে মেরাজকে সকালেই জিজ্ঞেস করবে।দুলগুলো পকেটেই রেখে দিয়ে আস্তে করে শার্টটা খুলে হ্যাঙ্গারে রেখে দিলো।
…..
পরদিন নাস্তার টেবিলে স্বর্ণা খুব যত্ন করে মেরাজের পছন্দের আলু পরোটা বানালো মাংসের ঝুরি দিয়ে।মেরাজ নিঃশব্দে খেলো কিছু বললোনা।স্বর্ণা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল-আপনার গতকালকের শার্টটা ময়লা ছিল,ওটা ধুতে দিয়ে দিই!মেরাজ পানি খেয়ে বলল-“পকেট খালি করার সময় দেখো ওতে একজোড়া দুল আছে।আমার পার্সের কাছে রেখে দিও,যাবার সময় নিয়ে যাবো!”
স্বর্ণার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল,মেরাজ দুলের কথা অকপটে বলছে তারমানে ওটা হয়ত মেরাজ কিনেছে বা….স্বর্ণার ভাবনায় ছেদ পড়ল মেরাজের কথায়।
-“দুলটা কার জানতে চাইলেনা?”
-“বলেন”!স্বর্ণা স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইল।
-“ওটা জেসমিনের….চিনেছো?”
স্বর্ণার মুখে কালো মেঘের ঘনঘটা আর সেটা দেখে মেরাজের ঠোঁটে বাঁকা চাঁদের হাসি।ঘাইটা জায়গামতো পড়েছে।বলল-“এখন প্রশ্ন করতে পারো,জেসমিনের দুল আমার পকেটে কেন?”
-“নাহ্..জিজ্ঞেস করে কি হবে!”স্বর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেলো!মেরাজ হাসিমুখে সেদিকে তাকিয়ে রইল।
…….
আজ বৃহঃবার।এই দিনটিতে মেরাজ অফিস সেরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়।সে উদ্দেশ্যে আজো জেসমিনের বাসায় রওনা হলো।জেসমিন একটা পার্লার চালায়।বিয়ে হয়েছিল কিন্তু টেকেনি।এখন একাই থাকে।জেসমিন ওর সাথে আরো অনেককেই দাওয়াত করেছে।আজ নাকি ওর জন্মদিন।এক বন্ধু টিপ্পনি কেটে বলল-“বছরে তোর কয়টা জন্মদিন হয় রে?”সবাই হা হা করে হেসে উঠল।জেসমিন মেরাজকে ভেতরের ঘরে নিয়ে বসালো।মেরাজের জন্য এই বাড়তি খাতির সবাই জানে।এটা বন্ধু মহলে এখর ওপেন সিক্রট কারন মেরাজ নারীঘেঁষা আর জেসমিন টাকার পুজারী।কার লোভ মেরাজের সম্পত্তির দিকে।জেসমিন মেরাজের সাথে ঘনিষাট হয়ে বসে হাত পাতল-“দাও,আমার জন্মদিনের গিফট দাও..!”
মেরাজ হেসে পকেট থেকে দুলজোড়া বের করে দিলো।বলল-“দেড়ভরি আছে এতে”।
জেসমিনের অন্তরটা নেচে উঠল।কিন্তু আবেগ দমন করে বলল-“এসব ছেলেভোলানো গিফটে আমি খুশি নই,আমাকে কবে ঘরে নিচ্ছো সেটা বলো!
-“তুমি যখন যেতে চাও,তখনই..!”মেরাজ দুষ্টু হেসে বলল।জেসমিন ওর বুকে কিল মেরে বলল-“ঠাট্টা ছাড়ো…তোমার তুলতুলে বউ নাকি আবার ফিরে এসেছে?”
-“ওর জায়গায় ও,তোমার জায়গায় তুমি…!ও এসেছে তাতে তোমার তো কোনো সমস্যা নেই!”
জেসমিন গম্ভীর হলো-“না,মেরাজ,আমাকে পেতে হলে,ওকে ছাড়তে হবে!”
মেরাজ কিছু বলতে নিলো কিন্তু জেসমিন ওর ঠোঁট তর্জনী দিয়ে বন্ধ করে দিলো।মেরাজ আর কিছু বলার শক্তি পেলোনা!”
…
স্বর্ণা চায়ের কাপটা দিয়ে মেরাজের সামনে বসল।মেরাজ ওকে একনজর দেখে নিয়ে বলল-“তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!”
-“জ্বী,বলুন..!”
-“আমি জেসমিনকে বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি!”বলে মেরাজ চায়ে চুমুক দিলো।স্বর্ণার বুক ধক করে উঠল,কাঁপা স্বরে বলল-“আ..ামার কোনো দোষ হলে বলুন,শুধরে নেবো..!”
-“তোমাকে বলে তো লাভ নেই,পারবে,টিশার্ট জিন্স পড়ে কাল আমার সাথে নৌ-বিহারে যেতে? পারবেনা।ওখানে সব বন্ধুর বৌয়েরা কত স্মার্ট,তারা সব ধরনের পরিবেশে ফিট।স্বামীর উপযুক্ত সঙ্গী,স্বামীর মন বোঝে সেভাবে চলে,তোমার মত সেকেলে মাইন্ডের না।জেসমিন তেমনি একটা মেয়ে যেমন স্মার্ট তেমনি ইউনিক।”এ পর্যন্ত বলে মেরাজ থামলো।স্বর্ণা মৃদু স্বরে বলল-“তাহলে আ..আমি কি করবো…?”
-“তুমি তোমার মত থাকবে..!জেসমিন অবশৌ তোমাকে ত্যাগ করার শর্ত রেখেছে।কিন্তু আমি ওকে বোঝাবো যে তুমি তোমার মত থাকবে ওর কোনো সমস্যা হবেনা!”
স্বর্ণা ভেজা চোখে তাকালো-“তারমানে আমাকে থাকতে বলছেন আপনি?”
-“হ্যাঁ…সমস্যা কি?”
-“আমার প্রতি এই দয়ার কারন,আমি তো আপনার ভালোবাসার পাত্রী হতে পারিনি!”
-“ভালোবাসা টাসা কিছু না..মাঝেমধ্যে তো স্বাদ বদলাতেও ইচ্ছে করে…..তাই থাকো!”
স্বর্ণার গা রি রি করে উঠল।কিছু বলতে যাবে তখনি দরোজার পাশ থেকে বড়ভাইয়ার কন্ঠ-“স্বর্নালী..?” শুনে চমকে উঠল স্বর্ণা!একমাত্র ভাইয়াই ওকে পুরো নামে ডাকে।সে তাকিয়ে দেখলো ভাইয়া-ভাবী দুজনেই মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্বর্ণা দৌড়ে গিয়ে ওদের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে বলল-“আরে ভাইয়া…ভেতরে এসো!”
ভাইয়া-ভাবী দুজনেই গম্ভীর।স্বর্ণা ভাবছে ভাইয়া সব শুনে ফেলল নাকি?”
মেরাজ সালাম টালাম কিছু না দিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিল।হঠাৎ ভাইয়া তাকে পেছন থেকে ডাকল-“মেরাজ শোনো..!”মেরাজ তাকাল-
-“হমম…বলেন!”
-“তুমি একটু আগে যা বলছিলে তা কি সত্যিই?”
সবাই চুপ হয়ে রইল।স্বর্ণা ভাইয়াকে থামাতে তার কাঁধে হাত রাখতেই ভাইয়া ওকে হাত দেখিয়ে থামতে বলল।মেরাজ শান্ত স্বরে বলল-“হ্যাঁ…সত্যি।কোনো সমস্যা?”
-“আমার বোনের দোষটা কি বলবে?কেন তুমি ওকে কষ্ট দিচ্ছো?”
-“মেরাজ কাউকে জমা খরচ দেয়না,মন চাইলে বোনকে নিয়ে যেতে পারেন,এমনিতেও সে এখানে কষ্টেই আছে”!
স্বর্ণা”ভাইয়া” বলে থামাতে গেলে ভাইয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল-“তৈরী হয়ে আয়,তুই আমার সাথে যাবি,যেখানে তোর ন্যুনতম স্ত্রীর মর্যাদা নেই,সেখানে তোকে আমি ফেলে রাখতে পারবোনা!”
-“ওকে..ফাইন..স্বচ্ছন্দে নিয়ে যান…দুদিন পর আবার দিয়ে যাবেন না যেন”বলে মেরাজ ভেতরে চলে গেলে স্বর্ণা দিশেহারার মত সেদিকে তাকিয়ে ডাকল-“মেরাজ…শুনুন..!”
ভাইয়া ধরা গলায় বলল-“তুই রেডী হ,এই নরকে আর এক মুহূর্ত না!”
…
বারবার পেছন ফিরে দেখতে দেখতে চোখের পানি নিয়ে বেরিয়ে এলো স্বর্ণা।
……
সবশুনে বাবা এবার আর কোনো মন্তব্য করলেন না।মা কেবল বললেন-“ওকে এভাবে নিয়ে এলি,এভাবে কি ওর জীবন কাটবে?
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“আল্লাহ একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করবে!”
দুদিন পরেই মেরাজের পক্ষ থেকে ডিভোর্স লেটার এলো!স্বর্ণা সেটা হাতে নিয়ে সারাদিন পাগলের মত কাঁদলো।ভাইয়া দুশ্চিন্তায় পড়লেন।
….
কয়েক মাস কেটে গেলো।স্বর্ণার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।সারাদিন রাত নামাজেই কান্না করে ও।ওকে এমন দেখতে ভাইয়ার আর সহ্য হতে চায়না।কিন্তু কি করবে…সেরকম কোন ভালো ছেলেও পাচ্ছেনা যে নতুন করে বোনটাকে তার হাতে তুলে দেবে।এরই মধ্যে একদিন ভাবী ভাইয়াকে ফিসফিসিয়ে একটা ছেলের কথা বললেন।ভাইয়া সব শুনে বলল-“ওরা এসে স্বর্ণাকে দেখে যাক্..!”
-“ছেলের মা আসবে…তার পছন্দেই ছেলে বিয়ে করবে…!”
….
সেদিন ভাবী জোর করে স্বর্ণাকে নতুন থ্রিপীসটা পড়িয়ে হালকা সাজিয়ে দিলেন।পাত্রের মা এসে স্বর্ণাকে ভালোভাবে দেখলেন তারপর জানালেন, মেয়ে তার পছন্দ হয়েছে।স্বর্ণাদের বাড়ীতে আনন্দের ধুম পড়ে তেলো।কেবল স্বর্ণার মুখটাই মলিন।স্থির হলো কোনো ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি বিয়ে করিয়ে সেদিনই মেয়ে নিয়ে যাবে ওরা।ছেলের মা বললেন-“যে বিয়েতে খরচ কম হবে সে বিয়েতে বরকত বেশী হবে।!”
স্বর্ণাদের পরিবার যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো!বিয়ের দিন ছেলের মা জানালেন তাঁর ছেলে বিয়ের আসরেই দেনমোহরানা শোধ করবে।স্বর্ণা কিছুটা অবাক হলো।খুশী হতে গিয়েও বুকের কোথায় যেন কাঁটা বিঁধে রইল।সেই কাঁটার নাম-“মেরাজ”!
…..
রাত দশটায় বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলো।সালাম-কালাম,খানা-পিনা শেষে বউ নিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো।
…..
বাসর ঘরে ফুলের বিছানায় ঝড়া ফুলের মত মলিন মুখে বসে আছে স্বর্ণা।আজ এতগুলো মাসেও মেরাজকে মন থেকে মুছতে পারেনি।শুনেছে মেরাজ বিয়ে করে বউ নিয়ে হানিমুনে গেছে।স্বর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অজান্তে চলে আসা চোখের পানিটুকু মুছলো।ভাবী আজ জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে।স্বর্ণা সাজতে চাচ্ছিলো না।ভাবী ধমকে বলেছে-“পেছনের কথা ভেবে নিজের আগামীটাকে নষ্ট করিসনা স্বর্ণ..!তুই এখন অন্য কারো আমানত!মেরাজ ফেরাজের কখা মন থেকে সরিয়ে দে!”
স্বর্ণা এসব সাত পাঁচ যখন ভাবছে তখনি দেখল শুভ্র সফেদ পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটা গমগমে কন্ঠে তাকে সালাম দিলো।স্বর্ণা বিষম চমকে উঠল-“এই কন্ঠস্বর কোথাও শুনেছে মনে হলো!কিন্তু মনে করতে পারলোনা!”
তিনি খাটে বসে মৃদু কেশে বললেন-“আপনার কপালে হাত রেখে একটা দু’আ পড়তে হবে তো তাই…!”
স্বর্ণা পাতলা ওড়নার ভেতর দিয়ে তাকালো আর ওর চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো…..আরে..এ তো সেই লোক…ওর বিয়ের পরপর মেরাজের আমন্ত্রনে ওদের বাসায় এসেছিলো,কি যেন নাম…?”
লোকটি আস্তে করে ঘোমটা সরিয়ে কপালে হাত রাখতে গিয়ে চমকে উঠে বলল-“আ…আপনি?”
স্বর্ণা লজ্জায় কষ্টে কেঁদে ফেলল।ওর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।লোকটা সাথে সাথেই বলে উঠল-“আরে..আরে..কাঁদছেন কেন?আমি ওসব ভেবে বলিনি,অবাক হয়েছি কারন আমি জানতাম না যে আপনিই আমার মায়ের পছন্দের পাত্রী!”মা পভন্দ করেছেন এটাই আমার জন্য আদেশ।আম্মা বারবার বলেছিলেন কনে দেখার জন্য।সময় করে উঠতে পারিনি”!
স্বর্ণা চুপ করে বসে রইল।লোকটা তার কপালে আলতো হাত রেখে মৃদু স্বরে দুয়া পড়ে উঠে দাঁড়ালো-“ঘাবড়ানোর কিছু নেই…আমি আপনাকে বিরক্ত করতে আসিনি কারন জানি আজ আপনি সহজ হতে পারবেন না।এককাজ করুন.. শাড়ী জামা বদলে হালকা হোন্,তারপর ভালো মেয়েটির মত চুপ করো শুয়ে পড়ুন।”
স্বর্ণা তাকালো-“আর আপনি?”
-“আপনি চাইলে আমি অন্যত্র ব্যবস্থা করে নিতে পারি অথবা খাটেও শুতে পারি।তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন,আপনার কষ্ট হয় এমন কিছুই ঘটবেনা,আই প্রমিজ।”লোকটার প্রানবন্ত অকপট কথা স্বর্ণার কষ্টের ক্ষতে শান্তির প্রলেপ মাখালো যেন।স্বর্ণা আলতো করে চোখ মুছে বলল-“না,খাটেই থাকুন,আপনাকে এদিক সেদিক দেখলে আপনার বাসার লোকেরা কি বলবে?”
-“লোক বলতে তো এক আম্মা আর আমরা দুজন!নিন্,শুয়ে পড়ুন।ফজরের সময় কিন্তু ডেকে দেবো!”লোকটির এ কথায় এবার স্বর্ণার মেঘলা আকাশে এক চিলতে রোদ দেখা দিল।মৃদু হেসে মাথা নাড়ল-“তাহলে তো খুবি ভালো হয়”!
লোকটা নিজের পাঞ্জাবী হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে হাতে একটা বই নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসল।স্বর্ণা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল-“বই পড়বেন এখন?”
-হুঁ…কিন্তু আপনার সমস্যা হবেনা…এখানে বেড সাইড ল্যাম্প আছে।আপনি লাইট নিভিয়ে দিতে পারেন!
স্বর্ণা বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল-“এই বারান্দা থেকে তো মেরাজের ঘর দেখা যায়।
স্বর্ণা ভাবনায় পড়ল।এখান থেকে তো মেরাজকে দেখা যাবে..কি করে সহ্য করবে ও…?”
……
চলবে…