স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ০১

0
5667

স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ০১
লেখিকাঃফারহানা ইসলাম

বিয়ের কয়েক মিনিট আগে আমি জানতাম পারলাম যে আমার হুব বরের পা দুটো অচল।নিজে হাঁটা-চলা করতে পারে না।হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়।কথাটা শোনে আমার চোখ-মুখ কেমন জানি অন্ধকার হয়ে গেলো।চারদিকের মানুষরা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করতে শুরু করেছে।আমার বান্ধবীরা তো আমাকে নিয়ে উপহাস করতে শুরু করছে।এইসব দেখে আমার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়েছে।অথচ কালকে অবধি সব ঠিক ই ছিলো।কিন্তু আজকে কী হয়ে গেলো??
,
,

আমি অনন্যা অনু।সবাই অনু বলে ই ডাকে।বড় গরীব ঘরের মেয়ে আমি।বাবা নেই।পরিবারে আছে বড় ভাই,মা,ভাবী আর ভাইপো।আমার বড় ভাই বেকার।তাই সংসার খরচ আমাকে ই চালাতে হয়।আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করি।মায়ের ঔষধ খরচ থেকে শুরু করে সবকিছু ই আমাকে দেখতে হয়।
কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই বললো আমার নাকি বিয়ে ঠিক করেছে।ছেলে বড়লোক পরিবারের ছেলে।টাকা-পয়সা কিছুর ই অভাব নাই।আমাকে নাকি একেবারে রাজকন্যার মতো রাখবে।আমি প্রথমে আপত্তি করলে আমার মা আর বড় ভাই আমাকে অনেক কথা শোনায়।তাই বিয়েতে রাজি হতে একপ্রকার বাধ্য ই হলাম।
,
,
আমার বরের নাম অভ্র চৌধুরী।কাল যখন অভ্রের সাথে মোবাইলে কথা বললাম তখন জানতে পারলাম।অভ্রের মা নেই।ঘরে সৎমা।আপনজন বলতে কেবল ওর বাবা আর দাদী ই আছে।কিন্তু অভ্র আমাকে একবারের জন্যে ই বলে নি ও নিজে হাঁটা-চলা করতে পারে না।ওর একটা সমস্যা আছে।
,
,
চারদিকের মানুষের কথা আর উপহাস শোনে আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো।ইচ্ছা করছিলো চিৎকার করে বলতে আমার সাথে কেনো এত বড় অন্যায় হলো??কী অপরাধ ছিলো আমার?আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি আমার মা আমার পাশে এসে বললো অনু রে মা আমার তুই বিয়েটা করে নে।এইটা তোর কাছে আমার আদেশ॥
,
,
মায়ের কথা শোনে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম।বিয়ের পর আমাকে অভ্রদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।তার চেয়ে অবাক কান্ড হলো বরযাত্রী হিসেবে মাত্র তিনজন এসেছে।অভ্র,আমার শ্বশুর আর দাদী শ্বাশুড়ি।
,
,
অভ্রদের বাড়ির দরজায় পা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকতে যাবে।ঠিক তখনি কেউ একজন বললো দাঁড়াও।আমি বেশ খানিকটা চমকে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখি একটা মধ্য বয়স্ক মহিলা,দুটো ছেলে দেখে অভ্রের ভাই ই মনে হচ্ছে।আর দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মধ্যবয়স্ক মহিলাটা কে দেখে আমি বুঝতে পেরেছি এটা অভ্রের সৎ মা ই হবে।আর একটা ছেলেকে আমি চিনতে পেরেছি।কারন কিছুদিন আগে ছেলেটি আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলো।
অভ্রের সৎ মা আমাকে বললো কে তুমি?আর বধূর বেশে এই বাড়িতে কেনো ডুকতেছো?কী তোমার মতলব??
,
,
অভ্রের সৎ মায়ের কথা শোনে আমি বেশ অবাক ই হয়ে যাই।আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলি আমি এই বাড়ির বড় বউ।ওয়াইফ অফ অভ্র চৌধুরী।আমার কথা শোনে অভ্রের সৎমা রেগে আগুন হয়ে যায়।উনি আমাকে বলেন হাও ডেয়ার ইউ?তোমার এত বড় সাহস।আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে ই অপমান করছো।বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে!!
,
,
হঠাৎ আমার দাদী শ্বাশুড়ি এসে বলে বৌমা কী শুরু করেছো এইসব!!ও এই বাড়ির বড় বউ।ওকে তাড়াতাড়ি করে ঘরে ডুকতে দাও।কথাটা শোনে অভ্রের সৎ মা তো কেঁদেই অস্থির।যাকে বলে ন্যাকা কান্না।আমার দাদী শ্বাশুড়িকে বলছে মা আপনি কী করে আমার বড় ছেলের এত বড় সর্বনাশ করলেন।আমাকে না জানিয়ে আপনি অভ্রের বিয়ে দিয়ে দিলেন।আপনারা কী আমাকে ওর শত্রু ভাবেন!!
আমার শ্বাশুড়ির কথা শোনে আমার দাদী শ্বাশুড়ি বলছে বৌ মা তুমি আমাকে ভুল বুঝতেছ।তুমি আমার কথাটা শোনো।
কিন্তু কে শোনে কার কথা।আমার শ্বাশুড়ি দৌড়ে দৌতলায় চলে গেলো।আমি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দর্শকের মতো নিরবতা পালন করছিলাম।
,
,
হঠাৎ আমার দাদী শ্বাশুড়ি একটা মেয়েকে বলে রিয়া আজ থেকে অনু তোমার বড় জা।যাও ওকে ঘরে নিয়ে যাও।তখন আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটি আমার জা হয়।কিন্তু মেয়েটি বললো এমন বস্তির মেয়ে আমার জা।কখনো ই না।এই কথা বলে মেয়েটি ও চলে যায়।
আমার শ্বশুর সেখানে আসে।তিনি এসে বলেন অধরা তোর ভাবীকে অভ্রের রুমে নিয়ে যা।আর ওকে একটু সাহায্য কর।
,
,
অধরা আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলো।রুমটার দেওয়ালে অভ্রের ছবি টাঙ্গানো।তখন আমি বুঝতে পারলাম এটা ই অভ্রের রুম।মেয়েটি আমাকে বললো আমি অভ্রের ছোট বোন অধরা চৌধুরী।মানে তোমার ছোট ননদ কিন্তু।অধরা কথা শোনে আমি একটু হেসে বললাম আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।
,
,
একটু পর অধরা চলে গেলো।আর আমিও নিজের বিয়ের শাড়িটা চেন্জ করার জন্যে একটা শাড়ি লাগেজ থেকে বের করে নিলাম।আমি যেই না শাড়িটা পরতে যাবো আমার শ্বাশুড়ি আমার হাত থেকে শাড়িটা কেড়ে নিলো।আর বললো তোমার মতো বস্তির মেয়ের পরনে কী এতো দামি শাড়ি মানায়।এই বলে উনি আমার হাতে দুটো কম দামি শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো তোমার মতো মেয়ের পরনে এর চেয়ে ভালো কিছু বেমানান লাগবে।কথাটা বলে ই উনি চলে যান।
,
,
আমার শ্বাশুড়ির কথা শোনে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।হঠাৎ কেউ আমার,,,,,,,,,,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here