স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ০৬

0
3253

স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ০৬
লেখিকাঃফারহানা ইসলাম

তখন দাদী বললো অনু আমাদেরকে বলা যায় না কী এমন গোপনীয় কথা।।তখন আমি বললাম দাদী প্লীজ আপনি অন্তত আমাকে ভুল বুঝবেন না।সময় হলে আমি আপনাদের সবাইকে সব সত্যি কথা বলবো।কথাটা বলে আমি দৌতলায় চলে গেলাম।।
,

,
দুইদিন পর,,,,,,,
আজ আমার শ্বশুর ডেকে বললো মা অনু একটু দিকে আসো তো মা।।বাবার কথা শোনে আমি বললাম আসছি বাবা।আমি আসছি বলে বাবার ঘরের দিকে গেলাম।।বাবার ঘরে গিয়ে দেখি দাদী ও সেখানে উপস্থিত আছে।আমি গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা আমাকে ডাকছেন বুঝি!!
তখন বাবা বললো হ্যাঁ মা ডাকছি।আসলে আমার জন্যে আর তোমার দাদীর জন্যে আদা দিয়ে দু কাপ রং চা করে নিয়ে আসো তো।।আমি আচ্ছা বলে চলে গেলাম।।
একটুপর আমি বাবা আর দাদী দুজনের জন্যে দু কাপ রং চা করে নিয়ে আসলাম।ওনাদের হাতে চায়ের কাপ গুলো দিয়ে আমি সেখানে ই দাঁড়িয়ে রইলাম।আমার শ্বশুর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো সত্যি অনু তোমার হাতের চা অপূর্ব।তখন দাদী বললো শুধু কী চা!!আমার অনুর হাতের প্রত্যেক রান্না ই অপূর্ব স্বাদ।ঠিক ফাতেমার মত ই।ফাতেমা নামটা শোনে আমার শ্বশুরের মুখ কেমন জানি কালো হয়ে গেলো।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ফাতেমা টা আসলে কে।ফাতেমা আসলে অভ্রের মা।
একটু দাঁড়িয়ে থেকে আমি বললাম,,,,,,,,,,,,,,,

বাবা আমার আপনার আর দাদীর সাথে কিছু কথা আছে!!(আমি)

কী কথা??(বাবা)

আরে অনু যা বলবি বিনা দ্বিধায় বল।।এত সংকোচ করবি না।।(দাদী)

আসলে দাদী আমি অর্নবের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই॥(আমি)

অর্নবের ব্যাপারে আবার কীসের কথা??(বাবা)

আহঃ আমজাদ তুই চুপ করবি!!ওকে ওর কথা তো বলতে দিবি।।অনু তুই বল।।(দাদী)

দাদীর কথা শোনে আমি একটু সাহস পেলাম। দাদী আর বাবাকে বললাম,,,,,,,,,

আসলে বাবা অর্নব একটা মেয়েকে পছন্দ করে আর ওকে বিয়ে করতে চায়।।(আমি)

ও আচ্ছা।।তাহলে এই ব্যাপার।।(বাবা)

জ্বী বাবা।আসলে সেদিন অর্নব আমাকে এই কথাটা ই বলেছিলো।।(আমি)

ও আচ্ছা।তাই বুঝি।(বাবা)

জ্বী বাবা।(আমি)

আসলে অরূপ ও ভালোবেসে রিয়াকে বিয়ে করেছিলো।কিন্তু রিয়া অনেক অহংকারী।কেননা সে অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে।(দাদী)

কিন্তু আরেকটা কথা ছিলো!!(আমি)

আজ আদা দিয়ে রং চা বানিয়ে তুমি আমাদের মা-ছেলেকে আর কী কী শোনাবে শোনাও।।(দাদী)

আসলে দাদী মেয়েটা অনেক গরীব ঘরের মেয়ে।তাই এটাই আপনাদের বলতে চাইলাম।।(আমি)

আচ্ছা সমস্যা নাই।।আমরা পরে আলোচনা করে দেখবো।এখন তুমি যেতে পারো।।(বাবা)
,

,
আচ্ছা বলে আমিও বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম।এসে দেখি অভ্র বিছানায় বসে বসে কী যেনো লিখছে।তখন আমি অভ্রের পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে বললাম কী লিখছেন অভ্র।
এইভাবে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে অভ্র অনেকটা চমকে গিয়ে বললো কিছু না।আসলে অনেকদিন পর্যন্ত কিছু লেখা হয়নি তো তাই লেখার ট্রাই করছি।
অভ্রের কথা শোনে আমি একটু হেসে বললাম আচ্ছা তাই বুঝি।একটা কথা বলার ছিলো অভ্র আপনাকে!!
অভ্র বললো জ্বী বলুন।
আমি বললাম প্লীজ আপনি নয় আজ থেকে তুমি করে বলবেন।কথা দিন আগে।
অভ্র বললো কথা দিতে পারি।যদি আপনি ও আমাকে তুমি করে বলেন।
আমি বললাম আচ্ছা বলবো।অভ্র তোমার যদি কোনো কোনো দ্বিমত না থাকে আমি কী তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি।
অভ্র একটু হেসে বললো কেনো নয়।অবশ্যই করতে পারো অনু।সমাজের অন্য মানুষ মানুক আর যাই করুক না কেনো এটা ই সত্যি তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
অভ্রের কথা শোনে আমি হেসে বললাম আমি জানি অভ্র।আমি বলতে চাইতেছি যে তোমার পায়ের সমস্যা কখন থেকে।প্লীজ ঘাবড়াবে না।আমাকে সবকিছু খুলে বলো।
,

,
আমার কথা শোনে অভ্র বলতে শুরু করলো,,,,,,,,,,,,,
আমার বয়স যখন সাত বছর তখন আমার মায়ের কী একটা জানি কঠিন অসুখ হয়।মা সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতেন।বাবা তো ব্যবসার কাজে সারাদিন বাইরে থাকতেন।মায়ের কাছে দাদী পড়ে থাকতেন।বাবা মায়ের জন্যে বাড়িতে একজন কাজের মহিলা রেখে দিয়েছিলেন।মহিলাটা সারাদিন মাকে খুব যত্ন করতেন।আর সেই সাথে বাড়ির সব কাজও নিজে সামলে নিতেন।
দিনের পর দিন মায়ের অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগলো।ডাক্তার প্রতিদিন ই বাসায় এসে মাকে দেখে যেতেন।
মা এত অসুস্থ থাকার পরও আমাকে সবসময় কাছে টেনে নিতেন।ভালোবাসতেন।আর যখন স্কুলে যেতাম তখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।কপালে চুমু খেতেন।
আমি তো তখন ছোট আমি এত কিছু বুঝতাম না।সারাদিন স্কুলে থাকতাম।বন্ধুদের সাথে খেলা করতাম।রাতে পড়া শেষ করে মায়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়তাম।মা প্রতি রাতে ই আমাকে রূপকথার গল্প বলে ঘুম পাড়াতেন।
,

,
একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখলাম বাড়িতে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে।দাদী,বাবা আর আমাদের কাজের মহিলা আছমা খালা খুব কাঁদছেন।আমি সবাইকে ঠেলে ভেতরে গেলাম।
ভেতরে যাওয়া মাত্রই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে শুরু করলো।বাবার কান্নার কোনো কিছু ই আমি বুঝতে পারলাম না।
আমি তখন সবাইকে বললাম আমি মায়ের কাছে যাবো।মা কোথায়?
তখন আছমা খালা আমাকে একটা কাপড় সরিয়ে দেখালো।
কাপড়টা সরাতে ই অামি অবাক হয়ে যায়।কারন কাপড়টার নিচে আমার মা শুয়ে ছিলো।মায়ের মুখ দেখে আমি তখন বুঝতে পেরেছি মা আর আমাদের মাঝে নেই।কথাটা মনে পড়তে ই আমি মায়ের কাছে যাই আর মায়ের মুখে হাত দিতে ই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন চারদিকে সুনসান নিরবতা।আশেপাশের লোকজন আমার জন্যে খুব আফসোস করছে।ঠিক তখনি পাড়ার একজন বড় ভাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে দু ফোঁটা চোখের পানি ফেলে বললো অভ্র রে ভাই তোর মায়ের দাফন করা তো হয়ে গেছে।
কথাটা শোনে আমি মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম।দাদী,বাবা আর আছমা খালা আমাকে সামলানোর চেষ্টা করছিলো।
,

,
এতটুকু কথা বললো অভ্র থামলো।তারপর চোখ মুছে আবার বলতে শুরু করলো,,,,,,,,,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here