স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ০৮
লেখিকাঃফারহানা ইসলাম
এত রাতে অধরা কার সাথে কথা বলছে।এই প্রশ্নটা মনের ভেতর ঘুরপাক করছে।একবার ভেবেছিলাম ভেতরে গিয়ে দেখবো।কিন্তু পরে আবার ভাবলাম আমি গেলে ওর যদি কোনো সমস্যা হয়।তাহলে তো বাড়িতে আবার নতুন অশান্তির সৃষ্টি হবে।এমনিতে তো বাড়িতে রোজ একটা না একটা ঝামেলা লেগে ই আছে।তাছাড়া কয়েকদিন পর অর্ণবের বিয়ে।তাই আমি নতুন করে বাড়িতে আর কোনো রকম ঝামেলা চাই না।
,
,
পরেরদিন সকালবেলা দেখি অধরা খুব সেজেগুজে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হচ্ছে।আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,,
অধরা।বোন আমার এত্ত সকাল সকাল কই যাচ্ছ।।(আমি)
ভাবি রোজ সকালে আমি কই যাই??(অধরা)
কেনো??কলেজে যাও।।(আমি)
তাহলে।এখন আমি কলেজে ই যাচ্ছি।(অধরা)
কিন্তু রোজ সকালে তো তুমি সাড়ে নয়টায় কলেজে যাও।।কিন্তু এখন তো মাত্র আটটা বাজে।তাহলে এত তাড়াতাড়ি কেনো যাচ্ছ।।(আমি)
আমার কথা শোনে অধরা খানিকটা চুপ থেকে বললো ভাবি তুমি একটু বেশি ই ভাবো সবসময়।প্লীজ এত বেশি প্রশ্ন করো না।যাও তোমার নিজের কাজ করো।
অধরার এমন ব্যবহারে আমি বেশ অবাক হলাম।কারন অধরা আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে আমি তা কখনো ই ভাবতে পারি নি।
আমি নিশ্চিত যে অধরা আমার থেকে কিছু একটা লুকুচ্ছে।শুধু আমার থেকে নয় সবার থেকে।তাই তো সে আমার কথার সঠিক উত্তর না দিয়ে এইভাবে এড়িয়ে চলে গেলো।
,
,
আমি সুমির(অভ্রদের কাজের মেয়ে)সাথে মিলে সবার জন্যে সকালের নাস্তা তৈরী করলাম।হঠাৎ করে দাদী আর বাবা সেখানে উপস্থিত হলেন।দাদী রিয়াকে ও ডাকলেন।রিয়া ও সেখানে এসে হাজির হলো।তখন দাদী বললেন,,,,,,,,,,,,,
শোন অনু!!(দাদী)
কী দাদী বলেন??(আমি)
দুই দিন পর তো অর্নবের বিয়ে।তাই আমি চাই রিয়া আর তুমি মিলে বিয়ের সব দায়িত্ব নিজের মতো করে সামলাও।।(দাদী)
দাদী সব কাজ আমি নিজে সামলাতে পারবো।তুমি দয়া করে কাউকে এর মধ্যে নিয়ে এসো না।।(রিয়া)
রিয়া শোন অনু তো সম্পর্কে তোমার বড় জা হয়।তাছাড়া ও এই বাড়ির বড় বউ।তাই ওকে বাদ দিয়ে তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া শোভা পায় না।।(দাদী)
রিয়া আমি তোমার সম্পর্কে বড় জা হই।তুমি মানো আর না ই মানো এটা ই সত্যি।তাই আমাকে যোগ্য সম্মান দিয়ে কথা বলো।আর যদি না পারো তাহলে অসম্মান করো না।।(আমি)
,
,
রিয়াকে কথা গুলো বলে আমি দৌতলায় চলে আসলাম।মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যেনো জাহান্নামে এসেছি।আমি বস্তির মেয়ে হলেও আমি বস্তিতে বেশ আনন্দে ছিলাম।যেখানে ছিলো না কোনো অহংকার।না ছিলো কোনো হিংসে-বিদ্বেষ।
আমি সোজা নিজের ঘরে গেলাম।গিয়ে দেখলাম অভ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে কী যেনো পড়ছে।
আমি অভ্রকে বললাম কী পড়ছো তুমি?
তখন অভ্র বললো উপন্যাস পড়ছি।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস শেষের কবিতা।
অভ্রের কথা শোনে আমি একটু হেসে বললাম ওমা তুমি উপন্যাস পড়তে ভালোবাসো সেটাতো আমি জানতাম না।
আমার কথা শোনে অভ্র বললো অনু তুমি আমার স্ত্রী।আমার ভালো লাগা,খারাপ লাগা,পছন্দ,অপছন্দ সব তুমি ই জানবে।হয়তো একটু সময় লাগবে।তাও তোমাকে ই জানতে হবে।
অভ্রের কথা শোনে আমি বললাম হ্যাঁ।আমি সব জানি।
,
,
অভ্রের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।এরপর বাড়ির ছাদে গিয়ে একটু বসলাম।অনেকদিন পর খোলা আকাশটা দেখতে পাবো।
ছাদে বসে বসে বাবার কথা ভাবছি।আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন।স্কুল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেন।একবার পাশের মহল্লায় মেলা বসলো।আমার সব বন্ধুরা মেলায় ঘুরতে যাবে বলেছিলো।সেইদিন আমি মেলায় যাওয়ার জন্যে বাবার কাছে বায়না করছিলাম।বাবা আমার বায়না মেটাতে আমাকে মেলায় নিয়ে গেলো।মেলায় গিয়ে বাবা আমাকে একটা পুতুল আর একটা মাটির ব্যাংক কিনে দিলো।সেইদিন আমি এত খুশি হয়ে ছিলাম বলার মতো না।ঐ পুতুলটা আর মাটির ব্যাংকটা আমি আজও আমার কাছে রেখে দিলাম।মাঝে মাঝে যখন বাবার কথা মনে পড়ে তখন আমি ঐ পুতুলটা আর ব্যাংকটা বের করে দেখি।ঐ জিনিসগুলোতে আমি আজও আমার বাবাকে দেখতে পাই।
,
,
বাবার কথা মনে পড়তে ই চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠে।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে