স্ত্রী
দুই পর্ব একসাথে
লেখিকা ঃতাওহীদা
পর্বঃ৬
সকাল ৭ টা,,,
প্রতিদিনের মতো রায়ানের মা নামাজ,, কোরআন তেলওয়াত সেরে বাগানে হাটাহাটি করছেন।হাটাহাটি শেষে দোলনাটায় গিয়ে বসলেন।প্রতিদিন এইসময়ে শিমু এসে তাকে চা দিয়ে যায় এখানে।সকালের নির্মল পরিবেশে এখানে বসে চা খেতে বেশ ভালো লাগে তার।
–বসতে পারি?
রায়ানের মা চমকে পাশে তাকালেন,,দেখলেন, জিনাত একটা ছোটো ট্রে হাতে দাড়িয়ে আছে।
-আরে,,জিনাত!! তুমি?
-হ্যাঁ,, কালকে বলছিলেন না,,চা খেতে খেতে মা মেয়েতে গল্প করবেন।তাই চলে এলাম।
-তাই!! খুব ভালো করেছো।এসো এসো বসো এখানে।
–কালকে বলেছিলেন না,,আমার চা নাকি কফি পছন্দ? আসলে আমার আদা দিয়ে ঝাজালো,মিষ্টি মিষ্টি লাল চা পছন্দ,, তার সাথে মচমচে চিকন মুড়ি!!(বসতে বসতে বলল জিনাত)
-সত্যি বলছো??আমারো তো সেটাই পছন্দ। আমার খুব পুরনো অভ্যাস এটা,,প্রতিদিন সকালে একমগ আদা দিয়ে লাল চা না খেলে আমার সকালের ঝিমঝিম ভাবটাই কাটে না!
–হ্যা,,তাইতো শিমুর কাছে শুনেই ঝটপট দুইমগ চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম।
–তাই!!তুমি বানিয়েছো চা? তাহলে তো এখনিই খেতে হয়।
জিনাত হাসিমুখে চায়ের মগ এগিয়ে দিলো রায়ানের মায়ের দিকে।
–বাহ,,,চমৎকার! স্বাদে – গন্ধে একদম অসাধারণ! তুমি তো ভীষণ ভালো চা বানাও।
— জানেন,,আমার আব্বু সবচেয়ে বেশি আমার হাতের চা ই পছন্দ করে।,আমার যতই কাজ বা পড়া থাকুক না কেনো,,আব্বুকে সকালে আর সন্ধ্যায় আমার চা বানিয়ে দিতে হতোই।
কথাটা বলেই জিনাতের মুখটা একটু মলিন হয়ে গেলো।রায়ানের মা বুঝতে পারলেন,,জিনাতের ওর বাবা মায়ের জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে।
-জিনাত,,ভাবছি বেয়াই বেয়াইনকে আজ দুপুরে দাওয়াত করবো,,, তুমি কি বলো?বিয়ের পর তো তাদের সাথে তোমার দেখাই হলো না।
জিনাত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর বললো,,,,
আসলে মা,,আপনিতো জানেন,,বিয়েটা কি অবস্থায় হয়েছে।আমার বাবা মা কতটা কষ্ট পেয়েছেন,আপনার ছেলের উপর,, তাই এই অবস্থায় তাদের এখানে দাওয়াত করাটা ঠিক হবে না।আর আমার মনে হয়,, তারাও এই মুহূর্তে এখানে আস্তে চাইবে না।
জিনাতের কথা শুনে রায়ানের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও মা,,,আজ আমার জন্যই আমার ছেলে তোমাকে এভাবে নিয়ে এসেছে।
-এখন এসব কথা বাদ দিন মা,,যা হবার তা হয়ে গিয়েছে।এই নিয়ে মন খারাপ করে কি লাভ?এখন এসব বাদ দিয়ে সামনের কথাই চিন্তা করা ভালো।(রায়ানের মাকে আশ্বস্ত করে বললো জিনাত)
-এসব তুমি বলছো মা,,সত্যি! আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া,,তুমি সব মেনে নিয়েছো।এখন আমি তোমার বাবা মাকে ঠিক বুঝিয়ে নেবো।তাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইবো।আমার রায়ান ঠিক তাদের মন জয় করে নেবে দেখো,,ওকে তোমার বাবা যেমনটা ভেবেছে,,ও ঠিক তেমনটা নয়।একদিন তোমার বাবা মা ঠিক ওকে মেনে নেবে দেখো।
জিনাত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মনে মনে ভাবলো,, আপনার ছেলে আমার যে সর্বনাশ করেছে,,তাতে,বাবা মা তাকে মেনে নিলেও,, আমি কক্ষনো তাকে ক্ষমা করতে পারবো না।আপনার ছেলেকে নিজের হাতে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
জিনাতকে চুপ করে থাকতে দেখে রায়ানের মা বললেন,,
-তাহলে তুমি নিজে একবার যাও।গিয়ে বাবা মায়ের সাথে দেখা করে এসো।তারা নিশ্চয়ই খুব চিন্তায় আছেন,,তোমাকে নিয়ে।
জিনাতের চোখদুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো। খুব খুশি হয়ে বললো,,সত্যি মা!আমি যাবো?
– কেন যাবে না! অবশ্যই যাবে।আমি এক্ষুনি গিয়ে রায়ানকে বলছি,,তোমাকে দিয়ে আস্তে।
রায়ানের কথা শুনেই জিনাতের খুশিতে যেন ভাটা পরলো।
-বলছিলাম কি মা,,ওনার যাবার কি দরকার,,আমি একাই চলে যাবো।পাশেই তো ভার্সিটি। আর ভার্সিটি থেকে বাসায় আমি তো একাই যাতায়াত করতাম।তাই আমি একাই যেতে পারবো।
-না,না। কি বলছো?তুমি তো তখন ভার্সিটির বাসে আসা যাওয়া করতে।এখন এতটা পথ একা যাওয়া ঠিক হবে না।রায়ান তোমাকে পৌছে দেবে।আর ভালো কথা মনে করেছো।বইপত্র সব নিয়ে এসো।কাল থেকেই আবার ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করো।শুধু শুধু ক্লাস মিস দিয়ে কি লাভ।তোমার মতো মেধাবী ছাত্রীর ক্লাস মিস দেয়া সাজে না।(মুচকি হেসে বললেন রায়ানের মা)
রায়ানের মায়ের কথা শুনে জিনাত খুব খুশি হলো।মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।ভাবলো,,,যাক বাবা,অন্তত এই বিয়ের চক্করে আমার পড়াশোনায় গ্যাপ পরবে না।উনি আসলেই বেশ ভালো মনের মহিলা।কিন্তু এতো ভালো একজন মানুষের এতো কঠিন অসুখ!!
এটা ভেবেই মনে একটা খারাপ লাগা অনুভব হলো জিনাতের।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জিনাত আর মাকে দেখছিলো রায়ান।ওর মাকে হাসতে দেখে আর জিনাতকে তার সাথে স্বাভাবিক ব্যাবহার করতে দেখে মনের মাঝে খুব শান্তি পাচ্ছে সে।মনে মনে জিনাতকে অনেক ধন্যবাদ দিলো সে,, তার অনুরোধটুকু রাখার জন্য।
★
রায়ান গাড়ি চালাচ্ছে।আর জিনাত পাশের সিটে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে।রায়ান গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে জিনাতের দিকে তাকাচ্ছে।একটা সাধারণ ঢোলাঢালা কালো বোরখা আর কালো একটা বড়ো ওড়না যাস্ট দুই প্যাচ দিয়ে হিজাব পড়ে আছে জিনাত।মুখে কোনো সাজগোজ নেই।
রায়ান খেয়াল করলো,,আজকালকার মেয়েদের কোনো ধাচ ই নেই জিনাতের মধ্যে। না আধুনিক মেয়েদের মতো আটসাট রঙ বেরঙের ডিজাইনেবল বোরখা পড়ে,না মাথায় চৌদ্দ প্যাচ আর আকর্ষণীয় পিন দিয়ে হিজাব পড়ে,না মুখে কোনো সাজগোজ করে।
রায়ান যেনো আজ চুপিচুপি খুব খুটিয়ে খুটিতে দেখছে জিনাত কে।কেমন যেনো একটা ন্যাচারাল সৌন্দর্য বিরাজ করে জিনাতের মাঝে।যার জন্য জিনাতকে অন্য মেয়েদের চেয়ে খুব আলাদা মনে হচ্ছে ওর কাছে।
–গাড়িটা থামান।আমি নামবো।
জিনাতের কথা শুনে রায়ান গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,এখানেই নামবে কেনো? তোমার বাসা তো আরো বেশ খানিকটা দূরে।
-আমি চাইনা আমার এলাকার কেউ আপনার সাথে আমাকে দেখুক।আশাকরি আমার সর্বনাশের কথা,, এখনো আমাদের এলাকার কেউ জানেনা।কারণ পরশু দিন আমার যশোর যাবার কথা ছিলো।তাই হয়তো কেউ কোনো সন্দেহ করে নি।আর আমি চাইনা এটা কেউ জানুক।দেখুন, আপনার অনুরোধে আমি শুধুমাত্র আপনার মায়ের জন্যই ওখানে থাকতে রাজি হয়েছি।সময় হলে আমি আমার আগের জীবনে ফিরে আসবো।আর আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন,,,আপনি এতে আমাকে সাহায্য করবেন।তাই আমার কথা আপনাকে শুনতে হবে।(বেশ শক্ত গলায় বললো কথাগুলো জিনাত)
জিনাতের কথা শুনে রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,বেশ! তোমার কথাই হবে।আমি যাচ্ছি না তোমার সাথে।তবে বিকেল পাচটার দিকে আবার এখানেই চলে এসো।
রায়ান ওর পকেট থেকে জিনাতের মোবাইলটা বের করলো।
-তোমার মোবাইলটা রাখো।আমি আমার নাম্বার সেইভ করে দিয়েছি তোমার ফোনে।কোনো দরকার হলে ফোন করো।
জিনাত কিছু না বলে ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ব্যাগে ঢুকাতে লাগলো।
–আর এই টাকাগুলো রাখো।তোমার দরকার হতে পারে(কিছু টাকা জিনাতের দিকে বাড়িয়ে বললো রায়ান)
জিনাত ভ্রু কুঁচকে বললো,,আল্লাহ মাফ করুন!!আপনার ওই টাকা জীবনেও যেনো আমার দরকার না হয়।
এই বলে জিনাত একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলো। রায়ান তাকিয়ে রইলো জিনাতের যাওয়ার দিকে।
বাড়িতে পৌছাতেই জিনাতের বাবা মা যেনো ওকে দেখে প্রান ফিরে পেলেন।জিনাতের মা ছুটে এসে জিনাতকে জড়িয়ে ধরলেন।জিনাতও ওর মাকে ধরে ঝরঝর করে কেদে দিলো।
(চলবে)
পর্বঃ ৭
বিকাল ৫.৩০। রায়ান ওর জীপে বসে অপেক্ষা করছে জিনাতের জন্য।৫ টায় জিনাতের আসার কথা ছিলো।তাই রায়ান ৪.৩০ থেকেই বসে আছে এখানে।জিনাতকে কলও দিয়েছে কয়েকবার, কিন্তু ধরে নি।খুব চিন্তা হচ্ছে রায়ানের,, আসবে তো জিনাত।আবার ওকে ফাকি দিয়ে চলে যায় নি তো।ভাবতে ভাবতে আবারো কল দিলো জিনাতকে। কিন্তু এবার ফোন বন্ধ। এবার ভীষণ রকম চিন্তা হচ্ছে ওর।কি করবে বুঝতে পারছে না।জিনাত ওর বাসার ধারে কাছেও যেতে নিষেধ করেছে।আবার ফোনটাও ধরছে না।এদিকে সাড়ে ৫ টার বেশি বাজে এখনো আসার নাম গন্ধ নেই!
হঠাৎ দূরে চোখ গেলো রায়ানের,,,জিনাত আসছে!মূহুর্তেই চোখদুটোয় খুশির ঝিলিক খেলে গেলো রায়ানের। ও তাড়াতাড়ি জীপ থেকে নেমে দাড়ালো।রিকশা এসে থামলো গাড়ির কাছে।রিকশায় দুটো বড়ো বড়ো ব্যাগ নিয়ে এসেছে জিনাত।রায়ান এসে ব্যাগ দুটো নামাতে গেলে জিনাত বাধা দিয়ে বললো,,,আমার কাজ আমি নিজেই করতে পারি,,অন্যকারো উপর নির্ভরশীল হতে চাই না।রায়ান আর কিছু বললো না।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো,,,ভাড়া কতো ভাই?
-এক মিনিট, এক মিনিট!! আপনি আমার রিকশা ভাড়া দিচ্ছেন কেনো।আমি বলেছি না,,আপনার সাহায্য বা টাকা কোনো টারই আমার দরকার নেই।(বিরক্ত হয়ে বললো জিনাত)
রায়ানের এবার বেশ বিরক্ত লাগছে,, কিন্তু মুখে কিছু বললো না।কারন শত হলেও ও এখন জিনাতের কাছে ঠেকা!
জিনাত অনেক কষ্টে ভারী ব্যাগদুটো টেনেটুনে কোনোমতে গাড়িতে তুললো।রায়ান আরো একবার ব্যাগদুটো নিতে চাইলো,,কিন্তু জিনাত দিলো না।
জিনাত গাড়িতে উঠে বসলো। রায়ান গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
-এতো দেরি করলে যে,,,আমি অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলাম তোমার জন্য। (রায়ান)
—
–কি হলো কথা বলছো না যে,,,
—
-দুপুরে খেয়েছিলে ঠিকমতো? পরশু দিন থেকে তো একরকম না খেয়েই আছো।
—
— বাবার বাড়ি থেকে এতো বড়ো দুটো ব্যাগে কি আনলে,,,কিছু দরকার হলে তো শপিং করে নিতেই পারতে।
-দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে বলেছেন,,আমাকে অযথা বিরক্ত করবেন না।আমি ব্যাগে কি এনেছি তা আপনাকে বলতে যাবো কেনো? আর শুনুন,,প্লিজ আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবেন না।অপ্রিয় হলেও সত্যি,,আপনার সাথে কথা বলতে আমার জঘন্য লাগে।আপনার দিকে তাকালেই,,, আপনার সেই রাতের নিকৃষ্ট চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাই প্লিইইইজ,,, আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন।
জিনাতের কথা শুনে রায়ানের মনে অসম্ভব আঘাত লাগলো।একেবারব চুপ হয়ে গেলো সে।আর কিছুই বলার মুখ নেই তার।নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃনা হতে লাগলো রায়ানের,,কেনো সেদিন নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলো না,,কেনো সেদিন নিজের মাঝে একটু ধৈর্য রাখতে পারলো না।সবসময় মেয়েদের যথেষ্ট সন্মান দিয়ে এসেছে সে।আজ নিজের রাগের জন্য নিজের স্ত্রীর কাছেই চরম ঘৃনার পাত্র হতে হলো তাকে।
জিনাত বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক কষ্টে আজ বাবা মাকে বুঝিয়েছে ও আজ।সব খুলে বলেছে তাদের কাছে যে,,কেনো জিনাতকে ওই বাসায় থাকতে হবে।ওর বাবা তখনও বলছিলেন,,জিনাতকে পালিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে।কিন্তু জিনাত,, ওর বাবাকে অনেক কষ্টে বুঝলো যে,,একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে নিয়ে যে ওয়াদা ও করেছে,,তা ওকে রাখতেই হবে।জিনাত ওর বাবাকে কথা দিলো যে,,যা কিছুই ঘটে যাক না কেনো,,জিনাত ওর পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দেবে না।জিনাতের এই কথা শুনে আর রায়ানের মায়ের কথা ভেবেই জিনাতের বাবা মা ওকে আবার পাঠালেন রায়ানদের বাসায়।
গাড়ি এসে থামলো রায়ানদের বাসায়।এবারো জিনাত ব্যাগদুটো নামাতে গেলে রায়ান বাধা দিয়ে বললো,,,আমি জানি,,তুমি নিজের কাজ নিজে করতেই পছন্দ করো।কারো উপর নির্ভরশীল হতে চাও না।কিন্তু এখন তুমি কষ্ট করে ব্যাগদুটো টানতে টানতে ভিতরে নিতে গেলে মা সেটা ভালো চোখে দেখবে না।তাই এখন অন্তত ব্যাগদুটো আমাকে নিতে দাও।
রায়ানের কথা শুনে জিনাত ব্যাগ ছেড়ে দিলো।রায়ান ব্যাগ নিয়ে ভিতরে যেতে লাগলো। আর জিনাত ওর পিছু পিছু হাটতে লাগল।
★
রাত ১২.৩০।জিনাত খাবার নিয়ে বসে আছে।কিন্তু রায়ান এখনো আসেনি।চরম বিরক্ত লাগছে ওর এভাবে একটা গুন্ডার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতে।নিশ্চয়ই এখন কোথাও গুন্ডামী করে বেরাচ্ছে বা মদ খেয়ে মাতলামো করছে।ভাবতেই গা ঘিনঘিন করছে জিনাতের।ওর মোটেই ইচ্ছে ছিলো না,,রায়ানের জন্য এভাবে খাবার নিয়ে বসে থাকার।কিন্তু রায়ানের মায়ের সামনে ভালো স্ত্রী হবার অভিনয়টাতো চালিয়ে যেতে হবে।তাই বাধ্য হয়েই অপেক্ষা করছে রায়ানের জন্য।
একটু পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো।একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললো জিনাত।রায়ান কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে রুমের দিকে যাচ্ছিলো।
-টেবিলে খাবার রেডি করাই আছে।দয়া করে একটু তাড়াতাড়ি খেতে আসুন।
জিনাতের কথায়,, রায়ান মুচকি বললো আসছি।
রায়ান খেতে বসে বললো,,মা খেয়েছে?
-হ্যা।
-তুমি খেয়েছো?
-না।
-সেকি তুমি এখনো খাও নি কেনো?
-কারন আপনি এখনো খান নি তাই(বিরক্তি নিয়ে বললো জিনাত)
-সেকি,,আমার জন্য বসে থাকার কি আছে।তোমার তো নিশ্চয়ই এতো রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকায় অভ্যাস নেই।
-হ্যা! ঠিকি বকেছেন! একদম অভ্যাস নেই আমার এতো রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার।কিন্তু কি করবো বলুন তো,,পোড়া কপাল আমার,,নয়তো আপনার মতো মানুষের জন্য আমার না খেয়ে থাকতে হয়!
-তো খাওনি কেনো,,খেয়ে নিলেই তো পারতে(মুখটা ছোটো করে বললো রায়ান)
-তাহলে কি করবো,,আপনার মায়ের সামনে ভালো স্ত্রী সাজার চাকরি পেয়েছি যে,,,স্বামী আসার আগে স্ত্রী খেয়ে নিলে কি আর ভালো স্ত্রী সাজা হবে?
জিনাতের মুখে স্বামী কথাটা শুনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো রায়ানের।মুখে একটা মুচকি হাসি টেনে বললো,,
-আচ্ছা,এরপর থেকে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো।কেমন!!এখন খেয়ে নাও।
-আপনার কি মনে হয়,,আমি আপনার সাথে খাবো? কক্ষনো না,,আমি কিছুতেই আপনার সামনে খেতে পারবো না।আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না।আপনি খেয়ে উঠুন।তারপর খাবো।
রায়ান খুব অবাক হলো,,এতোটা ঘৃনা করে জিনাত তাকে,যে তার সামনে খাবার খেলেও তা গলা দিয়ে নামবে না।
-কি হলো তাড়াতাড়ি খান।
-হ্যা খাচ্ছি(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো রায়ান)
কোনোমতে তাড়াতাড়ি অল্প একটু খেয়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো রায়ান।ও চলে যেতেই নিজের প্লেটে খাবার তুলে নিলো জিনাত।(চলবে)
দেরি করে দেয়ার জন্য খুব দুঃখিত।তাই দেরি পুষিয়ে দিতে দুই পর্ব একসাথে দিলাম।