স্নিগ্ধ_অনুভব #পার্ট:১২

0
441

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১২
#পিচ্চি_লেখিকা

(দেরী হওয়ার জন্য দুঃখিত)

একটা অন্ধকার রুমে মাথা চেপে বসে আছি। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে অনা, তিশা আপু, তন্নি, তামিম, মেঘলা আর রাহাত। তন্নি গিয়ে রুমের লাইট দিয়ে আমার সামনে এসে বসে আছে। আজকে আমাদের জিবনে অনেক খুশির দিন হলেও এখন আমার কাছে সব কিছুই বিশাদময় লাগছে। রাহাত করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ আগে……
কেউ টেনে অন্ধকার রুমে নিয়ে যাওয়ায় খুব ভয় পেয়ে যায়। সেই লোকটা আমাকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে মুখ ছেড়ে দেয়। তারপর রুমের আলো দিতেই দেখি ওখানে রাহাত দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে ভয় আর রাগ ২ টাই জেঁকে বসে। ভয় আর রাগ নিয়েই বললাম,,
“আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
রাহাত কিছু না বলে জাপটে ধরে আমাকে। উনার এহেন কাজে তো আমি চরম অবাক। হাত পা যেনো অবশ হয়ে গেছে। রাহাত আমাকে জড়িয়ে ধরেই বললো,,
“আমার তোমার লাইফে ২য় বার আসার একটুও ইচ্ছা ছিলো না স্নিগ্ধপরী। খুব ভালোবাসি তোমাকে। ফাহিম ভাইয়া বিয়ে তে এসেছিলাম। কিন্তু সব জায়গাতেই তোমাকে পাই। তোমাকে দেখলে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। ইছা করে নিজের করে ধরে রাখতে। আজ তুমিও আমার হতে যদি না সেদিন…..
রাহাতের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম কান্না করছে। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে কিছু বলতে যাবো তখনই পিছন থেকে কারো কন্ঠ শুনে রাহাত নিজেই আমাকে ছেড়ে দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখি অনুভব দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখেই ভয়ে গুটিয়ে যায়। এখন যদি উনি আমাকে ভুল বুঝে তাহলে কি হবে? আবার কোন ঝড় আসছে! অনুভব দুরে দাঁড়িয়ে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আরেকবার অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে। আমাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে বললো,,
” উনিই রাহাত তাই না রে স্নিগ্ধু? এগুলোর জন্যই বলেছিলি মেঘলার বিয়ে শেষ হলে বলবি! এসবের জন্যই বলেছিলি সত্যিটা সহ্য করতে পারবো কি না? আবারও ঠকালি!”
আমি অনুভবের কথা শুনে মুখ তুলে করুন চোখে তাকিয়ে উনার দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবো তখনই উনি আমাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো। আমি একবার উনার দিকে আর একবার উনার হাতের দিকে তাকালাম।
“কাছে আসিস না। অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে রেখেছি কাছে আসলে আবারও তোর উপরে রাগ ক্ষোভ মিটাবো তার থেকে তুই দুরেই থাক।”
“অনুভব আমার কথাটা একবার শোনেন!”
“কি শুনবো আর? যা দেখার তা তো দেখলাম ই আর রাহাতের কথা শুনলাম ও।”
অনুভব রাহাতের পুরো কথা শুনলে এইসব কেন বলছে? উনি কি তবে পুরো কথা শুনে নাই? হয়তো!
“৩ বছর আগে দুরে থেকে ঠকিয়েছিস আর আজ কাছে এসে। তোর রাহাত কে প্রয়োজন হলে বিয়েতে রাজি হলি কেন? রাহাতের টাকা তোর এতই দরকার? বল!”
“কি বলছেন এসব?”
“কেন বুঝতে পারছিস না? আরে ৩ বছর আগে তো এই টাকার জন্যই প্রেম করে বিয়ে করতে চাইছিলি এই রাহাতের সাথে তাই না? আর আজ ওকে দেখে সেই প্রেম আবারও জেগে উঠেছে।”
“অনুভব কি বলছেন এসব? এসব আপনাকে কে বলছে?”
“কেন সত্যি টা জানি বলে তোর খুব খারাপ লাগছে? তোকে আমি কি দেয়নি বলতে পারিস? যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই এই অনুভবকে স্নিগ্ধর সাথে জুড়ে দিয়েছে। কিন্তু সব স্বপ্ন তুই এক মুহূর্তেই ভেঙে দিয়েছিলি।”
“আমি আপনার স্বপ্ন ভেঙেছি?”
“হ্যাঁ ভেঙেছিস। ৩ বছর আগে রাহাত বিয়ে না ভাঙলে তো তুই ওকেই বিয়ে করে নিতি তাই না? ৩ বছর আগে যখন শুনেছিলাম তোর বিয়ে নিমিষেই মনের কোণে জন্ম নেয়া অনুভূতিরা থেমে গিয়েছিল। তখনই ফিরতে চেয়েছিলাম বিডিতে কিন্তু কেন আসতাম? তোর জন্য? তুই তো নিজে থেকে এই বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলি! ইনফ্যাক্ট তোরা তো রিলেশনে ছিলি তাই না? রাহাত ছিলো শহরের সব চেয়ে বড় বিজনেসম্যান এর ছেলে। বড় লোক ছেলে দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারিস নাই তাই না। তোর এত লোভ রে?”
অনুভবের কথা শুনে এবার প্রচন্ড রাগ লাগলো। নিজেরা দোষ করে আজ আমাকেই দোষী করছে। রাগ নিয়ে চেঁচিয়েই বললাম,,
“স্টপ দিস ননসেন্স। জাস্ট স্টপ। অনেক বলে ফেলেছেন মিস্টার আহান আবরার অনুভব। অনেক বেশি বলে ফেলেছেন। আর আমাকে লোভী বলার আগে যান নিজের পরিবার কে জিজ্ঞেস করেন কে লোভী? আপনার পরিবার তাদের স্বার্থের জন্য এই স্নিগ্ধা কে ব্যবহার করতেও ভুলে নি। যান জিজ্ঞেস করুন কে আমাকে বাধ্য করেছিলো বিয়ে করতে? আর রাহাতের বিয়ে ভাঙার কথা বলছেন? তো রাহাতকেই জিজ্ঞেস করুন কে বিয়ে ভাঙছে? আরে বাবাই আমার পর হয়েও আমাকে নিয়ে ভাবতো আর মামুনি? সে আমার আপন হয়েও বোঝা ভাবতো। যান আপনাার আম্মুকে জিজ্ঞেস করেন বিয়ে ভাঙার জন্য আপনার মা আর কাকি ওই বাড়ির সবাই কি কি করেছে আমার সাথে? যান গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।”
অনুভব একবার রাহাতের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি উনার এহেন কাজে অনেক অবাক হয়েছি। এই মাত্র এত এত কথা শুনালো আর এখন কি না জড়িয়ে ধরছে! পাগল হয়ে গেছে নাকি? অনুভব আমাকে ছেড়ে আলতো হাতে গালে ধরে বললো,,
“থ্যাঙ্কুউ স্নিগ্ধু থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। তোর থেকে সত্যি কথা শোনার জন্য এত কিছু। এতক্ষণ বাজে কথা বলার জন্য সরি আর আমি রাহাতের পুরো কথায় শুনেছি। ওর কথা শুনেই সত্যিটা জানার এটুকু চেষ্টা।”
“মানে?”
“বলছি! ৩ বছর আগে আমার কাছে একটা ফোন আসে যে তুই রাহাতকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাস। আমমি বিশ্বাস না করে বিডিতে ফিরতে চাইলে তখন বাড়ি থেকে আমার কাছে ফোন যায় আর ওরাও একই কথা বলে। কিন্তু এনগেজমেন্টের দিন তোদের বিয়ে আর এনগেজমেন্ট ২ টাই ভেঙে যায়। আমার কাছে তখন মনে হয়েছিলো তুই ঠকিয়েছিস আমাকে তোর শাস্তি তোকে দেবো। তাই আম্মুর সাথে রাগারাগি করে এটা মানায় যে তোকে আমি না আসা পর্যন্ত যেনো বিয়ে না দেয়। আম্মু প্রথমে না মানলেও পরে আমার জোড়াজুড়িতে মানতে বাধ্য হয়। পরের ৩ বছর তোর সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করিনি। দেশে ফিরে তোকে দেখলেই রাগ লাগতো তাই তোকে সামনে পেলেই থাপ্পড় মারতাম। তোর ব্যবহার বড্ড অবাক লাগতো। তোকে দেখে বার বার কনফিউজড হয়ে যেতাম। তারপর আমিই তোর বাবাই আর মামুনিকে বলি তোকে বিয়ে করার কথা। আব্বু আগে থেকেই রাজি ছিলো কিন্তু আম্মু কেমন যেনো করতো কিন্তু শেষে মেনে নেয়। আর তুই গাধী ভেবেছিস তোর বাবাই মামুনি আমাকে জোড় করিয়ে বিয়ে করছে। কবে তোর মাথায় একটু বুদ্ধি হবে বল তো?”
অনুভবের কথা শুনে হা হয়ে গেছি। এত কিছু হয়ে গেছে আমার পিছে।
“তুই জানিস রাহাত ফাহিম ভাইয়ার চাচাতো ভাই হয় তাই তোকে ফাহিম ভাইয়ার সাথে দেখে সেদিন থাপ্পড় মেরেছিলাম। আর ওই দিন রেস্টুরেন্টে অন্য একটা ছেলের সাথে তোকে দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। তাই তোকে ওভাবে মেরেছি। তোকে শাস্তি দেওয়ার পর সবসময় নিজেকেও শাস্তি দিয়েছি। সেদিন তিশার ঝাড়িতে আমি পরিবর্তন হয়নি ওর কথা তে বুঝেছি অনেক কিছু। ও বলেছিলো তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস আমিই নাকি তোর ভালোইর যোগ্য না। সবাই আমাকে মিথ্যা বললেও তিশা যে বলবে না তাও খুব ভালো ভাবে জানি। তোর আর আমার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার জন্য অন্য কেউ আছে তা তো বুঝেছি। কিন্তু ৩ বছর আগের সত্যিটা জানা দরকার ছিলো আজ জানলাম। তোর সাথে করা সব অন্যায়ের জবাব ওরা পাবে।”
অনুভব আমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে কিছু না বলেই চলে গেলো। আমি অনুভবের কথা শুনে থ মেরে গেছি। কে আছে এসবের মাঝে? কে ভুল বুঝিয়েছে অনুভবকে? রাহাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফ্লোরেই বসে পড়লাম। তখনই তন্নি, তিশা আপু, মেঘলা, অনা, তামিম সবাই আমার কাছে আসে। রাহাত এখনো দুরে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্তমানে……
তিশা আপু আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,,
“স্নিগ্ধু কি হয়েছে এখানে? ভাইয়া এভাবে বেরিয়ে গেলো কেন? আর তুই ই বা সব ছেড়ে এখানে কি করছিস? আর রাহাত এখানে কি করে?”
আমি আপুর দিকে একবার তাকিয়ে রাহাতের দিকে তাকালাম। রাহাতও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আপু আমাকে চুপ থাকতে দেখে রেগে গিয়ে বলে,,
“কি রে চুপ করে আছিস কেন? এখানে কি তুই মনোব্রত পালন করছিস? বল কি হয়ছে? ভাইয়া আবারও তোকে মেরেছে?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম “না”। আপু রেগে আরো কিছু বলতে যাবে তখনি রাহাত বললো,,
” ওকে প্রশ্ন কইরেন না আমি বলছি সব…………..

রাহাতের মুখে সবটা শুনে সবাই হা হয়ে গেছে। কারো বুঝতে বাকি নেই অনুভব এতো রাতে কোথায় গেছে। আপু তো আমার পাশেই বসে পড়েছে। তন্নি, অনা, মেঘলা ওরাও সব টা শুনে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আপু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,
“এত দিন তো এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম স্নিগ্ধু। কি হবে এখন? অনুভব ভাইয়া এত রাতে গিয়ে আবার কি করবে? বুঝতে পারছিস বিপদ বাড়বে কমবে না। কি করবো আমরা এখন?”
“জানি না। অনুভব আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেছে। কি করবো আপু?”
আমাদের কথার মাঝেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিয়ে কানে ধরতেই ওপাশের বলা কথা গুলো শুনেই হাত থেকে ফোন পড়ে গেছে। পাথরের ন্যায় বসে আছি দেখে আপু বললো,,
“স্নিগ্ধু এই স্নিগ্ধু কে ফোন করেছে? কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?বল!”
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে আপুকে জাপটে ধরে কেঁদে উঠলাম। কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। আপু বার বার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। কোনো মতে বললাম,,
“আ..আপু হস..হসপিটাল!”
এটুকু বলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম ওই বাড়ি থেকে। পা গুলো যেনো অবশ হয়ে আসছে। দাঁড়াতে পারছি না, রাস্তাটাও যেনো আজ বড় হয়ে গেছে। পেছনে তিশা আপু, অনা, তামিম, তন্নি সবাই আসছে……..

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️কালকের পার্টে গল্পের মোড় পাল্টাবে😐 আশা করি সবাই পাশে থাকবেন)
হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here